somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরানো সেই দিনের কথা (দ্বি-বর্ষপূর্তি পোষ্ট?!)

১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




শৈশবের কথা মনে করলে আমার প্রথম মনে পড়ে লেবু গাছটার কথা । লেবুপাতার গন্ধে অস্থির সময় কাটত কিনা বলতে পারছি না । তবে গাছটা বুকে খুব আঁচড় কেটেছিল ! একদম ভেতরে রয়ে গেছে । মজ্জায়,ঘিলুতেও একটু আধটু জায়গা করে নিয়েছে ।
বিছানার চাদরের একটা আলাদা গন্ধ ছিল । কেমন জানি মাদকের মত । নাকে লাগতেই ঘুম পেত ভাল্লুকের মতন ! মায়ের আঙ্গুলে ছিল নাম না জানা একটা পিঠার ঘ্রাণ । বোনের চুলে তো পুরো চকলেট ফ্যাক্টরি ! বাবা যেন প্রতাপশালী এক রাজ্যের মাথা । তার বুকেও পাথুরে ফুলের গন্ধ পেয়েছি কোনো একদিন রাত দুইটায় । সর্দিকাশি জড়িয়ে পাথুরে ফুলের সুবাস নিতাম ।তিন-সাড়ে তিন শতাংশ একচিলতে লম্বাটে উঠোনেও যে হারিয়ে যেতাম । বারবার বলতাম বাবাকে উঠোনে ফুলগাছ লাগাই । সাথে একটা আমের গাছ হয়ত , নাহয় লিচু , বরই গাছ ! বাবা বলতেন বরই গাছে বড্ড বিছে পোকার আনাগোনা । গা ঘিন ঘিন করে উঠত । আবার বুকের মাঝে কিছু একটা চাইত বরই গাছ কে তা সে বিছে পোকা সহই হোক না কেন! ছোট্ট বুকে ঘোড়ার খুরের চঞ্চলতা দুধের সরের মতন ছিল জড়িয়ে । বরই গাছ অবশ্য ছিল একটা ! মনে নেই কবে কেটে ফেলতে হয়েছিল ! ভেবেছিলাম বুড়ো গাছটা ঠিক ফিরে আসবে হারিকেন হাতে । তবে শেষে হারিকেন-লণ্ঠন কেবল আমার ছোট্ট পাচটা আঙ্গুলেই ঠেকেছে !
আমার বড় বোনটা বলত , বাসায় নাকি একটা আপেল গাছ ছিল । শুনেছি আপেল বিদেশী ফল , আমাদের বাংলাদেশে হবে কিভাবে ? নিশ্চয় মিথ্যা ! সত্য মিথ্যা যাচাই করতে কতবার রান্নাঘরে মায়ের পাশে বসে গিয়েছি । মাছ কাঁটা যে একটা শিল্প তখন প্রথম বুঝতে পারি । কিছু একটা মুখে পুরে চলে আসছি আর মা হাতে পড়ে পানি খাইয়েও ছাড়ছেন না । আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন । সভ্য ছেলের মতন দাঁড়িয়ে থাকতাম সেই সময়টায় । দিনে কতবার যে সভ্য হয়েছি সেটা সভ্যতার অতীত ! পড়ে অবশ্য শুনেছিলাম আপেল গাছ একটা ছিল । ছোট একটা গাছ , ওই তো আমাদের সিঁড়িটার কাছে । আকাশে ওঠার সিঁড়ি না ! আবার দোতলায় ওঠবার সিঁড়িও নয়। দু কি তিনটে সিঁড়ি একসাথে । এক লাফ দিয়ে পার করা যেত । আর কারো কথা মনে নেই আমি ছোট্ট পায়ের দীর্ঘ একটা লাফে পার করতে পারতাম ! সিঁড়িটা আমাতে গেঁথেছে আরেকটি কারণে ! সিঁড়িটা ছিল আমার বাঁদরামির শাস্তির জায়গা। কতবার হোঁচট খেয়ে পড়েছি । কনুই ছিলে গেছে । নাক ফেটে রক্ত এসেছে । হাঁটু গেছে ফুলে । তখন খুব আত্মসম্মানে লাগত ! কাঁদতে হত খানিকক্ষণ । বড়ই অসম্মানজনক ব্যাপার ।
সিঁড়ির কথা যখন বলছি আরেকটা সিঁড়ির কথা বলতে হয় । ছাঁদে ওঠার সিঁড়ি । একটা ষ্টীলের সিঁড়ি সকাল নেই রাত নেই পীঠে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত ! যখন শুনলাম ছাঁদে উঠতে পারব তখন সবার আগে মনে এসেছিল একটা কথাই ! আমাদের পেয়ারা গাছটা বোধহয় এখন চোরগুলোর কাছ থেকে একটু রেহাই পাবে । দু মুঠো নিঃশ্বাস আমাদেরও দিতে পারবে । গাছটা গায়ে গতরে বিশাল হয়েছিল , এক তলার ছাদ পেরিয়েছিল ! ঠিক মনে নেই ছাঁদে দাঁড়িয়ে হয়ত নাগাল পেতাম না , হয়ত পেতাম । ঝাঁকে ঝাঁকে পেয়ারা চোখে লেগেই থাকত ,লেগেই থাকত । কত গুলো সকালে গাছটা আমায় উপহার দিয়েছে ! দু একটা পেয়ারা । আমার রোমান্স ছিল আরেক জায়গায় । কাঁচা , কষা কষা ছোট্ট পেয়ারাগুলি লবন মরিচে ডুবিয়ে মুখে পুরতাম । এক ঘোর বর্ষা গাছটাকে মেরে ফেলে । গাছটার প্রায় বুকসমান পানি উঠেছিল সেইবার ।সব শুষে নিয়ে গেছে । এই গাছের মাঝে আমার কিছু একটা অংশ ছিল ! তাই তো কিছুটা আমিকেও শুষে নিল ঘোলা বরষা ! একটা মরা মানুষের মত দিন কতক হেসেছে গাছটা তারপর কোথায় গেছে কি জানি , কেউ হয়ত পিটিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ! হয়ত আমিই !
কিন্তু আমার শৈশবের সবচেয়ে সুখকর স্মৃতি বোধ হয় এর কোনটিই নয় । সেই জায়গাটা কাল বৈশাখীর ঝড়ের ! ঝড়ের সেই রাতগুলো আমাকে যা দিয়েছে তা বোধ করি কেউ বা কোনো কিচ্ছুই দিতে পারেনি । সকালে , বিকালে বা কোনো এক প্রহরে হয়ত ঝগড়া-মারামারি হয়েছে বোনের সাথে , বা-মার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি , দু-তিন দিন একাধারে খালার বাসায় যাইনি ,(আমার খালার বাসা আমাদের বাসার একদম মুখোমুখি , সামনে) এতসব বিচ্ছিনতার উপকরন , এতসব দূরে দূরে থাকার ফন্দি-ফিকির সব গিয়ে মাথা ঠুকে মরেছে সেই ঝড়ের রাত্রিগুলোতে । তীব্র কাল বৈশাখীর ঝড় বাইরে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে , বাসার ভেতরে কেউ একজন সমানে আজান দিচ্ছে , সব্বাই একসাথে একটা রুমে , এমনকি একটা খাটে জড়সড় হয়ে বসে রয়েছি । সবাই যখন বলাবলি করত ঝড় কখন শেষ হবে , তাড়াতাড়ি শেষ হোক ইত্যাদি ইত্যাদি , মনে মনে আমি ভেবেছি , ইস ! আল্লাহ ঝড় থামিয়ে দিও না ! সেই ঝড়ের রাত গুলো , এমনকি দিনগুলো আমি কামনা করতাম তীব্রভাবে , এখনও করি , আর তীব্রভাবেই করি ! শিক্ষকতার খাতিরে কিশোরগঞ্জের বাইরে আমার মায়ের ট্রেনিং থাকত প্রায় সময়ই । সেই ট্রেনিং এর সময়টা আবার বেশিরভাগ সময় হত কালবৈশাখীর সময় । কোনো একদিন হয়ত আমরা তিন ভাইবোন বাসায় , বাবা হয়ত একটু বেড়িয়েছেন , মা তখন ময়মনসিংহ ট্রেনিং এ , বাসায় একটা ল্যান্ডফোন আছে সেটাও হয়ত ডেড অথবা তার ছিঁড়ে গেছে । তখন আমাদের কাজ ছিল খুব দ্রুত , ঝড়ের মাঝে দৌড়ে খালার বাসায় চলে যাওয়া । মনে আছে খালার বাসায় তখন একটা টিনের গেইট ছিল । ঝড়ের তীব্র শব্দে হয়ত মাঝে মাঝে আমাদের ধাক্কাধাক্কি শুনতে সমস্যা হত ! সেই সময়টায় মনে হত কোনো অভিশপ্ত প্রেতাত্মা যেন পেছনে ধাওয়া করছে! সত্যি বলতে সেই কাজটা আমি যতটুকুু উপভোগ করতাম , এ যাবত আর কোনো কাজ তার বিন্দুমাত্র উপভোগ করতে পারিনি । সে ছিল এক থ্রিলিং ব্যাপার !
ঝড়ের রাতের একটু আধটু খাওয়া-দাওয়া , ভূতের গল্পের আসর , ভয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠা যেকোনো রূপকথাকে হার মানাবে , তা আমি হলফ করে বলতে পারি !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×