somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অকালে সঙ্গী হারিয়ে

২২ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অকালে অনেকে হারান স্বামীকে৷ এই শোক পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগে অল্প বয়সী মেয়েটিকে মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবের৷ সামাজিক ও মানসিক চাপে কেউ কেউ বিপর্যস্ত হন৷ তবু জীবন থেমে থাকে না৷ এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে৷

‘বা রে, তুমি তো আবার বিয়ে করবে, আমার ছেলের সম্পদে তোমার কিসের অধিকার? আর নাতিটাকে আমাদের কাছেই রাখছি। আমি আছি। ওর ফুপুরাও আছে। আমরাই মানুষ করব। ওর জন্য যা খরচপাতি, তা আমরাই করব। তোমাকে আর এ সংসারে দরকার নেই।’ এই সংলাপ কোনো এক শাশুড়ির। তিনি তাঁর অকাল বিধবা পুত্রবধূকে এই কথাগুলো বলেছেন। না। গত শতাব্দীর কোনো গল্প-কাহিনি নয় এটা, মাত্র কয়েক মাসের আগের ঘটনা। বাস্তব। :| :|
মেয়েটির বয়স ৩০ পেরোয়নি। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন স্বামী। শোকের কালো চাদরে তখনো ঢেকে ছিল পুরো পরিবার। তারপরও অপ্রিয় বিষয়গুলো খুব দ্রুত পারিবারিক আলোচনায় উঠে আসে। স্বামীর কর্মস্থল থেকে বড় অঙ্কের টাকা পাওয়ার কথা। তা নিয়ে পারিবারিক কূটচাল কম নয়। সন্তানকে নিয়েও চলছে নানা ঝামেলা। কোথায় থাকবে শিশুটি। বিধবা মায়ের কাছে নাকি দাদিরকাছে! রীতিমতো যেন সিরিয়ালের কাহিিন। অনাকাঙ্ক্ষিত শোক-কষ্ট কাটিয়ে না উঠতেই তাঁর সামনে একের পর নিষ্ঠুর চ্যালেঞ্জ। এসবের মোকািবলায় রীতমিতো হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন তরুণীটি
:|| :|| :||
আরেকজনের কথা বলি। ধরুন বাবলি তাঁর নাম। দুই বছর বয়সী শিশুকন্যা রেখে স্বামী হঠাৎ করেই মারা যান। পাঁচ বছরের সংসার ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আসেন তিনি। সেখানেও সমস্যা কম নয়। এর মধ্যে এক সহকর্মীর সঙ্গে বাবলির একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না এই সম্পর্কের পরিণতি কী? কেননা সেই ব্যক্তি বাবলিকে ভালোবাসেন কিন্তু তাঁর সন্তানের বিষয়ে অনাগ্রহী। তাহলে সারা জীবন একাকী কাটাতে হবে তাঁকে?

:!> :!> :!>
সামাজিকভাবে একজন নারীর জীবনে তাঁর পরিচয় বদলাতে থাকে। কন্যা, বোন, মা, স্ত্রী, শাশুড়ি—একেক সময় একেক রকম। কিন্তু কম বয়সে স্বামী মারা গেলে তাঁকে বিধবা নামে বিশেষভাবে পরিচয় করানো হয়। সামাজিক নানা সরব ও নীরব পীড়ন তো আছেই—অনেকেই জটিল মনোপীড়নের শিকার হন। পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েন। থাকার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন। শ্বশুরবাড়ি না বাবার বাড়ি । উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন তিনি। নিমেষেই পরিচিত মুখ অপরিচিত হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ‘অপয়া’ অপবাদ দিতেও ছাড়েন না। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকেই বোঝা মনে করেন মেয়েটি। এই অবহেলা, কটুক্তি, ভুক্তভোগী স্বামীহারা কম বয়সী নারীর মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার—অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার, কনভার্সন ডিসঅর্ডার, স্লিপ ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি—আত্মহত্যার চেষ্টাও করতে দেখা যায়।

:| :| :| :|
এসবের পরও জীবন থেমে থাকার নয়। সব সামলে সব প্রতিবন্ধকতা মোকািবলা করে অল্প বয়সে স্বামী হারানো মেয়েটিকে অবশ্যই সামনের দিকে এগোতে হবে দৃঢ় পায়ে৷ অকাল বৈধব্যের সমস্যাপূর্ণ ঢেউগুলোর সামনে তাঁকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আবার পারিপাশ্বির্ক ভাবনা থেকেও মেয়েটি নতুন কোনো সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে ভয় পান। কিন্তু একটি মানুষ সারা জীবন একা থাকবেন এটিও কোনো সমাধান হতে পারে না। সব সময় পরিস্থিতি তো তাঁর প্রতিকূলে থাকবে না, কখনো না কখনো অনুকূলে আসতে পারে৷


8-| 8-| 8-|
তাহলে কী করবেন
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পারিবারিক, মানসিক, সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। নারীকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী করে তুলতে হবে। নারীর শিক্ষা ও উপার্জনমুখী কাজে অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ছেলে বা মেয়ে হোক—তাকে সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম বা কর্মজীবী নারী এ ধরনের পরিস্থিতি মোকািবলায় বেশি সামর্থ্যের পরিচয় দেন। সংসারে ও কর্মস্থলে মতামত রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। জীবনে চলার পথে আবার নতুন কাউকে পছন্দ হতে পারে৷ কিন্তু যিনি জীবনসঙ্গী হবেন, তাঁর মানসিকতা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে৷ শুধু তিনি নন, তাঁর পরিবারের সবার মতামত আছে কি না জেনে নিন৷ আপনার সন্তান থাকলে অবশ্যই সন্তান আপনার কাছে থাকবে, এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে৷ কোনো কথাই লুকানো উচিত নয়৷ খুব কাছের বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন৷
তবে চারপাশের কথা ভেবে নতুন কোনো সম্পর্কের পরিণতি টানবেন না, সেটিও ঠিক নয়৷


:( :( :(
বৈধব্যের ফলে সৃষ্ট জটিলতাকে কাটিয়ে উঠতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে তাঁর মধ্যে জীবনকে নতুনভাবে দেখার স্বপ্ন ও আগ্রহ জেগে ওঠে৷ মানসিক বিপর্যয়ে চিকিৎসা নিতে দেরি করা যাবে না। পুরুষশাসিত সমাজে কোনো নারী বিধবার শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যেন মানসিক রোগী হয়ে না পড়েন সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন ।
:| আমার লেখাটি ১৪ মে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:০২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×