বোবা যে ছেলেটি
তারও ইচ্ছে করে পরিশীলিত স্পষ্ট উচ্চারণে বিশুদ্ধ শব্দ মার্জিত বাচন ভঙ্গিতে হরহর গড়গড় করে মনঃমুগ্ধকর সুশ্রাব্য কণ্ঠে উৎকৃষ্ট উপায়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে।তারও ইচ্ছে করে গুনগুনিয়ে গান ধরতে-'তোমার খোলা হাওয়া লাগিল পালে
টুকরো করে কাছি
আমি ডুবতে রাজি আছি
আমি ডুবতে রাজি আছি।'
ক্রিকেট খেলতে গিয়ে-হাউ ওয়াজ দ্যাট ! বলে চিত্কার দিতে ইচ্ছে করে।ক্লাসরুমে টিচার যদি জিজ্ঞাসা করেন,তোমাদের মধ্যে কে বলতে পারবে-আমরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি কেন?অন্য অনেকের মত বোবা শিক্ষার্থীটারও ইচ্ছে হয় হাত তুলে নিজের ধারণটা শেয়ার করতে।তারও ইচ্ছে করে ক্লাস প্রেজেন্টেশানে স্যারের বাহবা পেতে।পরীক্ষায় ভালো করলে হুররে বলে গলা ফাটিয়ে উল্লাস করতে।আম্মুকে ফোন করে বলতে ইচ্ছে করে-'আম্মু আমি A+ পেয়েছি।'তারপর ফোন যাবে বাবার কাছে।বাবা রাজ্যের সব কাজ ফেলে দুহাত ভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরবে।আদরের ভাই-বোন থাকলে ওদের কাছে ফোন যাবে।এরপর প্রিয় মানুষটিকে ফোন দিতে ইচ্ছে করবে
-হ্যালো মুনা.......
মুনা-এই বিচ্ছু তোমার ফোনে কল যাচ্ছে না কেন?
-তোমার মোবাইলে প্রবলেম।
মুনা-রেজাল্ট কি এখনও পাওনি?
-না
মুনা-পাশের বাসার ছেলেটা A+ পাইছে।বাসায় মিষ্টি নিয়ে আসছে।দুনিয়ার সবাই রেজাল্ট পাইছে।শুধু তুমি পাও না।প্লিজ বিচ্ছুটি বল না।
তখনি ছেলেটি প্রেমিকাকে টেনশানে রেখে লাইন কেটে দিবে।মুখচোরা লাজুক ঐ বোবা ছেলেটিরও সাধ জাগে তার প্রেমিকাকে কবিতা পড়ে শুনাতে-
'হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন-
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের 'পরে শুয়ে রবে?-
অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার!'
সে কিছুই বলতে পারে না।করতে পারে না কিছুই।তার বুকের ভেতর হরেক রকমের হাসি কান্নার আবেগ অনুভূতির পাহাড় জমে আছে।জমছে আরো কতশত।বোবা কান্নার কোন ব্যাখ্যা কারো কাছে নেই।আমরা নিজেরাই বধির,অন্ধ।নিজেরা নিজেদের বুঝিনা,অন্যজনকে বুঝার ইচ্ছেও পোষন করি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:১১