somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈমানের জোরই বড় শক্তি..........(সিরিজের শেষ পর্ব)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৬ষ্ঠ হিজরীর এক ঘটনা।
সময়টি ছিল জিলকদ মাস।
হজ্জের মওসুম ঘনিয়ে আসছিল।
আরবের দিকে দিকে হজ্জযাত্রার আনন্দঘন প্রস্তুতি চলছে।
এ সময় তিন মাস মক্কায় যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও ঝগড়া-ফাসাদ বন্ধ থাকে। মানুষ ভুলে যায় তাদের হিংসা, দ্বেষ ও বিভেদের কথা। তখন মক্কার চারিদিকে থাকে সুখ ও শান্তির পরিবেশ। মারামারি, হানাহানি ছেড়ে মানুষ কেমন যেন শান্ত হয়ে যায়।
সে বছর মহানবী (সা) হজ্জে যাবার মনস্থ করলেন।
মক্কা থেকে হিজরত করার ছয় বছর কেটে গেছে, এর মধ্যে হজ্জ করার সুযোগ হয়নি। মহানবীর হজ্জে যাবার খবর শুনে মদীনার মুসলমানরা যারপর নাই খুশি হল। মক্কার মুসলমানরা তো আনন্দে আত্মহারা! তাদের প্রিয় নবী (সা) বহুদিন পর মক্কায় আসছেন। তাদের খুশী আর উল্লাস কে দেখে?
অবশেষে কল্পনা-জল্পনা পেরিয়ে নবী করীম (সা) যাত্রা করলেন মক্কার উদ্দেশ্যে।
নবীর (সা) সাথে রয়েছেন চৌদ্দশ’ সাহাবী। আর কুরবানীর জন্য আছে ৭০টি উট।
মক্কার কাছাকাছি ‘আসকান’- এ পৌঁছেই খবর পেলেন মক্কার কুরাইশরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুসলমানদের গতিরোধ করার জন্য তারা এগিয়ে আসছে। মুসলমানদের নিঃশেষ করার জন্য কুরাইশরা কঠিন শপথ নিয়েছে।
মহানবী (সা) ভীষণ ভাবনায় পড়ে গেলেন। যুদ্ধের কোন প্রস্তুতি নিয়ে আসা হয়নি। তাই তিনি যুদ্ধ এড়াবার জন্য তিনি ভিন্ন পথে অগ্রসর হলেন। অবশেষে হুদায়বিয়া গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল, কুরাইশরা মুসলমানদের মক্কায় যেতে দেবে না। প্রয়োজনে যুদ্ধের জন্যও তারা প্রস্তুত।
মহানবী (সা) যুদ্ধ এড়াতে চাইলেন। তাই খোজা গোত্র নেতা বুদাইলকে শান্তি ও সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে কুরাইশদের নিকট পাঠালেন। কিন্তু কুরাইশরা নবীর প্রস্তাবে রাজী হল না। জালিম কুরাইশরা মানবতার নবী মুহাম্মদকে (সা) গুরুত্বই দিল না। পরিস্থিতি কঠিন বলে মনে হল।
নবীজী হাল ছাড়লেন না। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর হযরত উসমান (রা) কে তিনি দূত হিসেবে মক্কায় পাঠালেন। আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় উপনীত হবার উদ্দেশ্যেই এই দূত প্রেরণ করলেন নবীজি।
এদিকে শিবিরে সাহাবীদের মধ্যে চলছিল মহা উদ্বেগ। হযরত উসমানের পথ চেয়ে আছেন সবাই। বিস্তীর্ণ মরুপথে সবার দৃষ্টি প্রসারিত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন তারা। বিপদেরও আশংকা করছেন সাহাবারা। এমন সময় হঠাৎ হযরত উসমানের (রা) এক দুঃখজনক খবর এল। জানা গেল কুরাইশরা উসমানকে হত্যা করেছে।
খবর শুনে মুসলমানদের মধ্যে প্রচণ্ড এক শোকের ছায়া নেমে এল।
সাহাবাদের বুক উসমানের শূন্যতায় খাঁ খাঁ করে উঠল। এ আঘাতে সবাই উত্তেজনায় ফেটে পড়ল। সবার মধ্যে কঠিন প্রতিরোধের তীব্র আগুন জ্বলে উঠল।
তারা ভাবল কাফেররা যে উসমানকে হত্যা করেনি। তারা বরং ইসলামকেই নিঃশেষ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে! এটা স্পষ্ট সীমা লংঘন।
তাই কুরাইশদের এ অসভ্যতা মেনে নেয়া যায় না।
মহানবীর মনেও প্রচণ্ড আঘাত লাগল। তিনি সাহাবীদের নিয়ে এক বাবলা গাছের নীচে গিয়ে বসলেন। সাহাবীদের প্রত্যেককে নবীর হাতে হাত রেখে শপথ করালেন।
সবাই দৃঢ় শপথ নিল। সবার মুখে একই কথা, আমরা হযরত উসমান হত্যার বদলা নেব। আমরা মরে যাব, তবু লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছপা হব না।
সংখ্যায় মুসলমানরা ছিল খুবই নগণ্য। তাদের সংখ্যা মাত্র চৌদ্দশ’। ওদিকে কুরাইশরা সংখ্যায় অনেক বেশি।
তাছাড়া মুসলমানদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে তলোয়ার ছাড়া কোন যুদ্ধাস্ত্রও নেই। অথচ তা নিয়েই শত্রুবেষ্টিত মক্কার মাটিতে বিশাল কুরাইশ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে হবে।
তবে মুসলমানদের বড় একটা অস্ত্র ছিল। তা হল আল্লাহর গায়েবী শক্তি ও ঈমানের বল।
বাবলা গাছের নীচে বসে মুসলমানরা যে দৃপ্ত শপথ নিয়েছে সে খবর দ্রুত মক্কায় ছড়িয়ে পড়ল।
এতে কুরাইশরা খানিকটা ভীত হল। তারা ভাবল সাহাবীরা সংখ্যায় কম হলেও শপথের দৃঢ়তার কারণে তাদের মোকাবিলা করা হবে খুবই কঠিন। এতে ভয়াবহ রক্তপাত হবে।
যুদ্ধে কুরাইশদেরও কম ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
এমতাবস্থায় কুরাইশরা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করল। হযরত উসমান (রা)-কে তারা বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিল। তার সাথে সন্ধির প্রস্তাব নিয়েও হাজির হল হুদায়বিয়ায়। ফলে আপাতত এক ভয়াবহ যুদ্ধের আশংকা হতে সবাই পরিত্রাণ পেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৩১
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×