somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবেগ ও প্রফেশনালিজম।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা গ্রামে থেকেছেন, তারা দেখেছেন কি করে চাষ করা জমির মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরী হয়ে যায়।
জমির পাশ দিয়ে ঘুরে না গিয়ে একজন হয়তে কোনাকুনি হেটে গেলো, পেছনে কেউ থাকলে তিনিও সেই পথই নিবেন। পরবর্তিতে সেই দাগ অনুসরন করবেন অন্যরা, এবং সেভাবেই তা একটা রাস্তার রুপ ধারন করবে।

একটা অন্যায়কে যখন আপনি কোনভাবে মেনে নেন, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আরেকটা অন্যায়ের রাস্তা তৈরি করে দিবে।

আমরা খেলা বা যুদ্ধে দেখতে পাই, মানুষ বা লিডার কিভাবে একজন মানুষকে তাতিয়ে তুলে বা উতসাহ দেয়।
বিয়ের পিড়িতে বসা মেয়েকে পাশ থেকে কজন বলতে থাকে: বলো কবুল, বলো কবুল।
এটা ভালোই কাজ করে, কখনো কখনো তা প্রেসারও ক্রিয়েট করে।
প্রথম প্রথম মিটিং এ ফ্লোর পেলে কথা বলতে বুক কাঁপেনি, এরকম লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর।
এমনকি অভ্যাস না থাকলে যখন বুঝবেন অনেকে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, তখন পানি খেতেও গলায় আটকাতে চাইবে।

ক্রিকেটে আমরা প্রায়ই দেখি একজন বোলার মাঝে মধ্যেই ব্যাটসম্যনের দিকে কটমট দৃষ্টি নিয়ে তেড়ে আসেন। কখনো বাউন্সার মেরে তেড়ে আসেন, কখনো কখনো রানআউটের ছলে সজোড়ে স্ট্যাম্পের দিকে বল ছুড়ে মারেন যা দেখে মনেই হয় ব্যটসম্যেনের উপর রাগ ঝাড়তে ওভাবে বল ছুড়রেছেন।
কিন্তু এরকমটা একজন বোলার কেন করেন?
ক্রিকেট খেলা দেখেন এবং তা বোঝেন এমন যে কেউই বোঝে এর পেছনে বোলার বা ঐ দলের উদ্দেশ্যটা কি, যাকে আমরা স্লেজিং বলি, অর্থা‌ৎ ওই স্লেজিং এর পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি?
তার/তাদের উদ্দ্যেশ্য ব্যটসম্যনকে রাগিয়ে তোলা, তার শান্ত স্টিডি ভাবটা নষ্ট করে আক্রমনাত্নক খেলতে উদ্ভদ্ধ করা, যাতে আবেগের বশবর্তি হয়ে আক্রমনাত্নক শট খেলার প্রবনতা বাড়ে, এবং তাতে আউট হবার চান্সও বাড়ে।

আমাদের দেশের ক্রিকেটাররা সাধারনত এই বিষয়টা ভালো ট্যকল করতে পারেন না।
তখন আমাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা বলতে গেলে ধারাভাষ্যকাররা প্রায়ই বলেন: তাদের প্রফেশনালিজমের অভাব।
এই কথাটা সাধারনত তখন বলেন যখন কেউ অপ্রোয়জনৗয়ভাবে রিস্কি শট খেলে আউট হন।
উল্টোটাও ঘটে যখন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর যথেষ্ট প্রেশার আমরা ক্রিয়েট করতে না পারি।
কিন্তু প্রফেশনালিজমের অভাব কেন বলেন?
কেন বলেননা যে আবেগের অভাব?

কারনটা আছে আমাদের প্রচলিত কথার মাঝেই: আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না।
আরও বিস্তারিত বললে: কেবলই প্রেম, ভালোবাসার বাইরে দুনিয়ার আর কোন ক্ষেত্রেই ‘আবেগ’ নামক শব্দটার উপস্থিতি ভালো কোন ফল বয়ে আনে না।

আজকের এই দুনিয়াটা যাকে আমরা আধুনিক বলি, তা আধুনিক হয়েছে প্রফেশনালিজমের জন্যই।
আজকে যারা আমার এই লিখা পড়ছেন, তারাও আজকে অচেনা আমার লিখা পড়তে পারছেন কারও প্রফেশনালিজমের জন্যই।
কিসে পড়ছেন এই লিখা?
মোবাইল ফোনে? কম্পউটারে? কোন কোম্পানি বানিয়েছে ওটা? ডেল? এইচপি? নকিয়া? স্যামসাং? এ্যপল কিংবা এমআই? হুয়াওয়ে???
কি হতো যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক কিছু টাকা আয় করার পর দাতা হাতেমতাই হয়ে উঠতেন?
রাস্তার পাশে ক্ষুদার্তের কান্না দেখে আবেগি হয়ে নিজের ব্যবসার পূঁজি বিলিয়ে দিতেন???
হয়তো মহ‌ৎ কাজই হতো, কিন্তু আজকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যতগুলো লোক জব করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে পারছে, যতগুলো লোক প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বা তার বিপনন ও পরিবহন এবং তা ব্যবহার করে যতগুলো মানুষ বেঁচে থাকার জন্য অন্য বস্ত্র ক্রয় করতে পারছে, তা তার দান করে দেয়া মানুষের চাইতে কয়েক হাজার গুন বেশি।

দূনিয়ার সকল মানুষ যদি প্রফেশনালিজম ছেড়ে দাতা হয়ে সব বিলিয়ে দিতে থাকে, পৃথীবি স্থবির হয়ে যেতে খুব বেশিদিন লাগার কথা নয়।

আবেগ,
খুবই রিস্কি জিনিস।
সম্ভবত আমাদের চাইতে এর যত্রতত্র ব্যবহার অন্য কোথাও হয় না।
কেউ একজন ফেইসবুকে ভিডিও দিলো বাঘ কিভাবে হরিণ হত্যা করলো, তখন নিচে গালিসমেত কিছু কমেন্ট পাওয়া যায়: **** ভিডিও না করে হরিণটাকে বাঁচাতে পারতো।
আবেগ তাকে এটা মাথায় আসতে দেয়নি ফুড চেইনে এটাই হবার কথা ছিলো, বাঘটা এই হরিণটাকে মারতে না পারলে হয়তো তার লুকিয়ে রেখে আসা বাচ্চাগুলোরও খাবার জুটবে না।
আবার এটাও সত্যি তা অন্যভাবেও বলা যেতে পারে: হরিণটার জন্যও হয়তো তার বাচ্চারা অপেক্ষা করছে!
এখানে আবেগ তাকে একটা দেখিয়েছে, আরেকটা দেখতে দেয়নি। আর তাই তার হাত বা মুখ দিয়ে ওই অর্ধসত্যটা বের হয়েছে।
-----

১। নিরপেক্ষ চিন্তা:
কদিন আগে ড্রাইভার ও অন্য এক ব্যক্তির তর্কা-তর্কিতে ড্রাইভার তার পায়ের উপর গাড়ি তুলে দিলো, আর ড্রাইভারে এই জঘন্য কর্মকান্ডের জন্য আদালতকতৃক গ্রীন লাইন পরিবহনকে ৫০লক্ষ টাকা জরিমানা করলেন।
ঘটনাটা বেদনাদায়ক ছিলো, ড্রাইভারের সাহস দেখে অবাক হতে হয়! তার যথেষ্ট পরিমান কঠোর শাস্তির ব্যপারে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।

নি:সন্দেহে ওই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিলো মিনিমাম ২জন, একজন ওই ব্যক্তি নিজে, আরেকজন ওই ড্রাইভার। সেখানে গ্রীন লাইন পরিবহন কেন জরিমানার সম্মুখিন হবে তা আমার কাছে নেজ্য মনে হয়নি। যদি ওখানে এমন কোন ব্যপার থেকে থাকে যে গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক বা কোন কর্মাকর্তার নির্দেশে এমনটা হয়ে থাকে, কিংবা ড্রাইভারের বৈধ কোন কাগজ/লাইসেন্স ছাড়াই ওই বাস ড্রাইভারের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা ন্যজ্য মানা যেতেই পারে।
(যদিও আদালত সবকিছু আমলে নিয়েই ওই রায় দিয়ে থাকতে পারেন বলেই বিশ্বাস করতে চাই)।
কিন্তু ওই ব্যক্তি ঠিক কি কারনে বাসের সামনে ছিলো, আর ড্রাইভার কোন সাহসে তার উপর দিয়ে বাস তুলো দিলো, দুটোই আসা উচি‌ৎ ছিলো বলে মনে করি।

আমরা অন্ধভাবে ভিকটিমের পক্ষ নিয়ে নেই এবং নিচ্ছি, কারন আবেগ, আহারে! লোকটার পা চলে গেলো!

গুলিস্তানে প্রতিদিন একটা ঘটনা দেখা যায়, আর তা হলো বাস ড্রাইভার/হেল্পারের কাছ থেকে এক(পরিবর্তন হয়) ব্যক্তির টাকা উত্তোলন।
কখনো কখনো দেখা যায় টাকার পরিমানে গড়মিল হলে ওই ব্যক্তি বাসের সামনে দাড়িয়ে থাকেন যেন বাস যেতে না পারে। বাসভর্তি মানুষের চি‌ৎকার চেচামেচিও কাজ হয় না যতক্ষন না পর্যন্ত তার চাহিদামতো বা মনমতো চাঁদার পরিমান মিলছে।
অফিসফেরত ক্লান্ত যাত্রিদের অনেকেই বলে ওঠেন: “ওর উপর দিয়া ইঠাই দে!”!
এই ক্ষেত্রে আসলে আপনাদের কার কি মত কাজ করছে???

কোন একদিন যদি কোন বাস ড্রাইভার সত্যি সত্যিই ওই চাঁদা উত্তোলকারীর উপর দিয়ে বাস চালিয়ে নিয়ে যান, বিচারে কি ওই ব্যাক্তির কর্মকান্ড উঠে আসবে???
আমার মনে হয় ‘না’। বাসের গুটিকয়েক যাত্রি যারা ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন, সুযোগ পেলে তারা হয়তোবা কিছু বলতে চাইবেন, কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় তারাও দৌড়েই পালাবেন।
দৌড়ে পালাবেন কেন???
কারন আমাদের একদল যে লাঠিসোটা কেরোসিন নিয়ে ধেয়ে আসছে বাসে আগুন ধারানোর জন্য!!!
কে থাকতে চাইবে ওই লাঠি আর আগুনের মাঝে????
আর আমরা যারা মানে ১৫কোটি বিয়োগ সর্বোচ্চ ৭০-৮০জন (যারা ঘটনা সচক্ষে দেখেছেন), সবাই বলবে ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই। সেই আবেগ!
(এখানে বলতে চাইছি না গ্রীন লাইনের নিচে পা হাড়ানো ওই ব্যক্তি দোষি ছিলেন, এটাই বলতে চাইছি না দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কোন ড্রাইভার সত্যি সত্যিই কারও উপর দিয়ে এভাবে বাস চালিয়ে দিক। শুধু বলতে চাইছিলাম বিবেচনায় সবটুকু আসা উচি‌ৎ) ।

আমি ড্রাইভার নই, এও জানি এভারেজ ড্রাইভারদের চরিত্র বা অভ্যাস খুব একটা ভালো থাকে না। এমনকি বিভিন্ন সময় ড্রাইভারদের উল্টা-পাল্টা গাড়ি চালানোর ঝামেলায় বিপদেও পরেছি। কিন্তু তাই বলে যা নেয্য মনে হয়েছে তা বলতে না পারার কোন কারন নাই।
----

২। আবেগের বিশৃঙ্খলতা:
অনেকেরই মনে থাকার কথা- কয়েকমাস আগে কেরানীগঞ্জের দিকে বাবা সহ স্কুলফের‌ৎ দুটু বাচ্চা মোটরসাইকেলে করে ফেরার সময় ট্রাকের নিচে চলে যায়, যেখানে দুটু বাচ্চাই মারা পরে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলেছিলেন: ট্রকটার চাকার সাথে বাচ্চাগুলো কিছুক্ষন এমনভাবে আটকে ছিলো, ট্রকটা যদি দাড়াতো তবে হয়তো বাচ্চাগুলো বেঁচে যেতো।

আচ্ছা, ট্রাকটা দাড়ালো না কেন???
হতে পারে ট্রাক ড্রাইভার মাতাল, ভিতু কিংবা অত্যন্ত বাজে লোক, তাই দাড়ায়নি। ততটুকুই???
আমি আপনিতো ওখানে ছিলাম না! কিন্তু উপস্থিত না থেকেও কি আমাদের কোনই দায় নেই???

ভাবছেন আমার দায় কিভাবে?
মনে করুন ট্রাকটা ওখানে হার্ডব্রেক করে দাড়িয়েই পরলো, ট্রাক ড্রাইভার নিচে নেমে চাকার নিচ থেকে বাচ্চাগুলোকে বের করে আনার মতো হলে বের করতে ট্রাই করলো, কিংবা আহত লোকটাকে ধরে তুললো।
কিন্তু ট্রাক ড্রাইভারকে কি আমরা বাঁচতে দিতাম???
ট্রাকটা ওখান থেকে আস্ত ফের‌ৎ যেতে পারতো???

আমাদের দায়টা কোথায় আঁচ করতে পারছি আমরা?
কিছু হলেই কাউকে গনধোলাই দিয়ে হত্যা করে ফেলা, কিছু হলেই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া, এই অভ্যাসটা কিভাবে এলো? এর বিচার কি হওয়া উচি‌ৎ না???
এই ঘটনাকে স্বাভাবিক মেনে নিলে ড্রাইভারে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাবার প্রবনতাটাও কি একেবারেই স্বাভাবিক নয়???

আমরা এও জানি প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দিলেও ড্রাইভারের বিচার হয় না বা হবে না, কিন্তু তার পরও এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে কি সুস্থ কিছু কখনোই আশা করতে পারবো?
সকাল বিকাল হায় হায়ই করে যাবো, কখনোই ভালো কোন ফল আমরা পাবো না।
(যদিও আমি জনসাধারনের এ ধরনের কর্মকান্ডেও প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ি করবো, প্রথমত সঠিক বিচার না হওয়া। দ্বিতিয়ত এই ধরনের গন অপরাধ প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনে গনবিচার না করার জন্য)।

[যতটুকু মনে পরে, ওই ঘটনার কদিন পরই আরেকটা স্কুলছাত্র আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকে আগুন দেয়। সেটা অতটা ভাইরাল হয়নি, কারন ছেলেটা মরেনি, এবং একটা বাস বা ট্রাকে আগুন দেওয়া তেমন বড় কোন ঘটনা নয়।]
----

৩। কন্টিনিউইটি প্রবলেম:
সিনেমা বা নাটক যারা দেখেন, তাদের মধ্যে কিছু লোক সাধারন দর্শকদের চেয়ে কিছুটা বেশি দেখেন। কোন অসঙ্গতি থাকলে যাদের চোখে সহজেই ধরা পরে যায়।

তারা একটা জিনিস অনেক সিনেমা বা নাটকে দেখে থাকবেন: দুটো দৃশ্যে একজন অভিনেতা/অভিনেত্রীর ফেইস/বডি এক্সপ্রেশনের ভিন্নতা।
আরেকটু সহজ করে বললে: একটা এ্যাংগেলে হয়তো একজন পারসন মুচকি হাঁসছিলো, কিন্তু অন্য একটা এঙ্গেলে সুইচ করতেই দেখা গেলো মুখের সেই মুচকি হাঁসি ভাবটা নেই।

আমরা জানি একটা নাটক বা সিনেমা শুটিং করতে প্রচুর টেইক নেয়া হয়।
এত এত টেইক বা বিচ্ছিন্ন ক্যমেরা ফুটেজ নেয়ার মাঝে এরকম ক্ষুদ্র বিষয় মাথায় থাকে না।
তাছাড়া যখন দৃশ্য ইডিট করা হয়, তখন তা হয়তো করছেন অন্য কোন কেউ, এত বিশাল কর্মযগ্যে ওসব ঢাকা পরে যায়।
কিন্তু আমরা যারা পর্দার সামনে বসে দের-দুইঘন্টায় ছবিটা দেখছি, তাদের চোখে ওটা সহজেই ধরা পরে, কারন আমরা বিশাল কর্মজগ্যটার মাঝে নেই।

একটা রাস্তা, একটা হাইওয়েতে একটা গাড়ি বা বাস কতটা গতীতে চলা উচি‌ৎ?
আমি আমার খালার বাসা কুমিল্লাতে প্রায়ই বেড়াতে যাই।
ওখানে বেড়াতে যাচ্ছি বিগত ১৫বছরেরও বেশি সময় ধরে।
আজ থেকে ১০-১২বছর আগেও ঢাকা-কুমিল্লা প্রায় ৯০কি.মি. রাস্তা যেতে দেরঘন্টা সময় লাগতো। এভারেজ গতি কাউন্ট করলে তখন বাসের গতি ছিলে ৬০কি.মি/ঘন্টা।
(যদিও ইদানিং নির্মানাধিন ৩টি ব্রিজের কারনে তা ২ঘন্টা থেকে ৭ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায়।)
যদি তা এখনো দেরঘন্টা স্ট্যান্ডার্ড ধরি, তবে বাসটি ৬০কি.মি গতিতে চলে না। রাস্তা ফাঁকা পেলে তা চলে মোটামুটি ৯০-১০০কি.মি গতিতে। ট্রাকের পেছনে পরে থেকে, বিভিন্ন বাজার, বিভিন্ন ক্রসিং ইত্যাদির কারনে তা এভারেজ ৬০কি.মি. এ পরে।

একজন ড্রাইভার যখন একটি বাস ৮০-৯০কি.মি গতিতে চালিয়ে নিয়ে যান, কন্টিনিউয়াসলি তার সামনে বিভিন্ন ধরনের বাধা আসতে থাকে। কখনো ট্রাক, কখনো বাস, রিকশা, সিএনজি, মানুষ, মোটরসাইকেল, ভটভটি, এমনকি গরু ছাগলও দেখা যায়। প্রতিদিন তিনি এসব অবসট্যাকলস পার করে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান।

আমি হয়তো রাস্তা পার হবো, আমি দেখছি কেবলই একটা বাস, কিন্তু একজন ড্রাইভার দেখছে হাজার হাজার জিনিসের মাঝে আরেকটা জিনিস, বা আরও একটা মানুষ কিংবা আরেকটা অবসট্যাকল।
একজন ড্রাইভার প্রতিদিন এক্সিডেন্ট করেন না।
কিন্তু তিনি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বা গাড়ি পাস করে আসেন।
সবাই গাড়ির সামনে দিয়ে পার হয়ে যায়, দৌড়ে সরে যায়, তার মধ্যে খুব সাভাবিকভাবেই পথের মানুষদের উপরও অবচেতন মনেই কনফিডেন্স চলে আসে যে লোকটা সরে যাবে।
কিন্তু কোন এক এক্সেপশনে একটা মানুষ যিনি দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন, তিনি সরেননি বা ঠিক টাইমমতো সরে আসতে পারেননি। ঘটনার আকস্মিকতায় একটি দ্রুত গতির গাড়ি সবসময়ই স্লো করে আনা সম্ভব হয় না।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন মানুষ দেখে কেন ড্রাইভার যথেষ্ট দূরে থাকতেই গাড়ি স্লো করলো না?
আপনার কথা ঠিক হতে পারতো কেবল তখন, যখন আপনি কেবলই একজন মানুষের কথা বলতেন। আপনি বলছেন হাজার জনকে পাস করে একঘেয়েমিতে ভরা একটা চোখের সামনে ১জন মানুষের কথা।
এমনকি কোন পিতার যদি ১০০০বাচ্চা থাকে, ১জনের মৃত্যুতে তিনি ততটা শোকাতর হবেন না যার একমাত্র বাচ্চা মরেছে তার মতো।
পূর্বেই বলেছিলাম, কন্টিনিউইটি প্রবলেমের কথা, রাস্তা পার হওয়া পথিকের উপর কনফিডেন্স চলে আসার কথা, কারন আগের সবাই সরে গিয়েছিলো, সরে যেতে পেরেছিলো।

তাছাড়া আমাদের ঘনবসতির এই দেশে সব ড্রাইভার যদি প্রতিটি মানুষকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপদ দুরত্ব মেনে গাড়ি স্লো করতে থাকে, তবে তা বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগাবে সন্দেহ নেই। আর একজন গাড়ির একজন যাত্রী হিসেবে আপনার কাছে কখনোই তা যৌক্তিক মনে হবে না।

রাস্তায় যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, যদি তা ফুটপাথে না হয়, যদি তা জেব্রা ক্রসিং এ না হয়, যদি তা পার্কিং এর এড়িয়াতে না হয়, তবে ওই এক্সিডেন্টে কার দায় টা বেশি?
রাস্তা ক্রস করার সময় সর্বপ্রথম দায়িত্বটা ক্রসকারি ব্যাক্তির উপর বর্তায় গাড়ি দেখে পার হবার।
ওটা রাস্তা, ওই রাস্তা তৈরী করা হয়েছে একটা গাড়ি দ্রুত দৌড়ে যাওয়ার জন্যই।
এটা ক্রস করা ব্যাক্তির নিজের দায়িত্ব ইনকামিং ট্রাফিকের উপর নজর রেখে রাস্তা পার হবার।
এমন অনেক ঘটনাই নিজে প্রত্যক্ষ করেছি যেখানে আরও একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। একাধিকবার এমন হয়েছে কাউকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে বহন করা বাসটি খাদে পরে যেতে পারতো।
এক্সেপশন থাকে, যেখানে ড্রাইভারের বেপরোয়া চলন দুর্ঘটনার মূল কারন।
কিছুদিন আগে ফুটপাথে বাস উঠিয়ে কিছু স্কুল ছাত্র-ছাত্রির মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেছি, এক্ষেত্রে দোষি ব্যাক্তি নিয়ে কারওই সন্দেহ থাকার কথা নয়।

শুধু এ ব্যপারে সতর্ক থাক উচি‌ৎ, ঘটনার পেছনে ঘটনা যেন আগে জানার সুযোগটা দেয়া হয়, আগ-পিছ না ভেবে কেবল আবেগের বসবর্তি হয়েই যেন গনধোলাই, ভাংচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেবার মতো ঘটনা না ঘটে।
----

৪। দৈত নীতির আম পাবলিক:
বলছিলাম প্রফেশনালিজমের কথা।
শিক্ষকতা ও ডাক্তারী পেশাকে আমরা পেশা’র রুপে দেখতে পারি না।
আমরা ধরেই নেই শিক্ষা এবং ডাক্তারী একটি মহান পেশা, যা কেবলই চ্যারিটি আকারে সেবা প্রদান করবে।
আমরা মানতে পারি না ১জন ডাক্তার কেন ছুটি নিবে।
আমরা মানতে পারি না ১জন প্রফেসর কেন তার ভিজিট ১০০০টাকা নিবে।
আমরা কথায় কাথায় বলি: ডাক্তার ব্যবসা খুলে বসেছে, ডাক্তার ডাকাত….
কিন্তু আমরা বুঝতে চাই না, চ্যারিটি দিয়ে একটা সিস্টেম কখনোই টেকশই হতে পারে না।
আমরা বুঝতে চাই না ডাক্তারীও ইঞ্জিনিয়ারদের মতোই আরেকটা পেশা।
আমারা বুঝতে যে ডাক্তারদের বরং আরও বেশি পেশাদার হওয়া উচি‌ৎ, কারন তাদের পেশাদারিত্ব বা প্রফেশনালিজমের মাঝেই আমাদের জন্য উত্তম সেবা রয়েছে। একজন ডাক্তার যত বেশি পেশাদার হবেন, তার কাছ থেকে তত বেশিই উ‌ৎকৃষ্ট মানের সেবা আমরা পেতে পারি। একজ শিক্ষক যত বেশি পেশাদার হবেন, তিনি তত বেশিই ছত্র/ছাত্রীদের প্রতি মনযোগী হবেন এবং তত বেশী শিক্ষা তিনি আমাদের প্রদান করবেন।

একজন প্রফেসর ১০০০টাকা ভিজিট নিয়ে যে আবেগী কথাটা আমরা অবলিলায় বলে ফেলি, তা’ও কতটা যৌক্তিক???
আবেগটা দূরে সরিয়ে রাখে একটু ভেবে দেখুন: আপনি একজন প্রফেসরের কথা বলছেন!
আপনি ভার্সিটি পড়ুয়া একজন ছাত্রকে টিউটর হিসেবে রাখলে মাসে কত দিচ্ছেন?
টিচার যদি ভার্সিটি পড়ুয়া না হয়ে ভার্সিটি পাশ দেওয়া একজন স্কুলের টিচার হন, তবে কি তার টিউশন ফি সমান হবে?
এবার আপনিই লজ্যিক্যালি চিন্তা করে দেখুন, একজন প্রফেসর যদি আপনার বাচ্চার অংকের শিক্ষক হন, তিনি কত পেতে পারেন?
কিংবা আর্কিটেকচারের একজন প্রফেসর আপনার বাড়ির ডিজাইন করবেন, তার জন্য কত টাকা প্রদান করলে আপনার তা যৌক্তিক মনে হবে?
বুঝতে চেষ্টা করুন, তিনি ভার্সিটি পাশ করেই প্রফেসর হয়ে যান নি, তিনি কবছর শিক্ষকতা করেই প্রফেসর হয়ে যান নি, লজ্যিক্যালি ওনার আজকের এই অবস্থানটা বুঝতে চেষ্টা করুন।

আর একজন প্রফেসর যদি পানির দরে নিজের সেবা দিতে থাকেন, তবে মিনিমাম ৬বছরে অনার্স লেভেল পার হওয়া একজন এমবিবিএস ডাক্তার কি পরিমান ভিজিট পেতে পারেন?
মনে হয় না তা আমরা এভারেজে একজন ভিক্ষুককে যে টাকা দেই তার চেয়ে খুব একটা বেশি কিছু হবে।

দূনিয়াটাকে আপনি নিষ্ঠুর বলতেই পারেন।
ধরুন আগামীকাল এ্যাপল ও স্যামসাং ঘোষনা দিলো: আইফোন১০ ও গ্যালাক্সি এস১০ মাত্র পাঁচশত টাকায় পাওয়া যাবে।
কি মনে হয়? এ্যপল ও স্যামসাংয়ের শো-রুম আস্ত থাকবে?
বসুন্ধরা বা যমুনা সিটি আস্ত থাকবে??? এ্যাপল ও স্যামসাং আমাদের চাহিদার যোগান দিতে পারবে???
কিংবা ধরেন যদি বলা হয় আগামীকাল থেকে ইলিশ ও গরুর মাংসের কেজি ১০টাকা, বাজারে ইলিশ আর গরু পাবেন??? দেশের গরু বিলুপ্ত করে দিতে কদিন লাগবে বলে মনে হয়????

দুনিয়ার সকল পন্য বা সার্ভিসের দামই তার চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভর করে।
মাটি খুড়েই যদি স্বর্ন পাওয়া যায়, কালকে তার অর্থনৈতিক মূল্য শুন্য হয়ে যাবে।

এবার ভাবুন, একজন প্রফেসর যদি বলে কালকে থেকে ভিজিট ১০টাকা, ওনার সিরিয়াল আপনি পাবেন?
এখন অনেক প্রফেসরকেই নাকি ৩মাস আগে সিরিয়াল দিতে হয়, তখন ৩বছরেও তার দেখা পাবেন???
৮০০ বা ১০০০টাকা ভিজিট নেয়ার পরও ইতিমধ্যেই আমাদের মাঝে সর্দির জন্যও প্রফেসর দেখানোর প্রবনতা শুরু হয়ে গেছে, কিছু থেকেই কিছু হলেই প্রফেসর লাগে, আবেগ রেখে ভাবতে পারেন পরিস্থিতি কি দাড়াতে পারে।

এতো গেলো ভিজিটের কথা।
বলতে গেলে পৃষ্ঠার পর প্রষ্ঠা বের হয়ে আসবে।
চলে আসবে প্রশাসনের দায়-দায়িত্বের কথা, দুর্নিতির কথা, চলে আসবে হসপিটাল কতৃপক্ষের চুরি, অবৈধ ও ফাঁকিবাজ ডাক্তারের কথা।

একটা দেশের সরকার, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মাচারী, মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসন, পুলিশ, র‍্যাব, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, অফিসার, ব্যবসায়ি এমনকি সাধারন মানুষ, সবজায়গাই যখন লুটতরাজ, চুরী, বাটপারি, অন্যায়, অবিচার, খুন, ধর্ষন ইত্যাদিতে লিপ্ত, শিক্ষক বা ডাক্তারই বা তার বাইরের ভাবতে পারি কিভাবে?

অবস্থাটা কি এমন যে আমরা যত চোরই হই না কেন, শিক্ষক ও ডাক্তার মহান পেশায় আছেন তাই তারা তা করবেন না?

কেউ হয়তো আমার মাঝে ডাক্তারীর গন্ধ পেতে পারেন। কারন আমরা কিছু গোষ্ঠির পক্ষের কথা বলা কথা শুনতে পারি না। আবেগ!
আমরা ডাক্তারকে কসাই রুপেই দেখতে চাই।
আমরা পাকিস্তানের নাম মুখে নেওয়া লোককে রাজাকার রুপেই দেখতে চাই।
ভারতকে ভালো লাগে এমন লোকদের ভাদা বলতে চাই।

আমি ডাক্তার নই, আমি পেশায় একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আরও খুলে বললে একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ডেভেলপার, মাঝে মাঝে আউটসোর্সিং করেও সফটওয়্যার সার্ভিস প্রদান করি বা নিজের সময় বিক্রি করে খাই। আমার ব্লগে আগের কিছু লিখা পড়লেও এ ব্যাপারে কিছুটা আঁচ পাওয়া যেতে পারে বলেই মনে করি।

তবে আমার দৃষ্টিতে যা নেয্য মনে হয়েছে তা বলেছি, আর নেয্য কথা বলতে কোন প্রফেশনে থাকা লাগেনা বলেও বিশ্বাস করি।
(আমার নেয্য ভাবনাগুলো ভুলও হতে পারে, আমি একদম সঠিক কথা বলছি তা দাবি করবো না।)
----

৫। চলতি হাওয়ায় গা এলানো:
চিকি‌ৎসা সেক্টরে আমাদের চলতি হাওয়াটা হলো- ডাক্তাররা কসাই, হাসপাতাল খারাপ, বাংলাদেশে কোন ভালো চিকি‌ৎসা হয় না।
আমরাও জেনে না জেনে, কখনো ভুগে, কখনো ভোগান্তির গল্প শুনে এই ব্যপারটা নিয়ে অনেক উচ্চ বাচ্চ করি।
আমরা বাস্তবটা বুঝতেই চাইনা, আগ-পিছের সিমাবদ্ধতাটা মানতে চাইনা। আসলে খুজি কিভাবে একটা পোস্ট লিখলে বেশি মানুষ খাবে, তার পেছনেই ছুটি।
আবার কখনো কখনো নিজের ভেতরই কারনে-অকারনে একটা ঘৃনা তৈরী করে নেই।

এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ট্রেন্ডটা হচ্ছে দেশি চিকি‌ৎসাব্যবস্থাকে গালি দিয়ে চিকি‌ৎসার জন্য ভারতে চলে যাওয়া।
এখানে পানি দেয় মিডিয়া, ট্রাভেল এজেন্সি এবং রোগীর সাথে ফ্রিতে ভারত ভ্রমন করতে পারার সুযোগে নিকটাত্নীয়।
(তাদের লাভটা কোথায় তা ভাবলে না পাওয়ার কথা নয়)

উপরে লিখা পড়ার সাথে সাথেই আমি হয়তো কমেন্ট করতে চলে যাবেন আমকে বাংলা ওয়াশ করার জন্য। আমি বলবো না আমাকে আপনি বিশ্বাস করে ফেলুন, আমি বলবো আপনি একটু ভাবুন।

যারা ভারতের হাসপাতালের সাথে বাংলাদেশের হাসপাতাল বা চিকি‌ৎসার কথা তুলনা করে কথা বলেন বা লিখেন, আমি তাদের বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ভাবতে পারি না (এটা আমার একটা ব্যক্তিগত বা মানষিক সমস্যা বলতে পারেন) ।
ভারতে সাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত/বড় হাসপাতাল থাকতে পারে, তবে আমি বিশ্বাস করি না ভারতের এভারেজ চিকি‌ৎসা’র মান বাংলাদেশের চিকি‌ৎসা’র চেয়ে উন্নত কিছু।
পার্থক্যটা রোগীর সাথে থাকা অতিবুদ্ধি সম্পন্ন আত্নিয়-স্বজনের উপস্থিতি থাকা না থাকার।
তারা সবকিছুতে এত বেশি সন্দেহপ্রবন, কোন টেস্ট দিলেই সন্দেহ করেন তা টাকা খাওয়ার জন্য দিলো কি না, ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের সাথে হাত আছে কি না।
ঔষধ দিলেও সন্দেহ পোষন করেন, নিজেদের মতো পরিবর্তন করে নিতেও পিছপা হন না। এমনকি ফার্মেসির বিক্রেতার পরামর্শেও তা পরিবর্তন করে ফেলার ঘটনা ঘটে।
তার সাথে থাকে এন্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পুর্ন না করার মতো ব্যাপার।

অন্যদিকে ভারতে গিয়ে তারা থাকে বেড়ালের মতো।
ভিনদেশ, তাই যে যেমন যেভাবে বলে, সেভাবেই পালন করে এসে অনেক ভালো লাগে।
এমনকি তারা যদি গরুর মূত্রও গিলিয়ে দেন, মনে হয় তা সানন্দে গিলে আসবেন।
(এটা জাস্ট কথার কথা, কোন রুলসে স্টিক থাকা উচি‌ৎ, বিশ্বাস অনেক বড় ব্যপার)

আমি ব্যাক্তিগতভাবে যা দেখেছি, রিসেন্ট একটা ঘটনা আপনাদের শেয়ার করতে পারি।
(আমি ডাক্তার নই, তাই আমার বর্ননাতে কিছু ভুল থাকতে পারে, আমি একজন সাধারন মানুষ হিসেবে যা দেখেছি এবং তার কাছ থেকে যা শুনেছি, সেভাবেই বলছি)
আমার পরিচিত একজন, যিনি নিজেও সদ্য পাস করা এমবিবিএস ডাক্তার, যার পেটে ব্যথা হবার দরুন তিনি ডাক্তারের সরনাপন্ন হন।
তিনি প্রথমে যান কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে, সেখানে ডাক্তার কিছু মেডিসিন দিয়ে বাসায় যেতে বলেন, এবং পরে আবার আসতে বলেন।
রাতে ব্যথা প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি পাওয়াতে রাত ১১টার দিকে যান দয়াগঞ্জের ইবনে সিনাতে।
সেখানে একজন প্রফেসর এক্সরে ও আলট্রাসোনেগ্রাফি করান এবং বলেন লিভারে একটা ফোঁড়ার মতো দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি তাকে তার পরের দিন মিটফোর্ডে যেতে বলেন, যেখানে তিনি অপারেশন ছাড়া সেই ফোঁড়া থেকে পূজ বের করে আনবেন।
এখানে আমি অবাক হলাম: তিনি প্রাইভেটে বসে সরকারী হাসপাতালে নিয়ে কাজ করার কথা বলেন, যা হবার কথা ছিলো উল্টো!
প্যাশেন্টের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, তিনি সরকারীতে যেতে চাইছিলেন না।
তারপরও প্রফেসরের কথা রাখতেই তিনি গেলেন।
প্রফেসর পূঁজ বের করতে বসে বুঝতে পারলেন যা পূঁজ মনে হয়েছে, তা আসলে ওখানে নেই।
তিনি বুঝলেন আলট্রাসোনেগ্রাফি ইজ নট এনাফ, এর সিটি স্ক্যান দরকার।
(সিটি স্ক্যান অধিকতর ব্যয়বহুল, তাই ডাক্তার প্রথমে তা করতে বলেননি, কারন তার ধারনা অনুযায়ী পুঁজ হয়ে থাকলে সিটি স্ক্যান করানো অযথাই পয়শার নস্ট ভেবেছেন)
তার পরের দিন সিটিস্ক্যান করে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
ওই রাতে সাভাবিকভাবেই কিছু আত্নীয়সজন তাকে হাসপাতালে দেখতে আসেন, আমিও যাই।
আত্নীয় স্বজনদের কেউ কেউ আগে উল্লেখিত ব্যক্তিদের মতো বলতে থাকলেন: তুমি সরকারিতে কেন এলে? এত টাকা বাচায়া কি করবা??? দাড়াও বিআরবি হাসপাতাল(পান্থপথ) এ আমার পরিচিত ডাক্তার আছে, ওখানে চলে যাও। (এরকম আরও অনেক কথা, যা ইগোতে লাগার মতো)।
রিপোর্ট আসেত আসতে বৃহস্পতিবার, কিন্তু শুক্রবার কোন অপারেশন হবে না, শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তাই অপেক্ষা না করে ওই আত্নীয়ের কথা শুনে বৃহস্পতিবার বিআরবি’তে চলে গেলেন।
সেখানে আরেক প্রফেসর সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে বললেন লিভারের নিচে এড্রেনাল গ্ল্যান্ডের উপর বেশ বড় একটা টিউমার রয়েছে। ওটা এতই বড় অপরেশন করেই বের করতে হবে।
তিনি ওই অপারেশনের জন্য পিজি’তে ভর্তি হতে বললেন, যেখানে তিনি ওই অপারেশন করবেন।
এবার ওই আত্নীয়রার শুরু করলেন ইন্ডিয়া যেতে, এত টাকা পয়শা বাঁচিয়ে কি করবা, চলো ইন্ডিয়া, ওখানে ভালো হবে, এখানে কি না কি হয়!
কিন্তু প্যাশেন্ট পিজি’তেই ভর্তি হলেন।
যথারিতি তার টিউমার বের করে আনা হলো, যা ছিলো মোটামুটি বড়সর একটা ডালিমের সমান।
অপারেশনের কয়দিন পর যখন আস্তে আস্তে এনেসথেসিয়ার প্রভাব চলে যাচ্ছিলো, তখন প্যাশেন্ট অপারেশনের যায়গায় ব্যথা অনুভব করতে শুরু করলো।
ব্যাথাটা কন্টিনিউয়াস ও আস্তে আস্তে বাড়ছিলো।
আবারও টেস্ট করা হলো, কিন্তু কোন সমস্যা পাওয়া গেলো না, সবই নরমাল।
কিন্তু ব্যথা বারছিলো। ওই আত্নিয় স্বজনদের আবারও বলাবলি: বলছিলাম ইন্ডিয়া চলো, কি না কি হইসে! চলো এখনো, ওখানে গিয়ে দেখো কি করছে!
প্যশেন্ট রাজি হলো না, এনেসথেসিয়ার প্রভাব আরও যাওয়াতে তিনি বুঝলেন পেইনটা উপরের সারফেসে হচ্ছে, এবং পরে বুঝতে পারলেন সেলাইয়ের যায়গায় কিছুটা ইনফেকশন হয়ে পুজ জমেছে, তিনি নিজেও ডাক্তার বলে বুঝতে পারলেন ড্রেসিংয়ের সময় কিছু অনিয়ম হওয়াতে তা হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তিতে সেই পুজ বের করে আনার পরই তিনি ভালো অনুভব করতে থাকেন।
এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ।

এখন ভাবুনতো, ওই আত্নীয় স্বজনদের কথা শুনে তিনি যদি ভারতের রাস্তা ধরতেন?
ওনারা সহজেই আরেকজনের জন্য আরেকটা উদাহরন পেতেন, বলতে ওই তিনি ভারতে গিয়ে ভালো হয়ে এসেছেন।
আর যদি অপারেশনের পরে সামান্য পুঁজ সরাতেই যেতেন, তবে বলতেন দেশে ভুল চিকি‌ৎসা করছে, ভারেত গিয়ে ভালো হয়ে এসেছেন।
-----

এসব বিষয়ে অনেক গল্প শুনেছি, কিন্তু কিছু ঘটনা নিজে দেখেছি।
রুগীর আত্নীয় স্বজন অসুস্থতার সময় কিভাবে রোগীর উপকারে আসার বদলে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়, তা কেউ ভেবে দেখে না।
আর সারা বছর যাদের খবর থাকে না, দেখা সাক্ষাতের প্রয়োজন বোধ করেন না, অসুস্থ হলেই কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হলেই কেন সেখানে ভির করেন? অথচ যা হবার কথা ছিলো উল্টো! ওই ক্রিটিক্যাল সময়ে রোগ-জীবানু বহন করে, অন্য রোগীদের সমস্যা সৃষ্টি করে তারা হাসপাতালে ভির জমান।
না দেখতে গেলে মানুষজন কি না কি বলে!


কেউ কেউ উদাহরন দেন: দেশের কোথায় কেমন ভুল চিকি‌ৎসা হয়েছিলো। কাজ হলে ভুল হবে, চিকি‌ৎসা না থাকলে ভুল হবার সম্ভাবনাই নাই, কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার চিকি‌ৎসা হলে তাতে কিছু ভুলে হতেও পারে।

আপনি ইন্টারনেটে ভারতে ভুল চিকি‌ৎসার খবর খুজে দেখুন, গুগল সাজেশন কিভাবে কাজ করে তা নিশ্চই অনেকে জানেন?
তাও বলি, আপনি কোন একটা কিছু সার্চ করতে গেলে সেই সাজেশনটা গুগল করে, যা খুব বেশি বেশি লিখা হয়।
যেমন আপনি distance between লিখলেই সাথে সাথে চলে আসবে- earth and moon.
কারন সাধারনত distance between এর পর মানুষ ওটাই লিখে বা পিক করে।

এখন আপনি লিখুন: wrong treatments
স্পেইস বাটন হিট করার সাথে সাথেই দেখতে পাবেন in india
আর সার্চটা কমপ্লিট করে দেখুন তাদের নিউজ পোর্টালগুলোতে ভুল চিকি‌ৎসার বাহার।
তাছাড়া অতিরিক্ত চার্জ, বাটপারি এবং হয়রানি সবকিছুই কোন অংশে আমাদের চেয়ে কম নয়, বরং অনেক বেশি।
ওখান থেকে চিকি‌ৎসা করে কোন ফল না পেলে, কিংবা ভুল চিকি‌ৎসা হলে সেগুলো আর প্রকাশ পায় না।
মিডিয়া পকাশ করে না কারন তাতে তার লাভ নাই, ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যুক্ত ব্যাক্তির ওরকম কিছু বলার প্রশ্নই আসে না, আর রোগীর সাথে ভ্রমনকারী ব্যাক্তির আরেকটি ভ্রমন সুযোগ নষ্ট হবার মতো কথা বলাও বোকামির সামিল।


এই পোস্ট যখন লিখছি তখন গরম খবর মাশরাফির হাসপাতাল রেইড।
যেখানে তিনি ডাক্তারের অনুপস্থিত থাকা নিয়ে উচ্চবাচ্চ করেছেন, যথারিতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, পক্ষ-বিপক্ষ…
কেউ বলছেন তিনি কি করে নির্বাচন জিতেছেন তা বৈধ ছিলো কি না, কেউ বলছেন মন্দ করছে বলে কি ভালো কাজের চেষ্টা বন্ধ থাকবে কি না।

আমি বলছি এভাবে এগুলো করলে তা কেবল ভাইরালই হবে, চলতি হাওয়ায় গা এলানো হবে, কিন্তু কদিন পর যেই লাউ সেই কদু।
আপনি গাছের গোড়া ঠিক না রেখে আগায় পানি ঢালতেই পারেন, পানি ঢালাটা খারাপ কাজ নয়, কিন্তু তা ফলপ্রসূও নয়।

মাশরাফি যে হাসপাতালে রেইড দিয়েছেন, সেই হাসপাতালে বেশিরভাগ পদই শুন্য।
ধরুন ৩০জনের কাজ যদি ৫জন দিয়ে হয়, তবে ৩০টা পদ হয় কেন?
আর ৩০টা পদই যদি থেকে থাকে, তবে ২৫টি পদ শুন্য কেন?
রেইড যদি দিতেই হয়, কোথায় আগে রেইড হওয়া উচি‌ৎ?
কেউ কেউ বলবেন ধাপে ধাপে হবে, এই ধাপের শুরুটাই কি আপনাদের যুক্তিতে সঠিক যায়গা থেকে হচ্ছে?

আর হাসপাতাল ঠিকভাবে চলছে কি না, তা তদারকি করার জন্য কি কোন স্বাস্থ মন্ত্রনালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নেই? তারা কি করছেন?
তিনি নাহয় ডাক্তারদের রেইড দিয়ে কয়েকদিন হাসপাতালে রাখতে পারলেন, কিন্তু মন্ত্রনালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাদের এসব দেখার কথা ছিলো, তারা যে বাড়িতে ঘুমাচ্ছেন, তার রেইড কে দিবে??? আর একজন এমপি এভাবে রেইড দিয়ে কয়টা প্রতিষ্ঠান ঠিক রাখবেন? কয়টা স্কুল ঠিক রাখবেন যেখানে টিচার পড়ায় না? কয়টা সরকারি অফিসের কয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেছনে দাড়িয়ে থাকবেন যারা ঘুস ছাড়া নড়ে না?
আর একজন এমপি সরাসরি একজন ডাক্তার বা অন্য কোন কর্মকর্তা/কর্মাচারীকে চার্জ করতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নটাও কি আগে আসা উচি‌ৎ না? তিনি কি রাস্তার একজন সাধারন মানুষও যদি আইন ভঙ্গ করে, তাকেও চার্জ করার অধিকার রাখেন???

আমি কোনভাবেই বলতে চাচ্ছি না পর্যাপ্ত ডাক্তার উপস্থিত নেই বলে একজন ডাক্তারের ছুটি ছাড়া হাসপাতালে অনুপস্থিতি কোনভাবে বৈধ হতে পারে।
তবে সেখানে কোন এক্সেপশন ছিলো কি না, ডাক্তার বলে তারও কোন ইমার্জেন্সি থাকতে পারে।
আমি নিজেও অনেক ছুটি আগে কাটিয়েছি, পরের দিন এসে ছুটি পাস করিয়েছি, কারন আমি অফিসে আসতে পারবো না তা আগে থেকেই আমি জানতাম না।
তবে তা যে সবসময়ই ঘটে তাও না, ওই ডাক্তারের বক্তব্য এবং তার অতীত রেকর্ড কেমন আবেগি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সব কিছুই বিবেচনায় আনা উচি‌ৎ।
আবেগের বশে অনেক কিছুই বলা যায়, অনেক কিছুই করা যায়, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয় না।

রাষ্ট্রের ক্ষমতার র‍্যাংকিয়ের বিচারে মাশরাফি অনেক উপরে থাকতে পারেন, তবে একজন প্রফেশনাল ব্যাক্তি কখনোই পদের ধাপ স্কিপ করে ওরকম আচরন করতে পারেন না।
আরও সহজ এক্সাম্পলে বললে: আমি আমার অফিসের পিওনের ভুলে বা দায়িত্বের অবহেলায় সরাসরি তাকে বকঝকা করার অধিকার রাখি না। আমি তা পিয়নদের পরিচালনা করার বা তার রিপোর্টিং বসকেই তা জানাতে পারি, যা করার তিনি করবেন। এটাই সিস্টেম, আর সিস্টেমকে ডিঙ্গিয়ে কিছু করতে গিয়ে আমাদের দেশের কি হাল, তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি।

বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখা যেতো পুলিশ এসেই বলছে: “আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না” ।
আসলে তা আইনের বইয়ে আর বাংলা সিনেমার লাস্ট সিনের জন্যই বরাদ্দ।
মাশরাফিও বাসে আগুন দেয়া ওই জনগনের মতোই আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন।
আফটার অল- আমরা সবাই একই রকম!
----

৬। বিনা কষ্টের মিষ্টি:
বাসে প্রায়ই কিছু ভিক্ষুকের দেখা পাই।
গলায় ঝোলানো প্রেসক্রিপশন টাইপের একটা কাগজ ঝোলানো থাকে। যাকে দেখতে অত্যেন্ত দূর্বল লাগে, যার কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে এমন ভঙ্গিতে এসে সাহায্য (ভিক্ষার আধুনিক প্রতিশব্দ, ভিক্ষা কথাটা ইদানিং শোনা যায় না) চান। আমরা আবেগি মানুষ, অনেকের দয়ার শরীর, মিনিমাম ২টাকা থেকে শুরু করে ১০০টাকাও সাহায্য দিতে দেখি।

এই চলন্ত বাসে উঠতে গিয়ে নারীদের কি দূর্বল অবস্থা, যা নিয়মিত বাসে চলা মানুষজনের অদেখা থাকার কথা নয়। হাটার গতিতে চলা বাসেও তাদের উঠতে না পারার দৃশ্য হরহামেসা চোখে পরে। বাস ড্রাইভাররাও ‘লেডিস নামবে’ বললে গাড়ি একদম দাড় করিয়ে দেন, আলতোভাবে ব্রেক চাপেন। কোন পুরুষ নামবে বললে বলে গেইটে আসেন, তবে নারী’রা সাধারনত বাস থামার পর সিট থেকে উঠে আসার সুযোগ পান।

কিন্তু ওই দূর্বল দেখানো ভিক্ষুক, যার কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয়, তিনি এই চলন্ত বাসে লাফিয়ে ওঠেন, পুরো বাস বিচরন করেন, এবং নামার সময়ও চলন্ত বাস থেকেই নামতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তারা একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর চাইতেও বেশি সক্ষম তা না বোঝার কথা নয়!

দয়ার শরীর আমরা বুঝতেই পারি না তিনি আমাদের আবেগকে ব্যবহার করে কিছু টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। আবেগের আবেশে আমরা বুঝতেই পারি না উনি যতটা দূর্বল নিজেকে দেখাচ্ছেন, আমাদের এই বাজে ও বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থায় তার পেরে ওঠার কথা কখনোই ছিলো না।
রাস্তায় বসে যারা ভিক্ষা করেন, তারাও তাদের পুড়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া, ঘাঁ ধরা, পঁচে যাওয়া অংগ মানে তার দুর্বলতাকে ওপেন রেখে বসেন, যাতে তা দেখে আমাদের মায়া হয়, আবেগটা বাড়ে এবং আমাদের পকেট থেকে কিছু বের হয়।

আমরাও ব্যতিক্রম নই।
সময় সুযোগ পেলে কাতর হই, নিজের দূর্বলতা দেখিয়ে কিছু সুবিধা আদায় করে নেবার চেষ্টা প্রায়ই করি। কখনো তা লম্বা লাইনের পেছনে থেকে আগে পাবার জন্য, কখনো অফিসে ছুটি আদায়ের জন্য, কখনোবা আরেকটু বেশি সেবা পাওয়ার জন্য।

অন্য কোন ধর্মে ভিক্ষাবৃত্তির কথা বলা আছে কি না জানি না, তবে ইসলামে তা খুব ভালোভাবেই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
অথচ এই দেশে ইসলামের নামেই (আল্লাহ্’র ওয়াস্তে) ভিক্ষা চাওয়া হয়।
আমরা নবী’র কাছে ভিক্ষা চাওয়া ব্যাক্তিকে কিভাবে কাজ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, সেই হাদিস জেনেও আবেগে ভিক্ষা দিয়ে চলি, আল্লাহ’র কাছে প্রতিদান পাবার আশায় অবচেতন মনেই সমাজের ক্ষতি করে চলি।

শীতকালে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় শুরু হয় ওয়াজের নামে শব্দ দুষন।
আপনি ওয়াজের নামে চি‌ৎকার চেচামেচি, ওয়াজ প্রঙ্গন থেকে বহু দূর পর্যন্ত উচ্চ শব্দের মাইক লাগিয়ে কান ঝালাফালা করে দেয়। কখনো কখনো ওয়াজ প্রাঙ্গনের শ্রোতার সংখ্যার চেয়েও মাইকের সংখ্যা বেশি থাকে কিন্তু আপনি প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কারন তার পেছনে কাজ করবে ধর্মিয় আবেগ! এমন এক আবেগ যা তাদের “আল্লাহ্’র ওয়াস্তে ভিক্ষা চাওয়ার মতোই নিন্দনিয় কাজ করিয়ে নিচ্ছে”।
তা যে কেবল আবেগ থেকেই হয় তাও নয়, ওয়াজের পেছনে থাকে সেই দানে'র নামে বড় অংকের অর্থের সংযোগ!

যে জলে মাছ থাকে, সেই জলে বকের দেখা মেলে, জেলেরও দেখা মেলে।
এই দেশে সহজে ভিক্ষা পাওয়া যায়, আর তাই ভিক্ষার মাল্টিপল ডাইমেনশনও তৈরী হয়েছে।
মেয়ের বিয়ের জন্য ভিক্ষা, এতিমখানার নামে ভিক্ষা, মাদ্রাসার নামে ভিক্ষা, মসজিদের নামেও ভিক্ষা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর নামেও এসেছি পরিবর্তন।
ব্যাক্তিগত কারনে চাইলে তা ‘সাহায্য’, ধর্মিয় ছোয়া থাকলে তা ‘দান’।
এ যেন কোন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া প্রফিট পাওয়ার সহজতম একটা উপায়।
----

৭। সুযোগে ফায়দা লুট:
সামনে রোজা আসছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নি:সন্দেহে অতীতের মতো আবারও বাড়বে।
স্বাভাবিকভাবেই রোজায় কিছু জিনিসের চাহিদা বাড়বে। চাহিদা আর যোগানের কিছুটা ঘাটতির সাথে দামের কিছুটা এদিক সেদিক হওয়াটা স্বাভাবিক বৈ কি। তবে কিছু ক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ার ঘটনাও আমরা দেখতে পাই। যা অন্যায় বলে সবাই ব্যবসায়ীদের ১০হাত নেই।
প্রায়ই বিভিন্ন কারনে আমরা পরিবহন সংঙ্কটে পরি।
তখন সিএনজি অটোরিক্সাওয়ালা ও রিকশাওয়ালাদের ভাড়ার পরিমান শুনে কারো মাথা গরম না হবার কথা নয়। ২০টাকার ভাড়া ১০০টাকা চাইতেও তারা একটুখানি ইতস্তত বোধ করেন না। এরাই আবার মায়া কান্না কাঁদবে যখন একজন ডাক্তার ৫মিনিট দেখে ৫০০টাকা ভিজিট নিয়ে নিবে।

নিজের চাকুরী জীবনের শুরুতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাদ্ধ্যবাধকতায় পরি।
কোনরুপ সমস্যা না থাকা সত্যেও দুই দফায় ১৫০০+৫০০ মোট ২হাজার টাকা চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য প্রদান করতে মোটামুটি বাদ্ধ হই।
সরকারী অফিসের সিমাহীন দুর্নিতীর কথা কারও অজানা থাকার কথা নয়।

কে এই ফায়দাটা লুটে না?
দেশের কোন সেক্টরটাকে বলা যায় যে এটা ঠিকমতো চলছে?
বিভিন্ন বিষয়ে ব্লগ ও ফেইসবুক কাঁপানে, নিতিবাক্য ছড়ানো ব্যক্তি বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে মারাত্নক সোচ্চার, কিন্তু নিজের বেলায় যখন আসে তখন কজন ঠিক থাকে?
রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা দেখে আমরা অনেকেই বলি: কি খারাপ মানুষ! ময়লাটা যায়গামতো ফেললে কি হয়! উহ: কি গন্ধ! ওয়াক থু! (থু এর দলাটা পাশের ওয়ালে)।

প্রতিকার কি হতে পারে?
কেবল একজন রিকশাওয়ালাকে রাস্তায় ধরে গালে থাপ্পর মারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না।
এর জন্য দরকার এমন কিছু, যা এই ছন্নছড়া জাতিকে লাইনে আনবে।
তা কেবল আপনার আমার সচেতনতা নামক বুলি দিয়েই কাজ হয়ে যাবে না।
পুরুষতন্ত্রকে গালি দিয়ে, নিতিকথা প্রচার করেই ধর্ষন নামক মহামারি থেমে যাবে না।
তার জন্য দরকার সিস্টেম।
এমন একটা সিস্টেম যার ফ্রেমের ভেতর থেকে বের হয়ে ভিন্ন কিছু করা সহজ হবে না।
এমন একটা সিস্টেম যা ভালো মন্দ যেমনই লাগুক, মেনে চলতে প্রত্যেকটা ইন্ডভিজুয়াল বাদ্ধ থাকে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার, পথচারী, মন্ত্রী, এমপি, আপনি, আমি সবাই যেন সেই রুলস অনুযায়ী চলতে বাদ্ধ থাকি।
যখন সিস্টেম ঠিক থাকবে, নিতিকথা বা সচেতনতা কেবল তখনই কাজ করবে।
----

৮। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার:
আমাদের দেশে অনেক অস্থির সেক্টর রয়েছে। সত্যি বলতে গোটা দেশটাই অস্থির।
আবারও পরিবহন সেক্টর নিয়ে বলি: যারা ঢাকার লোকাল বাসে চলাচল করেন, ভাড়া নিয়ে বিবাদ দেখেননি এমন লোক খুজে পাওয়া কঠিন হবার কথা।
হয়তো কখনো ওসবে কর্নপাত করেননি, কিংবা আপনার পাশে ঘটেনি।
তবে এমন অনেক ঘটনার মাঝে কিছু ঘটনা পরিষ্কার মনে আছে, যেখানে যাত্রি ভাড়া দেননি, কিন্তু তিনি বলছেন ভাড়া দিয়েছেন।
এমন অনেক বেশি ঘটে, ভাড়া কম দিয়ে বেশি রাস্তা ভ্রমন করার।
নিজের জেলা চাঁদপুরে আসা যাওয়ার পথে লঞ্চের প্রত্যেক ট্রিপে ফ্রি(চোরাই) ভ্রমনকারির সংখা থাকে বেশ কিছু। দেখতে চাইলে জাস্ট খেয়াল রাখলেই তা খুব সহজে দেখতে পারবেন।
সরকারী পরিবহন রেলেও আপনি এরকম প্রচুর দেখে থাকতে পারেন।

আমরা জানি এক্সেপশন সব যায়গাতেই আছে, চোর বাটপার যেমন সরকারি কর্মকর্তাও আছে, আমরা সাধারন মানুষরাও কম চোর নই। কেবল কখন কার পালা আসে পার্থক্য তা ই।

এই কথাগুলো কেন বলছি?
আমরা প্রায়ই শুনি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়মের কথা।
রোগি মরে যাবার পরও ইসিজি করার কথা, ডাক্তারের ভুলে বাচ্চা মরার পর হাসপাতাল ভাঙচুরের কথা। অযথাই টেস্ট দেয়ার কথা…
কিন্তু ঘটনা কি সবসময়ই তা সত্যি?

কিছু ক্ষেত্রে তা সত্যি, কিছু ক্ষেত্রে তা খুব ভালোভাবেই মিথ্যে।
সুন্দর মেয়ে যদি আমার না হয় এসিড মেরে তার সুন্দর চেহারা নষ্ট করে দেবার প্রবনতার কথা আমাদের অজানা থাকার কথা নয়।
বউ যদি চলেই যাবে গহনা সব রেখে দেওয়ার সাধারন ঘটনাও অজানা থাকার কথা নয়।

তেমনই, হাসপাতালে রোগী যদি মরেই যায়, তার পাওনা পরিশোধ না করার প্রবনতাটা আমাদের মাঝে প্রকট।
আর বিনা ফলে হাসপাতালে বিল প্রদান থেকেই বাঁচতে অনেক সময়ই রোগীর আত্নীয় স্বজনদের মিথ্যা অভিযোগ, গন্ডগোল ও হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
আর আমরাও আবেগি, আহরে, লোকটার বাচ্চা মরে গেছে! আরও ২টা ঢিল মার!

হাসপাতাল বাটপার হতে পারে, ভুল চিকি‌ৎসা হতে পারে, তবে নেয্য বিচার কি হওয়া উচি‌ৎ?
আমার মতে বলা উচি‌ৎ: আপনার পাওনা আগে পরিশোধ করুন, তারপর বাকিটার বিচারও হবে!
(এক্ষেত্রে কথা হতে পারে: বিল যদি দিতেই হয়, বিচার করে কি লাভ!)
-----


লিখতে থাকলে এসব লিখা শেষ হবে বলে মনে হয় না।
যার সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিবো কোথা?

সলিউশন হতে পারে একটা টেকশই সিস্টেম, গরুর মুখে কাপাই লাগিয়ে খের খেতে বাধ্য করার মতো একটা সিস্টেম।
(এ ব্যাপারে কোন এক ব্লগারের একটা লিখা এই সামু'তেই পড়েছিলাম, ৫০পেইজ ঘুরেও তা আর খুজে পাইনি, ওই পোস্টের সাথে আমি সহমত পোষন করি)।

আবেগ দিয়ে ভালোবাসা হয়, কিন্তু যুক্তিবিহিন আবেগে তৈরী ভালোবাসাও দির্ঘস্থায়ী হবে না।
প্রফেশনালিজমে আবেগের অভাব থাকতে পারে, তবে তাতে সবকিছুই টেকশই হয়।

যা যা বললাম, নি:সন্দেহে তার বিপরীত বা উল্টো ঘটনাও আছে, তা অস্বিকার করার উপায় নেই।
আপনি যদি এই লিখার কাউন্টার দিতে চান, তাও দিতে পারেন!
আর আমি জানি আপনি যা বলবেন তাও সত্য।
আমি শুধু তা লিখেছি যা সাধারনত আমরা বলি না, কিন্তু বলা উচি‌ৎ!

(আমার সাধারন সক্ষমতার চেয়ে বেশি লিখে ফেলেছি, ভুলের পরিমানও অনেক বেশি থাকতে পারে)।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×