somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন অসহায় বৃদ্ধের মুখ

১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মনে নাই প্রথম কবে আমি জানতে পারি মানুষ মারা যায়। কেউ আমাকে জানিয়েছে নাকি আমি চারপাশ থেকে এই উপাত্ত সংগ্রহ করেছি সেটাও বলতে পারছি না। আমি প্রথম ঘড়ি দেখা শিখেছি কখন সেটা আমার মনে আছে। কবে আমার প্রথম দাত পড়ল সেটাও আমার মনে আছে। কিন্তু মৃত্যুর ব্যাপারটা আমার কিছু মনে নাই। অবশ্য প্রথম মৃতদেহ কাছ থেকে দেখার স্মৃতি মনে আছে।



আমি তখন থ্রী তে পড়ি। স্কুল শেষে বাসায় ফিরে আসছি। রাস্তার পাশে চাটাই এর ওপর রাখা লাশ একটা। সেই লাশ কিছুক্ষন আগেই স্থানীয় লেক থেকে তুলে আনা হয়েছে। লাশটা পাচ টুকরা করা। দুই হাত, দুই পা আর বাকি অংশ। একজন লোক খুব বিরক্ত ভঙ্গিতে পাশের জনকে ব্যাখ্যা করছে কি কষ্ট করে সে লাশের টুকরা গুলো তুলে এনেছে। আমি মাথাটা দেখিছি। ঠোটটা ছিল তার কুচকুচে কালো। কয়েকদিন পানির নিচে থাকলে এইরকম হয় কিনা কে জানে।



ভূমিকা শেষ হল।



অনেকদিন পরের কথা। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন। টিউশনি করতে যাচ্ছি পুরান ঢাকায়। রাস্তায় জ্যাম। পুরান ঢাকার গলিতে যা হয় আরকি। রিকশায় বসে দেখি রাস্তার পাশে এক ফকির শুয়ে আছে। তার মাথার কাছে বমি।সে বড় বড় নিঃস্বাস নিচ্ছে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে ঘড়ঘড় আওয়াজ হচ্ছে। বছর পাচ বা ছয়ের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা পাউরুটি। পাউরুটি থেকে ছোট ছোট টুকরা ছিড়ে মুখে পুড়ছে। বৃদ্ধের অসহায় মুখ আর ছোট মেয়েটার চোখের গভীর আগ্রহ দেখে আমার বুকের ভিতরটা হঠাৎ করেই ধ্বক করে উঠল। আমার মনে হল এই বৃদ্ধ মারা যাবে রাস্তার পাশে আর ছোট মেয়েটা দেখবে প্রথম মৃত্যু। আমার তখন রিকশা থেকে নেমে বৃদ্ধকে কোন একটা হাসপাতালে নেয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল। আবার ঝামেলা ঘাড়ে নিতে ইচ্ছে করছিল না। দুটো বিপরীতমুখী ইচ্ছার সংঘর্ষ চলতে চলতে সময় শেষ। জ্যাম আর নেই। রিকশা চলতে শুরু করেছে। আমি ভাবলাম হয়ত বৃদ্ধের কিছুই হবে না। এখন থাকুক পড়ে। ফেরত যাবার সময়ও যদি দেখি পড়ে আছে তাহলে হাসপাতালে নেবার একটা চেষ্টা করব।

টিউশনীতে আমি কখনও একঘন্টার বেশী পড়াই না। সেদিন মন খারাপ ছিল খুব। তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। আসার পথেও সেই একই জায়গায় জ্যাম। রাস্তার পাশে মানুষের জটলা। ময়লা কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়েছে লম্বাটে কিছু একটা। কেউ না বলে দিলেও আমি জানি সেটা কি এবং কার লাশ। ছোট মেয়েটাকে দেখলাম না কোথাও। ভিড় করে থাকা লোক গুলোর মুখে বিরক্তি। হারামজাদা মরার আর জায়গা পেল না। সারা দুনিয়া থাকতে আমাদের ঘরের সামনে এসে পরে মরে আছে।





জ্যাম একসময় শেষ হয়। রিকশা চলতে থাকে। আমি হলে ফিরে আসি। সেদিন গভীর রাত্রে আমি উপলব্ধি করি আসলে আমি প্রথম বারের মত মৃত্যু দেখলাম। এর আগে আমি লাশ দেখিছি। কিন্তু মৃত্যু দেখিনি কোন মানুষের।



অবহেলায় রাস্তার পাশে মরে পড়ে থাকা বৃদ্ধের জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছিল। সে কি মৃত্যুর আগে কিছু বলে যেতে চাচ্ছিল? সেই ছোট মেয়েটা কি কিছু শুনে রেখেছে? বালিকাটির গভীর আগ্রহের দৃষ্টির কথা বার বার মনে পড়ছিল। আমি টের পাচ্ছিলাম বাকি জীবন আমাকে একজন অসহায় বৃদ্ধের মুখ স্মরন রাখতে হবে। আমি সে রাতে কেদেছিলাম অনেক। দুটা কারনে আমার কান্না। কেদেছিলাম এটা উপলব্ধি করে যে আমি এবং অনান্য মানুষ সবাই খুব অসহায়। দ্বিতীয় কারনটা হল আমার সাথে একজন মহান মানুষের মুল পার্থক্যটা কোথায় সেটাও সেদিন আমি প্রথম বুঝতে পারি।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×