somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন বা রেগাকে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশে নয়া-উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতির সবচেয়ে বেশি ‌আঘাত নেমে এসেছে গ্রামাঞ্চলে, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপরে। কৃষির ব্যাপক সঙ্কটের ফলে কৃষিক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষ উদ্বৃত্ত হচ্ছেন, অসংগঠিত শ্রমজীবীর সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়েই চলেছে। বামপন্থীরা প্রথম থেকেই এই নীতির বিপজ্জনক দিকগুলি সম্পর্কে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে এবং নয়া-উদারবাদী নীতির আক্রমণ নেমে আসা ব্যাপক অংশের মানুষের স্বার্থে সরকারকে কর্মসূচী রূপায়ণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে চলেছে। ১৯৯৮সালে বি জে পি-র নেতৃত্বে প্রথম এন ডি এ সরকার এবং ১৯৯৯সালে দ্বিতীয় এন ডি এ সরকারের আমলে (এই দুই সরকারেরই শরিক ছিল তৃণমূল কংগ্রেস) অত্যন্ত আগ্রাসীভাবে নয়া-উদারবাদী নীতি রূপায়ণ করলেও এবিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

২০০৪সালের লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের সমর্থনে কেন্দ্রে ইউ পি এ সরকার গঠিত হলে সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচীর শর্ত অনুসারে প্রথম গ্রামে উদ্বৃত্ত শ্রমজীবী মানুষকে কাজের নিশ্চয়তা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্প আনা হয়। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন বা রেগা নামে প্রচলিত এই প্রকল্প বামপন্থীদেরই দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। প্রথমে ১০০টি জেলায় ১০০দিনের জন্য এই প্রকল্প চালু হলেও বামপন্থীদের চাপেই ইউ পি এ সরকার পরে সারা দেশে এই প্রকল্প চালু করতে বাধ্য হয়। বামপন্থীরা প্রকল্পটিকে ২০০দিনের জন্য করার দাবি জানিয়েছে। এমনকি, বামপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত ত্রিপুরা সরকার দেশে প্রথম শহরাঞ্চলেও কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন চালু করে। পশ্চিমবঙ্গেও বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীনই শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন চালু করা হয়।

কেন্দ্রে বি জে পি-র নেতৃত্বে আবার এন ডি এ সরকার ক্ষমতায় এসেই রেগা প্রকল্পকে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন-র পরিধিকে ছাঁটাই ও সীমাবদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে মোদী সরকার। রেগাকে কয়েকটি বাছাই জেলা ও ব্লকের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে এই সরকারের, যা আইনে থাকা তাবৎ গ্রামাঞ্চলের সর্বজনীন পরিধির বিরোধী। শুধু তাই নয়, এই পদক্ষেপে সাজ-সরঞ্জাম ও মজুরির অনুপাতকে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে মজুরির অংশ কমবে এবং ঠিকাদারদের জন্য রাস্তা খুলে দেবে। রেগা’র পরিধিকে প্রসারিত করার বদলে ছাঁটাইয়ের এই চেষ্টার প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রচারাভিযানের আহ্বান জানিয়েছে সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরো। সেইসঙ্গেই গ্রামাঞ্চলে এই প্রকল্প যাতে পুরোপুরি রূপায়িত হয়, তা সুনিশ্চিত করার জন্য পার্টি ও গণ সংগঠনগুলিকে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার কথা বলেছে।

লক্ষ্যণীয়, আগের দুটি এন ডি এ সরকারের শরিক তৃণমূল কংগ্রেস বর্তমানে এরাজ্যে সরকার পরিচালনা করছে। গত তিন বছরে রেগা প্রকল্প ঘিরে এরাজ্যে অনেক অভিযোগ উঠেছে। ক্রমাগত পিছিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এই প্রকল্পে। রাজ্যে গড়ে এখনো পর্যন্ত ১৮দিন কাজ পেয়েছেন গ্রামবাসীরা রেগায়। পিছনে শুধু আসাম, মণিপুর ও গোয়া। জাতীয় গড় এক্ষেত্রে, এখন ৩৩দিন। এই ক্ষেত্রে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ২৫নম্বরে। গ্রামের গরিব মানুষের কাজের জন্য পরিচালিত এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ একটি ক্ষেত্রেই বর্তমানে প্রথম স্থানে আছে। সেটি অবশ্য খুবই লজ্জার। রেগায় ১৫দিনের কম কাজ পেয়েছেন এমন গ্রামীণ পরিবার সবচেয়ে বেশি এখন এই রাজ্যে। আর একশো দিনের বেশি কাজ দেওয়ায় তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ১২ নং-এ। ঝাড়খণ্ডও রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আগে। অন্যদিকে, অনেক জেলাতেই রেগার লক্ষ লক্ষ টাকা বাকি থাকার অভিযোগ উঠছে। কাজ করেও টাকা না পাওয়ার প্রতিবাদে এবং বকেয়া টাকা অবিলম্বে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনও চলছে।

বর্তমানে বি জে পি এবং তৃণমূল জোটশরিক না হলেও অতীতে তাদের মধূর সম্পর্কের নীতিগত প্রভাব যে এখনো রয়েছে, অন্তত রেগায় ক্ষেত্রে দুই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটা প্রতিফলিত হচ্ছে। রেগাকে সঙ্কুচিত করা ও এই প্রকল্পকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার যে নীতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরী।

গণশক্তি, সম্পাদকীয়, ১৬ই অক্টোবর, ২০১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×