somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন একটি অভিযানের গল্প শুনাই, যেখানে আপনিও একজন অভিযাত্রী

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সাত কি আট মাস হবে। এক বৃষ্টিস্নাত দিনে চন্দ্রিমা উদ্যানে (প্রাক্তন জিয়া উদ্যান) আড্ডায় মেতে উঠে কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন কিশোর। আড্ডার এক পর্যায়ে তারা তাদের ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরতে থাকে। তাদের সামনে ভেসে উঠে দেশের অবস্থা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য লাখো মানুষ শহীদ হয়েছেন। তবুও স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও আমরা হয়তো স্বাধীনতা নামক কাঙ্খিত শব্দটি খুঁজে পেয়েছি, হয়তো মুখেও অনেক উচ্চারণ করেছি আমরা স্বাধীন জাতি। কিন্তু আমরা আসলেই কি এর বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পেরেছি?!!!!

তারা ভাবে, দেশের জন্য কিছু করার, দেশের অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাড়াবার। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে, সোহান, মাহফুজ এবং জুবায়ের –এর ব্যক্তিগত কিছু মতামত এবং প্রস্তাবনার মাধ্যমে জন্ম হয় এক মহান শপথের। আর এই শপথ রক্ষা করার জন্য সোহান, মাহফুজ এবং জুবায়ের -এর সৃষ্টি হয় “shopnoBUZZ” নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের।


তারা চিন্তা করে, তাদের এই চিন্তাধারা নিজেদের মধ্যে না রেখে তাদের বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের সাথে যুক্ত হয় তাদের খুব কাছের বন্ধুরা। যাদের নাম না বললেই নয়। এরা হল, রনি, জামান, রাসেল, মৌ, সুরভী, তনয়, প্রতিতী।

২০১১ সালের ১০ই জুন “shopnoBUZZ community”-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সেদিন “shopnoBUZZ” –এর অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিল। তারা সবাই মিলিত হয় রবীন্দ্র সরোবরে। সেখানে তারা shopnoBUZZ সম্পর্কে তাদের ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরে। তুলে ধরা হয় shopnoBUZZ এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে। আর সেদিন থেকেই শুরু হয় “shopnoBUZZ” –এর পথচলা।

অন্যান্য দিনের মতোই একদিন সবাই আড্ডা দিচ্ছিল। নিজেদের মধ্যে সংগঠন নিয়ে কথা হচ্ছে। তখন রমজান মাস চলছিল। হটাৎ, মাহফুজ বলে ওঠে যে তারা সবাই একদিন অশহায় শিশুদের সাথে ইফতারি করবে। তার কথায় সবাই সম্মতি দেয় এবং ২৭রমজান তাদের ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হয়।

**ইফতার পার্টি

প্রথমেই বলেছি “shopnoBUZZ” কিছু কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীর সংগঠন, তাই তাদের নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য কিছু দিনের কার্যবিরতি নিতে হয়। এই নির্বাচনী পরীক্ষার মধ্যেই তারা জানতে পারে একটি ফেইসবুক গ্রুপ ১৬ই ডিসেম্বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পথ শিশুদের জন্য “আমার বন্ধু রাশেদ” চলচিচএ দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে এবং এর জন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। মাহফুজ,জুবায়ের,সোহান,রাসেল,রনি,জামান এবং তাদের ফটোগ্রাফার তনয় “shopnoBUZZ community”-এর পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগদান করে। তাদের কথা “আমাদের টাকা লাগবে না, যেকোনো ভাল কাজে আমাদের স্মরণ করলে আমরা অবশ্যই পাশে এশে দাঁড়াবো”

**নিচের এই ছবিটিতে স্বপ্নবাজের সাথে যেই ব্যক্তিটিকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি হলেন "দিপু নাম্বার টু" এবং "আমার বন্ধু রাশেদ" ছবির পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম।
ছবিটি তুলেছে স্বপ্নবাজের অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার "তনয়"।

এবার আসা যাক “shopnoBUZZ community”-এর মূল কাজে যা তাদের নিকট একটি চ্যালেঞ্জের মত ছিল। একদিকে পরিবারের চাপ অপরদিকে পড়ালেখার। এর মধ্যেই তারা অগ্রসর হয় শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে। হাতে নেয় “শীতার্তদের মাঝে বস্ত্র ও কম্বল বিতরণ কার্যক্রম ’১১”। প্রথমত তারা চেয়েছিল নিজেদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করবে কিন্তু অনেকে তাদের উদ্যোগ জানতে পেরে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশে এশে দাঁড়ায় তাদের কিছু বন্ধু এবং ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ একজন বড়ভাই। এবার তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কাজ নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেওয়া হয়। পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেকে “শীতার্তদের মাঝে বস্ত্র ও কম্বল বিতরণ কার্যক্রম ’১১” এর শুরুর দিকে সময় দিতে পারেনি, তাই বলে “shopnoBUZZ community”-এর কাজ থেমে থাকেনি। জুবায়ের,রনি,রাসেল এবং মাহফুজ এর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে অর্থ সংগ্রহ, বস্ত্র সংগ্রহ এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কার্যাবলী সম্পন্ন হয়।

**কম্বল ও বস্ত্র

১৩০টি কম্বল এবং ১০ বস্তা পুরনো কাপড় নিয়ে ২৯শে ডিসেম্বর রাত ১১টা ৭মিনিটে তালতলা থেকে যাত্রা শুরু হয়। shopnoBUZZ Community এর কো-ফাউন্ডার সহ মোট ১৬জন ভোর ৪টা ৩০মিনিট পর্যন্ত ঢাকার মিরপুর, গাবতলী, শ্যামলী, মোঃপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, নিউ মার্কেট, সাহা বাগ, বাংলা মটর, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগড়, মতিঝিল, মহাখালি, ফার্মগেট সহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথের মানুষগুলিকে তা বিতরণ করে থাকে।





কথা হচ্ছিল shopnoBUZZ এর ফাউন্ডার জুবায়ের, সোহান এবং মাহফুজ এর সাথে তাদের পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে। জুবায়ের এর মতামত “জুবায়ের, সোহান, মাহফুজ, রনি, রাসেল, তনয়, জামান, সুরভি, প্রতিতি ও মৌ এই দশ জনের বন্ধুত্ত আজ ‘shopnoBUZZ Community’ নামে পরিচিত। আমরা সবাই ২০১২তে HSC দিব। তাই আপাতত প্রত্যক্ষভাবে কোন কাজ হাতে নিচ্ছি না...তবে আমাদের কিছু প্লান আছে যা HSC এর পর বাস্তবায়ন করতে চাই”।

আমি কিছু প্লান আপনাদের সাথে শেয়ার করছি......

‘shopnoBUZZ Community’
এই বছরেই একটি মাল্টিমিডিয়া স্কুল গড়ে তুলতে চায় যেখানে শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদান করা হবে। এই বিষয়ে ফাউন্ডার সোহান কে প্রশ্ন করা হলে তিনি যা বলেন “আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সঠিক শিক্ষা খুব কম থাকে। একটা বাচ্চা তার দেশের নাম টিও বলতে পারে না, আমরা মূলত তাদের দেশীও শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করব”। এছাড়া shopnoBUZZ এর আট বন্ধু প্রতিদিন নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পণা নিয়ে।


সব কাজেই অর্থের প্রয়োজন, এমন প্রশ্নের জবাব মাহফুজ দিলেন “আশা করি অর্থের জন্য কাজ থেমে থাকবে না। দেখা যাক...সামনে এখনো অনেক সময় বাকি”। মাহফুজের সাথে এক মত পোষণ করে জামান বলেন “স্বপ্ন যেহেতু আমরা দেখেছি সেহেতু বাস্তবায়নও আমাদের করতে হবে এবং এর জন্য আমরা প্রস্তুত”। আসল উত্তর টা মনে হয় সবার পক্ষ থেকে মৌ দিয়ে দিলেন “HSC এর পর আমাদের সবারই আয় রোজগার এর রাস্তা হবে, এছাড়া আমাদের ইচ্ছা shopnoBUZZ এ কিছু ক্রিয়েটিভ সেক্টর গোড়ে তোলা”।

**এই বন্ধুত্ব থাকুক চিরকাল অটুট

‘shopnoBUZZ Community’ এর সাথে দেখা করে বাড়ি ফেরার পথে চিন্তা করলাম দেশে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা দেশ নিয়ে চিন্তা করে, দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখে। জুবায়ের, সোহান, মাহফুজ, রনি, রাসেল, তনয়, জামান, সুরভি, প্রতিতি ও মৌ তারা বয়সে খুব বড় না তবে দেশ নিয়ে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখে। তাদের স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবে রুপ নিবে তা সময় বলে দিবে কিন্তু তারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবিদার। তাদের সাহসিকতার তারিফ করতে হবে।

**BORN TO HELP**

পোস্টটি লিখতে লিখতে ভাবলাম ওদের গ্রুপ এর সদস্য হয়ে যাই। ইচ্ছা করলে আপনিও হতে পারেন। সদস্য ফরম্ টি পূরণ করুন।

ফেইসবুকে shopnoBUZZ(স্বপ্নবাজ)

shopnoBUZZ এর একটি ভিডিও লিঙ্ক শেয়ার করলাম

..................ধন্যবাদ সবাইকে..................
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×