somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন- ২ (শেষ পর্ব)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন- ১


২৬ তারিখ রাত ৮ টার দিকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে গেলাম। মহানগর এক্সপ্রেস ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। টিকেটে দেয়া বগি এবং সিট নম্বর দেখে আমাদের সিটে গিয়ে বসলাম। আমার ধারণা ছিলো যারা শুধু চট্টগ্রাম যাবে তারাই উঠেছে। বাকিদের সাথে আলাপ করে ভুলটা ভাঙলো। সিট ছাড়া অনেকেই দাঁড়িয়ে যাবে। এনারা বিমানবন্দর স্টেশনে নামবেন। কমলাপুর থেকে ঢাকার জ্যাম ঠেলে যাওয়ার থেকে ট্রেনে করে যাওয়া ঢের ভালো। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ট্রেনটাকে আরো ইউটিলাইজ করলে কিন্তু সড়কপথের চাপ কমানো যায়। যাক এখন তাও মেট্রোরেলের কাজ চলছে। আশা করি মেট্রোরেল হলে সংশ্লিষ্ট রুটের জ্যাম থেকে বাঁচা যাবে। তো চবির ভর্তি পরীক্ষার জন্য সড়ক, ট্রেন সবখানেই চাপ একটু বেশি। এক ভদ্রলোক পুরো ৩৫০ টাকা দিয়ে স্ট্যান্ডিং টিকেট কিনেছেন। এই টিকেটের মানে যা বুঝলাম তা হলো সিট নাই তবে কোথাও খালি সিট পেলে বসতে পারবেন। উনাকে একটা বুদ্ধি দিলাম, একান্তই সিট খালি না পেলে নামাজরুমে গিয়ে বসে বা শুয়ে যান। শোভন চেয়ারের সিটগুলো খুব একটা আরামদায়ক নয়।



ছবিটা মূলত কোনো রুটের স্নিগ্ধা কোচের। হুবহু ছবির সিটগুলো ছিলো শোভন চেয়ারের। তবে এত পরিপাটি নয়। সজিবের (আমার ছোটভাই, যাকে নিয়ে যাচ্ছি) ঘাড়ব্যাথা হয়ে গিয়েছিলো এই সিটগুলোতে বসে থাকতে থাকতে। লংরুটে চলাচল করা বাসের চেয়ারগুলো এই শোভনচেয়ার থেকে অনেক ভালো আর আরামদায়ক। এভাবে কমপেয়ার করে বলছি যাতে আমার মত অনভিজ্ঞরা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বাস-ট্রেন বেছে নিতে পারে। ৯ টার ট্রেন ছাড়লো সাড়ে ৯ টায়। প্রথমবার ট্রেন ভ্রমণ! ট্রেনের একটা ব্যাপার আছে। ইচ্ছা হলেই ধাম করে থামানো যায় না। তাই কাছাকাছি কোনো স্টেশনে থামানোর ৩-৪ মিনিট আগে থেকেই স্পিড কমতে থাকে। বিমানবন্দর আসার পর দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় সবাই নেমে গেলো। নতুন করে আবার অনেকে উঠলো। এভাবে যে যে জায়গায় থেমেছে সবখানেই অনেকে নেমেছে আবার অনেকে উঠেছে। সাড়ে ৪ টার পর ট্রেন গিয়ে চট্টগ্রাম পৌছায়। সকাল ৭ টা থেকে শাটল ট্রেন আছে স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যায়। সে পর্যন্ত বসে না থেকে আমরা স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটু হেঁটে নিউমার্কেট গেলাম। নিউমার্কেট থেকে লোকাল বাস গুলোতে করে স্বাভাবিক সময়ে চবির ১ নম্বর গেট পর্যন্ত যাওয়া যায়। ভাড়া ২০টাকা। ১ নম্বর থেকে জিরো পয়েন্ট সিএনজি দিয়ে যেতে হয়। মূল বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু।


১ নম্বর গেট


জিরো পয়েন্ট


১ নম্বর থেকে জিরো পয়েন্টের দূরত্ব

ভর্তি পরীক্ষার সময় বাস ভাড়া ৫০ টাকা হয়ে যায়। সুযোগ বুঝে টাকা কামিয়ে নেয় আরকি। এর বাইরে চবির শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করে থাকে। ওরা একেবারে পরীক্ষার হল পর্যন্ত দেখিয়ে নিয়ে যাবে আবার বাসে করে আপনাকে স্টেশন বা গন্তব্যস্থলে পৌঁছিয়ে দিবে। সাথে লাঞ্চ। ২০০-২৫০ টাকা জনপ্রতি। আমরা নিউমার্কেট থেকে বাসে উঠলাম। ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নিলেও উপকার হয়েছে। ১ নম্বর না নামিয়ে ভিতরে ঢুকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত গিয়েছে। এতে যে সময় আর হয়রানি থেকে বেঁচেছি সেটা আসার সময় টের পেয়েছি। ১ নম্বর থেকে জিরো পয়েন্ট হেঁটে আসলে ৩০ মিনিট সময় লাগতো, সিএনজি পেতাম না। নেমে চবির বিখ্যাত মউর দোকানে ঢুকে নাস্তা সেরে নিলাম। থাকার কোনো ব্যবস্থা করে যেতে পারিনি, তাই জিরোপয়েন্টের মসজিদেই ঢুকে গেলাম। সজিবের ঘুম ভালো হয় নাই। ওকে বললাম ৯ টা পর্যন্ত একটা ঘুম দিয়ে ফেল। পরীক্ষার আগে ফুলচার্জড থাকা দরকার। সিট পড়েছিলো এফবিএসে। জিরো পয়েন্ট থেকে এফবিএসে হেঁটে যেতে ৮ মিনিট লাগে।


মূল ক্যাম্পাসের ম্যাপ

বিশাল ক্যাম্পাস, পাহাড় কাঁটা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ভালোই লাগে। প্রতিটা পরীক্ষার হলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ ছিলো। তারপরো পুরো ব্যবস্থাটা অনেকটাই খাপছাড়া টাইপের। এর থেকে বিএনসিসি, স্কাউট পরিস্থিতি ভালো সামাল দিতে পারত। যে যেভাবে পারে হলে ঢুকতে গিয়ে ঢুকার পথই বন্ধ হবার উপক্রম! এভাবে ঠেলাঠেলি করে লাভ নাই। সজিবকে দাড় করিয়ে রাখলাম। ঠেলাঠেলি পর্ব শেষ হওয়ার পর আরামসে গেলো।

চট্টগ্রামের স্থানীয় একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রথম আলো মিলে ঐদিনের প্রথম আলোর সৌজন্য কপি দিচ্ছিলো অভিভাবকদের। সকাল সকাল পত্রিকা পড়াও হলো আবার পড়া শেষে বিছিয়ে বসার ব্যবস্থাও হলো। এর মাঝে খানিকটা ঘুরেও দেখলাম। ক্যাম্পাসের ভিতরেই একটা ঝুলন্ত ব্রিজ আছে। অবশ্য ঐদিন তার দিয়ে বন্ধ করে রাখায় ঝুলন্ত ব্রিজে হাটার সুযোগ হয়নাই। ১০ টার পরীক্ষা শুরু হতে হতে ১১ টা বেজে যায়। এইব্যাপারটা একেবারেই জানতাম না। ১০ টার আগেই পরীক্ষার হলে সবাই প্রবেশ করার পর ছবি মিলাতে এবং সাক্ষর করাতে পুরো ১ ঘন্টা লাগলো। এই ব্যাপারটা অন্তত ওয়েবসাইটে জানানো উচিত ছিলো যে পরীক্ষা শেষ হবে ১২ টায়। অনেকেই যারা বাস-ট্রেনের রিটার্ন কেটেছিলো তাদের জন্য বাড়তি একটা হয়রানি হলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আরো দায়িত্ববান হওয়া দরকার। সজিবকে নিয়ে জিরো পয়েন্টে এসে আরেক ঝামেলার মুখে পড়লাম। কোনো সিএনজিই ১ নম্বর যাবে না। রেলস্টেশন যাবে তবে ভাড়া ৫০০! অনেকের কাছে নাকি ১০০০ও চেয়েছে! একটু সামনে এগিয়ে একটা বাস পেলাম নিউমার্কেট যাবে। উঠে পড়লাম দ্রুত। জিরো পয়েন্ট থেকে ১ নম্বর পর্যন্ত পুরো রাস্তা সিএনজি আর বাসে প্রায় ব্লক হয়ে গিয়েছিলো। যে রাস্তা হেঁটে যেতে আধা ঘন্টা লাগে সেই রাস্তা পার হতে ১ ঘন্টা লেগে গেলো। দুপুর ১ টায় শাটল ট্রেন ছিলো কিন্তু উঠবার জায়গা নেই। ট্রেনের ছাদেও প্রচুর ছেলে-মেয়ে উঠেছে। এই ভর্তির মৌসুমে ট্রেনের ছাদ থেকে পরে ২-৩ জন আহত হয়। তাই ভিড়ের মধ্যে ছাদে চড়ার ইচ্ছে নেই। বাসে পুরোটা রাস্তা টেনশনে ছিলাম ট্রেন ধরতে পারবো কিনা। আড়াইটার দিকে নিউমার্কেটে নামি। প্ল্যান ছিলো দুপুরে হোটেল নিজামে খাবো। তা আর হলো না। স্টেশনের দিকে ছুট লাগালাম। স্টেশনের ভিতরের একটা হোটেল থেকে খাবার পার্সেল করে নিলাম। যাওয়ার টিকেট ছিলো স্নিগ্ধা ক্লাস। এসি চেয়ার। ভিতরে ঢুকতেই একটু হকচকিয়ে গেলাম। একেবারে পরিষ্কার ছিমছাম বগি। মেঝেতে কার্পেট দেয়া। চেয়ার গুলোও যথেষ্ট আরামদায়ক।


স্নিগ্ধা চেয়ার


স্নিগ্ধা চেয়ার কোচ

সারাদিনের দৌড়াদৌড়ির পর এখন একটু শান্তি পেলাম। খুব সম্ভবত তিনটা ১০ এ ট্রেন ছাড়লো। শোভনে আসার সময় লোকাল প্যাসেঞ্জাররা উঠত, সাথে অনেক হকারো। একেবারে গমগম পরিবেশ ছিলো। স্নিগ্ধায় একেবারেই শান্ত পরিবেশ। সম্ভবত লোকাল প্যসেঞ্জার এবং হকারদের স্নিগ্ধা বগিগুলোতে উঠতে দেয় না। রেলের স্টাফরাই চা-নাস্তা, চিপস নিয়ে কিছুক্ষন পরপর আসে। দাম একটু বেশি। জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখতে অসাধারণ লাগছিলো। এসি বাবুর জোরাজুরিতে ব্যাগ থেকে চাদর বের করলাম। মোদ্দাকথা আরামেই ঢাকা আসলাম। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ট্রেনের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×