somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা নীচে টানা জাতি !

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ, তুমি সত্যি অদ্ভুত একটা দেশ !
এদেশের মানুষের মধ্যে কেউ যদি বিশ্বমানের কিছু করে উপরে উঠে, তাকে এদেশের মানুষ তো উপরে তো রাখেই না, উপরন্তু তাকে টেনে নীচে নামায়। কয়েকটা উদাহরণ দেইঃ

১। একটা দেশ মানে, সেদেশের রাজনীতি, তার অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, তার সম্পদ, আরও অনেক কিছু। কাজেই এ দেশের ইতিহাস কিম্বা রাজনীতির কথা যদি বলা হয়, তবে প্রথমেই যে মানুষটির নাম আসবে, তিনি হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ এ দেশের মানুষ তাকে অসম্মান করতে দ্বিধাবোধ করে না। কেউ কেউ তাকে কম্যুনিষ্ট, রাশিয়ার মদদ-পুষ্ট নেতা, বাকশাল, আরও বিভিন্ন কথা বলতে একবারও ভাবে না। শেখ মুজিবুর রহমান এর মত কোন রাজনীতিবিদ এ দেশে জন্ম হবে কিনা জানি না, তবে এটুকু জানি, যারা তার মত রাজনীতিবিদ কে সম্মান করতে জানে না, তারা বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে জানে না, তারা বাংলাদেশের ইতিহাস জানে না। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে টেনে নীচে নামাতে দ্বিধাবোধ করি না ।

২। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের কথা যদি বলা হয়, যদি এ দেশের অর্থনীতিবিদ এর কথা বলা হয়, তবে প্রথমেই যে মানুষটির নাম আসবে, তিনি হচ্ছে, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস স্যার । তার দেওয়া মডেল সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। অথচ এ দেশের খোদ অর্থ-মন্ত্রী যিনি "রাবিশ" ছাড়া মানুষের সাথে কথা বলতে পারেন না, তিনি প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্যার কে অসম্মান করতে দ্বিধাবোধ করেন নাই। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কে তার সারা জীবনের লালিত প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি একটা রায়ের জন্য আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। অথচ যে বৃটিশরা সারা দুনিয়া শাসন করেছে সেই England এর Glasgow Caledonian University, তাকে চ্যান্সেলর পদে আসীন করেছন। যেখানে, বাংলাদেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদে রাষ্ট্র প্রতি অথবা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর মত কোন অর্থনীতিবিদ এ দেশে জন্ম হবে কিনা জানি না, তবে এটুকু জানি, যারা তার মত ব্যাক্তিকে সম্মান করতে জানে না, তারা মানী কে কিভাবে মান দিতে হয় তা জানেন না, তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের কথা জানে না। হে বাঙ্গালী ! আমারা বড়ই অভাগা জাতি ! আমরা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস কে টেনে নীচে নামাতে দ্বিধাবোধ করি নাই।

৩। বাংলাদেশের বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তিবর্গ কিম্বা এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবেন, যদি তাদের একটা নাতি-দীর্ঘ একটা তালিকা তৈরি করা হয়, তবে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এর কথা বোধ হয় প্রথমেই আসবে। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয়, তাহলে আমি বলব, যে ব্যাক্তি এ দেশের মেরুদণ্ড নিয়ে ভাবেন তাদের মধ্যে ডঃ জাফর ইকবাল স্যার এর কথা অবশ্যই অন্যতম। অথচ এ দেশের মানুষ তাকে নাস্তিক বলে গালি দেয়, তার ব্যাক্তিগত জীবনে ভার্সিটিতে হলের ছাত্রীদের সাথে নাচা-নাচি করে এ ধরনের কথাবার্তা বলে। তাকে হত্যার জন্য হুমকিও দেওয়া হয়। স্যার যেহেতু এখনও বেঁচে আছেন এবং দেশের মেরুদণ্ড নিয়ে ভাবেন, সেহেতু উনি আরও লাঞ্চিত- বঞ্চিত হবেন এবং তা হলেও আমি অবাক হবার কিছু দেখি না। একটা দেশের মানুষ যদি তার মেরুদণ্ড নিয়ে ভাবার মানুষ কে সম্মান করতে না জানে, সে দেশ, সে দেশের মানুষ কতটা নীচ, কতটা হীন মন-মানুষিকতার হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। হে গেঁয়ো ভূত ! হে ভূতের জাতি, আমারা লজ্জিত, আমারা শঙ্কিত। আমরা সাদাসিধে কথা - মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার কে টেনে নীচে নামাতে দ্বিধাবোধ করি না ।

৪। গানিতিকভাবে চিন্তা করলে হয়ত ১৯৭১ সংখ্যাটি হয়ত নেহায়েত-ই একটা সংখ্যা মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা যারা বাংলাদেশী জাতীয়তা-বাদে বিশ্বাসী, এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তারা জানি, ১৯৭১ সংখ্যাটি নেয়ায়েত একটা সংখ্যা না। ১৯৭১ একটি ইতিহাস, একটি রক্ত-ক্ষয়ী গাঁথা, আমাদের গর্ব, আমাদের অস্তিত্ব। সেই ১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর থেকে দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ছোট্ট একটা দেশ, বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপে পিষ্ট, ক্ষুধা-দারিদ্রতায় বুভুক্ষ একটা জাতির গর্ব করার মত তেমন কিছুই নেই, ছিলও না । কিন্তু কিছু দামাল ছেলে, ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ নামের এই দেশটা কে সারা পৃথিবীর বুকে তুলে ধরেছে। মানুষ আজ বাংলাদেশ নামে একটা দেশ আছে, সেটা জানতে শুরু করেছে। অথচ, এ দেশের ক্রিকেট আজ যাদের হাত ধরে সামনে এগিয়ে চলছে, তাদের আমারা নীচে টেনে নামাতে দ্বিধা করি না। সেই মোহাম্মদ আশারাফুল থেকে শুরু করেছি, সাকিব কে সঙ্গী করেছি। যে সাকিব আল হাসান নিজের যোগ্যতা, মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অল-রাউন্ডার হিসাবে নিজের স্থান ধরে রেখেছে, তাকে আমরা একবার ৩ মাস, এরপর ৬ মাস সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছি। আমরা বড় অকৃতজ্ঞ জাতি, আমরা বড়ই ভুলো-মনা জাতি । আমারা সব কিছুই খুব সহজেই ভুলে যাই। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ বীরদের, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারি নাই । যারা নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের বাবা-মা কে ফেলে, যারা সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কে, কিম্বা নিজের সন্তান পরিজন কে ফেলে যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের কেও আমারা সম্মান দেখেতে পারি নি আজও। আমরা আশরাফুল কে, সাকিব কে টেনে নীচে নামাতে দ্বিধাবোধ করি না ।

৫। আমারা মুসা ইব্রাহীম কে হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে ফেলেছি। এদেশের ভবিষ্যৎ বিল-গেটস, সোহাগ ভাই বুয়েট থেকে পাশ করে বিসিএস দিয়ে ভাল চাকরী করতে পারতেন, কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে এ দেশের কতগুলা মানুষ কে কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতেও করবেন। অথচ তার rokomari.com নিয়ে তাকে নাস্তিক বলা হল। সোহাগ ভাই এর মত অনেক ভাই বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে, দেশেই অনেক কিছু করার চেষ্টা করছেন, তাদের কয়েক জনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে পদে পদে ছোট হতে দেখেছি। আমরা তরুন উদ্যোগতাদের টেনে নীচে নামাই। রাগীব হাসান ভাই কে সেই ২০০৮ সাল থেকে চিনি । কতিপয় মানুষকে বলতে শুনেছি উনি দেশকে এত ভালবাসেন, তাহলে USA পরে আছেন কেন? ঐ কতিপয় মানুষের এই সেন্সটুকু নেই, যে রাগিব ভাই, রাগিব ভাইয়ের মত মানুষেরা শুধু একটা দেশের সম্পদ না, তারা বিশ্বের সম্পদ। তারা USA বসে দেশের জন্য যা করেছেন, তা উনাদের মত ভাইদের পক্ষেই তা সম্ভব। কতিপয় মানুষরা শুধু শেখ মুজিব কে জিয়াউর রহমান এর সাথে, ডঃ ইউনুস কে শেখ হাসিনার সাথে, আর হাতি কে গরু-গাধার সাথে তুলনা করতে পারেন। কিন্তু কাজের কিছু নয় ।

পুনশ্চঃ সম্পুর্ণ লেখাটি তে কোন রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য নাই, আমি কাউকে কারো সাথে তুলনা কিম্বা ছোট করতে চাই না, শুধু এটুকু বলতে চাই, নিজের উর্বর মস্তিষ্ক খাটালে অনেক কিছুই বুঝতে পাড়া যায়।

লেখাটি ৭/৭/২০১৪ তে লেখা হয়েছে এবং ফেসবুকে স্ট্যাটাস আকারে দেয়া হয়েছিল । ফেসবুক লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×