somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংকটের মাঝেও রেল আস্থার প্রতীক

২২ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা পরিসংখ্যান আৎকে উঠার মত! ১৯৪৭ সালে যখন তৎকালীন পূর্ব বাংলা দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে বৃটিশ কলোনী থেকে বেরিয়ে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করে, সেই সময় এ অঞ্চলে, অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে পাকা সড়ক ছিল সাতশত কিলোমিটার এর কম এবং রেল লাইন ছিল ১৮০০ কিলোমিটার।

২০১০ সালে, স্বাধীন দেশে রেল নেটওয়ার্ক ১৮৩৫ কিলোমিটার এবং সড়ক পথ ২ লক্ষ ৭০ হাজার কিলোমিটার এর বেশি। অনুমান করুন, কত হাজার গুণ সড়ক পথ বৃদ্ধি পেয়েছে! অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক নির্ভর করা হয়েছে। বলে রাখা ভাল, বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা সেতু নামেও পরিচিত) হবার পূর্বে বৃটিশদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রেল লাইনের দৈর্ঘ কমে গিয়েছিল। লোকবল সংকট, ইঞ্জিন ও কোট সংকটে খুলনা-বাগেরহাটসহ কয়েকটি রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ করা হয়।

অথচ এ রেল হতে পারত বাংলাদেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু বহুজাতিক ঋণদাতা গোষ্ঠী ও সুবিধাবাদী আমলা-রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারকদের দৌরাত্মে ও লালসায় রেলখাত ধ্বংস করা হয়েছে।

রেলের বিরুদ্ধে যারা এরা খুবই শক্তিশালী। কারণ সড়ক পথে অনেকের ব্যবসা হয়। গাড়ি নির্মাতা, বিক্রেতা যেমন সড়ক নির্ভর যোগাযোগের কথা বলে এবং এজন্য নানাভাবে প্রভাবও বিস্তার করে। তেমনি ছোট-বড় অনেক কন্ডাক্টর (এর মূলত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত) সড়কের নানা কাজে লাভের মুখ দেখে। আবার সড়ক নির্মাণ কিংবা সেতু নির্মাণ-এসব কাজে অনেক টাকা কমিশন আসে আমলা (মূলত সেতু বিভাগ-সড়ক বিভাগসহ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়) এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রীর কাছে! এসব আর এখন গোপন নয়। শুধু তাই নয়, এসব কাজের কমিশন কখনও কখনও সরকারের উচ্চ পর্যায়েও যায় বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাই যোগাযোগ খাত সড়ক নির্ভর করার একটা প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা থাকে এদের। এজন্য অন্য দুটি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক যোগাযোগ খাত; রেল ও নৌ'খাত ধ্বংস করারও অপচেষ্টায় এদের লিপ্ত থাকতে দেখা যায়।
স্বাধীনতার পর, যখন রেল বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল তখনও রেল লাভজনক ছিল। কিন্তু আশি সালের পর থেকে বহুজাতিক ঋণদাতা গোষ্ঠীর মদদে রেল ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে ধারা এখনও অব্যাহত আছে।

বিভিন্ন নদীর উপর এমনভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে যার ফলে নৌ চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতুর উচ্চতা কম থাকায় অনেক সেতুর নীচ দিয়ে বর্ষাকালে নৌ চলাচল করতে পারে না। নৌ'খাত এখন অযোগ্য মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে বাজেট হত তার ৭৫ভাগের বেশি ব্যয় হত শুধু সড়ক খাতে, বাকী ২৫ভাগেরও কম বরাদ্দ হত নৌ ও রেল খাতে। উপরন্ত বিভিন্ন জরুরি সময়ে রেল ও নৌ খাতের বরাদ্দ কমিয়ে তা সড়ক বা সেতু'র নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যয় করার নজিরও বিদ্যমান।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক নির্ভর হওয়ায় যাতায়াত ব্যয়, যানজট, দূষণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে দূর্ঘটনা ও মানুষের প্রাণহানি। শুধু নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শিতা ও স্বার্থকেন্দ্রীকতার কারণে নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ খাত রেল আজ নাজুক অবস্থায়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমও দায় এড়াতে পারে না। রেলকে লোকসানী খাত হিসাবে বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় গণমাধ্যম মেতে থেকে রেলবিরোধীদের হাতকেই শক্তিশালী করেছে। অথচ সড়ক খাত রেলের চাইতেও বেশি লোকসানী খাত, সে কথা জোরালোভাবে উঠে আসেনি।

বর্তমান সরকার একটি স্বতন্ত্র রেল মন্ত্রণালয় করেছে সত্যি। কিন্তু রেল এর এখনও উন্নয়ন ঘটেনি। মন্ত্রী সুরঞ্জিত চেষ্টা করছিলেন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিলেন। কিন্তু সড়ক পরিবহন ব্যবসায়ী-শ্রমিক, ঋণদাতা গোষ্ঠীসহ ভেতর-বাহিরের ষড়যন্ত্রে পরাভূত। ওবায়দুল কাদের এর মনোযোগ রেল এর চাইতে সড়কে বেশি।

এত সংকটের মাঝেও মানুষ রেলকে নির্ভরতার প্রতীক মনে করে। কিন্তু এখনও রেল লাইন থেকে রেল ইঞ্জিন সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে যখন, স্বল্পদিনের মাঝে বিশেষত ঈদ পূর্ববর্তী সময়ে চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহীতে রেল দূর্ঘটনা ঘটে তখন এটা আর দূর্ঘটনা হিসাবে দেখলে চলবে না। এটা ষড়যন্ত্র। কারণ রেল শিডিউল নির্ভর পরিবহন। একবার শিডিউল বিপর্যয় ঘটলে সাপ্তাহিক বন্ধ'র দিন ছাড়া শিডিউল ঠিক করা যায় না। অথচ ঈদের সময় বন্ধও থাকে না। মানে শিডিউল ঠিক করার সুযোগও নাই। এসব নীতি নির্ধারকদের মাথায় ঢুকে কিনা-বোঝা কষ্টকর।

আজ ময়মনসিংহ-ভৈরব রুটে রেল লাইন থেকে বগি সরে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এ ষড়যন্ত্র দেশী-বিদেশী স্বার্থান্বেসী মহলের, সব সরকারেই এ ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর আছে। এদের খুঁজে বের করা ও এদের শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।

ছবি: ছবিগুলো তুলেছেন আমার প্রিয় সানাউল ভাই। তিনি একজন বিশিষ্ট আলোকচিত্র সাংবাদিক , র্তমানে ইংরেজি দৈনিক দি নিউ এজ এর জৈষ্ঠ আলোকচিত্রী। এক সময় দৈনিক জনকন্ঠে আমরা সহকর্মী ছিলাম।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×