somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তৎকাল কটকচ্চ-২: ভারতীয় নূপুরের উগ্র ঝনঝনানি ও B-Y-C-O-T-T বাই ভাসুডেভা কুটুম্বাকাম!!!

০৯ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাদাত হাসান মান্টো। যাঁরা একটু-আধটু সাহিত্য-টায়িত্য গলাধঃকরণ করতে অভ্যস্ত-টভ্যস্ত, তাঁরা নিশ্চয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা এই গল্পকারের নাম গাত্রকন্ডূয়ন করে থাকবেন। ফরাসি ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ত্রাদামুস হরেক পদের ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন ষোল শতকে, যার প্রতিফলন একবিংশ শতকেও দৃশ্যগোচর হচ্ছে। ঠিক তেমনই মি: মান্টোও ৫০’র দশকের শুরুর দিকে একটি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন উনার আলোচিত ‘Letters to Uncle Sam’-এর ১৯৫৪ সালে লেখা এক প্রবন্ধে।

তিনি লিখেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "অবশ্যই পাকিস্তানের সাথে একটি সামরিক সহায়তা চুক্তি করবে কারণ আপনি (পাকিস্তান) বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামি সালতানাতের অখণ্ডতা সম্পর্কে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন এবং কেন নয়, কারণ আমাদের মোল্লারা রাশিয়ার কমিউনিজমের সেরা প্রতিষেধক। যদি (যুক্তরাষ্ট্রে কর্তৃক) সামরিক সাহায্য প্রবাহ শুরু হয়, তাহলে মোল্লাদের কাছে অস্ত্রও যোগান দেয়া শুরু হবে।"

ভাবুন, ৫০’র তাঁর ঐ বাণী পাকিস্তানিরা কীভাবে শতভাগ প্রতিফলন ঘটিয়েছে আশির দশক (আফগান-রুশ যুদ্ধ) থেকে। ফলাফল। এখন পাকি মোল্লারা খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে দূরবর্তী কাঁঠালগাছের পাতা চিবানো সীমানার ওপারের আরেক উগ্র গেরুয়া টিকিধারী মোল্লার লম্ফঝম্ফ দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। ভাবছে। গেরুয়ারাও আমাদের লাইনেই আসছে। এবং সত্যিই তাঁরা আসছে। কারা এই গেরুয়া? তাদের নূপুরের কর্কশ ঝনঝনানিই এবার শুনব। কারণ পাকি মোল্লারা এখন ‘গন কেইস’। নয়া খাউজানিযুক্ত পাগল আমদানী হলে পুরান চুলকানিযুক্ত পাগলের নর্তন-কুর্দন আর কে দেখতে বা শুনতে চায়? বিশেষ করে, যখন বিশ্বের সামাজিক পরিবর্তনগুলো অগাস্ট কোঁৎ-এর বলে যাওয়া ‘সামাজিক পরিবর্তন ধীর গতি’র সেই বাণীকে ঝেটিয়ে বিদায় করে ‘সিডর’ বেগে সমাজের পরিবর্তন ঘটছে দুই ডিজিটের কারসাজিতে।



“ভারতীয় নূপুরের উগ্র ঝনঝনানি”- আপনি যদি কুম্ভকর্ণের ঘুম দিয়ে না থাকেন তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এটা কীসের কর্কশ ঝনঝনানি। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স-ও যে অমানুষকে মানুষে পরিণত করতে পারে না, তা এখনকার স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছি। এটি একটি স্রেফ উদাহরণমাত্র। এরকম শত শত গ্রাজুয়েটরা এখন স্যোসাল মিডিয়াতে মুখ নিসৃত গরল কিবোর্ডের মাধ্যমে ঢেলে আসমান-জমিন বিষাক্ত করে তুলছেন প্রতিনিয়ত।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আর মিসেস নুপুর শর্মাও কোনো ‘ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট’ (প্রান্তিক কোনো চরিত্র নয়!)। তিনি একটি বৃহত্তর ভারতীয় দলের নির্বাচিত মুখপাত্র (Spokesperson)। যে দলটা গত ৮ বছর ধরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রীক(!) দেশকে শাসন করছে। আর তাঁর সেই ঘৃণাসূচক উক্তিও কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

এনডিটিভি-তে সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর অটোবায়োগ্রাফীর লেখিকা সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ লিখেছেন, “নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দাল বিচ্ছিন্ন কণ্ঠ নয়…মোদি-শাহ নেতৃত্বাধীন বিজেপি তাঁদের (ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণাসূচক কথাবার্তা যারা র‍্যানডম বলছেন!) চিন্তাধারার বিষয়ে ভুল স্বীকার করে দুঃখের সাথে অনুতপ্ত হওয়া বা দুঃখজ্ঞাপন (unapologetic) করতে ইচ্ছুক নয়, এবং ইসলাম ও সংখ্যালঘুদের প্রতি অবজ্ঞার কথা গোপন করছে না (২০১৪ সাল থেকেই)। বরং তাঁরা সবসময়ে (ইসলাম বা মুসলিমদের বিরুদ্ধেঃ গোরক্ষা, লাভ জিহাদ, মব লিঞ্চিং, কাশ্মীরের স্পেশাল স্টেটাস বাতিল, করোনা ব্লেইম, বাবরি মসজিদ রায়, দিল্লী রায়ট, সিএএ, এনআরসি, হিজাব বিতর্ক, আইএএস বিতর্ক, বুলডোজার চালানো, রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করা, ক্রমাগত ঘৃণাবাণী উক্তি, গদি মিডিয়ার মুসলিম বিদ্বেষ ইত্যাদি) যুদ্ধোংদেহী অবস্থায় রয়েছে এবং প্রকাশ্যে একটি হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে সাফাই গাইছে (সাংবিধানিকভাবে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও)।

অর্থাৎ নুপুর শর্মার ‘হেইটস্পিচ’কে ‘ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট’ বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া আরএসএস/বিজেপি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর আর একটি নব্য হিপোক্রেসী ছাড়া আর কিছুই নয়। গত ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতে সংখ্যালঘু ও কিছু ক্ষেত্রে দলিত শ্রেণির মানুষদের বিপক্ষে যা ঘটছে তাঁকে মাছি তাড়ানোর মতো করে এক বাক্যে নিঃশেষ করা ইতিহাসে নয়া আরেক ভণ্ডামীর নজির হয়ে থাকবে।

অনেকেই একে ‘গুড কপ ও ব্যাড কপ’ এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন। একদল নেড়ি কুকুররে ইচ্ছাকৃতভাবে (ডিভাইড অ্যাণ্ড রুল) ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পথচারীদের কামড়ানোর জন্য। আর কুকুরের প্রভু চুপচাপ দেখে বলছেন, ওগুলো স্ট্রিট ডগ। আর ভেতরে চাপা উল্লাস ধর্মীয় পোলারাইজেশন ও রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতার স্বাদে। কিন্তু কখনও ভেবে দেখছে না যে সেই স্ট্রিট ডগ বা নেড়ি কুকুরেরা প্রভুকেও কোনো একসময়ে কামড়ে দিতে পারে কিংবা মতের অমিলে প্রভুর আস্তানাতে বিষ্টা ছড়িয়ে দুর্গন্ধময় করে তুলতে পারে। ঠিক এটিই ঘটেছে নূপুরের কর্কশ আওয়াজে। একটি স্পিচে এখন ভারতে বিষ্টাময় অবস্থা। এগুলো আগেই ভাবা উচিত ছিল।

আর এই বিষয়টাই মিঃ মান্টো বহু দশক আগে পাকিস্তানের জন্য ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। পাকিস্তান এখন যেমন বিষ্টাময়, ভারতও একই পথের সাথী। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, ইতিহাসের এটি একটি বড় পরিহাস!!!

আচ্ছা, আমরা বাংলাদেশীদের কী অবস্থা?

*******************************
আখেনাটেন: জুন/২০২২
ছবি: scroll.in

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:৩৪
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×