somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা, লাল-হলুদ-সবুজ আতঙ্কে তোমার প্রবাসী সন্তানরা

০৫ ই মে, ২০১২ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা (বাংলাদেশ) জানি তুমি দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। তোমার মুখের মলিনতা ঘোঁচানোর জন্যই তোমার সন্তানেরা প্রবাসে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে। জানি শুনলে তুমি কষ্ট পাবে, তবু বলছি- মা, তোমার সন্তারেরা মরুর দেশে ভালো নেই। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি অঘোষিতভাবে বন্ধ আছে এবং যারা কর্মরত আছেন, তারাও আকামাসহ (ওয়ার্ক পারমিট/কাজের অনুমতি পত্র) নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে নয়া ভিসা প্রাপ্তিতে সমস্যা, আদম বেপারীদের দৌরাত্ম আকাশচুম্বী ভিসার দাম, নতুন আকামা পেতে অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস, আকামা নবায়ন সমস্যা, কফিল (স্পন্সর/মালিক) পরিবর্তন সমস্যা, পাসপোর্ট নবায়ন সমস্যা, দূতাবাসের সহযোগিতার অভাব ছাড়াও আমাদের ট্রাডিশনাল কিছু সমস্যা আছে, যার কারণে আমরা লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছি প্রতি মুহূর্তে। যেমন-বিভিন্ন জেলা/সংগঠনের সমস্যা (আঞ্চলিকতা অর্থাৎ এক জেলার লোকজনের ওপর অন্য জেলার লোকজনের আধিপত্য বিস্তার, বৈরীতা, মারামারি), বেতন বৈষম্য, অতিরিক্ত কাজ করানো, বেতন না পাওয়ার সমস্যা, নিরাপদ আবাসন সমস্যা ইত্যাদি।
তবে এসব ছাড়িয়ে বর্তমানে যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে তা নিয়ে কথা বলার বা কিছু করার যেন কেউ নেই। সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বর্তমানের নাম্বার ওয়ান হিসিবে চিহ্নিত এই সমস্যা সমস্যার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাগজে-কলমে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। সমস্যাটির দ্রুত সমাধান না হলে হাজার হাজার শ্রমিকের হাজার হাজার পরিবারের এবং পরিবারগুলোর লাখ লাখ সদস্যর (স্ত্রী-সন্তান-মা-বাবা আত্নীয়-স্বজন) ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তাসহ প্রাত্যহিক জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় চাকরি হারানো আর দেশে ফেরত আসার আতংকে আছে বাংলাদেশিরা।
এই আতংকটির সৃষ্টি হয়েছে নতুন পাশ করা সৌদিকরণ বিলের মাধ্যমে।
সৌদিকরণ আর আকামা সমস্যা
গত ৩১ মে ২০১১ সৌদি সরকার সৌদি নাগরিকদের বেকারত্ব কমানোর লক্ষে নিতাকাত বা সৌদিকরণ বিল পাশ করেছে। সে অনুযায়ী এখানকার সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সৌদি কর্মীদের পার্সেন্টেজ হিসাব করে তার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ক্যাটাগরি ৩টি হলো, লাল ক্যাটাগরি, হলুদ ক্যাটাগরি ও সবুজ ক্যাটাগরি।
সবুজ ক্যাটাগরি: যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক তাদের প্রতিষ্ঠানে সৌদি নাগরিকদের কর্মসংস্থান বেশি করবে অর্থাৎ সেই প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে শতকরা ৩০ ভাগ সৌদি নাগরিক কাজ করবে সেই কোম্পানিগুলো সবুজ ক্যাটাগরিতে পড়বে। সবুজ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকে। যেমন, তাদের প্রতিষ্ঠানের বিদেশি কর্মীদের আকামা নবায়ন করতে কোনো অসুবিধা হবে না, সৌদি চেম্বার অফ কমার্সের দেয়া সকল সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবে, তাদের প্রয়োজনে যেকোনো দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করতে পারবে ইত্যাদি।
হলুদ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান: যেই প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক পর্যাপ্ত সৌদি নাগরিকদের কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ তারা হলুদ ক্যাটাগরির আওতায় পড়বে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের যারা ছয় বছরের বেশি কর্মরত আছে তাদের আকামা নবায়ন করা হবে না। ওই কোম্পানিগুলো শর্ত সাপেক্ষে কাজ করতে পারবে, আকামার মেয়াদ থাকতে থাকতে তাদের শ্রমিকরা সবুজ ক্যাটাগরির কোম্পানি/মালিকের নিকট চলে যেতে পারবে।
লাল ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান: যে সমস্ত সৌদি নাগরিকদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ কম দেয় অথবা দেয় না তারা লাল ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের আকামা কোনো প্রকার বিবেচনা ছাড়াই আর নবায়ন করা হবে না।
হলুদ ক্যাটাগরির বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবস্থা একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে বাংলাদেশি শ্রমিক তুলনামূলক সস্তা বলে হলুদ ক্যাটাগরির কোম্পনিগুলোতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করে। সুতরাং ছয় বছর বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার পর ওই কোম্পানির কোনো শ্রমিকের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করা হয় না।
ফলে বিনা দোষে প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক আকামা নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কফিল বা মালিকের যদি কাগজপত্র ঠিক না থাকে অথবা কাজের অনুমতির সঙ্গে বাস্তবে কাজের মিল না থাকে তবে ওই সৌদি মালিকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে ওই মালিকের আওতায় কর্মরত শ্রমিকের মালিক পরিবর্তন ও আকামা নবায়নেও সমস্যা দেখা দেয়।
যদিও হলুদ ক্যাটাগরির শ্রমিকদের একটি সুযোগ আছে যে তারা আকামার মেয়াদ থাকতে থাকতে সবুজ ক্যাটাগরির কোম্পানি/মালিকের অধীনে চলে যেতে পারে। কিন্তু এখানেও বিধি বাম। কারণ সর্বত্রই বাংলাদেশি শ্রমিকরা অবহেলিত।
অন্য সকল দেশের নাগরিকের ক্ষেত্রে এই সুবিধা চালু থাকলেও এখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশি শ্রমিকদের মালিকানা পরিবর্তন বন্ধ আছে।
সুতরাংএকজন বাংলাদেশি হলুদ ক্যাটাগরির একজন দক্ষ মেধামী কর্মী হলেও সে অন্য প্রতিষ্ঠানে/মালিকের কাছে যেতে পারে না।
যেহেতু বাংলাদেশি শ্রমিকদের মালিক পরিবর্তন বন্ধ সেহেতু তার সামনে দুইটি রাস্তা খোলা থাকে। এক. আকামার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে কাজ করা নয়তো ফাইনাল এক্সিট দিয়ে দেশে চলে যাওয়া।
অপরদিকে ভারত-পাকিস্তান-ফিলিপাইন দূতাবাসগুলো তাদের কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় সদা তৎপর থাকায় তারা থেকে যাচ্ছে তুলনামূলক নিরাপদ। এর ফলে সৌদিকরণ আইনের অসহায় শিকার হচ্ছে প্রধানত বাংলাদেশিরা।
সময় গেলে সাধন হবে না
কথায় আছে চোর গেলে বুদ্ধি আসে। এখনো আমাদের সরকারের হাতে সময় আছে এই সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করার, সমাধানের জন্য এগিয়ে আসার। সময়মতো এগিয়ে না এলে হয়তো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে প্রবাসীদের তথা দেশের। যা হয়তো আমাদের সরকার এখন উপলব্ধি করতে পারছে না।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সড়ক র্দুটনায় নিহত মিশুক মুনীর আর তারেক মাসুদদের কথা। তারা ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তাঘাটের বেহাল দশা সম্পর্কে সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না বলা যয়। যখনি দুর্ঘটনায় তাদের মত কৃতি সন্তান দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন অমনি সকলের টনক নড়লো। বিভিন্ন মিডিয়ায় টকশো তো সরকারে মন্ত্রী আমলা থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট চিন্তাবিদরা সরব হলেন, মানববন্ধনও কম হয়নি? এসব ঘটনায় মন্তব্য করে মন্ত্রীরা আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন। এরই ধারাবহিকতা মন্ত্রীভায় রদবদলও হয়েছে। এমনি করে বলা যেতে পারে ঢাকা শহরের ভূমিকম্পের আশংকার কথা। এখনো কারো এর ভয়াবহতা সম্পর্কে টনক নড়ছে না। যখন হবে কখন কান্না ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। ঠিক তেমনি সৌদি সরকার তাদের করা আইনটি (অবৈধ শ্রমিক তাড়ানো) এখনো কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করছে না, কারণ তাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় শ্রমিক অত্যন্ত কম। কিন্তু যে কোনো মুহূর্তে এটা কার্যকর করতে পারে। কারণ যে হারে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল থেকে নুন করে যেভাবে শ্রমিক আসতে শুরু করেছে তাতে বলা যায়, অচিরেই তারা বিদেশি শ্রমিকের এই বিশাল বাজারটি দখল করে নেবে।
অপরদিকে, সৌদিরা যখন তাদের চাহিদামত বৈধ শ্রমিক পেয়ে যাবে তখনই বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকদের ওপর নজর দেবে। এখনই উপযুক্ত সময় এই বিষয়টি নিয়ে ভাববার।
মা, তোমার দায়িত্বপ্রাপ্ত আর ক্ষমতাবান সন্তানরা কি এ বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন?

বাংলানিউজে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১২ রাত ৮:২৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×