somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান: বাস্তব চিত্র উল্‌টো

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাদের সরকার গঠিত হলে রাজ্যের ১ কোটি বেকারের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে সেই সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য। বলা হয়েছিল, এর জন্য বিশেষ ভূমিকা নেবে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক। বাস্তব অবস্থা কী? এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম লিখিয়েছেন প্রায় ১৮লক্ষ যুবক-যুবতী। সেখান থেকে কাজ পেয়েছেন ৫০০-র কম জন। সেই কাজও হয়েছে মূলত বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থায়। গত তিন বছরে স্থায়ী কাজ রাজ্যে প্রায় হয়নি বললেই চলে। তৃণমূলের সরকারের আমলে এছাড়া ৫০০০-র কিছু বেশি কনস্টেবল নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু এছাড়া স্থায়ী নিয়োগ হয়নি। যা হয়েছে সবই এক বছরের চুক্তিতে। এমনকি পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে চুক্তিতে অবসরপ্রাপ্তদেরও নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। পুরনো যে সব কারখানা আছে, তৃণমূলের তোলাবাজির চাপে তার বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে।

এই যখন অবস্থা, তখন ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এন এস ডি সি) প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করার মতো। রিপোর্টটিতে পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান সময়ে বেকার সমস্যা এবং এই সমস্যা আগামীদিনে কোন অবস্থায় দাঁড়াতে চলেছে, সে সম্পর্কে কিছু চিত্র দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা কে পি এম জি-র তৈরি এই রিপোর্টটি ইতোমধ্যেই রাজ্যের শিল্প দপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে এন এস ডি সি। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সাল নাগাদ রাজ্যে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে উত্তীর্ণ হওয়া কর্মক্ষম যুবক-যুবতীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১১লক্ষ। কিন্তু রাজ্যে একই সময়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে ৪.৪৯লক্ষ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ রাজ্যে শুধু উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই দাঁড়াবে ৬.৫১লক্ষ। এরসঙ্গে অর্ধদক্ষ ও অদক্ষ বেকারের সংখ্যা যোগ করলে তার মোট সংখ্যা হবে ৩০.৩১লক্ষ। এই রিপোর্টে আরো একটি দিকে আলোকপাত করা হয়েছে, সেটিও খুবই উদ্বেগজনক। এরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় ড্রপ-আউটের হার যে খুবই বেশি, তা পরিসংখ্যান দিয়ে এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, প্রতি বছর ৯৫লক্ষ ছেলেমেয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত স্নাতক হতে পারছে মাত্র ১১লক্ষ। উচ্চশিক্ষা না পেলে দ্রুত পরিবর্তনশীল উৎপাদন ও পরিষেবাসহ বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে এই ড্রপ-আউট ছাত্রছাত্রীরা যে কাজের সুযোগ নিতে পারবে না, তা রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে।

এই চিত্র কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা তৃণমূল সরকারের দিশাহীনতারই প্রতিফলন। ক্ষমতায় আসার আগে এবং পরে অজস্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই সরকারের মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু কোন পথে রাজ্যকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে এবং রাজ্যের শিল্প-কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব, সে সম্পর্কে এই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অস্বচ্ছ এবং নীতিহীন। রাজ্যে বেকার যুবক-যুবতীর কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে যে শিল্পোন্নয়নের প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল, তৃণমূল সরকারের আমলে তা কার্যত বিপরীতমুখী দিকে প্রবাহিত হয়েছে। নতুন সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রকল্পে দেশী কিংবা বিদেশী বিনিয়োগ তো আসেইনি, বরং বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে নেওয়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রকল্প কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে এই সরকারের আমলে। ২০১২-১৩সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বর্তমান রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যই বলছে, ২০১০ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে যে পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছিল, ২০১৩ সালে মমতা ব্যানার্জির সরকার তার থেকেও ৯৭শতাংশ কম বিনিয়োগ টানতে পেরেছে। ফলে শিল্পই যদি না হতে পারে, তাহলে নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে কোথায়?

গণশক্তি, সম্পাদকীয়, ১৩ই অক্টোবর, ২০১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×