somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি - (পর্ব ৩)

২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুরা, দ্বিতীয় পর্ব পড়ে নিশ্চয়ই তোমরা পরিকল্পনা করে ফেলেছো কিভাবে অগ্রসর হবে? পরিকল্পনা করে যদি একশনে না যাও তাহলে পরিকল্পনার 'পরি' উড়ে গিয়ে শুধু 'কল্পনা' পড়ে থাকবে। তুমি চাও তোমার কাংখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, পরিকল্পনাও করে ফেললে এভাবে এভাবে পড়লে চান্স হয়ে যাবে কিন্তু যখনই পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়তে বলা হলো- তুমি বললে কাল থেকে পড়বো। গেইম অব থ্রন্স এর নতুন সিজন এসেছে আগে দেখি, না হলে স্পয়লার চলে আসবে। এই স্পয়লার এর ভয়ে সব সিজন দেখে ফেললে মাঝখানে নিজের জীবনটাই স্পয়ল করে ফেললে।

আজকের পর্বে আমরা পরিকল্পনার পর কিভাবে একশনে যাওয়া উচিত সেই বিষয়ে আলোচনা করবো। কিভাবে গেইম অব থ্রন্স দেখেও ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া যায় সেই বিষয়েও আলোচনা করবো। আশা করি, লেখাগুলো ভালো লাগছে তোমাদের। ভালো লাগলে কমেন্ট করো, শেয়ার করো তাহলে নতুন পর্ব লেখার উৎসাহ পাই। নিরব পাঠক হয়ে থেকো না।

আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে-পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। পরিশ্রম যদি সৌভাগ্যের প্রসূতি হত তাহলে আজকে রিকশাওয়ালা বাড়ি গাড়ির মালিক হত। আসলে কৌশলী পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। আমরা সবাই পরিশ্রম করি কিন্তু সঠিকভাবে কৌশলী হতে পারি না তাই আমাদের সফলতা ধরা দেয় না। আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। বর্তমান সময়ে শুধু হার্ড ওয়ার্ক করে সফল হওয়া যায় না, তোমাকে স্মার্ট ওয়ার্ক করতে হবে।

তুমি তোমার জীবনেই দেখতে পাবে- তোমার অনেক বন্ধু দশ বারো ঘন্টা পড়ে পরীক্ষায় যে নাম্বার পাচ্ছে ঠিক একই নাম্বার তোমার অন্য বন্ধু দুই তিন ঘন্টা পড়ে পাচ্ছে। তাহলে তোমার এই দুই বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য হচ্ছে তোমার এক বন্ধু হার্ড ওয়ার্ক করছে আর অন্য বন্ধু স্মার্ট ওয়ার্ক করছে।

হার্ড ওয়ার্ক আর স্মার্ট ওয়ার্ক এর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। আমি একটি প্রশ্ন দিয়ে তোমাদের জিজ্ঞেস করি- তোমরা এই ঘটনায় কি করতে?

ধরো, তোমাকে একটি টেবিলে দশটি মোমবাতি দেয়া হয়েছে। এই মোমবাতিগুলো জ্বালানোর জন্য তোমাকে দুইটি পাথর দেয়া হল। তুমি পাথর ঘষে ঘষে অনেক কষ্টে একটি মোমবাতি ধরালে। এখন তোমার কাছে প্রশ্ন- দ্বিতীয় মোমবাতি ধরানোর জন্য তুমি কি আবার পাথর হাতে নিবে ?

তুমি নিজেই বলবে- আমি বোকা নাকি! ঐ জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে পরবর্তী মোমবাতিগুলো ধরাবো। আমি খুব সহজ উদাহরণ টেনেছি তোমাদের বুঝানোর জন্য তবে বাস্তব জীবনে অনেকেই ঐ পাথর হাতে নেয় ঘষার জন্য। তাহলে যারা আবার পাথর হাতে নিবে তারা হার্ড ওয়ার্ক করে আর যারা ঐ জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে মোমবাতি ধরাবে তারা স্মার্ট ওয়ার্ক করে। আমরা অনেক কাজে হার্ডওয়ার্ক করে যাই কিন্তু বিষয়টি যে স্মার্ট ওয়ার্ক করে করা যায় তা চিন্তা করি না। আমি আজকে এই হার্ড ওয়ার্ক আর স্মার্ট ওয়ার্ক নিয়ে কিছু কথা বলবো। কিভাবে স্মার্ট ওয়ার্ক করতে পারবে তা নিয়েও কিছু টিপস দেবার চেষ্টা করবো।

হার্ড ওয়ার্ক হচ্ছে শুধু গায়ে গতরে পরিশ্রম করা আর স্মার্ট ওয়ার্ক হচ্ছে গায়ে গতরের সাথে মস্তিষ্ককে কাজে লাগানো। বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটস বলেছেন- আমি কোন কঠিন কাজ সাধারণত একজন অলস ব্যক্তিকে দিয়ে থাকি কারণ সে কঠিন কাজটি সহজভাবে করার উপায় বের করতে পারে।

কোন কাজ আসলেই তা করার জন্য ঝাপিয়ে পড়লে হবে না প্রথমে সেটা সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা করতে হবে। কি কি উপায়ে কাজটি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যারা স্মার্ট লোক তারা কিছু নিয়ম মেনে চলে। তাদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। চলো সেই বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে আসি।

১) টু ডু লিস্ট তৈরি করাঃ আমরা অনেক কিছুই ভাবি কিন্তু করা হয়ে উঠে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমরা সারাদিন কি কি করবো এর কোন টু ডু লিস্ট করা থাকে না। আজ তুমি সারাদিনে কি কি কাজ অবশ্যই করবে তার একটি তালিকা তৈরি করে ফেল। আমি আমার কথা বলতে পারি। বিষয়টা তোমাদের কাছে হাস্যকর শোনালেও আমি তোমাদের বলছি। সকালবেলা প্রকৃতির ডাকে সবাই সাড়া দেয়। আমি যখন সকালবেলা প্রাকৃতিক কর্ম সারি তখন মনে মনে আজ সারাদিন কি কি করবো তা পরিকল্পনা করে ফেলি। দিনশেষে আবার সেই পরিকল্পনার সাথে মেলাই কি কি কাজ বাদ পড়লো। তোমাদের বন্ধুমহলে অনেককেই পাবা যারা পড়াশোনা করছে, খেলাধূলা করছে, বিভিন্ন হলিউড সিরিয়াল দেখছে, গান-বাজনা করছে, লেখালেখি করছে। তোমরা তাদের দেখে বলো- দোস্ত, তুই এত কাজ করিস কখন?

সবার জন্যই দিন ২৪ ঘন্টা। তুমি যে সময় পাও বিল গেটস একই সময় পায়। তুমি তোমার টু ডু লিস্ট করো না কিন্তু বিল গেটস করে, তোমার অনেক কাজ করা সেই বন্ধুটি করে। তুমি আজকে থেকে টু ডু লিস্ট করার অভ্যাস গড়ে তুলো। বিশ্বাস করো, একমাসের ভেতর দেখবে অনেক কাজ তুমি শেষ করে ফেলেছ যে কাজ তুমি করবে করবে করে করা হচ্ছিল না।

২) ‘না’ বলার অভ্যাস করাঃ আমরা অনেকেই না বলতে পারি না। যদি না বলি তাহলে তিনি কি ভাববেন? এই ‘না’ বলতে না পারার কারণে আমরা অনেক কাজে জড়িয়ে যাই। যেহেতু তোমার টু ডু লিস্ট করা আছে, সারাদিন কি কি করবে তুমি জানো এখন তোমার বন্ধু এসে কোন আবদার যদি নিয়ে আসে তাহলে তোমাকে না বলতে হবে অন্যথায় তুমি তোমার টু ডু লিস্ট এর কাজ শেষ করতে পারবে না।

আমি একদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে এক ছোট ভাইকে ফোন দিলাম দেখা করার জন্য। সে আমাকে মুখের উপর না করে দিল কারণ তার একদিন পর পরীক্ষা। আমি ঐ ছোট ভাই এর না বলাতে খুশি হয়েছি। এখন সে যদি পরীক্ষা থাকা সত্বেও আমার সাথে দেখা করতে আসত তখন আমার মাথায় ধারণা হয়ে যেত তার পরিক্ষা নিয়ে এত সিরিয়াসনেস নেই। আমি তার সাথে হয়ত পরীক্ষার মাঝে আবার দেখা করতে যেতাম কিন্তু মুখের উপর যেহেতু না করে দিয়েছে আমি পরবর্তীতে আর তার পরীক্ষার সময় দেখা করতে চাব না। ঠিক একইভাবে জীবনের অনেক ক্ষেত্রে না বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে স্মার্ট লোকের আরো বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো। সেই পর্যন্ত তোমরা ভালো থাকো।
----------------

আলামিন মোহাম্মদ
মোটিভেশনাল স্পিকার
মিশনপাড়া, যশোর।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×