somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পটা কার ? -প্রথম পর্ব

১৮ ই জুন, ২০১৯ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-মাঈশা তোর রক্তের গ্রুপ কি রে?

-মা, তুমি কয়দিন পর পর আমাকে এটা জিজ্ঞেস করো কেন?

-জিজ্ঞেস করি যাতে তুই ভুলে না যাস ওই শুয়োরের বাচ্চার রক্ত আর তোর রক্তের গ্রুপ এক।

-আমার শরীরের তো তোমার রক্তও আছে।

-না নাই । আমি এটা বিশ্বাস করি না। তোর পুরাটাই ঐ শুয়োরের বাচ্চার রক্ত।আমার কিছু তোর মধ্যে নাই ।আমার মেয়ে হলেই তো তুই আমার রক্ত পাবি।তুই মোটেও আমার মেয়ে না।

-তুমি আমার মা না ?

-অবশ্যই না ।

-আমার মা কে?

-ঐ শুয়োরের বাচ্চাকে জিজ্ঞেস কর।

-মা, শুয়োরের বাচ্চা বলছো কেন? উনি আমার বাবা।

-তোর বাবার গুষ্টি কিলাই আমি।তোর বাবার মুখে মুতি আমি।ঐ শুয়োরের বাচ্চার সারা শরীরের আমি হাগু করি। তার পেটের ভেতর আমি গু রাখার টাংকি বানামু।

মাঈশা তার মায়ের সাথে আর কথা চালিয়ে যেতে চাইলো না। এরপর তার মা আরো বাজে ভাষায় কথা বলবেন। মাঈশা তার মাকে ভালো করেই চিনে। কিন্তু এখন সরে যাওয়ারও উপায় নাই। এখন সরে গেলে মা সারারাত মদ খাবে।মায়ের সবচেয়ে বাজে স্বভাব হচ্ছে এটা।যতক্ষণ পারে মদ খাবে। একটা সময় তিনি ক্লান্ত হলে খাওয়া বন্ধ করবে।মাঈশা জানে এক সময় মাঈশাকে গালাগালি করতে করতে মা ঘুমিয়ে যাবে। মাঈশা জানে তার মা এই ঘুমের পর আবার জেগে উঠবেন।মাঈশা চায় না তার মায়ের ঘুম টা অনন্তকালের হোক ।মাঈশা চায় না না তার মা হারিয়ে যাক। মায়ের হারিয়ে যাওয়াটা দেখতে চায় না পৃথিবীর কোন সন্তান।

মায়ের কোন কথায় মাঈশা কষ্ট পায় না। মাঈশা জানে তার মা এমন হলেও তিনি তাকে খুব ভালোবাসেন।সকাল হোক।সকাল হলে মা আবার নরমাল ব্যাবহার শুরু করবেন।কিন্তু মাঈশার সারারাত কেটে যাবে এসব ভেবে ভেবে। চোখ ফুলে যাবে।সকালে মা জেগে দেখবেন মেয়ে তার রুমে সোফার উপর শুয়ে আছে। হামিদা বেগম মানে মাঈশার মা মেয়ের মাথায় হাত দিবেন। ডেকে বলবেন কিরে সারারাত ঘুমাস নাই? কি যে হয়েছিস তুই ! একদম আমার মত।নিজের কোন খেয়াল নাই। যা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমা।

মা প্রায়ই একটা কথা বলে, তুই আমার মেয়ে না। মাঈশার খুব জানতে ইচ্ছে করে আসলেই কি হামিদা বেগম তার মা নন? মাঈশার মন চাইছে একবার বাবাকে ফোন দিবে। কিন্তু এত রাতে বাবাকে ফোন দিলে তিনি বুঝবেন মার কিছু হয়েছে। মাঈশার বাবা কলিম উদ্দিন জানেন তার স্ত্রীর কিভাবে মাতাল হয়ে পড়ে থাকে। মূলত এজন্যই কলিম উদ্দিন হামিদা বেগমের সাথে থাকেন না। এটি কলিম উদ্দিন এর কথা ।মাঈশা আসলে জানে না তার বাবা আর মা কেন আলাদা থাকেন। জানতে ইচ্ছে করে না যে তা না। কিন্তু মাঈশা কাউকেই এটা জিজ্ঞেস করে না। কিছু কিছু জিনিস না জানাই ভালো। জগতের সব জিনিস জানবেন উপরওয়ালা। মানুষের এত ঠ্যকা নাই।আর উপরওয়ালা মানুষকে সব কিছু জানার অধিকার কিংবা ক্ষমতা কিছুই দেন নি।

হামিদা বেগম সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। উঠে সত্যিই দেখলেন তার মেয়ে তার রুমের সোফায় শুয়ে আছে। নিজের সম্পর্কে হামিদা বেগম খুব বেশি খেয়াল রাখেন না। মেয়ের সম্পর্কে তো না -ই।

নিউটন সাহেবের কথা তো সবারই জানা আছে। ঐ যে মাথার উপর আপেল পড়া এক বেরসিক বিজ্ঞানী।এক আপেল দিয়ে যিনি পরে অনেকগুলা সূত্র আবিষ্কার করে ফেলেন। এর মধ্যে তিন নাম্বারটা ছিল "For every action, there is an equal and opposite reaction." সোজা বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত ক্রিয়া আছে। তো হামিদা বেগম যে রাতে মদ খান তার পর দিন তিনি হয়ে যান একদম অন্যরকম একজন মানুষ। রাতে তিনি মাঈশাকে যতবেশি গালাগালি করবেন , ঠিক সকালে তিনি তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা দিয়ে মেয়েকে আপন করে তুলবেন। এই পৃথিবীতে বর্তমানে হামিদা বেগমের আপন বলতে তার মেয়েই আছে। স্বামী কলিম উদ্দিনের থাকা না থাকা নিয়ে হামিদা বেগমের মাথা ব্যাথা নাই।

হামিদা বেগম মেয়ের কাছে গিয়ে আলতো করে মাথায় হাত ভোলালেন। এরপর মেয়েকে ডেকে তুলতে চাইলেন।

-মাঈশা, এই মাঈশা।

মাঈশা কোন রকম ঘুম ভাঙলে জবাব দিল, জী মা।

-সারারাত তুই এখানেই ছিলি?

-হ্যাঁ।

-মানে সরি রে মা।

-না তা কিছু না।তুমি তো ...

-সরি রে মা।

-আমি তো আর কেউ না। সরি বলতে হবে না।

-এভাবে কথা বলছিস কেন রে তুই?

-কাল রাতে কি বলেছিলে?

-কি?

-আমি তো তোমার মেয়ে না।

হামিদা বেগম মেয়ের পিঠে হাত দিয়ে বললেন, শোন মাঈশা। আমার মেয়ে না হলে তোর নাম আমি রাখলাম কেন? তোর নামটা কে রেখেছে জানিস?

-কে?

-আমি আর তোর বাবা।

-দুইজন মিলে একটা নাম?

-হুম।

-কিভাবে? কোন আজেবাজে বানিয়ে গল্প বলবে না কিন্তু মা।

-না না ।এটা সত্য গল্প।

-কি গল্প?

-তোর বাবা তোর নাম ঠিক করেছিল ইশা। আমি বললাম কি নাম রাখলে যে আমার নামের কোন অস্তিত্ব নাই, তোমার নামও নাই।

-তারপর?

-তারপর সে বলল, না এই নামটাই রাখতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে এটা যখন রাখবে তখন আমি কিছু এড করি। আমি তোর বাবাকে বললাম, তোমার মেয়েকে তুমি কিভাবে ডাকবে? মা ইশা এভাবে না ? তোর বাবা বললেন , হ্যাঁ , কি ডাকব আর? আমি বললাম তাহলে মেয়ের নাম হোক মাঈশা ! তোর বাবা আমার ছেলে মানুষি দেখে হাসতে হাসতে শেষ। তারপর বলল, ঠিক আছে এটাই আমার মেয়ের নাম হবে। মাঈশাই তোর নাম রাখলাম। এই মাঈশা, তুই কাঁদছিস কেন?

-কই মা?

মাঈশা মায়ের কাছে এই গল্প অনেকবার শুনেছে। মাঈশা জানে এই গল্পটা মা তাকে খুশি করার জন্য বলে। বাস্তবে তার বাবার আর মায়ের সম্পর্ক এত মধুর ছিল না কোন দিনই। মায়ের মাথা ঠিক হলে তিনি খুব সুন্দর করে এমন একটা গল্প বানিয়ে বলেন। মাঈশা প্রতিবারই গল্পটা শুনে কাঁদে । কারণ মা যখন গল্পটা বলেন তখন মাঈশা একটা কল্পনার জগতে জগতে চলে যান। যেখানে একই ছাদের নীচে বসবাস করে মাঈশা, তার বাবা আর তার মা।

এটা যে একটা মিথ্যা গল্প সেটা মাঈশা জেনেছে তার বাবার কাছ থেকে। মাঈশা একদিন তার বাবাকে এই গল্পটা বলে। কলিম উদ্দিন সেদিন হাসতে হাসতে শেষ। মেয়েকে বলেন, তোর কি মনে হয় এসব তোর মায়ের সাথে ঘটবে? তোর মা যে একজন অসুস্থ মহিলা এই গল্প শুনলেই আমি ক্লিয়ার হয়ে যাই। তুই কি বুঝতে পারিস না , তোর মা যে একটা অসুস্থ মহিলা? তোর মা এমন কত গল্প আমার বাবা মাকে মানে তোর দাদা আর দাদীকে শুনিয়েছে জানিস ? একটা গল্প শুন।

তোর মা তোর দাদা আর দাদির কাছে তুই যেদিন হলি সেদিনকার গল্প বলা শুরু করল একদিন। আমি পাশের রুম থেকে এই গল্প শুনে হাসতে হাসতে শেষ। একটা মানুষ কিভাবে এমন করে একটা গল্প এভাবে সাজাতে পারে ? যেটা তার জানার কথা নয় সেটা সে কিভাবে বলে ?

তোর মা তোকে এরপর এমন গল্প বললে লিখে রাখবি।অনেকগুলা গল্প হলে আমরা বাপ মেয়ে মিলে তোর মায়ের একটা বই ছাপিয়ে ফেলব। সাহিত্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী হবেন তোর নানা ইমামুল হক ভুঁইয়ার একমাত্র উত্তরাধিকার হামিদা বেগম । হা হা হা হা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৯ রাত ৮:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×