থ্যাপ করে একটি শব্দ হলো। মাঝারি উচ্চতার তালগাছ থেকে পাকা তাল নিচের কাদামাটিতে পড়লে যেরকম শব্দ হয় ঠিক সেরকম। নন্দপ্রসাদ সাহা ঠিক বুঝে উঠছে না কিসের শব্দ হতে পারে এটি। তালও হতে পারে। উৎকণ্ঠাসহ নিশ্চুপ হয়ে অপেক্ষা করছে ঘর থেকে। এবারের বর্ষাকালটা অনেক দীর্ঘ। ভাদ্র মাসেও বর্ষার মতো বৃষ্টি। বাক্স পেটরা সব প্রস্তুত। রাত আর একটু পড়লেই সকলে বেরিয়ে পড়বে।
মেয়েটার জন্য মনটা ‘কু’ ডাক দিয়ে উঠে। ওকে এখান থেকে অনেক আগেই ওর মামার কাছে পাঠানো দরকার ছিল। একটু পরেই বৃষ্টির শব্দের সাথে বাইরের দরজার ঠকঠক আওয়াজ কানে আসে।
‘কাকা দরজাটা একটু খুলবেন’--বৃষ্টির শব্দের মাঝেও একটি অতি পরিচিত কন্ঠের ডাক শুনতে পায় নন্দপ্রসাদ সাহা।
২
যশোর ৪৩ ব্রিগেড। পেটা শরীরের সুদর্শন ক্যাপ্টেন শামসাদ ফাইরোজী সিগারেটটা হাত থেকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে ডলা দেয়। ভাবখানা এমন যেন পায়ের তলায় নোংরা তেলাপোকা পিষে মারছেন।
এরপর মৃদু স্বরে পাশের কাকে যেন বললেন, ‘মিশনের কী অবস্থা’?
মাঝ বয়সী এক লোক খ্যাড়খ্যাড়ে গলায় জানালেন, ‘স্যার, কলিম শেখকে সাথে নিয়ে সাত জনের একটি টিম গেছে। একটু পরেই চলে আসবে নিশ্চয়’।
-আমার পাশের ঘরটা ঠিক করা হয়েছে কিনা?
-ইয়েস স্যার। সবকিছু প্রস্তুত।
দুদিন আগে কলিম শেখের মুখে নন্দপ্রসাদ সাহার পরিবার সম্পর্কে জেনে ক্যাপ্টেনের আর তর সইছে না। দুদিন পর জুম্মার নামাজের আগে যখন জানতে পারে সাহা পরিবার গ্রাম ছাড়তে যাচ্ছে, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। নামাজে নিজ জাতির উন্নতি কামনা করে মসজিদ থেকে বের হয়েই দেখে আকাশ মেঘলা। বৃষ্টির চূড়ান্ত সম্ভাবনা। এটাই উপযুক্ত সময় বীজ বপনের!
৩
২০১৭। লন্ডন। অক্সফোর্ড স্ট্রিট। ঘ্যাচ করে ব্রেক কষে একটি ম্যাকলরেন প্রাইভেট কার আলিজেহ এর ঠিক কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায়। রিফ্লেক্স অ্যাকশনে আলিজেহ মৃদু লাফ দিয়ে সরে দাঁড়িয়ে কঠিন চোখে তাকায় কারের সিটের দিকে। এরপর মুখে এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে পড়ে। ড্রাইভিং সিটে রায়ান ম্যাকবে বসে আছে। গাড়িতে উঠে পড়ে আলিজেহ। গত কিছুদিন ধরে আলিজেহর চিন্তা চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে রায়ান।
দুজনের পরিচয়টা নাটকীয় না হলেও বেশ মজার। দুজনেই অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজে পড়ছে। আলিজেহ অর্থনীতি ও ম্যানেজমেন্টে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে আর রায়ান একই বিষয়ে স্নাতকোত্তরে। যদিও রায়ানের বয়স আলিজেহর থেকে পাঁচ/ছয় বছর বেশি। রায়ানের স্নাতকোত্তরে প্রজেক্টে একটি বৃত্তির আওতায় উন্নয়নশীল দেশের মহিলাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক পরিবর্তন এই বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করছে। সেই কাজে রায়ানের সুপারভাইজার বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতকে পছন্দ করে। আর আলিজেহ বর্তমানে ইংল্যান্ডের নাগরিক হলেও পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত ও এখনও বেশ ভালোভাবেই পাকিস্তানের সাথে বন্ডিং রয়েছে। কারণ তাদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে সেখানে। রায়ান উপমহাদেশের কাউকে খুঁজছিলো ট্রিনিটি কলেজে তাঁর সাথে কাজ করার জন্য। আলিজেহকে পেয়ে যায়। কিন্তু প্রথমে আলিজেহ কাজ করতে রাজি হয় নি। একে তো সবে স্নাতক করছে, আর একজন বেগানা ভীনদেশী ক্রিশ্চিয়ান ছেলের সাথে কাজ করতে হবে, বিষয়টি পরিবারের কেউই রাজি হয় না।
পরে রায়ান তাঁর ফ্যামিলির সাথে কথা বলে রাজি করে ফেলে। এর জন্য রায়ানকে বহুবার তাঁদের বাসায় যেতে হয়। আলিজেহ ইংল্যান্ডে বড় হলেও পারিবারিকভাবেই ধার্মিক। বিশেষ করে তাঁর গ্রান্ডপা মেয়েদের হিজাব ছাড়া ও পরপুরুষের সাথে মেলামেশা ভালো চোখে দেখে না। এখনও পরিবারের সবাই গ্রান্ডপাকে ভয় পায়। একসময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনির জাঁদরেল জেনারেল ছিলেন। সেই ঠাঁট এখনো আছে। এখন নিজেদের পারিবারিক ব্যবসাকে মাল্টিন্যাশনাল ব্যবসায় পরিণত করে ইংল্যান্ডে থিতু হয়েছেন।
একসাথে কাজ করতে গিয়েই দুজনের মাঝে ভালোলাগা। সেখান থেকে এখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। কিছুদিন পরেই আলিজেহ রায়ানকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। এবং অবশ্যই রায়ানকে মুসলিম হতে হবে এই শর্ত মেনে নিয়ে। রায়ান ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ কোনোটাই জবাব দেয় নি। তবে সম্মতি আছে বুঝতে পারে আলিজেহ। ফলে তাঁদের মধ্যে অবাধ মেলামেশায় কোনো বাধা থাকে না। যদিও আলিজেহ’র পরিবারের এই ধরনের সম্পর্কের ব্যাপারে ভীষণ রক্ষণশীল। তারা জানতে পারলে বড় ধরনের ঝামেলা হওয়ার আশংকা নাকচ করে দেওয়া যায় না। আর সেজন্যই ওর বিয়ের জন্য চাপ।
ইতোমধ্যে তাঁরা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান বেশ কয়েকবার ঘুরে গেছে। এর আগে দুজনে আলিজেহর দাদুর সাথে পরামর্শ করেছে উপমহাদেশের কোথায় তাঁদের গবেষণার কাজগুলো করার জন্য যাওয়া যায়। উনিই তাঁর নিজ গ্রামের আশে পাশের কাজ করার পরামর্শ দেয়। এতে তাদের পাকিস্তানে চলাফেরা সুবিধা হবে। পরিচিত জায়গা সেটা। আলিজেহর দাদুকে বাংলাদেশ ও ভারতের কথা বললে উনি স্মৃতি থেকে হাতড়িয়ে একটি জায়গার নামই বলতে পারে যশোর। কারণ তাঁর ভাষায় ‘পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধের সময়’ তিনি ঐ জায়গায় কয়েক মাসের জন্য কর্মরত ছিলেন। উনার ভাষায় চমৎকার জায়গা। মানুষগুলোও অমায়িক। এরপর আর কখনই উনি আর বাংলাদেশে আসেন নি। এভাবে তারা বাংলাদেশের যশোর ও ভারতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য যশোরের ওপাশেই চব্বিশ পরগণাকে নির্বাচিত করে। কলকাতার পাশে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের গবেষণার কাজ এগিয়ে নিতে পারবে।
আলিজেহদের পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহর থেকে দশ কিমি দূরে গ্রামের বাড়ি। এক বছরে রায়ান পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে বহুবার এসেছে। বছরের প্রায় আট মাস এই তিন দেশেই কাটিয়েছে গবেষণার কাজে। এদিকে আলিজেহ বাংলাদেশ ও ভারতে একবার গেলেও পাকিস্তানে তিনবার রায়ানের সাথে অংশগ্রহণ করে। আর রায়ানের কাজের প্রতি একাগ্রতা ও গ্রামের মানুষের সাথে একেবারে মিশে যাওয়ার অসাধারণ গুণ লক্ষ্য করে মুগ্ধ হয়। আলিজেহ লক্ষ্য করে রায়ান গবেষণার জন্য বাংলা ভাষাও অনেকটা শিখে ফেলেছে। উর্দু সামান্য কিছু পারলেও বাংলাতে অনেকটায় সাবলীল। ও বেশ অবাক হয়। কেন পশ্চিমারা এতটা অগ্রসর? কাজের প্রতি একাগ্রতা ও সততার সাথে কাজ তুলে আনার জন্য এরা সবকিছু করতে পারে। আর এসব মুগ্ধতায় ক্রমে তাকে রায়ান গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। এবং ক্রমেই দুজন দুজনের হরিহর আত্মায় পরিণত হয়। মনে অনেক দ্বিধা থাকলেও একসময় নিজেকে সঁপে দেয় রায়ানের হাতে।
কিছুদিন পরে আলিজেহ বুঝতে পারে শরীরের পরিবর্তন। কিছু একটা গন্ডগোল। এবং ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হয় কেন এই পরিবর্তন? রায়ান খুশি হয়। আলিজেহ চাপ দিতে থাকে। মুসলিম হও এবং শীঘ্রই বিয়ে কর। দাদু জানতে পারলে মেরে ফেলবে। রায়ান আশ্বাস দেয় গবেষণার কাজটা শেষ হলে ধুমধাম করে বিয়ে করবে। আর মাত্র দুই মাস। যদিও কিছুদিনের মধ্যে আলিজেহ’র মা ও পরিবারের দু একজন জেনে গেছে। কিন্তু রায়ানের উচ্ছাস ও আশ্বাস তাদের ভরসা দেয়। আর মাত্র কয়দিন। বিয়ের জন্য তারা কেনাকাটা শুরু করে। বাচ্চার নাম কি রাখবে সেটাও দুজনে মিলে ঠিক করে। ‘আব্র’--হবে মেয়ের নাম।
৪
প্রেগনেন্সির ঠিক তিন মাস পরে আলিজেহর ঠিকানায় একটি পার্সেল আসে। প্রায় শতেক পৃষ্ঠার একটি তথাকথিত গবেষণা পেপার। সবার উপরে লাল কালিতে জ্বলজ্বল করছে একটি শব্দ, ‘রিভেঞ্জ’।
নিচে লেখা, “অনীতা সাহা ও তাঁর পরিবার এবং একটি শুয়োরের জীবনবৃত্তান্ত”। নিচে স্বাক্ষর করা আছে, ‘রায়ান সাহা ম্যাকবে’।
আলিজেহর হাত কাঁপতে থাকে। চিৎকার করে সে মায়ের কাছে যায়। ইতোমধ্যে বাড়ির সকলে জেনে ফেলে কেলেংকারি। আলিজেহর দাদু মিঃ শামসাদ ফাইরোজী নিথর হয়ে বসে পড়ে মেঝেতে। এতদিন যে পাপের ভয়ে কুঁকড়ে থাকত নিজের বিবেকের কাছে, এবার সেটা ব্রক্ষ্মাস্ত্র হয়ে তাঁর দিকেই ধেয়ে এসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ভুলে গিয়েছিল যৌবনের সেই অমার্জনীয় অপরাধের কথা। পাপের কথা। পঙ্কিলতার কথা। নিজেকে সাচ্চা মুসলমান হিসেবে সমাজে পরিচিত করায়ে ভুলে থাকতে চেয়েছিল অতীত পাপ থেকে। না, পাপ তার বাপকে ছাড়ে নি। ভিন্ন রূপে, ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন মোড়কে ঠিকই এসে আছড়ে পড়েছে সুরক্ষিত দেয়াল ডিঙিয়ে। পঁচাত্তর বছরের টনটনে শরীরকে এখন আরো বিশ বছরের অধিক বয়স্ক বানিয়ে দিয়েছে একদিনের ব্যবধানে। গোপন পাপ উন্মুক্ত হওয়ায় এতদিনের অর্জিত সন্মান সকলের সামনে নগ্ন হয়ে ধরা দিয়েছে।
দুদিন পরে একা ঘরে বিধ্বস্ত আলিজেহ রায়ানের পাঠানো সেই অনীতা সাহা ও শুয়োরের জীবনবৃত্তান্তের শেষে লেখা একটি চিঠি পড়তে শুরু করে।
‘...স্ট্যানফোর্ড-এ পড়াকালীন পরিচয় হয় এক বাংলাদেশির সাথে। তাঁর মুখেই প্রথম বিস্তারিত শুনি পাকিস্তানি শুয়োরদের অত্যাচারের কথা। এর আগে আমার পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে অল্পবিস্তর জানা ছিল, কিন্তু নতুন বাস্তবতায় এ নিয়ে বিশদ ভাবনার সুযোগ ছিল না। বাংলাদেশী ঐ বন্ধুটির সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর আমার শরীরেও যে বাঙালী রক্তের প্রবাহ বহমান তা নতুন আঙ্গিকে ধরা দেয়। ইতিহাস জানার জন্য আমি পরিবারের লোকেদের কাছে জেদ করি। আর তখনই উন্মোচন হয় এক বীভৎস অধ্যায়। আমার নামের মাঝের অংশ ‘সাহা’ এবং এর নাড়ী নক্ষত্র বের করার জন্য আমি সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। এদিকে নতুন সফটওয়্যার ফার্মের জন্য অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়ায় মাঝের কয়েকবছর এ নিয়ে আর ভাবতে পারি নি। কিন্তু ছোট্ট একটি ঘটনা অজানা এক অধ্যায়ের দ্বার উন্মোচন করে। একদিন মাকে দেখি পত্রিকা হাতে নিয়ে অদ্ভুত এক বিস্ময় (নাকি ঘৃণা) সহকারে পড়তে। এক বয়স্ক ভদ্রলোকের ‘অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’ অ্যাওয়ার্ড এর খবরের দিকে মা ওভাবে চেয়ে আছে। অবশেষে জানতে পারি এই ভদ্রলোকের পরিচয়। আর জানার পরে ঘৃণায় কুঁকড়ে যাই। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি প্রতিশোধের।
এরজন্য প্রথমে তোমার দাদুর পরিচয় আমাকে উদ্ধার করতে হয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়্যার জন্য। তোমাদের পরিবারের নাড়িনক্ষত্রও। সেখানেই জানতে পারি উনার একমাত্র ছেলের একমাত্র মেয়ে তুমি। পড়াশুনা করছ অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজে। ইনিই যে সেই কালপ্রিট সেটা জানার জন্য আমি একজন সিলেটি বাংলাদেশি ভদ্রলোককে হায়ার করি। জানতে পারি তোমার দাদু প্রতি বিকেলে হাইড পার্কে হাটাহাটি করে। সেই সিলেটি ভদ্রলোকের দায়িত্ব ছিল শুধু জানা উনি কোনো সময় বাংলাদেশে গিয়েছিলেন কিনা। এবং টানা দুইমাসের প্রচেষ্ঠায় উদ্ধার করা সম্ভব হয় যে, উনি যশোরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আরো জানতে পারি উনার মুখ থেকে আমার দিদা ‘অনীতা সাহা’র কথা। তবে সেটা অনেক মিথ্যা সহকারে। নিশ্চিত হই এই সেই লোক। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ‘অনীতা সাহা’র সাথে যা ঘটেছে ঠিক একই ব্যাপার তার পরিবারকেও ভুগতে হবে।
সফটওয়্যার কোম্পানীর সিইও পদ ছেড়ে দিয়ে একটি ইকোনোমিক ও স্যোসাল রিসার্চ ফার্মে যোগদান করি। যদিও এই ফার্মটাও আমারই বানানো কলাম্বিয়া ইউনির এক প্রফেসরকে সাথে নিয়ে। এর একটি শাখা খুলে ফেলি বাংলাদেশে। এক বছরের মধ্যে দুটো পাবলিকেশন করিয়ে অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজের প্রফেসর মিঃ ম্যাকডারমটের সাথে যোগাযোগ করি। উনাকে জানাই এক রিসার্চ ফার্মের ফান্ডিং এর ব্যাপারে। এবং আমি উনার সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। এর আগে জেনে নিয়েছি উনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট। উনি তৃতীয় বিশ্বের দেশের দারিদ্রতা নিয়ে কাজ করেন। আমি উনার তত্বাবধানে কাজ শুরু করি। তখনই উনাকে বুঝিয়ে আরো একজন জুনিয়র কাউকে সাথে নিতে পারি কিনা সে বিষয়ে উনাকে জানাই। উনি প্রথমে রাজি না হলেও অর্থের ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়ায় তোমার কথা বলি। যদিও এ সব কিছু সাজানো ছিল। কিন্তু কাউকে জানতে দেয় নি। এরপর তো তুমি জানো…।
তবে একবার তুমি আমাকে সন্দেহ করেছিল। তখন আমরা যশোরের আমার দিদার দেশ ভবদহতে। সেখানে যে আমি আগেও গিয়েছি এবং আমার সাথে অনীতা সাহার একটি সম্পর্ক রয়েছে এটি কিছু লোক জানত। সে কথায় একদিন এক বৃদ্ধ মুখ ফসকে তোমার সামনে বলে ফেলে। তুমি যেহেতু সে সম্পর্কে কিছুই জানতে না, তাই তোমাকে আমার বুঝাতে বেগ পেতে হয় নি। এছাড়া তুমি আমার সাবলীল বাংলা বলা নিয়ে একটু অবাক হয়েছিলে। আমি স্ট্যানফোর্ডে পড়াকালীন যখন ঐ বাংলাদেশী বন্ধুর কাছে ঐ সব দিনের ঘটনাগুলি জানতে পারি, তখন থেকেই বাংলাদেশ, বাংলা ইত্যাদি নিয়ে আমার আগ্রহ জন্মায়। ঐ বাংলাদেশি বন্ধুটিই আমাকে প্রথম বাংলা ভাষা শেখায়। এরপর আমার আগ্রহ ও জানার তীব্রতা এখানে আনে।
আমি জানি তুমি যখন এ লেখা পড়ছ তখন হয়ত আমাকেও তীব্র ঘৃণা করা শুরু করেছ। হয়ত ভাবছ তোমার দাদুর পাপের ভাগিদার তুমি কেন হবে? দেখো, পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই উত্তরাধীকার সূত্রে পাই সামাজিক বাস্তবতায়। এটাও ধরে নেও তেমনই কোনো পাওনা। আর মনে রেখো ঐ কুলাঙ্গার ভদ্রলোক শুধু তোমার একার আপন দাদু নয়, দুর্ভাগ্যক্রমে আমারও। কৌশলে তোমার দাদু ও আমার মা’র সাথে তোমার ও আমার ডিএনএ টেস্টও করেছি নিশ্চিত হওয়্যার জন্য। আমি যেদিন উনাকে প্রথম তোমাদের বাসায় দেখি, তখনই গলা টিপে ধরতে মন চেয়েছিল। আমি জানি, তুমি আমাকে প্রচন্ড রকম ঘৃণা করছ এখন। ঠিক একই রকম কিংবা তার চেয়েও অধিক পরিমাণ ঘৃণা অনীতা সাহাও করেছিল নিশ্চয়। তুমি তো তবু আমাকে ভালোবেসে…আর দিদা অনীতা…। ভেবো দেখো, নিজের কষ্টটা কিছুটা লাঘব হবে। আর ঐ শুয়োরটাকে তার কৃতকর্মের সাজা পেতে দাও নিজের পরিবারে এক ঘৃনিত কীট হিসেবে বেঁচে থেকে বাকী জীবনটা।
৪
ছয়মাস পর ক্রিসমাসের দিন আবার একটি পার্সেল আসে। চমৎকার একটি ক্রিসমাস ট্রি। সাথে বাচ্চার ব্যবহারের জন্য নানা উপকরণ। একটি কাগজে লেখা, “...আমার অনাগত জান কিউটি পাই ‘আব্র’ ও তার কিউট মায়ের জন্য’।
নিচে লেখা, ‘আমি শুয়োর নই’!!!
***********************************************
Ⓒ আখেনাটেন: জুন/২০২২
ছবি: pexels.com
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২২