দুপুরে রুমে শুয়ে আছি। এর মধ্যে দরজায় নক। বুঝলাম রোজা রমজানের সময় সাহায্যের জন্য এসেছে কেউ। উঠে গেলাম। দরজা খোলেই দেখি, এক পিচ্চি।
ভাই আমরা এতিম। আমাদের কিছু সাহায্য করুন। আমরা এতিম মাদরাসা থেকে এসেছি দশটা টাকা সাহায্য দিন। আপনার দশ টাকা দিলে কমবে না।
বেচার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হলো। তারপর আবার এতিম পোলা। মায়ায় জিগায়লাম তোমার দেশের বাড়ি কোথায়?
-রংপুর।
এরমধ্যে আরেকটি পোলা এলো। সে আরো বেশি পণ্ডিত। আমাকে বলে, ভাই আমাদের একটি কুরআন হাদিয়া দিবেন? আমাদের নতুন মাদরাসায় কুরআন নেই। আল্লাহ আপনাকে বহু দিবে।
ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে পরাণ ঝাঁকি মারলো।জিগায়লাম তোমার বাড়ি কোথায়?
-রংপুর।
দুজনের বাড়িই রংপুরে?
পরে আসা পোলাটা অ্যাডভান্স বেশি। বললো-
-জি, আমার বাড়ি বদরগঞ্জ আর ওর বাড়ি তারাগঞ্জ। ভাই দেন একটি কুরআন কেনার টাকা। আমরা পড়বো। আপনার অনেক সওয়াব হবে। আপনাদের বিল্ডিংয়ের নিচে ওই যে একটা দোকান আছে না, উনিও একটি কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন।
মায়া হলো। প্রথমটিকে জিগায়লাম তোমার বাবা কি করে?
- জি ভ্যান চালায়।
আর তোমার বাবা? দ্বিতীয়টিকে জিগায়লাম।
- জি আমার বাবা কৃষি কাজ করে?
খুব মায়া হলো, জিগায়লাম- তোমাদের দুই জনেরই তো বাবা আছে। তো তোমরা এতিম হলে কেমনে?
কিছু সময় থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তারপর বললো, আমাদের বাবারা আমাদের খোঁজ নেয় না।
কিছু বলতে পারলাম না। শুধু ভাবলাম যেসব হুজুরেরা এদের বাসায় বাসায় ভিক্ষা করতে পাঠাইছে এরাই বড় এতিম। রাগে ক্ষোভে হৃদয়ে আগুন জ্বলে উঠলো।
দিলাম তাদের যা পারি আর কি।
এরপর থেকে শুধু ভাবছি এসব আকাইমা ব্যবসায়ীহুজুরদের কি কোনো দিন জ্ঞান হবে না?
আমার একটি মাদরাসার কথা জানা আছে, যে মাদরাসায় কোনো এতিম ছাত্র নেই, তারপরও প্রতি রমজান এলে ওই মাদরাসাপ্রধান এতিমের কথা বলে যকাত ফিতরার টাকা উঠান ঢাকা শহরে পরিচিত ধনীদের কাছ থেকে। আর তার পকেট ভারি করেন।
রমজানে এই সব হুজুরদের ব্যবসা বন্ধ হোক।