অষ্টরম্ভা তথা ঘোড়ার ডিমের ব্লগীয় স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে কাঠঠোকরার মতো ঠকাস ঠকাস করে একটানা মস্তিষ্কে করাঘাত করতে থাকলে কিছু স্মৃতি ‘ভুস’ করে মস্তিষ্ক বিচ্যুত হয়ে উড়তে থাকে। ঠিক পাখি নাকি মনুষ্যকুলের ভাবনার মতোই। আশ্চর্য হলেও সত্যি, মানুষের ছুপা স্বভাবই হচ্ছে পাখির মতো উড়ে বেড়ানোর ধান্ধা। কারো উড়ার সামর্থ্য আছে। কারো নেই। কেউ সামর্থ্য থাকলেও উড়ে না। গ্যাঁট হয়ে এক জায়গায় ফেবিকলের মতো আটকে থাকে। কেউ আবার অসমর্থ হয়েও উড়তে গিয়ে ডানা-পাখনা-মাজা ভেঙ্গে ভবলীলা সাঙ্গ করে। আমরা এভাবেই হয়ত মাজা ভেঙ্গে ধরাধাম ত্যাগ করে মহাকালের পথে পাড়ি দিব কোনো এক সময়। তখন হয়ত নশ্বর দেহ কীটের খাদ্য হলেও আত্মারা উড়ে বেড়াতে থাকবে দিকবিদিগ…? কে জানে কেউ কেউ হয়ত প্রেতাত্মা হয়ে সামুতে ব্লগিংও করতে পারে? আছে না নাকি কেউ এমন এখন…? বাহে, আওয়াজ প্লিজ!!!
যাহোক, স্বল্প সময়ের ব্লগিংকালে কিছু ব্লগারের মন্তব্য-লেখা-চিন্তা-ভাবনা-টাবনা কিংবা হাসাহাসি-কাশাকাশি-নাচানাচি-খোঁচাখুঁচি-খোলামকুচি কিংবা খাউজানি-উষ্টানি-পিষ্টানি-দৌড়ানি-চুল্কানি যে কোনো ভাবেই হোক দাগ কেটে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল এই প্রতিভাবান বা প্রতিশ্রুতিশীল বা প্রতিক্রিয়াশীল বা প্রতিনিধিত্বশীল ব্লগাররা বহুদিন হল ব্লগে আর আসেন না। হাসেন না। নাচেন না। কাঁদেন না। পা…থুক্কু… গান না। খান না। চাঁন করেন না। মান করেন না। ভান করেন না। টান মারেন না। হুম, রুখ যা! এগুলো ভীষণ মিস করি। তো আসুন দেখি ব্লগার কোন সে গুণী-বেগুণী জনঃ
ব্লগার কালিদাসঃ দেশের কোনো এক পাবলিক ভার্সিটির শিক্ষক এ ব্লগার যখন ব্লগে থাকতেন, তখন স্বভাবতই জমজমাট থাকত। কারণ তিনি চমৎকার মন্তব্য করতেন এবং যতক্ষণ সামুতে লগ ইন থাকতেন প্রায় সব পোস্ট পড়ে তাতে নিজের ক্রিয়েটিভ ফুটপ্রিন্ট রেখে আসতেন। পাশাপাশি, রান্না-বান্না-টান্না ও গান-বাজনা-খাজনা বিষয়ক পোস্টের মাধ্যমে ব্লগপাড়া জমিয়ে দিতেন। জ্ঞানী মানুষ। ইউরোপীয়ান পিএইচডি শেষে দেশে এসে এখন মনে হচ্ছে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন। নাকি গুম-টুম হয়ে আয়নাঘরে বসে জব করছেন। নাকি আত্মা-প্রেতাত্মা হয়ে আমাদের চারপাশেই ঘুরাঘুরি করছে! কে জানে? খোদা মালুম!!!
ব্লগার বাবুরাম সাপুড়েঃ সাপুড়ে সাব কলকাতার দুঁদে অর্থনীতিবিদ। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, নিজেকে প্রগতিশীল কিংবা লিবারেল হিসেবে পরিচিত করালেও কখনও ভারতীয় সমাজে বর্তমানের যে পোলারাইজেশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনেকাংশে রাষ্ট্রীয় মদদে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিকভাবে কোনঠাসা করার যে ন্যাক্কারজনক অবস্থার চিত্র দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে কখনও সোচ্চার হতে দেখি নি। যদিও ভারতীয় প্রকৃত লিবারেলদের এটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার যারা দিল্লীর জেএনইউ কিংবা কলকাতার যাদবপুর ইউনির দিকে লক্ষ্য রাখে। অথচ তিনিই আবার বাংলাদেশের জঙ্গী ও কাঠমোল্লাদের ব্যাপারে বিরাট সোচ্চার ছিলেন। আমার কাছে এটি ভন্ডামী মতে হতো। উনাকে বলেছিও বেশ কয়টা বিতর্কে। সদুত্তর পাই নাই। এখনও সামুতে এ স্বভাবের কয়েকজন কলকাতা, আগরতলা, দিল্লী, ঢাকা, আমড়িকা থেকে ব্লগিং করছেন। মজার বিষয় হচ্ছে তাঁরা সবাই লিবারেল অর্থাৎ টুপির বিপক্ষে বললেও টিকির বিপক্ষে মুখে কুলুপ…মজার না? উলটোটাও আছে, টিকিতে সমস্যা হলেও টুপিতে স্পিকটি নট!
যাই হোক, এরপরও তাঁর ব্লগিং মিস করি কারণ অর্থনৈতিক জ্ঞান। চমৎকার মন্তব্য করতেন ধর্ম-বিষয়ক কিচ্ছা বাদ দিলে। এছাড়া উনার সাথে প্রতিক্রিয়াশীল ব্লগার টারজান০০০৭ এর চাপান-উতোর কিংবা পাঁঠার বিচি ছেঁড়াছিড়ি কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ব্লগার টারজানের প্রায় প্রতি পোষ্টে উনি বনের টারজানরে গাছ থেকে নামিয়ে টুপি পরিয়ে হাতে রকেট লাঞ্চার ও গ্রেনেট ধরায়ে দিতেন। অন্যদিকে টারজান তাঁর স্বভাবজাত বহুদিন না কাটা আঙুলের নখরের আঘাতে সাপুড়েকে পাঠাঁ মনে করে বিচি ফেলতেন। আবার সেই বিচি গুদামজাত করে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। আবার সেগুলো মাঝে মাঝে বাজারেও তুলতেন। আমরাও বাজারে উঠা নানা কিসিমের, নানা রঙের, নানা ঢঙের বিচির পরিমাণ দেখে বুঝে নিতুম যুদ্ধের ভয়াবহতা। বিরাট বিনুদুন ছিল সেসব বিচিঝরা দিনের। অনেক মিস করছি মহান এই ব্লগারদের সাপ ও ওঝাঁ হয়ে বংশী বাদনের!
ব্লগার ইনাম আহমেদঃ ভদ্রলোক মনে হয় দেশের এক প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাশ করে চাকরিতে প্রবেশ করে ব্লগিং বাদ দিয়েছেন। তবে শেষে মনে হয় ঘোষণা দিয়েই উনি ব্লগ ত্যাগ করেছিলেন কোন এক কারণে। কারণটি ঠিক আমার মনে নেই। কেউ জানলে জানিয়ে দিতে পারেন। প্রথম দিকে সরকারি দলের চরম সমর্থক এই ব্লগার ভিন্ন মত, বিশেষ করে ছাগু শ্রেণিকে মারাত্মক দৌড়ের উপর রাখতেন। ভালো মন্তব্যও করতেন। তবে ভীষণ প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন। কোনো বিষয় নিজের পছন্দ না হলে ভাট বকে দিতেন। ভারতের একনিষ্ট ভক্ত। আমি কোনো এক লেখায় ভারতের যৌক্তিক সমালোচনা করলেও উনি আমাকে পাকি-টাকি ডেকে একাকার করে দিয়েছিলেন। যদিও পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে (কোনো এক লেখায় যখন পাকিদের একহাত নিয়েছিলুম!) আমার পোস্টে স্বাভাবিক মন্তব্য করেছেন। এই ব্লগার একদিন নিজ হাতুড়ি বাহিনির হাতে কোনো এক পিকনিকে বেধড়ক মার খেয়ে মনে হয় নিজের মস্তিষ্কে জমে থাকা কিছু ‘অপদার্থ’ ফেলে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন। নিজে বিপদে না পড়লে আমাদের বোধোদয় হয় না-- সে ধরনের আর কি? আমড়িকা থেকে ক্ষমতাসীন দলের ‘একনিষ্ট ভক্তকূল’ এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন…যদিও এটি অরণ্য রোদন…। যাহোক, উনার মন্তব্যগুলো উপভোগ্য ছিল যা মিস করি। মাঝে মাঝে বেশ ভালো পোস্টও করতেন।
ব্লগার মানবীঃ কানাডা প্রবাসী এই বিপ্লবী ব্লগারের সাথে আমার প্রথম দিকের কিছু লেখা ও তাঁর শেষ দিকের কিছু লেখাতে ইন্টারেকশন হয়েছিল। চমৎকার মানুষ। অন্যায় দেখে সহ্য করতে পারতেন না। এমনকি ব্লগেও। ব্লগের লেখাচোর, মাল্টিবাবুদের উনি বিরাট ছ্যাঁচা দিতেন। যারা খেয়েছেন তারা মনে হয় ভুলে যাওয়ার কথা না। আর কিছুদিন ব্লগে থাকলে জনৈক জনপ্রিয় ব্লগার তাঁর ডজনখানেক মাল্টির জন্য কী ধরনের ছ্যাঁচা খেতেন তা ভাবতেই কলজা-মলজা শিউরি উঠে। এছাড়া মনে আছে এক ব্লগার নিজেকে নার্সিসিসের আসনে বসায়ে এমন ভাব করতেন যে সকল মেয়েরাই তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য উন্মুখ। রাস্তায়-গলিতে-ফুটপাতে, রেস্তরাঁ-হোটেলে-মোটেলে সব জায়গায় তাঁকে অতীব রূপসীরা অনুসরণ করছে। গলে গলে পড়ছে। নড়ে চড়ে বসছে। ঢলে ঢলে উঠছে। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প সবকিছুতে এই একই কাহানি। তাঁর এই অতি বাড়াবাড়ি আচরণ দেখে ব্লগার মানবী দিলেন এক রাম ছ্যাঁচা। জনৈক ব্লগার গোস্মা করে মানবীকে ব্লক মারলেন। পরে জেনেছি ভদ্রলোক ন্যূনতম সমালোচনা সহ্য করতেন না কিন্তু বিরাট বিরাট মন্তব্যের মাধ্যমে অন্যদের সমালোচনা কিংবা উপদেশ দিতেন। কামেল আদমী! বিরাট মজার সৃষ্টি!!। সাথে আমাকেও ব্লক কারণ আমিও মানবীকে সমর্থন করেছি ঐ সকল ভণ্ডামীর বিপক্ষে ছিলুম তাই। লে হালুয়া!!! এই হচ্ছে মানবী…মিস করছি ভীষণ কারণ মানবীর মতো ব্লগারদের সামুতে দরকার--বিবেকহীন দলবাজ বা তৈলবাজ কিংবা ধর্মান্ধ ব্লগার নয়। কারণ আমার মতে এ দুই শ্রেণিরা জাতির জন্য গার্বেজ কিংবা সাসটেইনেবল উন্নয়নের প্রধান বাঁধা!!!
এর বাইরে আপনাদেরও নিশ্চয় অনেক গুণী-বেগুণী-কুমড়ানী ব্লগারের কথা মনে পড়ছে। আওয়াজ দিন। উন্মুক্ত করুন সেসব মহান আত্না কিংবা প্রেতাত্মাদের জাতির সামনে!!
********************************
আখেনাটেন/নভেম্বর-২০২৩
ছবি: pexels.com
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৯