তখন সবে মাত্র ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। কলেজে তেমন যাওয়া হতো না আমার। প্রায়ই কলেজের নাম করে ঘুড়ে বেড়িয়েছি এখানে-সেখানে। আমার কাজিন, অতিশয় ভদ্র-বিনয়ী-বন্ধুত্বপূর্ণ তুষারকে নিয়ে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে রওনা হতাম ঢাকার অলিগলিতে। ঢাকা একসময় আমার কাছে ছিল পাশের বাড়ির মতোই। নারায়ণগঞ্জ হয়ে ফতুল্লার পাগলা লঞ্চ ঘাট হতে বুড়িগঙ্গা নদী বয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যেতাম, কখনো ফার্মগেট। আর সংসদ ভবন এলাকাতো হারহামেশাই। একবার তুষার ভাইয়ের সাথে ফার্মগেট যেতে হলো, তার নাকি নয়া বন্ধু আছে যাদের সাথে দেখা করবে। সেবারের যাত্রায় আমার আরেক বন্ধু, বন্ধুমহলে প্রাণ আনিসও সঙ্গী ছিল। ফার্মগেটে অপেক্ষার পালা, কখন আসবে কাজিনের সেই নয়া বন্ধু। একটা কথা বলা প্রয়োজন, তখন পত্রমিতালীর যুগ ছিল। অপেক্ষার ফাকেঁ ভাইজানকে বললাম তোমার নয়া বন্ধুদের ব্যাপারে কিছু বলো। যখন সে বললো ওদের নাম কণা-ডায়না, আমার তো তাহি-তাহি অবস্থা। বলে কি! আম্মা যদি জানে এর বিষয়টা-কলেজ ফাকিঁ দিয়ে ঢাকায় মেয়েদের সাথে দেখা-সাক্ষাত। আব্বা তখন দেশের বাহিরে ছিল, তাই আমার সব বিষয়ে গোয়েন্দাগিরি করাটাই ছিল আম্মার দায়িত্বে।
তখন গ্রামীনফোনের কলপ্রতি মিনিট চার্জ ছিল প্রায় সাত টাকা। আমার মোবাইল ছিল। কিন্তু কণা-ডায়নাদের হাতে এখনকার মতো সহজলভ্য মোবাইল ছিল না। তাই তাদের বের করার দায়িত্ব বর্তায় বন্ধু আনিসের উপর। যে কিনা মেয়েদের দিকে তাকাতেই পারতো না। ভিজা বেড়াল আর কাকে বলে!
ফার্মগেটের ওভারবিজ্রের উপর দাড়িয়ে আমার অপেক্ষা করছি আর মনে মনে তুষার ভায়ের গোষ্ঠি উদ্ধার করছি। একসময় বন্ধু আনিসের কল্যাণে ওদের দেখা পেলাম। যদিও একধিক বার অসংখ্য মেয়ের জিঞ্জাসাও করা হয়েছিল, এ কাজ করতে গিয়ে একবার মহা সমস্যায় পড়েছিলাম। অল্পের জন্য সেদিন গণপিটুনী থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। আর সেই ক্ষণেই আমার কণা ও ডায়নাকে খুঁজে পেলাম। যাক বাবা বাচাঁ গেলো।
তুষার ভাই রিক্সা নিলেন আর আমরা সবায় গেলাম সংসদ ভবন্ এলাকায়। কণা-ডায়নার সাথে তুষার ভাইয়ের কথোপকথন....আমরা জানি না আজও। কী কথা হয়েছিল্। শুধু ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে সময় পার করিছি। আজও সে অভিজ্ঞতা ভুলিনি। কণা-ডায়না অসম্ভব সুন্দরী ছিল.......
যদিও তুষারের সাথে কণা-ডায়নার পত্রমিতালী চলেছিল প্রায় অর্ধবছর। তারপর হাওয়া......কী বিচিত্র!
তুষার ভাই এখন দুই সন্তানের জনক। সুখেই কাটছে তার সংসারজীবন। মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে, ভাইয়া তোর পত্রমিতালীর কতজন যে বন্ধু ছিল। আমার দেখা বিচিত্র একজন মানুষ। যার ৫০০০ এসএমএস শেষ হয়ে যায় মাত্র ২৪ ঘন্টায়। তার সকল বন্ধুরা তার এসএমএস বার্তা পেতে পেতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। সুসংবাদ যে সে আমার গ্রামীনফোন নম্বারে এসএমএস বার্তা প্রেরণ করতে পারে না।
আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিল বেশ অমিল্। সে চিঠি পোষ্ট করে সারাদিন কাটাতো আর আমি ভরদুপুরেও বল নিয়ে মাঠে। এ বল খেলা নিয়ে কতবার যে আম্মুর হাতে উত্তম-মাধ্যম খেয়েছি তার হিসাব সিএ এক্সপার্টও অডিট করে মিলাতে পারবে না। ফুটবলই ছিল আমার সব, আমার প্রেম-ভালোবাসা। এখনও ফুটবল খেলি তবে সাবধানে। পা বাচিঁয়ে খেলি্। ডাক্তারের হুকুম অমান্য করা চলবে না। তবুও খেলি্। আমার শৈশব-কৈশর কেটেছে খেলাধূলা করেই। আমার পড়ার রুমটা ভরে গিয়েছিল ট্রফি আর ট্রফিতে। এগুলো এখনও আমার সংগ্রহে আছে। আমার সুখময় অতীত।
আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, এসএসসি পরিক্ষা চলাকালীন সময়েও আমি ফুটবল খেলতাম। ভূগোল পরিক্ষার রাত্রিতে তো আমি পড়তেই পারিনি, ফুটবল খেলে এতোটাই ক্লান্ত হয়েছিলাম যে পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম্। শেষে রিভিশন ছাড়াই পরিক্ষা দিলাম্। মাত্র ২ নম্বরের জন্য আমার লেটার মার্ক পাওয়া হয়নি। জীবনে পড়াশোনার প্রতি যদি অনাগ্রহ ছাত্রদের তালিকা করা হতো আমি হতাম নম্বার ওয়ান।
আমার একটা গুণ না কী অন্যকিছু আজও তার রহস্যের কোন কূল-কিনারা করতে পারিনি। আমি এইচ.এস.সি ও অনার্স এবং মাস্টাস পরিক্ষায় কখনোই ৫ টির বেশি প্রশ্ন পড়িনি। প্রতিটি বিষয়ে পরিক্ষার হলে প্রবেশ করেই যখন প্রশ্ন হাতে নিতাম আমার কাকতালীয় ভাবে ৫ টি প্রশ্নই কমন পড়তো! অবিশ্বাস্য সেই কাহিনী। মহান আল্লাহর রহমত যেন আমার জন্য অবধারিত। শুকরিয়া আমার রব। সারা বছরই যারা পড়াশুনা আর কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাদের চেয়ে কোন অংশেই আমার ফলাফল খারপ ছিল না বরং ভালোই ছিল। বড় আপুর আক্ষেপ যদি আমি সারা বছরই ঠিকমতো পড়তাম তবে ফলাফল কতইনা ভালো হতো। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আমিই কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত। আমার কাজিন চাচাতো বোন অসাধারন একটা মেয়ে গণিতে যার স্কোর সবসময় ৯৮ থাকতো। আমি ফুটবল খেলে কিন্তু ঠিকই মার্স্টাস শেষ করেছি মেধাবী আপু কিন্তু তা অর্জন করতে পারিনি!
আমি খুব ক্ষেপাটে টাইপের একটা বদমেজাজী ছেলে। মাত্রাতিরিক্ত রাগের একগোড়ামি কারণে হারিয়েছি অনেক কিছুই. সে হারানোর তালিকায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় যোগ হচ্ছে এখনও।
রাগের বর্শবর্তী হয়ে একবার আমাদের বাড়িতে থাকা এক ভাড়াটিয়া মেয়েকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে জব্দ করেছিলাম, তখন বুঝিনি এ আচরণের মানে কী? এখন তা আমি বেশ বুঝেছি, তখন আমার ভূমিকা ছিল একজন ইভটিজারের। আমি ভীষণ লজ্জিত সেদিনের আচরণজনিত অপরাধের জন্য, মৃত্যুর পূর্বে আমার সেই ছোট বোনটির কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। ওর স্বামী একজন ডাক্তার। ওরা সুখী হোক।
ওর নাম শেফা, ওর হৃদয় টুকরো টুকরো করেছিলাম। আমাকে ভালোবেসে এ রুপসী রাজকন্যাকে ভোগ করতে হয়েছিল ভালোবাসার নীলাভ যন্ত্রণা। ভালোবাসার নীল বিষে দংশিত হয়েছে অসংখ্যবার। সংসারী হয়ে আমাকে ভুলে গেলেই আমি লাকী।
এখন ভালোবাসায় ঘেন্না জন্মছে, প্রচুর.....অনেক। ভালোবাসা আর কচুঁ পাতায় পানি-একই কথা। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়- তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু কে?--উত্তর হবে "ভালোবাসা"। আমার ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শত্রু, ভয়াবহ শত্রুতা আমার সাথে ওর।
সবাইকে বলি রোবট দেখতে চাইলে চলে এসো আমার কাছে .....মনুষ্য রোবট দেখেছো কখনো......
আলোচিত ব্লগ
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ
বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার
মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের
আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন