বার্তা২৪ ডেস্ক
নয়া দিল্লি, ১৬ আগস্ট : ভারতের দুর্নীতিবিরোধী সমাজকর্মী আন্না হাজারেকে আটকের পর তিহার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে তাকে সাতদিনের জন্য আদালতের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। হাজারের সঙ্গে রয়েছেন তার সহযোগী কিরন বেদি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মনোজ সিসোদিয়া। এর আগে, হাজারের মুক্তির জন্য পুলিশের কাছে ব্যক্তিগত বন্ড দিতে অস্বীকার করেন তিনি। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় হাজার হাজার সমর্থক পুলিশের ভ্যান ঘিরে রাখে। এক পর্যায়ে ভিড় ঠেলে পুলিশ তাকে নিয়ে চলে যায়। এদিকে, হাজারেকে আটকের ঘটনায় সারা ভারত জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আর এসব বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ অন্তত ১৪০০ আন্না সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। আল জাজিরার খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত এক হাজার তিনশ' ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। হাজারেকে আটকের বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেও পুলিশের কাজের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কোনো সমাজকর্মীর কথায় ভারতের আইন তৈরি হবে না।”
এ ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। রাজ্যসভায় বিরোধীদলীয় নেতা অরুণ জেটলি সরকারকে গণতন্ত্র হত্যা'র জন্য অভিযুক্ত করেছেন। এ বিষয়ে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করলে তা নাকচ করে দিয়েছেন স্পিকার মিরা কুমার। নিম্নকক্ষের নেতা সুষমা স্বরাজও প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের বক্তব্য দাবি করেন। এছাড়া, সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়েম সিং যাদব শিগগিরি আন্না হাজারের মুক্তি দাবি করেছেন। সংসদের দু'কক্ষেরই অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে।
এদিকে, হাজারের আটকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে হাজারেকে আটকের পর রাজস্থান থেকে শুরু করে চীন সীমান্তবর্তী প্রদেশে হিমাচল আর পশ্চিমের কেরালা পর্যন্ত বিক্ষোভ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। মনে করা হচ্ছে- ভারতের স্বাধীনতার পর এটাই সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ।
রালেগান সিদ্ধি/ মুম্বাই/ পুনে: আটকের পর হাজারের নিজ গ্রাম রালেগান সিদ্ধির সর্বস্তরের মানুষ সকালে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় স্বত:স্ফূর্তভাবে সেখানকার লোকজন ধর্মঘটে যোগ দেয়। একই ধরনের বিক্ষোভ করেছে বাণিজ্যনগরী মুম্বাই ও পুনের লোকজনও। এসব শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এছাড়া মুম্বাইয়ের আযাদ ময়দানে বিকেলে বিশাল প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে।
উত্তর প্রদেশ: আন্না হাজারেকে আটকের প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের লখনৌতে তাৎক্ষণিকভাবে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এছাড়া হযরতগঞ্জ, গোমতিনগর, আলীগঞ্জ ও বিকাশনগরে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় জনতা ভারতের ভয়াবহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা হাজারেকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে। স্থানীয় ঝুলে লাল পার্কে একটি দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এছাড়া আন্না হাজারের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করেছে।
হিমাচল প্রদেশ: দূরবর্তী হিমাচল প্রদেশও মঙ্গলবার বিক্ষোভমুক্ত থাকেনি। হাজারেকে আটকের প্রতিবাদে মান্দি শহরে বহু সংখ্যক সমর্থক আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে। তারা হাজারের আটকের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং নিন্দা জানিয়েছে। সাধারণতঃ এ ধরনের ঘটনায় হিমাচল প্রদেশে কোনো আন্দোলন-বিক্ষোভ হয় না।
রাজস্থান : রাজস্থানের জয়পুরহাটেও আন্না হাজারের সমর্থনে তিনদিনের 'সংহতি অনশন' পালিত হচ্ছে। এতে অংশ নেয়া লোকজন বলেছে, হাজারের আটকের ঘটনা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং তারা একটি শক্তিশালী লোকপাল বিল চেয়েছে।
কেরালা : আন্না হাজারের আটকের বিরুদ্ধে কেরালার মানবাধিকার কর্মী, লেখক, শিল্পী-সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসে। তার আটকের প্রতিবাদে সিটিজেন্স ফোরাম নামে একটি সংগঠন অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে। এ সময় তারা হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।
ছত্তিশগড়: ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে ছাত্র, অফিসকর্মী, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ এবং গৃহিণীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। টিভিতে খবর পেয়ে তারা রাজধানীর বাইরে আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। তাদের কেউ কেউ বলেছে, ভারতের জনগণ এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।
তামিল নাড়ু: আন্না হাজারের আটকের প্রতিবাদে তামিল নাড়ুর জনগণও রাস্তায় নেমে আসে। তার আটকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে তারা জানিয়েছে। অনেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের যোদ্ধা ৮৫ বছর বয়সী লক্ষীকান্তন ভারতী এবং মমতাগান্ধীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ৯০ বছরের ভেনকাট কল্যাণম অনশনে যোগ দিতে পারেন। চেন্নাইয়ের বহু সংখ্যক আইটি বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া ২৫টি এনজিও আন্না হাজারের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
সূত্র : রেডিও তেহরান