somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে চিঠি কোনদিনও পোষ্ট করা হবে না

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মা"

অবশেষে আমি কাজটি ছেড়েই দিলাম । হয়ত ভাবছ এই অর্থনৈতিক মন্দার সময় কাজটি ছাড়া ঠিক হল কিনা! এখানকার বন্ধুরাও বলেছে কাজটা ছাড়া আমার ঠিক হয়নি। আমিও জানি কাজটি ছাড়ার জন্যে কতটুকু বিপদ আমার সামনে অপেক্ষমাণ। কি করব বল মা,ওমরের সাথে আমি আর পেরে উঠতে পারছিলাম না। ওমরের কথা তো আমি তোমাকে ফোনে বলেছিলাম। সেই পাকিস্তানি এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজারটি। পাকিস্তানি মানুষ সম্পর্কে আমার কিছুটা নেগেটিভ ধারনা বোঝ হওয়ার পর থেকেই ছিল। ওমর আমার সেই ধারণাকে আরও শক্তভাবে পাকাপোক্ত করেছে। সে আমাকে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছিল, না আমি কিছু বলতে পারতাম - না আমি সহ্য করতে পারতাম। আমি যদি আর একদিনও কাজ করতাম তাহলে হয়ত ওর সাথে আমার বিবাদ শারীরিক পর্যায়ে চলে যেত। ওর আওতায় কাজ করাটা প্রথম থেকেই একটা অজানা যন্ত্রণা আমাকে পীড়া দিত। সবকিছু বিবেচনা করেই কাজটা ছাড়লাম ।

আমার কাজের শেষ দিন,যেদিন আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসছিলাম, সেদিন কারেঙ্গা আর রবার্ট খুব মন খারাপ করেছে। ওদের কথা তো তোমাকে বলা হয়নি। তুমি আমেরিকা আসার আগে আমাকে অনেক সাবধান করে দিয়েছিলে যেন কালো মানুষদের কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকি। কারণ তুমি মানুষের কাছ থেকে শুনেছ এরা নাকি ভাল না। আসার পর থেকে যখনি কোন কালো মানুষ দেখতাম তখনি তোমার কথা মনে পড়ে যেত । কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কারেঙ্গা আর রবার্ট এর সাথে পরিচয়।ওরা দুইজনই আফ্রিকান আমেরিকান, গায়ের রঙ কালো। ওদের সাথে পরিচয় হওয়ার পর বুঝলাম তোমার কালো মানুষ সম্পর্কে শুনা কথাটা ঠিক না। এই ক্ষুদ্র জীবনে যে কয়জন ভাল মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে আমি তাদেরকে সে তালিকার প্রথম দিকে রাখব ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের বিশ তারিখে আমি তাদেরকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্পর্কে বলেছিলাম। আমি যখন তাদের বলছিলাম আমি হলাম সে দেশের মানুষ যে দেশের মানুষ নিজের ভাষার জন্যে রক্ত দিয়েছে। আমি হলাম সে জাতির একজন যারা ভাষার জন্যে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছে। পৃথিবীর আর কোন দেশ বা জাতি এরকম আছে কিনা আমার জানা নেই। এটা শুনে ওরা দুজনেই লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে সমস্বরে অবাক হয়ে বলেছিল হোয়াট!! ইজ ইট ট্র্রু? আমি বলেছিলাম - ইয়েস দিস ইজ ট্র্র - দিস ইজ প্রাওড অফ আওয়ার হিস্ট্রি। এরপর থেকে ওরা আমার কাছে বাংলা শিখতে শুরু করল। আমি তাদের তেমন শিখাইতে পারিনি। কেমন আছ, ভাল, ধন্যবাদ আর দুঃখিত এগুলি শিখাইতে আমার অনেক দিন লেগেছে। তারপরেও ভালভাবে উচ্চারণ করতে পারত না। ধন্যবাদ কে ঢন্যবাড আর দুঃখিত কে দুখিত বলত। আরেক টা মজার ব্যাপার হল, পাকিস্তানিরা যে আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল এটা শুনার পর থেকে ওরাও আমার সাথে ওমরকে অপছন্দ করা শুরু করেছিল ।

মা এখানকার মানুষগুলো কেমন রোবট রোবট - একে অপরের প্রতি তেমন কোন রকম আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না! সবাই এত ব্যস্ত যে পিছন ফিরে তাকাবারও সময় তাদের নেই! প্রথম প্রথম এই ব্যাপারগুলো আমাকে বেশ ভাবাতো কিন্তু এখন আমি বেশ মানিয়ে নিয়েছি । সকালে এলার্ম ক্লক ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে - তারপর ট্রেন নিয়ে যায় কর্মস্থলে - বিকালে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি। মানুষ যখন ক্লান্ত থাকে তখন হয়ত তার পিছনের দিনের সুখের দিনগুলোর কথা বেশি মনে পড়ে - তাইতো কাজ থেকে আসার সময় সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে দেশের সেই অগোছালো সুখী দিনগুলোর কথা,সেই প্রাণের শহরের কথা,সেই শহরের সহজ সরল আন্তরিক প্রিয় মানুষগুলোর কথা। তখন আমি বোঝতে পারি - আমি আমার দেশকে,আমার শহরকে,আমার প্রিয় সেই মানুষদের কত ভালবাসি,কত মিস করি ।

মা সেই ছোটবেলায় তুমি যে আমার বুকে বাংলা বর্ণমালার বীজ রোপণ করে দিয়েছিলে। সেই বীজের ফসলে আমি আজও নিজের তৃষ্ণা মিঠাই,নিজের ক্ষুধা মিঠাই। আমার প্রবাস জীবনের একাকীত্ব দুঃখ কষ্ট সব ভাগ করে নেই বাংলা বর্ণমালার সাথে। তুমি আমাকে নিয়ে কোনরকম দুশ্চিন্তা কর না - আমি ভাল আছি। শুধু মাঝেমাঝে তোমার হাতের রান্না করা খাবার খুব মিস করি। বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তুমিও ভাল থাক মা ।

ইতি তোমার ছোট ছেলে
মাসুম

উৎসর্গ - পৃথিবীর সব মায়েদের ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:০৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×