somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনি ও তাঁর গল্প ( ছোট গল্প )

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“আপনার সমস্যাটা কি?”
ভদ্রলোক মাথা নুইয়ে ফেললেন যেন নিজের সমস্যার কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছেন।
আমি জোর দিয়ে বললাম ,
“আপনার সমস্যাটা খুলে বলুন।”
এবার ভদ্রলোক আমতা আমতা করতে লাগলেন । আমি রীতিমত বিরক্ত হলাম ।
ভদ্রলোক বললেন ,
“আমি আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পাই না।”
লোকটি এমন ভরাট গলায় কথাগুলো বললেন যে আমি চমকে উঠলাম । আমার চমকে উঠার কথা না । আমি প্রতিদিনই নানা উদ্ভট সমস্যার কথা শুনছি ।
“মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে আপনি আয়নায় নিজেকে দেখতে পান না?”
“জি না।”
আমি ভদ্রলোককে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। লোকটার উচ্চতা বেশি হবে না । খানিকটা মোটা বলা যেতে পারে । চেহারা ফর্সা । ঠোঁটের উপর গোঁফ আছে । চোখের দিকে তাকালে সর্বদাই তাকে অপ্রস্তুত মনে হয় ।
আমি তাকে বললাম ,
“আপনি কি আয়নায় কিছুই দেখতে পান না।”
“আমি সবই দেখি । শুধু নিজেকে দেখতে পাই না।”
“হুম । বুঝতে পেরেছি।”
মুখে যদিও বললাম বুঝতে পেরেছি আসলে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । ভদ্রলোক মিথ্যা বলছেন না তো! তার কথা সঠিক হয় কিভাবে?
ভদ্রলোক একটা রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন ।
তারপর আস্তে আস্তে বললেন ,
“ব্যাপারটা আপনার কাছে পরিষ্কার করার জন্য আপনাকে কিছু কথা বলা প্রয়োজন । এর জন্য আমার সময় প্রয়োজন। ”
আজকে আমি খুবই ব্যস্ত । কিন্তু এই ব্যাপারে আমি অন্যরকম এক আগ্রহ অনুভব করছি ।
আমি তৎক্ষণাৎ আমার অ্যাসিস্ট্যান্টকে ফোন করে জানালাম আজ আমি আর কোনও রোগী দেখব না ।
“তাহলে আপনার গল্প শুরু করতে পারেন । ”
“জি।”
ভদ্রলোক একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর চোখ নামিয়ে গল্প শুরু করলেন।
“ছোটবেলায় মানুষের নানা রকম অভ্যাস থাকে । কিছু কিছু হাস্যকর হয় , কিছু কিছু হয় সিরিয়াস ধরনের । আমার অভ্যাস কি ছিল জানেন ? আমার অভ্যাস ছিল আয়নার সামনে বসে থাকা । আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আয়নার সামনে বসে থাকতাম । এ নিয়ে সবাই অনেক হাসি ঠাট্টা করত । আমি নাকি মেয়েদের স্বভাব পেয়েছি , সারাক্ষণ নিজের চেহারা দেখি ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি তাদের কথার কোনও জবাব দিতাম না । তার মানে এই নয় যে তাদের কথা ঠিক ছিল ।
আমাকে প্রায় সময় দেখা যেত চোখ বড় বড় করে আয়নার সামনে বসে আছি । প্রথম প্রথম সবাই এ নিয়ে হৈচৈ করলেও পরে সবাই এটা দেখেও না দেখার ভান করতে লাগল । আমার কাজ আরও সহজ হয়ে এল । কি কাজ আপনাকে বলি । আমি আয়নার মধ্যে একটা আলো দেখতে পেতাম । সূক্ষ্ম একটা আলো । জোনাকি পোকা ! হ্যাঁ , অনেকটা জোনাকি পোকার মত ছিল আলোটা । আলোটা স্থির ছিল না । গতিময় ছিল । খুবই ছন্দময় ছিল সেই গতি । সবসময় সামনের দিকে চলত আলোটা । মনে হত যেন আমাকে অনুসরণ করতে হবে আলোটাকে । একটা খেলার মত আরকি ! বেশ উপভোগ করতাম খেলাটাকে । পাগলের মত অনুসরণ করতাম আলোটাকে । এক অজানা মোহে আটকা পড়েছিলাম । যার থেকে বের হওয়ার কোনরূপ ইচ্ছা আমার ছিল না । এভাবে আমার প্রায় সারাটাদিন কাটত আলোটাকে অনুসরণ করে । আমার খুব প্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছিল এটি । আর খুবই গোপন ছিল খেলাটি । কেউই এ ব্যাপারে জানত না । আমার মনের অজান্তেই এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলা যাবে না । তাই আমি কাউকেই কিছু বলার কোনরূপ চেষ্টা করিনি । বেশ ছিলাম এটা নিয়ে ! দিনকাল ভালই কাটছিল আমার । ছোট বয়স , দুঃখের গভীরতার বোধ তখনও জন্মায়নি । সব কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পেতাম বা খুঁজে নিতাম ।
ও , আপনাকে তো বলা হয়নি । আমাদের আয়নাটা ছিল আমাদের বৈঠকখানায় । বেশ বড় আয়না ছিল ওইটা ।
বুঝতেই পারছেন যে একটা না একটা সমস্যা বাঁধবে !
হ্যাঁ , সমস্যা হয়েছিল । যাকে বলে বিরাট সমস্যা !
আমাদের বৈঠকখানা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । এই জায়গা অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে । তখন শুরু হল আমার কান্নাকাটি । সবাই আমাকে এই বলে সান্ত্বনা দিল যে আয়নাটা আমাদের ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে । কিন্তু তবুও আমার জানি কেমন একটা অনুভূতি হয়েছিল । মনে হচ্ছিল যেন কিছু হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে । কিন্তু তাকে ধরে রাখার ক্ষমতা আমার ছিল না ।
যেদিন আয়নাটা খুলে ফেলা হবে আমি আয়নাটার সামনে গেলাম ।
সবসময়ের মত আলোটাকে দেখতে পেলাম । গতিময় ছন্দ তুলছে । আর আমি অনুসরণ করতে লাগলাম আলোটাকে । এভাবে মোহে মোহে কিছুক্ষণ চলে গেল ।
হঠাত আমার বুকে ধাক্কার মত লাগল । আলোটার গতি কমে আসল । তারপর উল্টো গতি তৈরি হতে থাকল । মনে হল আলোটা আমার দিকে আসছে ।
হঠাত আমি আলোটাকে হারিয়ে ফেললাম । খুবই আচমকা ঘটল ঘটনাটা ।
আমি আলোটা খোঁজার কোনরূপ চেষ্টা করলাম না । কারণ আশ্চর্য এক শান্ত অনুভূতি হয়েছিল তখন আমার । মনে হচ্ছিল কেউ একজন বলছে সব ঠিক হয়ে গেছে । ”
ভদ্রলোক দেখলাম শিউরে উঠলেন ।
আমার নিজেরই লোম দাঁড়িয়ে গেল । আমি তাকে বললাম ,
“তারপর থেকেই কি আপনি ............”
“জি । তারপর থেকেই আমি আয়নায় নিজেকে দেখতে পাইনা । ”
আমি বলার মত কিছুই খুঁজে পেলাম না । ঘড়িতে একটা বিরাট শব্দ হল । ঘণ্টার কাঁটা বারটায় পৌঁছেছে ।
ভদ্রলোক রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন ,
“আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম । আরেকটা কাজ করতে পারবেন ? ”
“বলুন । ”
“বাতিগুলো একটু নিভিয়ে দিবেন ? ”
আমি বাতি নেভানোর কোনও কারণ খুঁজে পেলাম না । কিন্তু উঠে গিয়ে বাতি নিভিয়ে দিলাম ।
তার পরের অনুভূতি আমি পাঠকদের কাছে কিভাবে প্রকাশ করব বুঝতে পারছিনা !
ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে দেখি তার পুরো শরীর আয়নার মত পরিষ্কার হয়ে গেছে । আমি তার দেহ-আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পেলাম নিজেকে । আর দেখতে পেলাম একটা ক্ষুদ্র আলো । অনেকটা জোনাকি পোকার মত ! আলোটা স্থির নয় । গতিময় ছন্দ তুলছে প্রতিনিয়ত ।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×