somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি মহাবিশ্বের অন্ধকারের ডাক শুনতে পারছি?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করে বিজ্ঞানীরা কি মহাবিশ্বের অন্ধকারের ডাক শুনতে পারছেন?

ডার্ক ম্যাটারের (dark matter) বাংলা কি হবে ভেবে আমি কূল পাচ্ছি না। নাম দেয়া যাক আঁধার বস্তু। আচ্ছা হঠাৎ করে এই ডার্ক মাট্যার নিয়ে আমি লিখতে বসলাম কেন? তার কারন, সারা পৃথিবী-তে কণা বিজ্ঞানীরা (particle physicist) এখন ব্যস্ত আঁধার বস্তুর সমস্যা সমাধান করতে। কয়েক শত নতুন নতুন তত্ত্ব এবং সমাধান বিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন প্রতিসপ্তাহে।


ফ্রিয যুইকি (Fritz Zwicky) ১৯৩৩ সালে প্রথম ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব আবিস্কার করেন। গালাক্সি ক্লাস্টারের আলো থেকে যে কেউ তার ভর নির্ণয় করতে পারে। ফ্রিয যুইকি দেখল যে, কমা (Coma) গালাক্সির ক্লাস্টারের আসল ভর আলোর পরিমাপ থেকে নির্ণয় করা ভরের চেয়ে ১৬০ গূন বেশি। তাহলে ওই অদেখা ভর কোথায়? ঐ অনির্ণয় অথবা অদেখা ভরকে নাম দেয়া হল ডার্ক ম্যাটার বা আঁধার বস্তু (নামটি কি বাংলায় ঠিক হল!!)। বিজ্ঞানীরা অনেক দিন এই ধারনাটিকে খুব একটা আমলে আনেনি। ১৯৭০ সালে বিজ্ঞানী ভেরা রুবিন (Vera C. Rubin) প্রথম দেখান যে ডার্ক ম্যাটার ছাড়া এই মহাবিশ্বে গালাক্সি গুলো ক্লাস্টার হিসাবে থাকতে পারত না। ডার্ক ম্যাটারই গালাক্সি-ক্লাস্টারগুলোকে এর আটকে রেখেছে। ভেরা রুবিন আরো দেখান যে গ্যালাক্সির ক্লাস্টার-এর চার পাশে ডার্ক ম্যাটার ঘিরে আছে।


বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীরা চেস্টা করে যাচ্ছে এই ডার্ক ম্যাটারের সরাসরি প্রমান পেতে। একদল বিজ্ঞানী অবশ্য দাবী করছে যে তারা মধ্যাকর্ষণীয় লেন্সীয় পরীক্ষার (gravitational lensing)সাহায্যে ডার্ক ম্যাটারের সন্ধান ইতিমধ্যেই পেয়েছেন। কিন্তু এই দাবী অবশ্য এখনো সর্বগ্রহনযোগ্য হয়নি।


এখন প্রশ্ন হলো এই ডার্ক ম্যাটার দেখার সর্বগ্রহনযোগ্য উপায় কি? বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাবে চেস্টা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর উপর অনেকগুলো স্যাটেলাইট দিন রাত্রী উপাত্ত বা ডাটা সংগ্রহ করে যাচ্ছে।


আরেক দল বিজ্ঞানী দক্ষীন মেরুতে (এনটারটিকা) বেলুন উড়িয়ে সন্ধান করছেন ডার্ক ম্যাটারের। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এনটারটিকাতে বেলুন দ্বারা অতিমাত্রায় কসমিক-রে electron-এর সন্ধান পায়। তারা electron-এর এন্টি কণা (নাকি অতি-কণা??) Positron-এরও সন্ধান পায়। এই ফলাফল অনেকগুলো কারণে হতে পারে, যার একটি হলো ডার্ক ম্যাটারের অস্তীত্ব। এখন অতিমাত্রায় কসমিক-রে electron কিন্তু Pulsars or Microquasars থেকেও আসতে পারে। কিন্তু কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি যা Pulsars or Microquasars –এর সপক্ষে প্রমান দিচ্ছে অথবা ডার্ক ম্যাটারের অস্তীত্বকে অস্বীকার করছে। বিজ্ঞানীরা দাবী করছে হয়তোবা এটিই ডার্ক ম্যাটারকে সরাসরি দেখতে পাওয়ার প্রমান।




আসলেই কি বিজ্ঞানীরা মহাকাশের আধাঁর বস্তূর ফিসফিসানি শুনতে পাচ্ছে। হয়তোবা! হয়তোবা নয়। কেউ তার অখন্ডনীয় ভাবে প্রমান দিতে পারছে না। ধরে নেয়া যাক, বিজ্ঞানীরা মহাকাশের আধাঁর বস্তূর ফিসফিসানি শুনতে পাচ্ছেন। তাহলে তা কি কণা-পদার্থ বিজ্ঞানের চিন্তাধারায় বিশাল কেনো পরির্তন আনতে পারবে?



ডার্ক ম্যাটার বর্তমান সময়ে কণা-পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অথবা উত্তপ্ত শাখা। একে ভালোভাবে বুঝতে পারার চেস্টা বহুদিন ধরে হচ্ছে। ডার্ক ম্যাটারের প্রমান মানুষকে প্রকৃতীকে গভীর ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানীরাও এগিয়ে যাবে আইনস্টাইনের সেই অধরা স্বপ্নকে (“একত্রীভূত চারটি বল” (Unification of four Forces) ) সফল করতে।


Electron এবং Positron একটি আরেকটির এন্টি-কণা। দুটিকে এক সাথে যোগ করলে তাদের ভর শক্তিতে পরিনত হয়ে যায়। এর উল্টোটাও হতে পারে। এরা শুন্যের শক্তি হতে সৃষ্টি হতে পারে। একটি ইলেক্ট্রন তৈরী হলে একটি পজিট্রন তৈরী হতে হবে। এদের চার্জ একে অপরের উলটো। সুতরাং এরা যেকনো চার্জ বিহীন শক্তি বা ভর হতে তৈরী হতে পারে।


বিজ্ঞানীরা এন্টার্টিকায় এই অতিমাত্রায় Electron এবং Positron Cosmic-Ray-এর অস্তীত্ব বিশ্লেষন করছেন এই ভাবে যে, এরা তৈরী হয়েছে চার্জবিহীন ডার্ক ম্যাটার থেকে।


শুধু যে এন্টারটিকা বেলুন পরীক্ষাই এই ডার্ক ম্যাটারের ধারনাকে সমর্থন করে তাই নয়।পামেলা নামে একটি ইটালীয়ান,জার্মান,রাশিয়ান এবং সুইডিশ স্যাটেলাইটও কিছুদিন আগে অতিমাত্রায় Positron–এর অস্তীত্ব প্রমান করে।এই বিজ্ঞানীরাও দাবী করছে প্রথম সরাসরি ডার্ক ম্যটারের অস্তিত্ব প্রমান।


এই ফলাফল ত্বত্তীয় পদার্থ বিজ্ঞানীরা খুবই আগ্রহের সাথে গ্রহন করছে। জেনেভা-তে (CERN) পৃথীবির সবচেয়ে বড় এবং দামী, (Large Hadron Collider(LHC)), পরীক্ষা সবে মাত্র শুরু হলো। LHC পরীক্ষাতে কি ধরনের কণা এবং নিদের্শন আমরা খুজে পেতে পারি তার একটি দিক নির্দেশনা আমরা পাচ্ছি এন্টার্টিকায় অতিমাত্রায় ইলেক্ট্রন এবং পজিট্রন অথবা পামেলা স্যাটেলাইটের অতিমাত্রায় পজিট্রনের খোজ পাওয়া থেকে।


বিগ ব্যাং (Big Bang)এর Background Radiation-এর ম্যাপও ডার্ক ম্যাটারের সমর্থনে কিছু প্রমান দিচ্ছে। Wilkinson Microwave Anisotropy Probe satellite-এর উপাত্ত দিয়ে তৈরি ম্যাপও দেখা যাছে অতিমত্রায় Positron-এর মেঘ।


এই তিনটি পরীক্ষা এখন ডার্ক ম্যাটারের দিকেই ধারনা দিচ্ছে এবং আমরাও আশাবাদী।এখন দেখা যাক,এর প্রভাব Cosmology-এর বাইরে কেমন পরবে?


বহুদিন ধরে কণা-পদার্থ বিজ্ঞানীরা চেস্টা করে যাচ্ছে প্রকৃতির চারটি বলকে একত্রীভূত করতে।আইনস্টাইন স্বপ্ন দেখতেন একদিন মানুষ এই প্রকৃতিকে সহযেই বুঝতে পারবে একটি মাত্র বলের মাধ্যমে।এই স্বপ্ন কি অপূর্ণই থেকে যাবে?


ম্যাক্সওয়েল প্রথম তড়ীৎ এবং চৌম্বকীয় বলকে একত্রীভূত করেন যা ম্যাক্সওয়েল-এর সূত্র নামে পরিচিত এবং এই বলকে বলা হয় তড়ীৎ-চৌম্বকীয় বল।আরেকটি বল হলো দূর্বল বল।এটি পাওয়া যায় নিউক্লীয়াসের বিটা (beta decay) কণা আবির্ভাবে।তৃতীয় বল হলো নিউক্লীয়াসের শক্তিমান বল (Nuclear Strong Force)। নিউক্লীয়াসের অভ্যন্তরে এই বল কোয়ার্কগুলোকে আটকে রাখে।চতুর্থ বল হলো মধ্যাকর্ষণ বল।এই চারটি বলের মধ্যে তিনটিকেই আব্দূস সালাম, হাওয়ার্ড জর্জী এবং শেল্ডন গ্লাশাও (GSW)-এর স্টান্ডার্ড মডেল (Standard Model) দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।চতুর্থ বল মধ্যাকর্ষণকে বাকী তিনটির সাথে এক করার জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক ধরনের ব্যাখ্যা বা মডেল দিয়েছেন।যেমন Supersymmetry (সুপার-প্রতিসাম্য) এবং String theory(সুতা-তত্ত্ব)। কোনো ব্যাখ্যাই সর্বজন গৃহীত নয়।


ডার্ক ম্যটারের অস্তীত্ব যদি সত্যি হয়, বিজ্ঞানীরা প্রকৃতিকে বুঝতে অনেকদুর এগিয়ে যাবে। supersymmetry ডার্ক ম্যাটারের অস্তীত্ব সমর্থন করে। এখন প্রশ্ন হলো এই ডার্ক ম্যাটার কি দিয়ে তৈরী? Supersymmetry মতে এই ডার্ক ম্যাটার হলো উইম্প (WIMP)কণা দিয়ে গঠিত। উইম্প মানে হলো দূর্বল ক্রিয়াশীল ভারী কণা (weakly interacting massive particle)।মজার নামকরন!!এর অবশ্য কারণও আছে। এই কণা মধ্যাকর্ষণ বলের সাথে শক্ত ভাবে ক্রিয়া করে এবং অন্যান্য বলের সাথে দূর্বল ভাবে ক্রিয়া করে।এটি খুব সহযেই কোনোরকম বাধাঁ ছাড়াই পৃথীবিকে অতিক্রম করে চলে যায় ।এর জন্যই এই কণা ধরা বা দেখতে পাওয়া খুবই কঠিন।বিগ ব্যাং এর পরে এই কণা একত্রীত হয়ে এক ছায়া মহাবিশ্ব তৈরী করেছে,যা আন্যান্য কণাক আকর্ষন করে।


এই উইম্প বা ডার্ক ম্যাটারের অস্তীত্ব String theory –কেও পায়ের নীচে মাটি এনে দিবে। আচ্ছা, String theory কে আমি সুতা তত্ত্ব বলতে পারি? এই String তত্ত্ব অবশ্য খুবই বিতর্কিত। গত দুই যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা এই সুতার প্যাচ খোলার চেস্টা করে Sযাচ্ছে। একে বলা হয় “সবকিছুর তত্ত্ব”। এই তত্ত্বের বিপরীতেও আছেন অনেক বিজ্ঞানী।


এখন আমরা সবাই ভবিষ্যতে তাকিয়ে আছি কি নতুন ফলাফল বেরিয়ে আসে? আগামী বছর পামেলা স্যাটেলাইট নতুন ফলাফল প্রকাশ করবে।মহাশুন্যের কিছু টেলিস্কোপও কয়েক বছরের মাঝে নতুন তথ্য প্রকাশ করবে।সত্যিই কি উইম্প বা ডার্ক ম্যাটার আছে? সুতা তত্ত্ব কি সত্য? যদি আমরা না পাই উইম্প তাহলে কি হবে? যদি আমরা উইম্প পেয়েই যাই তাহলে কি পৃথীবি সৃষ্টির রহস্য জানা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে? নতুন সত্য সবসময় নতুন অজানা দিকের সন্ধান নিয়ে আসে।আমারা এক দারুন উত্তেজক সময়ে বাস করছি।আমরা সবাই উৎকিন্ঠত ভাবে আপেক্ষা করছি।নতুন সত্য বা পুরোনো তত্ত্ব যাই অবগুন্ঠীত হউক না কেন আমরা তা গ্রহন করবো পরম আগ্রহে
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×