somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবিধা বঞ্চিত শিশু আর আমার বন্ধুর একটি ছোট ঘটনা

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলায় পড়েছিলাম সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস। "অর্থ" ও "ক্ষমতা" কে বিবেচনা করে সমাজের মানুষকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে । কিন্তু আণ্ডা বাচ্চারা এর মধ্যে পরে না । ওদেরও আবার ভাগ আছে । এক "সুবিধা প্রাপ্ত" আপরদিকে "সুবিধা বঞ্চিত" এখন প্রশ্ন কারা সুবিধা বঞ্চিত ?? যারা চিৎকার করে বলে , " সুযোগ চাই মানুষ হবো " তারাই সুবিধা বঞ্চিত শিশু ।
এমনই এক "সুবিধা বঞ্চিত" ছেলের এবং আমার এক বন্ধুর {( মহানুভবতার) কথাটা উহ্য রাখলাম} কথাই বলব।
আমার সবচেয়ে অপছন্দের কাজগুলোর মধ্যে একটি বাজার করা। তাই সঙ্গী হিসেবে কাউকে পেলে ভালই লাগে । যাওয়ার পথে একজনকে পেয়েও গেলাম। কিছুটা কষ্টে রাজি করিয়ে রিক্সায় তুললাম। গল্পগুজব করে ওর মুডটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করলাম । উহু! এখনও মুখ ফুলায় রেখেদিছে। ওই ভাবেই বাজারে গেলাম । বাজার করলাম । ফিরার পথে রিক্সা নিব তাই বন্ধুকে বললাম, " ভাই , একটা রিক্সা দেখত "
সে বেছে বেছে একটা পিচ্চি ছেলের কাছে যাচ্ছে দেখে তাকে আটকালাম ,বললাম " আমার এইসব পিচ্চি পুলাপাইনের রিক্সায় উঠতে ইচ্ছা করে না। পুলাপাইন গুলার জন্য দরদ হয় ।"
বন্ধু বলল, " এই ব্যাটা !! তোর দরদ দিয়ে কি ওদের পেট ভরবে নাকি ?? হতে পারে ওদের বাসায় আরও ছোট ছোট ভাই বোন আছে না খেয়ে । তোর দরদ পার্সেল করে পাঠায় দে ওদের জন্য দেখ নেয় কিনা "
এমন কথায় একটু লজ্জায় পরে গেলাম। বন্ধু বলে চলছে, " দেখ দোস্ত, আমাদের উচিত ওদের জন্য কিছু করার । শিক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব না । তাই যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করতে হবে । আবার এদের যদি কিছু না করিয়ে এমনি টাকা দিয়ে দিস তাহলেও ছেলেগুলো খারাপ হয়ে যাবে । তার চেয়ে কিছু করিয়ে টাকা দেওয়া ভাল । এতে টাকার প্রতি দরদ থাকবে । টাকাটা খারাপ পথে ব্যয় করবে না। তাই চল ।”
কথা গুলো আমার ভাল লাগলো তাই বললাম , “ চল ”
পরের ঘটনার জন্য আমি আরও অপ্রস্তুত ছিলাম । রিক্সা ভাড়া করার এমন নজির আগে দেখি নাই । অবাক হয়ে মনে মনে গালি দিতে লাগলাম ।
বন্ধু বলল, “ কিরে যাবি? ”
পিচ্চিঃ নাহ। যামু না ।
বন্ধুঃ ২০ টাকা দিব , যাবি?? ( যেখানে ভাড়া মাত্র সর্বোচ্চ ১০ টাকা)
পিচ্চিঃ নাহ যামু না ।
বন্ধু এরপর ৩০ টাকা ,৪০ টাকা , ৫০ টাকা করে টাকার পরিমান বাড়াতে থাকলো।
পিচ্চিও সেই শেয়ানা!! ৩০,৪০ টাকা পর্যন্ত না বলে ৫০ টাকায় যেতে রাজি হল।
মেস এর সামনে নেমে ছেলেটা আমাকে আবার অবাক করলো। ১০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল , “থাক ৫০ টাকা ফেরত দিতে হবে না রে। পুরো টাকাটাই রেখে দে ”
আমি শুধু পিচ্চির মুখের দিকে তাকালাম । এতক্ষন যে হাসিটা মুখে ছিল যে এইটুকু পথ এর জন্য ৫০ টাকা পাচ্ছে সেই হাসিটা আর নেই। কাপা কাপা চোখে তাকিয়ে আছে বন্ধুটার দিকে।
বন্ধু বললঃ যা, ভাল থাকিস।
বলে চলে আসলাম আমরা দুই জন । পিছনে ফিরে একবার দেখলাম টাকাটা এখনও পকেট এ না ঢুকিয়ে হাতে ধরেই রিক্সা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ছেলেটার চোখ দুটোর কথা মনে পরলে ভাবতে পারি না যে ও টাকাটা কোন বাজে কাজে খরচ করবে। আমি বিশ্বাস করি কেউ যদি ভাল নিয়ত এ কাউকে কিছু দেয় আল্লাহ্‌ এর রহমত ও থাকে তাতে। আর যেই কাজেই খরচ করুক না কেন এই টুকু টাকা দিয়ে যদি কিছু সময়ের জন্য হলেও এইসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটে সেই বা কম কিসের??

৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×