somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মিক উন্নয়নের দশ উপায়

১২ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন ও দেহ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে, আবার শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে। দেহের সুস্থতার থেকে মনের সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। কারণ আমাদের মনই যে কোনো ব্যাপারে প্রথমে সাড়া দেয়। আর তাই শুধু শারীরিক সুস্থতা ও কায়িক পরিশ্রম দিয়েই একজন মানুষ সবসময় ভালো থাকতে পারে না, যদি তার আত্মিক বা মানসিক উন্নতি না হয় । আসুন আমরা জেনে নিই আত্মিক উন্নতির দশটি উপায়।

ক্ষমা
মন পরিষ্কার রাখার জন্য ‘হওয়াইন বা হুপোনোপোনো’ অনুশীলন করুন। ‘হওয়াইন বা হুপোনোপোনো’ অনুশীলনের চারটি মূল কথা হচ্ছে : ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি; আমি দুঃখিত; তোমাকে ধন্যবাদ; আমাকে ক্ষমা করো’।

ধরুন আপনার সঙ্গে একজনের খারাপ সম্পর্ক আছে । আপনার মনের মধ্যে তার ছবি কল্পনা করে ও আপনার উচ্চ সত্তা থেকে ভালোবাসার শক্তি নামিয়ে এনে আপনি উপরোক্ত কথাগুলো বার বার বলে চলুন। এক পর্যায়ে আপনি মনে মনে চিন্তা করতে থাকুন যে এই সমস্যাটা ঠিক হয়ে গেছে এবং আপনি লোকটিকে ক্ষমা করতে পেরেছেন ।

দ্বিতীয়বার যখন আপনি এটি করতে যাবেন দেখবেন আপনার মধ্যে লোকটির প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা এসেছে । আর যদি ভালোবাসা নাও আসে তবে আবার আপনি একইভাবে এটি করতে থাকুন। একসময় দেখবেন সত্যিই আপনি তাকে ক্ষমা করতে পেরেছেন। যে কোনো বিষয়ে আপনি এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন ।

শান্ত থাকার যোগ
আমরা বেশির ভাগ সময় আমাদের নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। সবসময় আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করে : ‘আমার কী হবে? আমি এটি পাব কি পাব না? এটি পেতে আমার কী করা উচিত বা অনুচিত?’ কিন্তু এটা না করে স্থির থাকুন। নিজেকে আট বছরের বালক বা বালিকা ভাবুন। নিজের দোষ-গুণ সম্পর্কে নিজেকে নিরপেক্ষ কিন্তু নরমভাবে প্রশ্ন করুন। নীরবতাকে মনের মধ্যে আহ্বান করুন এবং বলতে থাকুন :‘নীরবতা এসো’,‘শান্ত হও’। একটু পরেই দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে। যখনই অশান্ত হয়ে পড়বেন তখনই এটি করতে থাকবেন।

স্থির হওয়ার ব্যায়াম
একটি চেয়ারে বসুন ও পা দুটিকে মেঝেতে রাখুন। চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে চিন্তা করুন যেন আপনার মেরুদর শেষ প্রান্তে ,যোগের ভাষায় যাকে কু-লী বলে, সেখানে একটি বৈদ্যুতিক তার লাগানো রয়েছে। এই বৈদ্যুতিক তার আপনার মাথার ওপরের শান্ত সাগরের মতো পৃথিবীর ঠিক মাঝখান থেকে ঝরনাধারার মতো নেমে এসেছে। এটি আপনার দেহে ঢুকে আপনার দেহের সকল বর্জ্যপদার্থ ও খারাপ কিছু চুষে নিচ্ছে। আপনি নিজেকে খুব হালকা বোধ করছেন। প্রথম প্রথম এটি করতে শান্ত জায়গার প্রয়োজন হবে। পরে, আপনি এটি আয়ত্ত করতে পারলে যে কোনো স্থানে বা জায়গায় যেমন- অফিসে, রাস্তায়, লোকালয়ে করতে পারবেন। মন শান্ত রাখার জন্য এটি একটি মহাষৈৗধ। এটির উপকারিতা আপনি প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারবেন।

তিন চক্রকে সক্রিয় রাখা
বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র ও মণিপুর চক্রের মধ্যে দিব্য আলো, আনন্দ, চেতনা খেলা করতে থাকে। তাই এই চক্রগুলো সক্রিয় রাখা খুব জরুরি। কণ্ঠ, হৃদয় ও প্লীহার ওপরে চাপড়াতে থাকুন। এতে এই চক্রগুলো সক্রিয় হবে। দিনে দু মিনিট করে আপনি এটি করতে থাকুন।

স্নায়ু উত্তেজক ব্যায়াম
জড়তা কোনো ভালো জিনিস নয়। এটিকে যোগের ভাষায় ‘তামসিক ভাব’ বলা হয়ে থাকে। স্নায়ু উত্তেজিত করতে ও জড়তা দূর করতে আপনি বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন, আপনার এক হাতের তালুর একটু ওপরে অন্য হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন। আস্তে আস্তে আঙ্গুলগুলো দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের দিকে নামিয়ে আনুন। পনের বার এটা করুন। এতে আপনার জড়তা দূর হবে।

‘কি ফো’ ব্যায়াম
কি ফো নিতে মাত্র দু মিনিট লাগবে । আপনার দু হাত হালকাভাবে মুঠো করুন এবং আপনার স¤পূর্ণ দেহের ওপর চাপড়াতে থাকুন। মাথা থেকে আরম্ভ করে খুলি, মগজ ও ঘাড় ছাড়িয়ে স¤পূর্ণ দেহে এটা করতে থাকুন । এতে আপনার রক্তচলাচল বেড়ে গিয়ে আপনার দেহে শক্তি উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে। আমাদের মাথা চিন্তা করার স্থান। মন সবসময় কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করেই চলেছে এবং একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা সে ভালো হোক বা খারাপ।

কুকুর অথবা বিড়াল পোষা
বেশির ভাগ মানুষ স্বার্থপর হয়ে থাকে। আবার অনেকের মধ্যে পশুবৃত্তি আছে। প্রাণীদের আচার-আচরণ সংক্রামক। কুকুর প্রভুভক্ত। এদের নিস্বার্থ ভালোবাসা, শিশুসুলভ আচরণ, খেলাপ্রিয়তা ও অল্পে সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতা আপনার মধ্যেও সংক্রামক রোগের মতো প্রবাহিত হয়ে থাকে। তাই, স্বার্থপর ও পশুর মতো মানুষের সঙ্গ না দিয়ে প্রাণীদের সঙ্গ দেওয়া অনেক ভালো।

সাগরের পানিতে সাঁতার
আমাদের সম্পুর্ণ দেহের ওপর একটি বলয় আছে যেটিকে ‘সূক্ষ্ম দেহ’ বলে । এই সূক্ষ্ম দেহ অলৌকিক আভা দিয়ে তৈরি, যেটি আমাদের দৈহিক ও আত্মিক সুস্থতা প্রকাশ করে থাকে। আমাদের দেহকে এই অলৌকিক আভা প্রকাশের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর তাই প্রতিদিন ভোরে সাগরের পানিতে স্নান করতে হবে। কারণ লবণাক্ত পানিকে প্রাকৃতিক পরিষ্কারক বলা হয়। দেহের অতিরিক্ত বর্জ্যপদার্থ বের করে দিতে ও দেহে মিনারেলের সমতা আনতে লবণের গুরুত্ব অপরিসীম। দেহ পরিষ্কার না থাকলে রোগ দেহে বাসা বাঁধবে ও জীবনটাকে বোঝা ও বিরক্তিকর মনে হবে ।

রঙতুলি ব্যবহার
ছোট শিশু মানেই নিষ্পাপ ও পবিত্র কিছু। ছোট শিশুদের মতো রঙপেন্সিল নিয়ে আঁকতে আরম্ভ করুন। চোখ বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করে মন শান্ত করুন। এরপর, আপনার মস্তিষ্ক সচল করার জন্য কাগজের ওপর একটি বৃত্ত আঁকুন এবং এটিকে আট ভাগে ভাগ করুন। এই আট ভাগে আপনার ইচ্ছামতো রঙ দিয়ে বৃত্তটি পূরণ করুন। ছবি আঁকার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানুন বা না জানুন এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না।


গাছ লাগানো

গাছ লাগানো খুব ভালো একটা অভ্যাস। বাগান করা মনের খোরাক জোগায়। গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা আপনাকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাবে, প্রকৃতিপ্রেমিক করে তুলবে, প্রকৃতির মতো উদার হতে সাহায্য করবে। বাড়িতে করা বাগান থেকে আপনি সতেজ বাতাস পাবেন । তাছাড়া, আপনি রান্নার জন্য তাজা সবজি পাবেন।

আমাদের মন খুব অশান্ত। এই অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য আপনি যোগ ব্যায়ামসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। মন শান্ত হলে ঘরে-বাইরে আপনার জীবনের সব ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। শান্ত মন সুস্থতার পরিচায়ক। মন স্থির থাকলে কর্মক্ষেত্রে, সংসার জীবনে, আধ্যাত্মিক জীবনে আপনি সুচিন্তা ও সৌন্দর্যের প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন। জীবন তখন অর্থময়তায় ভরে উঠবে।


Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×