somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহমুদুর রহমানের মেধা দেশের উন্নয়নে সম্পদ হিসেবে কাজ করেছে

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের সব মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে। এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছে। দেশে নতুন নতুন গণমাধ্যম প্রকাশ ও প্রচারের অনুমতি পাচ্ছে। এসব খবর নিঃসন্দেহে সবার জন্য উত্সাহব্যঞ্জক। দেশের নাগরিকরা এমন কার্যক্রমে সরকারকে প্রশংসাই করবে। কেননা নতুন ১০টি টেলিভিশন কিংবা ৫টি দৈনিক পত্রিকা চালু হলে অনেক শিক্ষিত বেকারের চাকরি হবে। আবার গণমাধ্যমও মুক্ত প্রতিযোগিতায় নিজেদের মেলে ধরতে পারবে। আর এমন প্রতিযোগিতা সাধারণত গণতন্ত্রকে সুসংহতই করে।
এমন ইতিবাচক উদ্যোগ দেখে যেমনি নাগরিক হিসেবে আমরা খুশি হই, তেমনি এর বিপরীত কিছু ঘটলে তাও আমাদের কষ্ট দেয়। মানবাধিকার রক্ষার উদ্যোগে জনগণের আনন্দিত হওয়ার জায়গাটা যেমনি সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি মানবাধিকার যদি নিভৃতে কাঁদে তাতে দেশবাসীর দুঃখিত হওয়াটা আরও বেশি জোরাল হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি মোহনা ও মাই টিভিসহ নতুন কিছু টেলিভিশন আসছে শুনে ভালোই লাগছে। সম্প্রচারও শুরু করেছে কোনো কোনো স্টেশন। এটা নিঃসন্দেহে সুখকর খবর। পক্ষান্তরে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা ও চ্যানেল ওয়ানসহ দেশে কিছু গণমাধ্যম বন্ধ হওয়ার খবরে আমরা কষ্ট পেয়েছি। এটা নিঃসন্দেহে একটি নেতিবাচক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতিকে পেছনে টেনে নেয়ার উদ্যোগ হিসেবেই দেখছি আমরা। একজন শিক্ষক হিসেবে যখন সহকর্মী কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, তখন কষ্ট অনুভব করি।
কেননা, সাধারণ কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেকার হওয়া এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের বিষয় জড়িত থাকে। কিন্তু গণমাধ্যম বন্ধ হলে এসবের পাশাপাশি মুক্তচিন্তা ও তথ্য জানার অধিকারকে হরণ করা হয়। সত্য খবর প্রকাশের ওপর ক্ষমতাশালীদের খড়গে সত্য তথ্য চাপা পড়ে যায়। সরকারের এ ধরনের কার্যক্রম জনগণের মানবাধিকারকে পদদলিত করে।
আর মানবাধিকার প্রশ্নে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও বিভিন্ন উদ্দেশ্যমূলক মামলায় তাকে কারাগারে আটকে রাখার ঘটনা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেশের যে কোনো মানুষকে ব্যথিত করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেছি, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারে সত্যিই আমাদের গণমাধ্যমে বড় ধরনের হুমকিতে আছে। শুধু গ্রেফতার নয়, তাকে একাধিকবার রিমান্ডে নেয়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানির পর অন্য সম্পাদক ও সাংবাদিকরা তথ্য জেনেও নিঃসন্দেহে সত্য লিখতে চাইবেন না। একজন পেশাজীবী হিসেবে আমার মনে হয়, মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেয়ার মধ্যেই এখন বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেকটা নির্ভর করছে।
কেননা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে। কেননা এক-এগারো সরকার বহু চেষ্টা করেও তার বিরুদ্ধে কোনোভাবে অভিযোগ আনতে পারেনি। তিনি যখন আপসহীনভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশে পুনরায় গণতন্ত্র আনার চেষ্টা করেছেন, তখন জরুরি সরকার তাকে গ্রেফতারের বহু চেষ্টা করেছে বলে আমরা শুনেছি। কিন্তু ফাঁকফোকর পায়নি। এক-এগারো সরকারকে বিদায় জানাতে যেক’জন ব্যক্তি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান একজন।
বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধেও আমার দেশ পত্রিকাকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদুর রহমান সত্য প্রকাশের যে আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, তা নিয়ে মানুষের মুখে নানা বিশ্লেষণ আছে। অনেকে এমনও বলছেন, সরকারের প্রথম বছরেই দুর্নীতি-অনিয়মের খবর প্রকাশসহ সরকারের সমালোচনা করেই তিনি নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন। বিষয়টি আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। সত্য প্রকাশ করায় সরকারের শক্তি কিংবা মেয়াদের প্রথম বা শেষের প্রশ্ন আসছে কেন? সত্য সবসময়ই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাই তো আমাদের মহামানবরা করেছেন। সে পথ ধরে আমাদের এগুলে দোষ কোথায়?
তবে কি মাহমুদুর রহমান এ সত্য পথ ধরে এগুতে চেষ্টা করে অন্যায় করেছেন! আর এ অন্যায়ের জন্য তিনি দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। পত্রিকায় পড়েছি, ‘তাকে বর্বর কায়দায় গ্রেফতারের পর ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। রিমান্ডের পৈশাচিক কাহিনীর কিছুটা তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৭টি মামলা দেয়া হয়েছে।’
একটি বিষয় পুরো জাতির কাছে স্পষ্ট—প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান এদেশের মেধাবী সমাজের একজন প্রতিনিধি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। পেশাগত জীবনের একজন সফল উদ্যোক্তা। একজন বেসরকারি উদ্যোক্তা হয়ে তিনি জ্বালানি উপদেষ্টারও দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশকে উন্নতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে তার মেধা ও মনন সম্পদ হিসেবে কাজ করেছে। এটাকে সম্মান জানানো আমাদের সবার কর্তব্য।
এভাবে একজন নাগরিককে, একজন সম্পাদককে, একজন পেশাজীবীকে নির্যাতন করে মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। এ পথ থেকে সরকারের সরে দাঁড়ানো উচিত। মানবাধিকার কমিশনেরও উচিত এসব ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া। আমাদের সহকর্মীরা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) মানবাধিকার কমিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। আশা করছি, তারা সব ধরনের সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় দায়িত্ব পালনের স্বার্থে মাহমুদুর রহমানের পাশে দাঁড়াবেন। আর গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করার স্বার্থে সরকারও তাকে মুক্তি দেবে; যা বাংলাদেশের গণমাধ্যম থেকে অস্থিরতা দূর করবে।

লেখক : ড. আবুল হাসনাত
প্রফেসর, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×