খালেদা জিয়া আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ৭১-এর চিহ্নত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি গতকাল দেলু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের ফলে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতি জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি এ পরিস্থিতিকে গণহত্যা বলে অবিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা হচ্চে। আর যেন একটা গুলিও না চালে-- তিনি সরকারের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। আগামীকাল সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ৫ মে মঙ্গলবার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া আবারও যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের পক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিল পাস হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার । সংসদে বিল পাসের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। সরাকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা নানা সভা-সমিতিতে নানাভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছে।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে চলমান শাহবাগ আন্দোলন যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়ায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। কয়েকজন ব্লগারের আহ্বানে এ আন্দোলন শুরু হলেও এখন আর আন্দোলন শুধু তাদের নেতৃত্বে হচ্ছে না। নেতৃত্বের পরিধি বেশ বড়। সাদা চোখে এ আন্দোলনে মূল মুখপত্র ডা. ইমরান এইচ চৌধুরী, তার সঙ্গে রয়েছে তার কয়েকজন ব্লগার বন্ধু। এছাড়াও আন্দোলেনের নেতৃত্বে আছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব। মহাজোট সরাকারে যে সব দলের সমর্থন আছে সেসব দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাড়াও অপরাপর আরও বেশ কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারাও এ আন্দোলনের নেতৃত্বে আছে। আন্দোলনকারীদের সমাবেশ-মহাসমাবেশে বিষয়টা অত্যন্ত প্রকটভাবে ফুটে ওঠে।
আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তারা এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সংসদ উপ-নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আন্দোলনের মঞ্চে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়া আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
দেশে বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি আগের মতোই কোনো ব্যাতিক্রম হীনভাবে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়ে গেল। তাদের এই অবস্থান হতাশাজনক। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এই পর্যায়ে একটি জাতীয় ঐক্যের আশা করা হলেও সে ঐক্য হুমকির মুখে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির এসব কেরি-কেচার নতুন নয়। এখানে নতুন সংযোজন শাহবাগের আন্দোলন। বিশ্বজিতকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস, ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এসবের কোনটাকে বাধাগ্রস্থ করে?
ক্ষমতা মাতালেরা বিভিন্ন সময় নিজ নিজ স্বার্থে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ওপর আস্হা থাকলে কি শাহবাগের আন্দোলন তৈরি হতো? যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক এটা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগের বাইরে অনেক মানুষ আছে যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। গত ৪০ বছরে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের ভূমিকা আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থকসহ বিচার প্রার্থীদের হতাশ করেছে।
যাকে বলে 'ছাই দিয়ে ধরা'-- শাহবাগে অনেককেই ছাই দিয়ে ধরা হয়েছে। তাই অনেকের ছটফটানি শুরু হয়েছে। শে করব বাংলা ভাষার প্রচীন নিদর্শন চর্যা পদের তিন নম্বর পদের শেষ লাইনটা দিয়ে:
ভণন্তি বিরুআ থির করি চাল।।
আধুনিক বাংলা:
বিরুপা বলছেন-- চাল দে স্থির ভাবে।।