somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-২

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষমতা পৃথকীকরণ (separation of powers):
বাংলাদেশ সংবিধানের সবচেয়ে বড় ত্রুটি এবং দুর্বল দিকটি হচ্ছে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ। এই সংবিধানের অধীনে কোন ফেরেশতাকে প্রধানমন্ত্রী বানালে সে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম খুনি স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হবে।

পক্ষান্তরে ক্ষমতা পৃথকীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ করে একজন নিকৃষ্ট স্বৈরাচারী শাসককেও জনরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসক বানানো সম্ভব।

ক্ষমতা পৃথকীকরণের ধারণাটি কিন্তু নতুন নয়। অ্যারিস্টটল তার রচনায় এই ধারণাটি উল্লেখ করেছেন। ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কিউ তার প্রভাবশালী রচনা দ্য স্পিরিট অফ দ্য লজ (১৭৪৮) এ ধারণাটিকে যুক্তি সহকারে উল্লেখ করেছেন। তার মূল কথা ছিল যে নাগরিকদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সর্বোত্তম ভাবে সংরক্ষিত হয় যখন আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা পৃথক এবং স্বাধীন হয়, এবং যে কোনও শাখাকে অন্য দুইটি শাখার উপর আধিপত্য বা কর্তৃত্ব করতে বাধা দেয়।

ক্ষমতার বিভাজন, শাসকের দ্বারা জনগণের উপর অত্যাচার প্রতিরোধ এবং গণতান্ত্রিক শাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে। ক্ষমতার বিভাজনের ফলে সরকারের তিনটি শাখার মধ্যে একটি চেক এন্ড ব্যাল্যান্স সৃষ্টি করে। এরফলে সরকারের প্রতিটি শাখা অপর শাখাগুলির ক্ষমতা সীমিত করতে পারে, যার ফলে প্রতিটি শাখার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। কোনো একটি শাখা সরকারের ক্ষমতাকে একতরফা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বা জনগণকে নিপীড়ন করতে পারে না। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার সম্ভব হয়।

ক্ষমতাকে প্রধানমন্ত্রী হাতে কেন্দ্রীভূত রেখে আমরা সব সময় আইনের শাসনের কথা বলি। কিন্তু এটা আমরা বুঝতে পারিনা যে ক্ষমতা পৃথকীকরণ ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স ক্ষমতা পৃথকীকরণের এই নীতিকে তাত্ত্বিক ভাবে বিশ্লেষণ করে বলেছে যে ক্ষমতার বিভাজন আইনের শাসনের অন্তর্নিহিত একটি মৌলিক নীতি। এই নীতি নিশ্চিত করে যে তিনটি ভিন্ন সত্তা আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং ব্যাখ্যার দায়িত্ব পালন করবে। এরফলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়ানো এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। এই নীতিটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষমতা পৃথকীকরণ স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে একটি কঠিন সুরক্ষা। সরকারের বিভিন্ন শাখার মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হলে সাংবিধানিক অধিকার বা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে এমন আইন বা নীতি প্রণয়নের সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতার এই বিভাজন সাংবিধানিক গণতন্ত্রে মৌলিক একটি উপাদান। বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতিমালা অনুসরণ করা হয় নাই। অথচ বলা হচ্ছে যে এটা নাকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান। খামাখা সব কিছু নিয়ে গর্ব করা এবং অহংকার করা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। ফলে আমরা আমাদের ভুলগুলি ধরতে পারি না। আর ভুল ধরতে না পারলে সংশোধন করাও সম্ভব না।

আমেরিকার সংবিধানে তিনটি শাখায় সরকারের ক্ষমতাকে পরিষ্কার ভাবে বিভাজন করা হয়েছে: আইনসভা (কংগ্রেস), নির্বাহী (প্রেসিডেন্ট), এবং বিচার বিভাগ (সুপ্রিম কোর্ট)। প্রতিটি শাখাকে নির্দিষ্ট ক্ষমতা এবং দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো শাখা খুব বেশি শক্তিশালী হতে না পারে। এই ভাবে ক্ষমতার চেক এন্ড ব্যালেন্সের একটি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।

আমেরিকার সংবিধানের এই চেক এন্ড ব্যালেন্স সিস্টেম নিশ্চিত করে যে প্রতিটি শাখা অন্য শাখাগুলির ক্ষমতা সীমিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট কংগ্রেস দ্বারা পাস করা আইনে ভেটো দিতে পারে, কংগ্রেস দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা ভেটোকে অগ্রাহ্য করতে পারে এবং সুপ্রিম কোর্ট আইন বা নির্বাহী ক্রিয়াকলাপকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে। এই জটিল সিস্টেমটি যেকোন একটি শাখাকে অনিয়ন্ত্রিত শক্তি অর্জন, এবং প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে সংবিধান প্রণয়ন এবং পরবর্তীতে সংশোধনের সময় রাষ্ট্র বা নাগরিকদের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য না রেখে বরং একজন ব্যক্তিকে ক্ষমতাশালী করার দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। ফলে সাংবিধানিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের মধ্যে একটি নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে অকার্যকর হয়ে পরা এই সংবিধান অনুসারে সংসদ নেতাই প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এবং নির্দেশে এই সংসদ যে আইন পাশ করে, প্রধানমন্ত্রী আবার সেই আইন, নির্বাহী কর্তৃপক্ষ হিসাবে প্রয়োগ করেন। আবার একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেন। অর্থাৎ সরকারের তিনটি বিভাগই প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে এবং কর্তৃত্বে পরিচালিত হয়। এই রকম নিকৃষ্ট ব্যবস্থা কোন সভ্য দেশে নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×