somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের গ্রামের ছেলে হাশিমের বিজয়, আনন্দে উদ্বেলিত সিলেট

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে সীমানা ছাড়িয়ে এখন বিজয় হাজার হাজার মাইল দূরে। দেশের কৃতী সন্তানরা একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে আনছেন। গড়ছেন একের পর এক ইতিহাস।
তাদের বিজয়ে আনন্দে ভাসছে দেশের ১৫ কোটি মানুষ। সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রোশনারার পর এবার বিয়ানীবাজারের ছেলে হেনসেন হাশিম ক্লার্ক। রোশনারা হয়েছেন বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপি। আর হাশিম ক্লার্ক বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। হাশিমের বিজয়ে সিলেট ও বিয়ানীবাজারে চলছে আনন্দ উৎসব। ঘরে ঘরে চলছে মিষ্টি বিতরণ। চলছে আনন্দ উৎসবের প্রস্তুতি। ওদিকে হাশিমের বিজয়ের দিনে সিলেটে পা রাখছেন বিশ্বনাথের রোশনারা আলী। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সিলেটে সফর আসায় তাকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সিলেটের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ তাকে দেবেন লাল গালিচা সংবর্ধনা। গতকাল মেয়র মানবজমিনকে জানালেন, রোশনারা আলী ও হাশিম ক্লার্কের বিজয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর দুটি রাষ্ট্রে আমাদের কর্তৃত্ব বাড়লো। বেড়ে গেলো মান সম্মানও। তিনি বলেন, তারা আমাদের রত্ন। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতেই হবে। তিনি হাশিম ক্লার্ককে অভিনন্দন জানান। বিজয়ের পরপরই হাশিম ক্লার্ক তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি বাংলাদেশী আমেরিকান। মার্কিন মুল্লুকেও আমি বাঙালি হিসেবে গর্বিত। আমার এ বিজয় নিশ্চিত করতে আমেরিকায় অবস্থানরত বাঙালিরাই খেটেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আগামীতে বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি এ সময়। হাশিম ক্লার্কের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্স সভায় নির্বাচিত প্রথম বাঙালি এমপি সিলেটের ‘রোশনারা পারলে আমরা কেন পারবো না’ এই স্লোগানকে সামনে রেখেই এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালিরা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন হেনসেন হাশিম ক্লার্ককে নিয়ে। হাশিম ক্লার্কের বিজয়ের খবর বুধবারই পৌঁছে তার গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজারে। শ্রীধরা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে আনন্দে ফেটে পড়েন গ্রামের লোকজন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। করে মিষ্টি বিতরণ। হেনসেন হাশিম ক্লার্কের বিজয়ের খবর পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার মানুষ। এ বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল খালিক মায়ন এ বিজয়ে আনন্দিত। তিনি এ প্রতিবেককে বলেন, হাশিম ক্লার্কের বিজয়ে আমি আত্মহারা। আমাদের প্রজন্মের সামনে তিনি একজন রাজনৈতিক মডেল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান বলেন, মার্কিন মুল্লুকে হাশিম ক্লার্কের বিজয় আমাদের জন্য আনন্দ বয়ে এনেছে। আমরা এ আনন্দের পাশাপাশি দোয়া করছি তার জন্য। জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রীধরার কৃতী সন্তান লোকমান আহমদ বলেন, আমরা হাশিম ক্লার্ককে অভিনন্দন জানাই। তিনি জন্মভূমি শ্রীধরা বিয়ানীবাজার সিলেট তথা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ২০০৭ সালে গ্রামের বাড়িতে আমরা তাকে সংবর্ধিত করেছি। আশা করছি আবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে তাকে বরণ করবো। চল্লিশের দশকে শীপ জাম্পার হিসেবে আমেরিকা পাড়ি দেন হাশিম ক্লার্কের পিতা মোজাফ্‌ফর আলী। তিনি ওখানে মার্কিন মহিলা টেলমা ক্লার্ককে বিয়ে করেন। পরবর্তীকালে হাশিম ক্লার্কের পিতা মারা গেলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের সব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন হাশিম ক্লার্কের মা টেলমা ক্লার্ক। ১৯৫৮ সালে ডেট্রয়েট সিটিতে হাশিম ক্লার্কের জন্ম। ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ায় তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয় অল্প বয়সে। স্থানীয় টেকনিক্যাল স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন করে বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হন নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে ফাইন আর্টসের ওপর গ্র্যাজুয়েশন করে চলে যান জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানকার ল স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর ফিরে আসেন জন্মস্থান ডেট্রয়েট সিটিতে। অত্যন্ত মেধাবী আইনজীবী হাশিম ক্লার্ক পেশায় একজন স্থপতি হলেও তিনি যোগ দেন আমেরিকার রাজনীতিতে। ১৯৯০ সালে তিনি প্রথম মিশিগান হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে মিশিগান স্টেটের সিনেটর নির্বাচিত হন প্রথম। ২০০৬ সালে আবারও দ্বিতীয় বারের মতো সিনেটর হন তিনি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মিশিগান স্টেট সিনেটর হাশিম ক্লার্ক যুক্তরাষ্ট্রের দশম বৃহৎ নগরী ডেট্রয়েন সিটিতে ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাঙালিদের একত্রিত করে আমেরিকার সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্রে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। এরই অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার গ্রামের বাড়ি সফর করেন। হেনসেন হাশিম ক্লার্কের পিতা মোজাফ্‌ফর আলী হাশিম ১৯৩০ সালে শ্রীধরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এদিকে হাশিম ক্লার্কের বিজয়ে বিয়ানীবাজারসহ সিলেটে বিজয় উৎসবের আয়োজন চলছে। আগামী সপ্তাহে ওই উপজেলায় বিজয় র‌্যালি বের করা হবে।

৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×