somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিতর্কিত প্রেমপত্র

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোলাপী,
কি ভাবছ;
হঠাত্‍ করে তোমাকে প্রেম পত্র লিখে বসলাম নাকি?আর যা ই ভাব তোমাকে প্রেমের চিঠি দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।তোমার এই একটা স্বভাব, কাগজে লেখা কিছু একটা হাতে পেলেই প্রেম পত্র মনে করে মুখে অহংকারী ভাব এনে সব বান্ধবীকে পড়ে শুনাও।সে বার তোমার ক্লাসের ফার্স্ট বয়টা কি ভেবে যে তোমাকে ভালো লাগার কথাটা জানাল আর জীবনের মর্মান্তিক ভুলটা করল সেটা শুধু ঈশ্বরই জানে।ক্লাসে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে যেভাবে তার চিঠিটা সবার সামনে পড়ে শুনালে তা জেনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।প্রেম পত্রও যে কেউ ক্লাসে সবার সামনে পড়ে শুনাতে পারে সেই ধারণাও আমার ছিল না।অমন সুদর্শন মেধাবী ছেলেকে তোমার অপছন্দ হয়েছে বুঝলাম তাই বলে অপমান করবে!বোকা মার্কা হলেও কথা ছিল।তোমার কিসের এত দেমাগ?চিঠিটা ফাসঁ করার আগে তোমার পাশে বসা মীরা নাকি তোমাকে কত নিষেধ করেছিল। ফিসফিস করে কত মিনতি করেছিল।বলেছিল,'তুইও তো একজনকে ভালবাসিস।তাকে যদি কেউ এভাবে অপমান করে তোর কেমন লাগবে বল? কথা দিলাম,আমি নিজেই পিয়াসের কান মলে দিব।'
মীরার কোন কথাই তুমি শুনলে না।রাখলে না প্রিয় বান্ধবীর অনুরোধ।ক্লাস টিচার পিয়াসকে যখন সবার সামনে এনে দাঁড় করেছিলেন তখন মীরার চেহারার দিকে একবারও নজর পড়েছে?বলেছিলে,মীরার চোখে অশ্রু টলমল করছিল।সেটাই তো হওয়ার কথা।অপমানটা পিয়াসের না মীরারও গায়ে লেখেছিল।কিন্তু আনন্দে তুমি আত্মহারা হয়ে গেলে।
শুন,আমি তোমাকে প্রাইভেট পড়াতে যাই।বিশ্বজয়ের ইতিহাস শুনতে যাই না।তুমি বাবার আদুরে মেয়ে হতে পার আমার কাছে তুমি শুধুই একজন ছাত্রী।স্কুলে গুঞ্জন শুনা যায়,আমি নাকি তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।তুমি কি ভাবছ আমি কিছু বুঝি না?আমি অন্য কাউকে প্রাইভেট পড়াই না। তার মানে এই না যে,আমি তোমার জন্য মজনু হয়ে গেছি।নেহাত তোমার বাবা অনুরোধ করেছিল।না হয় অমন 'ক অক্ষর গো মাংস' মেয়েকে কেউ পড়ায়?সেদিন দেখলাম স্কুল ছুটির পর তোমার চাচাত ভাইয়ের সাথে দুনিয়া কাঁপানো হাসি হেসে কথা বলছিলে।আমাকে দেখে তার গা ঘেষে হাঁটতে শুরু করলে।চোখে হায়া শরমের বালাই নেই।কর না যার সাথে ইচ্ছে লটকা লটকি।তাতে আমার কি!পাড়ার অনেক মেয়ের বাবাই আমাকে জামাই বানানোর জন্যে ওত পেতে আছে।টোপ ফেললেই গিলে নিবে।তাছাড়া আমার কাজিন,যার ছবি তুমি আমার মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলে;তাকেও আমি ডাকলে ছুটে আসবে।তোমার চেয়ে ১০ গুন বেশি সুন্দরী।নিজেও সুন্দরী হতে কত কবিরাজি করছ সেটা ঠিকই টের পাই।তবু তোমাকে পড়াতে গেলে গা থেকে বিশ্রী সেন্টের গন্ধ আসে।তোমার দেওয়া সেই সস্তা মার্কা একটি সেন্ট আমার ট্রাংকে পড়ে আছে।আমি যাওয়ার আগে মনে হয় শুধু সাঁজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাক।যেন কনে দেখার জন্য বর আসছে!আর কি সব কাপড় পড়?প্রতিদিন তোমার লাল কাপড় দেখতে দেখতে এখন জাতীয় পতাকার পুরোটাই লাল মনে হয়।লালের প্রতি তোমার এত লালসা কেন?
শুনলাম,আজকাল তুমি নাকি অন্য কোন স্যারের পড়া শিখ না?শিখবে কিভাবে?১পাতার একটা চিঠি লিখতে লিখতে তোমার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাওয়ার কথা।কি ভেবেছ?তোমার চিঠিগুলো পড়ে আমি আকাশ পাতাল স্বপ্নে ডুবে থাকি?আঁকা-বাকা লাইনে কেউ চিঠি লিখে?একটা লাইন তেঁতুলিয়াতে হলে,অন্য লাইনটা খুঁজতে টেকনাফ যেতে হয়।আর যত বানান ভুল!বানান ঠিক করে পড়তে পড়তে আমার ঘুম এসে যায়।ভালবাসা বানানটা পর্যন্ত লিখতে পার না,লিখ ভালভাসা।আচ্ছা,তোমাকে বার বার নিষেধ করার পরও টেবিলের নিচে পা ঘষাঘষি কর কেন?ইচ্ছে করে পা লাগিয়ে আবার গায়ে হাত দিয়ে সালামও কর।একবার দেখলাম হাতের নখগুলো কি লম্বা লম্বা।আমাদের মধ্যে ঝগড়া হলে তুমি তো ভাল্লুকের মত আঁচড়ে দিবে।ধুর,ঝগড়া হবে কেন?তোমার সাথে তর্ক করার ইচ্ছেও আমার নেই।
সেদিন তোমাদের ঘরে কেউ ছিল না বলে আমাকে সন্ধ্যার পরও ঠেকিয়ে রাখলে।চোখ মুখ লাল করে সোফায় বসতে বললে।ইচ্ছে করেই আমার পাশে বসলে।যেন তোমাকে পাহাড়া দেওয়ার দায়িত্ব আমার।ভয়ে তখন টু শব্দও করতে পারি নি।
কিছু বুঝিনা ভেবেছ?আমি শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করব।যাতে আমার সন্তান মায়ের কাছ থেকে সঠিক শিক্ষাটা পায়।তোমাকে বিয়ে করলে সব ভুলভাল জিনিস শেখাবে।আচ্ছা,কলেজ পাস করলেই কি তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে?কোন অভাগা দুঃখকে কিনে নিবে সেটা দেখতে চাই।
কিছুদিন ধরে দেখছি,তোমার ছোট ভাই হুটহাট করে পড়ার রুমে ঢুকে ডিস্টার্ব করে এই অজুহাতে রুমের দরজাটা ছিটকিনি দিয়ে রাখ।এর পিছনে আসল কারণ টা হল,তুমি যাতে যখন তখন আমার সাথে ছোঁয়াছুঁই করতে পার,সেটা বুঝতে বাকি নেই?অখচ প্রথম প্রথম তোমার ভাই পাশে না থাকলে পড়তেই চাইতে না।দরজা খোলা না থাকলে বাতাস ঢুকতে পারত না।সেদিন দরজা খোলা রাখতে বলায় ধমক দিয়ে এক গাদা উপদেশ দিয়ে দিলে।তোমার এমন রাগী স্বভাব কেন?মায়ের মত সরল হতে পার নি;হয়েছ বাপের মত কটকট স্বভাবের।তুমি হয়তো জান না তোমার বাবা গত দু'মাসের টিউশন ফি এখনও দেন নি।তবু মানবতার খাতিরে পড়াই।
উপরের লেখাগুলো পড়ে কষ্ট পেলে মাফ করে দাও।উল্টা-পাল্টা কথা বলার জন্য কান মলে দিলেও আপত্তি করবো না।
অনিমা,বছর দুয়েক অপেক্ষা করতে পারবে?এখন যা অবস্থা,তাতে তোমার বাবার কাছ থেকে যৌতুক নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।সেদিন তোমাকে যখন পড়াতে গেলাম তখন যেভাবে তাকালে;আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেলাম।চোখ বড় বড় করে দাঁতে দাঁত চেপে বললে,মেসেজ দেখেন নি?মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজটা আগে না দেখার ভান করে ঠোঁট নাড়িয়ে পড়লাম-'অসুখ,আজ আসবেন না।'আমি জানতাম তোমার অসুখ,কিন্তু তুমি জান না তোমার পাগলামি না দেখে থাকতে পারি না।লাল কাপড় পড়তে পছন্দ কর বলে 'লাল গোলাপী' ডাকতাম।লাল গোলাপ থেকে-লাল গোলাপী।সে ডাক শুনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যেতে।প্রতিদিন বইয়ের ভাঁজে চিঠি পাওয়ার লোভে হাতে করে বই নিয়ে তোমার পাশে রাখতাম।আমি দোষী।তোমাকে ভালবাসার অপরাধে আমি অপরাধী।চিঠিটা তোমার হাতে গুঁজে দেওয়ার সাহস ছিল না।তাই টেবিলের উপর রেখে আসলাম।চিঠিতে লিখেছিলে,আমার সাথে মাটিতেও শয্যা পেতে ঘুমাতে রাজি আছ।চাঁদের আলোতে আমায় ঘুম পাড়াবে।রাত-বিরাতে ঘুম ভাঙ্গিয়ে যন্ত্রণা দিবে।এবার তোমার ইচ্ছে পূরণের সুযোগটা লুফে নাও।ডুবে যাচ্ছি,হাতটা বাড়িয়ে দাও।কথা দিচ্ছি।আর কাঁদাব না।ফিরিয়ে দিব না।যদি কোন সাড়া না পাই তাহলে ধরে নিব আমার পাওনা কিছুই ছিল না।
অজানার পথে পাড়ি দিলাম।

ইতি
তোমার গোলাপজান
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×