somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনূস যদি হন বাংলাদেশের বার্ট্রান্ড রাসেল

০৯ ই আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ড. ইউনূস যদি হন বাংলাদেশের বার্ট্রান্ড রাসেল
-আনিস আলমগীর


[নোট: এই লেখাটি আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তারিখ মনে নেই। আজ নেটে খুঁজে পেলাম, আরেকজনের ব্লগে। সেখান থেকে কাট- পেস্ট করলাম। এই লেখার অন্যতম একটা স্মৃতি হচ্ছে পত্রিকায় যেদিন লেখাটা প্রকাশিত হয়েছে সেদিন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ড. ইউনুস সম্পর্কে তার স্মরণীয় উক্তিটি করেছেন...সুদখোর আর ঘুষখোরের মধে পার্থক্য নেই....। ড. ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরিকল্পনা নিলে একটা গোষ্ঠি এটাকে নিয়ে লিফলেট করারও পরিকল্পনা করে, যোগাযোগ করে, আমি আপত্তি করি..। আজ ভালো লাগছে শ্রদ্ধেয় ড. ইউনুস এমন কিছু সমালোচনা মূলক লেখার কারণেই হয়তো রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন.. যা তার জন্য মঙ্গল হয়েছে বলা যায়.. আনিস আলমগীর]

১৯৯৪ সালে একবার সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ মিডিয়া সংক্রান্ত একটি সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হাজির হই৷ ইন্টারভিউ বোর্ডে সরকারের একজন সচিব আমার বিগত কয়েক বছরের সাংবাদিকতার পরিচয় জেনে প্রশ্ন করলেন, সাংবাদিকতায় তো ভালোই করছেন, আমলা হতে চাচ্ছেন কেন? বললাম, এই পেশায় এমন সব বাজে লোক আছে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেও খারাপ লাগে৷ উনি পাল্টা বললেন, আপনি সাংবাদিকতা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি নিয়েও যদি সাংবাদিকতায় না আসেন, তাহলে এই পেশা বাজে লোকদের দখলে যাবে না কেন! আপনিই তো তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন৷ বলার অপেক্ষা রাখে না, সাংবাদিকতা ছাড়া অন্য চাকরি করার ইচ্ছা মাথা থেকে তখনই চলে যায়৷

ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন৷ তাকে নিয়েও আমি ওই সচিবের মতো ভাবতে পারি_ ভালো লোকেরা না আসলে রাজনীতি তো দুর্বৃত্তদের দখলেই যাবে৷ ড. ইউনূসের রাজনীতিতে আসা উচিত৷ কিন্তু তারপরও আমার মন বলছে তিনি রাজনীতিতে ভালো করবেন না৷ কারণ মনে হচ্ছে না ড. ইউনূস রাজনীতির মারপ্যাঁচ এতোটা বুঝেন৷ নোবেল জয়ের পর বঙ্গভবনে ইয়াজউদ্দিনের দেয়া সংবর্ধনায় গদ গদ হয়ে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, ইয়াউজদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে এরকম একটি বাজে সরকারের কোনো সমালোচনা না করার বিষয়টিও ব্যক্তিগতভাবে আমার মতো অনেককে হতাশ করেছিল৷
ড. ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লোক৷ অবশ্য বাঙালিদের মাঝে তিনি একক নোবেল বিজয়ী নন৷তার পূর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরেক অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনও নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ অর্মত্য সেন এখনো জীবিত৷ লন্ডনের একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনো রাজনীতি করেননি৷ অবশ্য কখনো কখনো জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক দুর্যোগ দেখা দিলে তিনি সাময়িক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করতেন৷ যেমন জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি অনেক মিটিং-মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ ব্রিটিশদের প্রদত্ত নাইট উপাধিও পরিত্যাগ করেছিলেন৷ সমগ্র ভারতে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যখন কোনো রাজনীতিবিদ প্রতিবাদ করতে সাহস করেননি তখনই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার টাউন হলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিলেন এবং নিজে এ সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন৷ অথচ গান্ধী ও দেশবন্ধু তখনও জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটা বিবৃতি প্রদান করার সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারেননি৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি ছিলেন, তাঁর অবস্থান ছিল রাজনীতি থেকে কয়েক যোজন দূরে৷ তাই তিনি ব্রিটিশদের নির্দয় হত্যাকাণ্ডের পরে প্রতিবাদমুখর হয়ে মাঠে নামতে পেরেছিলেন৷ রাজনীতিবিদ হলে হয়তো পারতেন না৷ বড় জাতির ধনভাণ্ডারে এরকম কিছু বরপুত্র থাকা চাই যারা দুর্যোগে এগিয়ে আসতে পারেন৷ জাতিকে দুর্যোগে সাহস জোগাতে পারেন৷ ইউনূস সাহেবের এরকম একটা ভূমিকা রাখার অবস্থানে থাকাই উত্তম মনে করি৷ রাজনীতিতে আসলে তিনি বিতর্কিত হবেন৷ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার যে ভাবমূর্তি দ্রুত গড়ে উঠেছিল তা আবার দ্রুত বিলীন হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে উপস্থিত হবে৷

ড. ইউনূস একবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৷ বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেল পেয়েছিলেন দু‌' দুবার৷ রাসেল ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক৷ দার্শনিক হিসেবে বিশ্বময় তিনি খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন৷ তার কাছে নোবেল ছিল সোনায় সোহাগা৷ তিনিও রাজনীতিতে এসেছিলেন৷ বহুবার ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন৷ কোনো বারই তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি৷ অথচ যখনই তিনি নির্বাচনী এলাকায় যেতেন লোকজন তাকে আন্তরিকতায় বরণ করতো, শ্রদ্ধায় প্রায় মাথা নোয়াতো৷ মনে হতো তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী৷ এলাকার ভোটারদের এরকম দ্বৈত ভূমিকার কারণ জানতে তিনি উৎ‍সাহী হলেন৷ সপ্তমবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রায় জনে জনে জিজ্ঞেস করেছিলেন_ কেন তারা তাকে ভোট দিতে চান না৷ তখন তারা উত্তর দিয়েছিলেন আপনি হচ্ছেন বিশ্বের বিবেক৷ আপনি কেন নির্বাচন করতে এসে আপনাকে ক্ষুদ্র করবেন৷ ভোট না দিয়ে রাসেলের নির্বাচনী এলাকার লোকেরা নাকি রাসেলকে ক্ষুদ্র হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন৷ অথচ ব্রিটেনে রাসেলের পরিবার ছিল একটা রাজনৈতিক পরিবার৷ তার দাদা ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জন রাসেল৷ তিনি ব্রিটেনের রাজনীতিতে একজন মহত্‍ ও মহান ব্যক্তি ছিলেন৷ রাজনৈতিক পরিবারের লোক হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে এসে বার্ট্রান্ড রাসেল কিছুই করতে পারেননি৷
বিটেনকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়৷ তার গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তিও রয়েছে অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ব্রিটেনে মহিলাদের ভোটাধিকার ছিল না৷ বার্ট্রান্ড রাসেল মহিলাদের ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জয়ীও হয়েছিলেন৷ ১৯৫২ সালে ব্রিটেন যখন আণবিক বোমার প্রথম বিস্ফোরণ ঘটায় তখন রাসেল তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন৷ ব্রিটেন সরকার তাকে এবং তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে দুমাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল৷ ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন যখন সুয়েজ আক্রমণ করে তখনও তিনি এমন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কারাবরণ করেছিলেন৷ অথচ প্রধানমন্ত্রী ইডেন ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু এবং তিনি তাকে সমীহ করতেন৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তিনি নুরেমবার্গ স্টাইলের ট্রাইবুন্যাল গঠন করে গণহত্যার অভিযোগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জনসনের বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং তাকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করেছিলেন৷ ষাটের দশকে কিউবা ইসু নিয়ে যখন আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ করার দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয় তখন মানবপ্রেমিক রাসেল দূতিয়ালি করে উভয় পরাশক্তিকে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করেছিলেন৷ ১০ দিনে তিনি তিন তিন বার মস্কো এবং ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হন, ক্রুশ্চেভ এবং কেনেডি সমঝোতায় পৌঁছেন৷

ড. ইউনূস রাজনীতিতে না এসে বাংলাদেশের রাসেল হলেই ভালো হতো৷ বাংলাদেশে এমন কোনো ক্লিন ইমেজের লোক নেই যিনি বিপদের সময় জাতির সামনে এসে দাঁড়াতে পারেন৷ পলিটিক্যাল টারময়েলে মধ্যস্থতা করতে পারেন৷ ড. ইউনূস এসব কাজ কতোটা পারবেন জানি না৷ তবে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর ড. ইউনূস কিন্তু সেই মর্যাদায় গিয়ে পৌঁছেছেন৷ সুতরাং আমরা আশা করি, তিনি রাজনীতিতে না এসে বিতর্কের ঊর্ধে থাকবেন৷

তারপরও কথা আছে৷ ড. ইউনূস যদি মনে করেন জনগণ তার পক্ষে আছে, খোলা চিঠির সাড়াতে তিনি সন্তুষ্ট এবং তিনি রাজনীতিতিতে সত্যি একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারবেন, তাহলে তিনি যাত্রা শুরু করতে পারেন৷ তার রাজনৈতিক সাফল্য কামনা করি৷
আনিস আলমগীর: সাংবাদিক
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×