আমার স্বামী আমাকে বললো, আমি তোকে হত্যা করবো নতুবা তোর নাক কেটে নেবো। বল তুই কোনটি চাস? আমি বললাম, তুমি আমাকে হত্যা করো কিন্তু আমার নাক কেটো না। ও আমার কথা শুনলো না. আমার নাক কেটে একটি গর্তে ফেলে দিলো।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিজের কন্যাকে বুকে জড়িয়ে এমন বর্ববরতার কথা বলছিলেন এক আফগান নারী।
রেজা গুল নামের এই নারীর আর্তচিৎকার-বিভৎস ছবিই যেনো আফগানদের পারিবারিক নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
গত সপ্তাহে আফগান উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ফারিয়াবের ঘোরমাচ জেলায় নির্মমতার স্বীকার হন এ নারী।
বর্তমানে তার বয়স বিশ বছর। বিয়ে হয়েছে ছয় বৎসর হলো। আর বিয়ের পর থেকেই সে প্রতিনিয়ত এমন নির্যাতনের শিকার হয়ে চলছে তার স্বামীর হাতে।
গুলের ভাষায়, তারা আমার মাথায় আঘাত করে, আমাকে শিকলবন্দী করে গাধার আস্তাবলে রাখে। তারা আমাকে প্রায় প্রহার করতো কিন্তু খেতে দিতো না।
বাবা-মায়ের সম্মতিতেই গুলকে মুহাম্মদ খানের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়।
গুল বলে, আমার তাকে পছন্দ ছিলো না। আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না। তারপরও আমার পরিবারের সম্মতিতেই আমার বিয়ে হয়।
তার বিয়ে হলেও স্বামীর গৃহে সে কখনো স্ত্রীর মর্যদা পাইনি। স্বামীর ঘরে সে বিশ দিনের বেশি টিকতে পারেনি। যখনই সে স্বামীর গৃহে গেছে তখনই সে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাকে শিকলবন্দী করা হয়েছে।
গুল বলছে, আমি কোনো ভূল করিনি, কোনো কিছু চুরি করিনি, বা কোনো অনৈতিক কাজের সাথেও কখনো জড়ায়নি। কোনো কারণ ছাড়াই তারা আমাকে মারতো। একটা নরপিশাচের মত ছিলো সে।
'প্রতিবাদ করার মত সাহস ছিলো না। স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকেও কখনো কোনো প্রকার সহায়তা পায়নি', আহাজারি গুলের কণ্ঠে।
'স্থানীয় মুরুব্বি এবং তালেবান নেতারা এ নিয়ে অনেকবারই বসেছে। আমার স্বামীকে ওয়াদা করিয়েছে যেনো আর প্রহার না করা হয়। সে কারো ওয়াদা রাখেনি বরং নির্যাতনের মাত্রা আরো খারাপের দিকে গেছে।'
কীভাবে তার নাক কেটে নেওয়া হলো?
গুল বলছিলো, সে দিন তারা আটজন এসেছিলো। তারা আমাকে একটি কারে করে তুলে নিয়ে যায়। তাদের দুইজন আমাকে অনুসরণ করছিলো আর ছয়জন ছিলো আমার পিছনে। আমার স্বামী পকেট থেকে একটি পিস্তল আর একটি ছুরি বের করলো। শুণ্যের মাঝে কয়েকটি গুলি ছুঁড়লো। তার কাছে কিছু টেবলেট আর কিছু মেডিসিন ছিলো।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি ছুরি দিয়ে তুমি কি করবে? সে বললো, আমি তোমাকে হত্যা করতে চায় নতুবা তোমার নাক কেটে নিতে চায়। বলো তুমি কোনটি গ্রহণ করতে চাও।
তখন আমি তাকে আকুতি জানিয়ে বলি, দেখো তুমি আমাকে হত্যা করো কিন্তু আমার নাক কেটো না। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। আমার নির্মমভাবে সে আমার নাক কেটে নেয়। নাকের কাটা অংশ একটি গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়।
‘এরপর আমার নাক থেকে প্রচণ্ডভাবে রক্তপাত শুরু হয়। তারপর আমার দেবর আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এঘটনার পর থেকে আামার স্বামী পলায়ন করে আছে।’
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আমরা গুলের স্বামী মুহাম্মাদ খানকে খুজতেছি। আমরা জানতে পেরেছি খান তালেবানদের দখলে থাকা একটি এলাকায় পালিয়ে আছে।...
হাসপাতালের ডাক্তাররা বলছেন, আমরা আশা করছি গুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুর্কি পাঠাত সক্ষম হবো। সেখানে তার নাকে অস্ত্রপচার করা হবে।
আফগানিস্তানে এধরনের চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে হবে।
আমি এ নির্মম ঘটনাকে একজন মুসলিম হিসাবে নয়, একজন আফগান হিসাবেই দেখছি। একজন মানুষ হিসাবে দেখছি। এ রকম অমানবিক ঘটনা শুধু আফগান নয়, এর থেকেও বর্ববর নির্মমতা বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেই ঘটছে।
এ ধরনের নির্মমতা থেকে শুধু নারী নয় বিশ্বের প্রতিটি মানুষ মুক্ত থাকুক এটাই কাম্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৪