somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রুখসানার গল্প !!!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির নাম রুখসানা, বয়স ৫ অথবা ৬ এর বেশী হবে না । বাড়ী যাওয়ার আনন্দে হয়তো চোখে কাজল মেখেছিলো । অত্যন্ত মায়াবী লাগছিলো দেখতে । তার চোখে মুখে নিষ্পাপ আর অসহায়ত্বের ভাবও ছিলো । আমিও যাচ্ছিলাম একই পথে একই ট্রেনে করে, দুজন মুখোমুখি । আমার গন্তব্য চট্টগ্রাম, আর তার গন্তব্য কাছাকাছি কোথাও । তার সাথে আলাপচারিতার কিঞ্চিৎ ঃ

আমি : নাম কি তোমার?
রুখসানা : রুখসানা ।
আমি : তোমার বাড়ী কোথায় ?
রুখসানা : বিবাড়ীয়ার বিনগরী ।
আমি : ঢাকা কোথায় থাক?
রুখসানা : খিলগাঁও ।
আমি : কি কর ওখানে?
রুখসানা : চাকরী করি ।
আমি : স্কুলে পড়না?
রুখসানা : না ।
আমি : পড়তে ইচ্ছা হয় না তোমার?
রুখসানা : হুমম, হয় ।
আমি : তো...
রুখসানা : কিন্তু বাপ মা চায় না ।

এরকম হাজারো রুখসানা আছে বাংলার ঘরে ঘরে । যারা অযাচিত শিশু শ্রমে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে, বাবা মা হয়তো পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবে না বলে বাধ্য হয়েই এ পথে নামিয়ে দিয়েছে । কিন্তু যাদের বাসায় রুখসানার মত মেয়েরা কাজ করে যাচ্ছে তারাতো চাইলেই পারে তাদের স্বপ্নটি পূরণ করতে, রুখসানার মত মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে তাদের মাঝে সুপ্ত প্রতিভাগুলো বিকশিত করতে এবং তাদের চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে । তাহলে অসহায় দুস্থ শিশুদের স্বপ্ন পূরণে আর কোন অন্তরায় থাকতোনা । আমি এসব ভাবছিলাম, আর রুখসানা জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলো । তার চোখে মুখে স্বপ্ন ভাঙ্গার মিছিল । এসব অবলোকন করতে করতে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধুলী বিবাড়ীয়া স্টেশন স্পর্শ করলো । এরই মধ্যে রুখসানারও নামার সময় হয়ে গেছে । আমার মনটা কেঁদে উঠলো । রুখসানার জন্য যদি কিছু করতে পারতাম! ভালো লাগতো । তার পাশের সীটেই তার বাবা মা বোনেরা তাকে ডাকছে নেমে যেতে । এরই মাঝে জানতে পারলাম রুখসানার আর দুই বোনের নাম, জান্নাত ও শারমীন। ভাইয়া আসি বলে রুখসানা নেমে গেল, ভালো থেকো আবার দেখা হবে বলে আমি বিদায় জানালাম। কিন্তু, সত্যিই কি আবার দেখা হবে? আমিকি রুখসানার জন্য কিছু করতে পারবো? এসব এসব ভাবতে ভাবতে পরক্ষণেই খুব আফসোস হলো । আবার মনে পড়লো আমার অক্ষমতার কথা, কিন্তু সক্ষম অনেক ব্যক্তিই এ দায়িত্ব নিতে পারে । এগিয়ে আসতে পারে রুখসানার মত অসহায় শিশুদের পাশে দাড়াতে ।

হঠাৎ মনে হলো, রুখসানাকে ঈদের বকশিশ দেয়া হলো না । দৌড়ে ছুটে গেলাম ট্রেনের দরজায়, ততক্ষণে রুখসানা ও তার পরিবার অনেক দূরে চলে গেছে । আর ট্রেনটিও ছেড়ে দিলো । খুব মন খারাপ হলো, আমিতো কিছু করতে পারিনি, জানিনা আবার দেখা হলে কিছু করতে পারবো কিনা । কিন্তু প্রভাবশালী এবং সক্ষম ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা রাখলাম । আমার একটি চাওয়া অপূর্ণ থেকেই গেল, আর সেটা হচ্ছে অন্তত ঈদের বকশিশটা তার হাতে দিয়ে দিয়ে তার মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটাতে । পাশাপাশি প্রত্যাশা থাকবে যদি কখনো সক্ষমতা হয় তবে এসব অসহায় দুস্থ শিশুদের পাশে দাড়াতে এবং তাদের স্বপ্নটা পূরণ করতে । আল্লাহ হয়তো সে তাওফীক দান করবেন, আর যাদের তাওফীক আছে তারা যেন এগিয়ে আসেন ।

চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে রুখসানা তাকিয়ে ছিলো । কি ভাবছিলো সে? তার সীমিত গন্ডির মধ্যেই হয়তো স্বপ্ন বুনছিলো আবার পারিপার্শ্বিক বাধাবিঘেœ সেই স্বপ্নেরই ভাঙ্গাগড়া দেখছিলো । কোন একসময় তার সেই অভিব্যক্তি আমার ক্যামেরায় বন্দি হয়েছিলো ।



নরসিংদী স্টেশন পার হওয়ার প্রাক্কালে রুখসানা ।

সেই মেয়েটির নাম রুখসানা, যার ঈদের বকশিশ পাওনা রয়ে গেছে, পাওনা রয়ে গেছে তার স্বপ্ন পূরণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আরেক ধাপ প্রচেষ্টা । সেই মেয়েটির মত অসহায়, স্বপ্ন ভাঙ্গা গড়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা নিষ্পাপ শিশুদের অপেক্ষায় থাকলাম । অপেক্ষায় থাকলাম ঐসব অসহায়, দুস্থ ও গরীব শিশুদের জন্য যারা অর্থের অভাবে পড়াশুনা করতে পারছেনা । বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা যেন তাদের পাশে এগিয়ে আসতে সক্ষম হয় । এখন শুধু অপেক্ষা, অপেক্ষা শুরু পরিবর্তনের জিন্য, নতুন করে আবার গর্জে উঠার জন্য, রুখসানার মত অসহায় দুস্থ শিশুদের ঈদের বকশিশ হাতে তুলে দেয়ার জন্য, তাদের মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফোটানের জন্য, পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়ে কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা হাতে নেয়ার জন্য, তাদেরকে নতুন জামা কাপড় দিয়ে ঈদের আনন্দকে দিগুণ করার জন্য, স্বপ্ন গড়ার স্বাক্ষী করে নিজেদেরকে কিছুটা নিয়োজিত করার আনন্দে গা ভাসিয়ে দেয়ার জন্যে। হয়তো এটাই তাদের কাছে ঈদের আনন্দ, আর আমাদের কাছে জীবনের চরম ও পরম স্বার্থকতা।

আমার ব্লগ ।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×