somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোগল সম্রাট
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

আমাদের হাল সময়ের দিনরাত্রি গুলো

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখনো আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর মেটাতে প্রায় প্রতি মুহূর্তে পদে পদে যুদ্ধ করতে হয়। মারাত্মক হয়রানি হতে হয়। যেমনঃ

খাদ্যঃ না খেয়ে অভাবে কেউ এখন আর মরে না এটা সত্য, তবে যা খায় তা খেয়ে ধুকে ধুকে মরার দিকে এগোচ্ছি সবাই। ভেজালমুক্ত বা বিষমুক্ত খাবার এখন যেন দুঃস্বপ্ন। মাছে ক্ষতিকর ফরমালিন- বিষাক্ত কেমিক্যাল,শাক-সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, ফল-ফলাদিতে কার্বাইড। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাছাড়া অতি মুনাফাখোর সিন্ডিকেট সারা বছরই দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় (চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, শিশুখাদ্য) সকল পণ্যের দাম বাড়িয়ে লুটেপুটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যাতাকলে সারাক্ষণ পিষ্ট হচ্ছি।

চিকিৎসাঃ চিকিৎসা ব্যবস্থার যে চরম বেহাল দশা তা করোনাকালীন সময়ে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। দেশের চিকিৎসকরা মফস্বলে বা গ্রামে থাকতে চান না। সরকারি হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তার রোগী দেখেন না। তারা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে,১২/১৪ শত টাকা ফিস নিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে ভালোবাসেন। আগত রোগীকে রোগী মনে না করে খদ্দের মনে করে অপ্রয়োজনীয় অনেক টেস্ট করাবেন সেখান থেকে কমিশন খাবেন এবং পরেরদিন রোগী সেই রিপোর্ট দেখাতে গেলে আবার ৪০০/৫০০ টাকা ফিস নেবেন। পয়শা আর পয়শা। আর তাদের চেম্বারের সামনে ঔষধ কোম্পানির দালালদের উৎপাততো আছে। অসুস্থ কতো রোগী দরজার সামনে অপেক্ষায় কাতরায় সেদিকে খেয়াল নাই। সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ধ্বংস করে দিয়ে বেসরকারি প্রাইভেট চিকিৎসা বাণিজ্য এখন রমরমা এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আধুনিক পাঁচতারা হোটেল সমমানের যে দুই-চারটা হসপিটাল দেশে হয়েছে তা সাধারন মানুষের সাধ্যের অনেক বাহিরে।

শিক্ষাঃ শিক্ষা এখন পন্য এবং স্কুলগুলো দোকান হয়ে আছে থরে থরে সাজানো পন্যের পসরা নিয়ে। শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরনে এখন
গুণগতমানহীন এবং বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা মোটামুটি পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত। দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে কোয়ালিটি এডুকেশন নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি বানিজ্য নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়ে আছে। যুগোপযোগী কারিকুলাম এবং পদ্ধতি চালু করার জন্য কেউই আন্তরিক নয়। শহরের প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি স্কুলে পাঠদানের পরিবর্তে অর্থ কামানোকে ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করছে। এদেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বাচ্চারা শিক্ষাজীবন কালে দেখে তাদের শিক্ষকরা কিংবা তাদের স্কুল কতৃপক্ষ অভিভাবকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করছে তারা বড় হয়ে অবচেতন মনেই অসৎ উপায়ে পয়শা কামাতে চাইতে পারে সেটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক।

বাসস্থানঃ যারা জীবন জীবীকার তাগিদে শহরে নগরে থাকে তারা আছে মহা কষ্টে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে বাসা বাড়া বাড়িয়ে দেয় সেচ্চাচারী বাড়িওয়ালারা। বাসা বাড়া দেবার সরকারি কোন নিয়ম কানুন দেশে আছে কিনা খোদায় মালুম। থাকলেও তা থোরাই কেয়ার। আর নদী সিকস্তি, ছিন্নমূল, নিরাশ্রয় অনেক মানুষ এখনো দেখি ফুটপাতে, ফুটওভার ব্রিজে, ঝুপড়িতে, বস্তিতে, পাইপের ভিতরে শোয় প্রতিরাতে প্রায় প্রতিটি ছোট-বড় শহরে নগরে বন্দরে।

আরো যেসব দৈনন্দিন কাজের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের যেতে হয় সেখানেও পদে পদে মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়। বাস-ট্রেন-লঞ্চ বিমান মোদ্দাকথা পরিবহন খাতের দুবৃত্তরা সারাবছর নানান অযুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে। পাসপোর্ট অফিসে গেলে দালালদের দৌরাত্ম্য, আর পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশকে উৎকোচ দেয়া ছাড়া নিতান্ত কয়জন পাসপোর্ট হাতে পেয়ছে তার দৃষ্টান্ত অতি নগন্য। ভূমি অফিস, সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও সেবা পাবেন না এমন একটা অবস্থা। ইউপি, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, বিদ্যুৎ অফিস, তিতাস গ্যাস কিংবা ওয়াসার মতো প্রতিষ্ঠানে সহনীয় বা অসহনীয় মাত্রায় অবশ্যই লাগবে। কাস্টমস, গনপুর্ত, রেলওয়ে, বন-বিভাগ, আয়কর কর্তৃপক্ষ, পোর্ট কতৃপক্ষের মতো প্রতিষ্ঠানে গেলে পিয়ন দারোয়ান থেকে ঊর্ধ্বতন সবাই হা করে বসে থাকে। আপনি ইনকাম ট্যাক্স দিলেন,তারপর বছর শেষে সঠিকভাবে রিটার্ন সাবমিট করে রিটার্ন সনদ নিতে চাইলে সেখানের কেরানিকে ১০০০/- টাকা থেকে ২০০০/- টাকা ঘুষ দেওয়া লাগে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, বাড়ি ঘরের প্লান অনুমোদন ঘুষ ছাড়া কেউ করাতে পেরেছে কিনা কস্মিনকালেও তা খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

আমরা ফেসবুক-ইউটিউব-টিকটক আর ইন্টারনেট পেয়ে নিজেদের ডিজিটাল ভাবতে শুরু করেছি। অথচ এক দানবাকৃতির বিষবৃক্ষের তলে কেটে যাচ্ছে আমাদের প্রতিদিন প্রতিরাত, প্রতিমুহূর্ত।

ছবিঃ অন্তর্জাল।

ঢাকা।
০৯ পৌষ,১৪২৮ বঙ্গাব্দ।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×