দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল জগতে আরোও একটি নাম যুক্ত হলো আজ থেকে, বিজয় টিভি । বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিজয় টিভি চালু করা হলো। আজ বসুন্ধরা সিটি'র এটিএন বাংলার নিজস্ব স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত বিজয় টিভি-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, দেখলাম কিভাবে নানান অসংগতিপূর্ণ একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলো নতুন এ চ্যানেলটি।
অনুষ্ঠান রাত দশ টা থেকে শুরু হওয়ার কথা, মোটামুটি সাড়ে দশটার দিকে বসুন্ধরা সিটির বেজমেন্টে পৌছলাম। গিয়ে দেখি সেখানে দাড়িয়ে আছেন শিল্পী সুবীর নন্দী, লিফটে ওঠার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন মনে হলো!! (আসতে দেরি করে ফেলেছেন মনে হয়!)
পরে বাস্তবেও সেটিই দেখলাম, পুরো অনুষ্ঠানে কোন শিল্পীকেই দেখলাম না গান করতে, সবাই অভিনয় করে গেলেন। আর সাউন্ডবক্সে রেকর্ড করা গান চলতে লাগলো।
এটিএনের স্টুডিওতে প্রবেশ করার পর একটু বসার জায়গা বেছে নিলাম, যে কয়টা স্থান রয়েছে তা প্রচন্ড নোংরা, বোঝা গেল যে বসার জায়গাগুলো পরিস্কার করা হয়নি, অনেকদিন হয়ত স্টুডিও ব্যবহার হয়নি তাই ময়লাগুলো জমেছে।
কোনরকমে বসার পরই দেখলাম মঞ্চে বিশাল সাইজের একজন উপস্থাপিকা এলেন
আমি তো এই ঘোষনা শুনে পুরো আক্কেল গুড়ুম, আরে বলে কি এইলোক! এতদিন নিজের বউ ইভা রহমান এর গান শুনিয়ে সবাইকে অত্যাচারিত করেছে, আর এখন কিনা নিজেই গান গেয়ে সবাইকে অত্যাচারিত করতে চায়!! উনার গান শুরু হলো, মঞ্চের আশ পাশের দর্শকরা হেসেই খুন।
তুহিন ভাই আমার পাশেই বসেছিলেন, ডাক দিলাম, ও তুহিন ভাই, কি বুঝলেন? উনি কোন কথা বললেন না, ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম মুখ ঠেসে ধরে একাধারে হেসে যাচ্ছেন, একটু পর বললেন যে গান শুনে তার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে হাসতে হাসতে।
ড. মাহফুজুর রহমান একে একে দুটি গান গাইলেন, একটি দেশের গান আরেকটি প্রেমের গান!
একসময় মঞ্চে ডাক পড়লো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের, তার কথা শেষে উপস্থাপিকা বলে উঠলেন, ধন্যবাদ জনাব অমুক (নাম ভুলে গেলেন)!!
বারোটা বাজার প্রায় কাছাকাছি সময়ে দেখলাম সবাই উপর দিকে তাকিয়ে, আরে কারণ কি? অনুষ্ঠান না দেখে সবাই উপরে তাকিয়ে কি দেখছে?? আমিও উপরে তাকালাম!
অনুষ্ঠানে কেক কাটার সময় বিশৃংখলা দেখা গেলে, কে কে মঞ্চে যাবে তা আগে থেকে মনে হয় নির্দিষ্ট ছিলো না। তাই উপস্থাপক খন্দকার ইসমাইল কে দেখলাম চেহারা দেখে দেখে উপরে একজন একজন করে ডেকে নিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিজয় টিভি-র নিজস্ব একটি ক্যামেরাও দেখলাম না। এটিএন বাংলা আর এটিএন নিউজের ক্যামেরা দিয়ে কাজ চালাচ্ছে দেখলাম। সমাপনী বক্তব্যে ব্যাপক হারে নিজের ঢোল নিজে পেটালেন ড. মাহফুজুর রহমান।
অনুষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেম খুব খারাপ মনে হলো। হুট করে বেড়ে যায় তো হুট করেই কমে যায়। কানে এসে ধাক্কা লাগে বারবার।
অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, রফিকুল আলম এবং কনকচাঁপা সহ আরও অনেকের আসার কথা থাকলেও তারা আসেননি।
কেক কাটার পর অনেক ক্ষুধা লেগে গিয়েছিলো আমার।
তবে খন্দকার ইসমাইল অনেক সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন, আর অন্য কারো কোনকিছুই প্রফেশনাল মনে হয়নি। মনে হলো ঢাকা শহরে নব্য গজিয়ে ওঠা কোন অপেশাদার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম পুরো অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ করলো।
বিজয় টিভি নামের এ টেলিভিশন চ্যানেলটির যাত্রা অনুষ্ঠান যেভাবে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো, উপর ওয়ালাই জানে পুরো চ্যানেলের জন্যও সে ধরণের ভবিষ্যতই অপেক্ষা করছে কি না! তবে এটি যেন মাইটিভি বা ইসলামিক টিভি-র মতো হারবাল চ্যানেল না হয় সেই প্রত্যাশা। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা দর্শকদের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


