somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিরানহা এক ভীতু দানব

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি হলিউডের মুভিতে পিরানহা দেখে থাকবেন। দানবীয় আচরন আর হিংস্রতার জন্য ইতমধ্যেই পিরানহা আপনার কাছে পরিচিত জলের আতঙ্করুপে।আমি ধরে নিতে পারি আপনি পিরানহা সম্পর্কে জানেন। আর আমি এটাও ধরে নিতে পারি আমি অনেক কিছুই ভুল জানেন।পিরানহা সম্পর্কে আমি আপনাকে নতুন কিছু বলতে পারব বলেই আমার ধারনা। ভয় পাবেন না, আমি পিরানহার বৈজ্ঞানিক নাম কি সেটা নিয়ে কপচাবো না।


পিরানহা সাউথ আমেরিকার মাছ। মোটামুটি উষ্ণ আবহাওয়াই পছন্দ করে। পিরানহা লম্বায় ১২ ইঞ্চির মত হয়। আট থেকে দশ বছর বাচে অনুকুল পরিবেশে। আমাদের দেশে এটা কয় বছর বাচে সেটা বলতে পারছি না। এই সংক্রান্ত তথ্য নাই। আপনি যদি ভেবে থাকেন দশ বছর বেশ লম্বা সময়, তাহলে জেনে রাখুন আপনার গোল্ড ফিশটা বাচবে বিশ বছর। জাপানী একটা কই বাচে একশ বছর। আমি গত দুইশ বছর ধরে বেচে থাকা জাপানী কই এর কথা পড়েছি।


প্রথমেই বলি পিরানহার খাদ্য নিয়ে। আপনার ধারনা যে নদীতে পিরানহা আছে সেখানে কেউ গোসল করতে নামলেই হল। ঝাকে ঝাকে পিরানহা এসে খুবলিয়ে খুবলিয়ে খেয়ে ফেলবে সমস্ত গোশত। পড়ে থাকবে মানুষের একটা কঙ্কাল। ধারনাটা অনেকাংশেই ভুল। পিরানহা মাংশাষী বটে, তবে পিরানহা খেতে পছন্দ করে মরা প্রানী।

পিরানহা বাংলাদেশের নদীতে ছাড়া পেলে সব মাছ খেয়ে শেষ করে ফেলবে- এই রকম একটা ধারনা আছে। কথাটা সত্যি হবার সম্ভাবনা কম। আমাজন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন নদীতেই নানা কারনে পিরানহা পাওয়া গেছে। কারন কম বেশি একই। শৌখিন মাছ পালকরা পিরানহাকে ছড়িয়ে দিয়েছে সারাবিশ্বে। নদীতে পিরানহা আসে এদের হাত ধরেই। পিরানহা পালা বেশ ব্য্যসাধ্য । হয়ত ঝামেলা পালতে আর ভালো লাগে নাই। পিরানহা নদীতে ছেড়ে দিয়েছে। আবার চোরাকারবারীরা এই মাছে ছেড়ে দেয় আইনের হাত থেকে বাচার জন্য। বেশীরভাগ দেশেই পিরানহা পালা নিষিদ্ধ। সেই নদীগুলোর সব মাছ পিরানহা খেয়ে শেষ করে ফেলেছে সেটা হয়নি। তবে ক্ষতিকর একটা প্রভাব পড়েছে। আমার জানা মতে বাংলাদেশেও পিরানহা চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের নদীতে পিরানহার উপস্থিতির কোন খোজ আমি জানিনা। তবে কাপ্তাই হ্রদে নাকি পিরানহা আছে।

বাংলাদেশে পিরানহা মাছকে দেশি রূপচাদা বলে বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশি পিরানহার কয়েকটা ছবি দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এইগুলা পিরানহা না, এইগুলা pacu. রেড বেলী পিরানহা আর pacu এর ভিতর পার্থক্য করা কঠিন। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এদের পেট লাল রঙের। মূল পার্থক্য চোয়ালের গঠনে আর সাইজে। pacu পিরানহার থেকেও বড় হয়, ওজনে বেশি থাকে। পিরানহা carnivore কিন্তু pacu omnivore. পিরানহা মাংশ খাবে pacu মাংশ আর গাছটাছ সবই খাবে। আমি pacu আর পিরানহার ছবি দিয়ে দিচ্ছি। নিজেই দেখে নেন চট করে আলাদা করা যায় কিনা।




pacu এর ছবিটার নিচের কলমটার দিকে তাকান, pacu এর সাইজ সম্পর্কে একটা আইডিয়া হবে।

আমাজন ছাড়া অন্য নদীগুলাতে পিরানহা দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করেছে এমন প্রমান পাওয়া যায় নি। পিরানহা এমনিতে খুবই শক্ত প্রানের মাছ। আমাদের দেশের কই মাছের মত। কিন্তু বংশ বৃদ্ধিতে এর অতটা ওস্তাদ না। বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশে এরা টিকে থাকতে পারলেও এরা সেখানে সাধারনত গনহারে বংশ বাড়াতে পারে না। ( খোদা আমাদের বাচিয়েছেন। )

পিরানহার আক্রমনের শিকার হয়ে মারা গেছে মানুষ- এই ধরনের রেকর্ড খুব কম। পিরানহার হাতে যা মানুষ মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি মরে সাপের হাতে। আপনি পিরানহা ধরতে গেলে কামড় খেতে পারেন। কিন্তু পিরানহা আপনাকে ধরার জন্য তক্কে তক্কে আছে, নদীতে নামলেন আর ধরে কামড়াবে এই সম্ভাবনা কম। সম্ভাবনা বলছি - নিশ্চিতভাবে বলছি না কারন ক্ষুধার্ত পিরানহা কামড়াতে পারে। মুভিতে দেখার মত দল বেধে মানুষ কামড়িয়ে খেয়ে ফেলাটা সম্ভব না।

এইখানে আরেকটা তথ্য দেই। পিরানহা দল বেধে থাকে আক্রমনের জন্য না, বরং আত্মরক্ষার জন্য। আমাজনের নদীতে পিরানহার শত্রুর অভাব নাই। রিভার ডলফিন আছে যারা পিরানহা খেয়ে সাফ করে। পিরানহা আসলে বেশ ভীতু ধরনের মাছ। এরা দল বেধে যখন থাকে তখনও আসলে ভয়ে থাকে- কখন কে খেয়ে ফেলবে।



আমি নিজে তিনটা পিরানহা পালছি। তাদের স্বভাবগুলা বলি।

০১
এরা পছন্দ করে অন্ধকার। আলোতে এরা খুব শান্ত, ধীর স্থির। যখন আলোতে থাকে তখন এরা খাবার পর্যন্ত খেতে চায় না। আবার অন্ধকারে বেশ চঞ্চল। একবার আমি দুইটা ছোট ব্লাক মুর গোল্ড ফিস দিয়েছি ওদের খেতে। এরা সারাদিন ব্লাক মুরের সাথে থাকল। একটা কামড় পর্যন্ত দেয় নাই। আমি ভাবলাম পিরানহা হয়ত সাধারন গোল্ড ফিস খায়, ব্লাক মুর খাবে না। কিন্তু সকালে উঠে দেখি ব্লাক মুর দুইটার হাড্ডিগুলা পর্যন্ত নাই। পিরানহা খেয়ে সাফ করে ফেলছে।

আমি মাঝে একবার দেশি গাপ্পি আর বিদেশী গাপ্পির সংকর করার চেষ্টা করেছিলাম। যে বাচ্চাগুলার রঙ আসেনি ভালো- সে গুলো পিরানহাকে খাইয়ে দিয়েছি। সেখানেও একই ব্যাপার। দিনের আলোতে কোন কামড়া-কামড়ি নাই। রাতে সব কয়টা শেষ।

০২
এরা অত্যন্ত ভীতু টাইপ। এক কোনায় লুকিয়ে থাকে। আগেই বলেছি অন্ধকার পছন্দ। নতুন কোন মাছ এর কাছাকাছি এলেই লুকিয়ে পড়তে ব্যস্ত হয়ে যায়। আমি দেখেছি আমার পিরানহাগুলো দল বেধে থাকে। কিন্তু নিজেরা নিজেরাও আবার কামড়া-কামড়ি করে । একটা পিরানহাও শারীরিকভাবে অক্ষত না। একজন আরেকজনকে কামড়িয়ে লেজের কিছুটা খেয়ে ফেলেছে। আবার কোন বিপদ দেখলেই পিরানহাগুলো একতাবদ্ধ।

০৩
এদের একধরনের টেরিটোরি মার্ক করার প্রবনতা আছে। আমার বড় একুরিয়ামে একবার পরীক্ষামূলকভাবে তাদের ছেড়েছি। কিছুক্ষন এরা ইতস্তত ঘুরেছে। ঘন্টা দুয়েকের ভিতরেই একটা কোনে স্থায়ী আস্তানা করে ফেলেছে। কোন মাছ তাদের কাছে এলেই একটু এগিয়ে গিয়ে কামড় দিয়ে আসে। কিন্তু মাছটার পিছে পিছে না গিয়ে আবার কোনায় ফিরে চলে আসে। ঘন্টা ছয়েক পর থেকেই তাদের আক্রমন শুরু হল। এই সময়ে পিরানহাগুলো টের পেয়ে গেছে যে একুরিয়ামে তারাই ব্যাড বয়। বাকিরা খুব ভদ্র। ব্যাস যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই কামড়ানো শুরু।


০৪
এরা ভয়াবহ রকমের কষ্ট সহিষ্ণু মাছ। একমাত্র গোল্ড ফিস ছাড়া আর কোন মাছকে আমি এতটা hardy পাইনি। গোল্ড ফিসকে আমি পিরানহা থেকেও এগিয়ে রাখব কেননা গোল্ড ফিস ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও বেচে থাকতে পারে, পিরানহা পারে না। আমার একুরিয়ামে আমি কয়েকবারই পিরানহাকে ভয়ংকর দুর্যোগে ফেলেছি। ট্যাঙ্ক পরিস্কার করিনি। নাইট্রোজেনের লেভেল বেড়ে গেছে। কিন্তু পিরানহা বেচে আছে ধুকে ধুকে। পিরানহার বেচে থাকার আরেকটা প্রমান দেই। বাসার ছোট শোল মাছা আনা হয়েছে। এই মাছগুলা বেচে থাকায় আম্মু একুরিয়ামে রেখে দিতে চাইল। আমি এদের নিয়ে পিরানহার সাথে রেখে দিলাম। হঠাৎ করেই ট্যাঙ্কে মাছের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় পানি গোলা হয়ে গেল। প্লাস সেই ট্যাঙ্কটারে কোন ফিল্টার নাই। ময়লার কারনে এবং পানি কম থাকায় একে একে মাছ মরা শুরু করল। মারা গেছে শোল মাছগুলা। একটা পিরানহার কিছু হয় নি। শোল নিজেও রাক্ষুসে মাছ। থাকছে নিজের আবহাওয়ায়। পিরানহা বিদেশি, এদেশের আবহাওয়ার জন্য অভিযোজিত নয়, এরপরও পিরানহা টিকে গেছে শোল পারে নি। সব কয়টা শোল অবশ্য মরে নি। কিতু যে কয়টা বেচে আছে তাদের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে পিরানহা।

হিংস্রতায় পিরানহার কাছে শোল কিছুই না। বোয়ালের একটা ছোট বাচ্চা জীবিত পেলে পরীক্ষা করে দেখতাম কে জিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×