somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা দিবসের নামে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদের আত্মমর্যাদা লুন্ঠিত-

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রচিত হয়েছিল স্বাধীনতা উত্তরকালে উত্তাল তারুণ্যের এক অগ্নিঝরা দিন। সেদিন এদেশের ছাত্র সমাজ কুখ্যাত মজিদ খানের অগণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলো জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দ্বীপালি সাহা, মোজাম্মেল, সেলিম সহ আরো অনেক তাজা প্রাণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই গৌরবময় দিনটি যেখানে হতে পারত গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে সমুন্নত করা, বৈষম্যের শিক্ষানীতিকে রুখে দেবার প্রেরণা। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ এক সামরিক অভুথানের মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণ করে। স্বৈরাচারি ব্যবস্থার শাসকের বর্বর চেহারা প্রকট হয়ে উঠে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত সকল গনতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে। সব চেয়ে বেশি আক্রমণ নেমে আসে শিক্ষার উপর। কারণ মাসক শ্রেণি জানে শিক্ষা মানুষের স্বাধীন চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটায়, বিচার বিশ্লেষনের সক্ষমতা অর্জন করে। ন্যায়, অন্যায়ের প্রভেদ বুঝতে শেখায় সর্বোপুরি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মানসিকতা জাগিয়ে তুলতে আত্মমর্যাদা সম্পন্য মানুষ হিসেবে বিকাশের রাস্তা প্রশস্ত করে। তাই যুগে যুগে শাসক শ্রেণি বর্বরতাকে আড়াল করতে শিক্ষার অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করতে চেয়েছে। সামরিক শাসক এরশাদ ও সেই পদ ধরে সাধারণ ও উচ্চশিক্ষা সংকোচনের ও ব্যয় বহুল করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে কর্মমূখী, উৎপাদনমুখী শিক্ষার উপর বিশেষভাবে গুরুত্বের কতা ছিলো। প্রথম শ্রেণি থেকে আরবি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলো। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারের প্রস্তাবনা হাজির করা হলো। উদ্দেশ্যে ছিলো শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ ঘটানো। শিক্ষার বানিজ্যিকীরন ত্বরান্বিত করতে সুপারিশ করা হলো। শিক্ষার বেতনের ৫০ ভাগ ছাত্রদের থেকে আদায় করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকারকে চেপে ধরতে বলা হলো। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রকৃত পক্ষে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের মতই স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করা হয়েছে। ফলে গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গত কেন্দ্র হিবেবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো প্রকৃত ভুমিকা থেকে সরে গেছে। অর্থ্যাৎ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে এখন রাষ্ট্রের অধীনে চলতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই গনবিরোধী এই শিক্ষানীতি এদেশের সংগ্রামী ছাত্রসমাজ মেনে নেয় নি। প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়ে। গঠিত হয় ছাত্রদের সম্মিলিত সংগঠন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চ এরশাদ সরকার গঠনের দুদিনের সময় ছাত্ররা সাভারের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতিস্তম্বে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করতে গিয়ে সামরিক স্বৈরতন্ত্র বিরোধী শ্লোগান দেয়। এর প্রেক্ষিতে সেনানিবাস থেকে সৈন্যবাহিনী ছুটে এসে ছাত্রদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারি সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এর প্রতিবাদে ১৪টি ছাত্র সংগঠন মিলে গড়ে তোলে আন্দোলনের দৃঢ় শপদ নেয়। ১৪ তারিখ মুজিব খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে কলাভবনের সামনে বিশাল ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে স্বারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে সচিবালয়ের দিকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কার্জন হল ও শিক্ষাভবনের কাছে গেলেই মাত্র পুলিশ গুলি করা শুরু করে, সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জাফর, জয়নাল, দিপালি সাহা সহ আরো ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ১৩৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মরদেহ জানাজার জন্য অপরাজয় বাংলার পাদদেশে রাখা হলে সেখানেও পুলিশ হামলা চালায়। প্রাণহীন শহীদদের লাশ সূর্যসেন হল পর্যন্ত নিয়ে গেলে হলের গেইট ভেঙ্গে যৌথবাহিনী লাশ ছিনিয়ে নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র, কর্মচারিদের রুমে ঢুকে তাদের উপর নিপীড়ন চালায়। এখবর ছেিড়য় পড়লে পরদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ আন্দোলনে যোগ দেয়। তীব্র আন্দোলনের মখে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য হয় স্বৈরাচারি সামরিক সরকার। স্বৈরাচারি শিক্ষানীতি বাতিল হলেও বদলায়নি শিক্ষা সর্ম্পকিত শাসক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর হলেও দেশের শিক্ষার ব্যয় ভার এখনো ছাত্র অভিভাবকদের কাঁধের উপর ভর করছে।
ভালবাসা মানে কি? ভালবাসা শুধু একদিন আনন্দ করে ফুল ও উপহার দেওয়ার নাম? ভালবাসা হচ্ছে মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও প্রতি মহুর্ত্বের সময় পাশে থেকে সাহায্য সহযোগিতা করার নাম ভালবাসা। শুধু নির্দিষ্ট একজনকে ভালবাসা ও ভালোলাগাকে বা তাকে পাওয়ার জন্য কিছু করা ভালবাসা হতে পারে না। ১৯৫২ সালের পর ভ্যালেনটাইনস ডে বাংলাদেশে আসার পর সঙগ্রামী ইতিহাস ভুলে যাবার অবস্থা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×