somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয়তী পর্ব একঃ সমাজে পাগল হয়ে কে বাঁচতে চায়!

২৭ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফুলের উদ্দ্যেশ্য কি! শুধু ফুটে ঘ্রাণ ছড়ানো নাকি সৌন্দর্য টাও প্রয়োজন আছে বাস্তু সংস্থানের? পৃথিবীর সব প্রাণীর এতো সুন্দর ব্যবস্থাপনা কোথাও জট নেই, বিশৃঙ্খলা নেই, অথচ তারা বুদ্ধিতে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কাছা কাছিও নেই। আমাদের প্রিয়তীর এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দিনে কয়েক বার সৃষ্টি কর্তাকে এ নিয়ে অভিযোগ না জানিয়ে প্রিয়তী বাড়ি ফেরেনা। প্রিয়তী পড়াশোনা শেষ করেছে, বয়স কম, একটা গার্মেন্টসের মানব সম্পদ বিভাগে কাজ করে বর্তমানে। ফ্যাক্টরির নিয়োগ সংক্রান্ত সকল বিষয় তাকেই দেখতে হয় । মোটামুটি এখানে সকল বিশৃঙ্খলায় অভ্যস্ত মানুষ গুলোকে কে ওর শৃঙ্খলায় ফেরাতে হয়।

প্রিয়তী মাঝে মাঝে ভাবে, একটা জীবন ৭০ কি ৮০ বছরের, আরও কমও হতে পারে। মানুষের লক্ষ্য থাকা উচিৎ কি আর মানুষ করছে কি। মোটামুটি এক দুটি বাচ্চা আরও বয়স হলে নাতী নাতনী দের নিয়ে সুখের জীবন গড়া যায়। পৃথিবীতে এটাই একমাত্র সুখের এবং বিনোদনের। সংসার মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে ঠিক ই কিন্তু একাকিত্ব দূর করে দেয়। একাকিত্বের চেয়ে বড় শত্রু পৃথিবীতে মানুষের জন্য অন্য কিছুই নেই। মানুষ যখন প্রাচীন জীবন যাপন করতো প্রয়োজনীয় ক্যালোরী সে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতো এবং দিনের ক্যালোরী সে দিনেই খরচ করে ফেলতে, ফলে নতুন আতংক ডায়বেটিক সহ অন্যান্য দূরারোগ মানুষ কে ছুতে পারতো না। কিন্তু সে আমলে মানুষ ঠুনকো রোগে মারা যেতো, যেমন ইঁদুরের উতপাতে মহামারীর কারণের তো ইউরোপেই ১৬ মিলিয়ন মানুষের সমাধী হলো। তখনো মানুষের বিন্দু মাত্র ধারণা ছিলোনা কিভাবে এ রোগ কে এড়ানো যায়। এরপরে ভারতীয় উপমহাদেশে আসলো প্রলংকারী কলেরা। কতো কোটি মানুষ মারা গেলো তার হিসেবও বোধ হয় কারো নেই। তখনো মানুষের ধারণা ছিলোনা কিভাবে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সেই সাথে ছিলো সেই স্প্যানিশ ফ্লু, ৫০ মিলিয়ন মানুষের সমাধী এবং একটি ভাইরাস। ভাইরাস এমন একটি অনুজীব যা কোনো প্রাণীর অভ্যন্তরে গেঁথে বসা ছাড়া বাঁচতে পারেনা, খালি চোখে দেখা যায় না। এমন একটি জীব যা বাতাসের সাথেই তুলনা চলে, কারণ বাতাসও দেখা যায় না, আর এই অদৃশ্য অনুজীব কেড়ে নিয়েছে কত শত কোটি প্রাণ। কিন্তু আজকের পৃথিবী অনেক উন্নত। লক্ষ লক্ষ বছর পরে মানুষ জানে কলেরার মৃত্য শুধু আধ লিটার পানি ৩ চিমটে লবন ও এক মুঠো গুড়ের মিশ্রণে তৈরী হওয়া জাদুর পানীয়তেই ঠেকানো যায়। লবন পানি আর চিনি দিয়ে এই জাদুর পানীয় তৈরী শিখেছে মানুষ মাত্র ১ শতাব্দী আগে ১৯১৩ সালে শরীরে শিরায় প্রবেশের মাধ্যমে, কিন্তু এটুকুতেই মানুষ থেমে থাকেনি, কলকাতার গবেষক জনাব হেমেন্দ্র একই খাবার স্যালাইন পরীক্ষা করেন এবং সফল হন, ১৯৫৩ সালে ল্যানসেট জার্নালে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। কিন্তু লেনিন এবং ক্যাশ যারা ১৯১৩ সালে শিরায় স্যালাইন দেয়ার ফর্মুলা আবিষ্কার করেন তারা জনাব হেমন্দ্রের মুখে খাওয়ার স্যালাইন নিজের বলে দাবী করেন এবং তাদের প্রতিষ্ঠান ICDDRB শক্তিশালী হওয়ায় তাদের বলা মিথ্যেই সত্যে পরিণত হয়। বলা হয়ে থাকে, মিথ্যে যখন বার বার বলা হয় তা সত্যে পরিণত হয়।

প্রিয়তী ভাবে পুকুরচুরি তো সবখানেই হয় কিন্তু তারপরেও এই একটা ফর্মুলা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

কে জানে এতোদিন প্রিয়তী সহ আশে পাশের যত পরিচিত মুখ তারা হয়তো এতোদিন বেঁচে থাকতোইা না কলেরা হয়তো অনেক কেই গ্রাস করে নিতো।

১৯১৮ সালে তো আর প্রিয়তীর জন্ম হয়নি। কিন্তু সে বছর বিশ্বে হানা দিয়েছিলো ভয়ানক স্প্যানিশ ফ্লু, সেসময়ের জন সংখ্যার ৭ ভাগের ১ ভাগ এই রোগের কাছে হার মেনেছে। মানুষ দিক বিদিক হন্যে হয়ে ঘুরেও এই রোগের কোনো উত্তর পায় নি ।প্যারিসে কিছু মানুষ মাস্ক পড়তে জনগন কে আহ্বান জানায় কিন্তু কে শোনে কার কথা। রোগ টি ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত তান্ডব চালায়। তারপরে হার্ড ইমিউনিটির কাছে হার মেনে ভাইরাস টি হারিয়ে যায়। ঠিক তার ১০০ বছর পরে হানা দিলো কোভিড ১৯, পৃথিবী থেকে অগণিত মানুষ হারিয়ে গিয়েছে এই রোগের আক্রমণ থেকে। কারো হিসেব মতে ৩০ লাখ কিন্তু বাসা বাড়ি অগণিত মানুষের মৃত্যর হিসেব রেকর্ড করার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কার হয় নি, নাকি সরকার গুলো চায়নি তা ভাবার বিষয়। প্রিয়তী এতোটুকু বুঝতে পেরেছে প্রযুক্তি যতই উন্নত আর শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা যতই বেড়েছে মানুষের বিশৃঙ্খলা মোটেও কমেনি । মাস্ক থেকে শুরু করে হাত ধোয়া কেউ ই কিছু মানছেনা। মানবার সময় কোথায়। ফলাফল এই রোগ নিয়ন্ত্রণে থেকেও থাকছেনা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ২০ মিলিয়ন মানুষের ইতি ঘটে তারপরে ঘটে যাওয়া মহামারীতে আরও ৫০ মিলিয়ন মানুষের সমাধী হয়, ঘুরে আসে আরও একটি শতাব্দী। দরজায় কড়া নেড়েই চলেছে একটি মহামারী। মানুষের ওপর চলা এই শতাব্দিক মহামারীর আক্রমণ শক্ত না হয় আবার প্রকৃতি কি শক্তি নিয়ে হাজির হয় তা নিয়ে শঙ্কিত প্রিয়তী। প্রিয়তীর বিশ্বাস কিছু একটা সামনে ঘটতে চলেছে । দুটি মেরুর বরফ যুগ শেষের দিকে চলেছে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে একটি মাত্র বাসযোগ্য এ গ্রহের কি হবে তা প্রিয়তী ভেবে পায়না । মানুষ কি অন্তত নিজেদের স্বার্থে বনায়ন উজাড় বন্ধ করতে পারে কিনা, কার্বন নিস্বরন কমানোর জন্য উদ্যত কি হবে মানুষ! নাকি আরও একটি প্রলয়ংকারী মহামারীর অপেক্ষা করছে মানব জাতি। একমাত্র বাস যোগ্র গ্রহ টা যদি জেগে ওঠে! যদি ঝেড়ে ফেলে দেয় আমাদের।

প্রিয়তীর এসব ভেবে কাজ নেই, সে আপাতত তার নাগরীক দায়িত্ব টুকুই পালন করে, প্যাকট জাত পণ্যে তার আগ্রহ নেই, পলি ব্যাগ ব্যবহার করেনা। বছরে যেকোনো খালি স্থানে একটি চারা রোপন করে । এর বেশী কিছু যে ওর করার নেই। মুখে কাউকে কিছু বললে মানুষ গুলো ওকে পাগল বলে। আর সমাজে পাগল হয়ে কে বাঁচতে চায়।

ছবিঃ ব্লগারের নিজ ডিজাইন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:১৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×