বাণিজ্য ও মুনাফার চক্রে আবর্তিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমেই ধনীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। ডিগ্রিধারীর সংখ্যাবৃদ্ধি সত্ত্বেও সমাজে মানবিকতা-মূল্যবোধের অবশেষ খুঁজি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের মখরোচক বুলির আড়ালে চাপা পড়ছে অধিকারহারা মানুষের আর্তনাদ। এমনি এক দুঃখসময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চুতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন। শাসকদের নানা পরিকল্পনা-নীতি যখন মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়, তার বিপক্ষে দাঁড়িয়েই শুভবোধের উদ্বোধন হয়, সমাজ-সভ্যতা এগিয়ে যায়। ইতিহাস আমাদের শেখায় অন্যায়-অসঙ্গত কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃশাসন-দুর্নীতির পঙ্কে সমাজ যতই নিমজ্জিত হোক, দেশের ছাত্র-যুবসমাজ যদি ঘরে দাঁড়ায়, কোনও দুঃসহ ভারই টিকে থাকতে পরে না। ঘুরে দাঁড়ানো আজ সময়ের প্রয়োজন। সময়ের এ প্রয়োজনকে ধারণ করে এগিয়ে আসার জন্য আমরা সমগ্র ছাত্রসমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
স্কুলে বেতন-ফি বাড়ছে আর পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষা শিশুদের বনসাই বানাচ্ছে
সারা দেশের স্কুলগুলোতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বৃদ্ধির অরাজকতার বিরুদ্ধে অভিভাবকরা পথে নেমে প্রতিবাদ করেছেন। আমাদের সংগঠন ( সমাজ তান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট) এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে আছে সেই অনেক আগে থেকেই। শিক্ষাব্যবস্থায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানের অধোগতিকে ঠেকাতে পারেনি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনীতে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা চালু শিক্ষার মানের অবনমনই কেবল ঘটায়নি, শিক্ষার্থী-অভিভাকদের মানসিক চাপও হয়রানি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি কোচিং ও গাইড বইয়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে খরচ বেড়েছে বহুগুণ। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পাসের হার বাড়িয়ে দেখানোর ফলে দুর্নীতি পাকাপোক্ত আসন গেড়েছে। শিশুদের খেলাধুলা ও সুষ্ঠ বিনোদনের কোনও অবকাশই নেই। আনন্দ হারিয়ে শিশুরা মানসিক ভাবে বনসাই হয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরও একদিকে পরিকাঠামো নেই, অন্যদিকে রয়েছে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত শিক্ষকের অভাব। এই সব ঘাটতি দুর না কের চালু হওয়া সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি সজনশীলতা বাড়ায়নি, বহুগুণে বাড়িয়েছে কোচিং ও গাইডের ব্যবসা।
মনুষ্যত্ব বাঁচতে হলে শিক্ষাধ্বংসের ও চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে
সবকিছু মিলে মানুষ তৈরি ও চরিত্র গঠন এখন আর শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়, সার্টিফিকেট অর্জনই চরম লক্ষ। এর বিষময় ফল ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সমাজ জুড়ে। হাজারো অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার দেশের মানুষের বুকে চেপে বসেছে। এ দুঃসময়ে বিবেক-মনুষ্যত্বের ঝান্ডা কি কেউ তুলে ধরবে না? ছাত্র-যুব শক্তিই যুগে যুগে সব পথ দেখিয়েছে। সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাসকশ্রেণীর শিক্ষা সংকোচনবিরোধী প্রতিটি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়েছে। বিগত বছরের বর্ষবরণে নারী লাঞ্চনা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপ, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ফরম ফিল আপ করতে বর্ধিত ফি আরোপের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রংপুরের অনেক স্কুল আদায়কৃত অতিরিক্তি ফি ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। এভাবে শুধু স্কুলস্তরে নয়, সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি এবং আগামী দিনেও করে যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২