ঘরটা অন্ধকার।চারদিক থেকে কোলাহল ভেসে আসছে।রুপু বিছানায় চিত্ হয়ে শুয়ে আছে।কিন্তু কানে যেন ঢাকনা লাগানো।কোন শব্দই কানে ঢুকছে না।খারাপ সময় আসবে সে জানে।তার কষ্ট হচ্ছে না।কল্পনায় সে এসব ভেবে রেখেছে।শুধু বুঝতে পারেনি ঝড়টা কোন দিক থেকে আসবে।ঝড়ের প্রথম ঝাপটা এসেছে।ভালোমতই এসেছে।রুপু ভেবেছিল সে একটা বট বৃক্ষ পেয়েছে।কঠিন ঝড়ের সময় বৃক্ষতলে আশ্রয় নিবে।কিন্তু সে জানে না মানুষ সেটাই হারায় যেটা সে খুব আপন করেই চায়
পকেটও খালি।কিছু খুচরো টাকা হাতে নিয়ে প্রতিদিনই নাড়াচড়া করে।কোথাও যায় না।বেরুলেই টাকা খরচ।কিছুদিন আগে প্রেমিকা সতেরশ টাকা হাতে গুঁজে দিয়েছিল।এক হাজার টাকা ধার শোধ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে পকেট থেকে পাঁচশ টাকা হাওয়া।বাকি দুইশ টাকায় পুরো দুই সপ্তাহ পার করেছে।ঝামেলার শুরু তখন থেকে।প্রেমিকা দেখা করতে চায়,রুপু এটা ওটা বলে এড়িয়ে যায়।প্রেমিকা বলল
-দেখা যখন করবে না,ছেড়ে দাও।তোমাকে আর জ্বালাব না।রুপুর গলা শুকিয়ে যায়।শুধু বলে
-ছাড়ব কেন?
প্রেমিকা লাইন কেটে দেয়।মোবাইলের পর্দায় অনেকগুলো মেসেজ ভাসছে।রুপু সেসব না পড়ে ডিলিট করে দেয়।
ভালবাসার কি অসীম ক্ষমতা তবু মানুষ বারবার স্বার্থের কাছে পরাজিত হয়।কিছু কাগুজে টাকা মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরী করে।রুপুর মাথায় দার্শনিক সব উক্তি ঘোরপাক খাচ্ছে।
মাথার ভেতর যেন অতীত জীবনের ফাইল জমা আছে।যা যা সে হারিয়েছে সবই একটার পর একটা চোখের সামনে ভাসছে।এসএসসি তে খারাপ রেজাল্টের পর তার মরণ দশা হয়েছিল।মরণ বালা পরতে সাহস হয়নি বলে পরের ট্রাজেডিগুলো রুপুর জীবনের প্রতিটি রাতে দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে ফিরে আসে।সে জানে ভবিষ্যতে এক একটা তিরের ফলা তার দেহ কোষ বিষাক্ত করে দিবে।
মাথার উপর ঝুলে থাকা ফ্যানটা স্থির হয়ে আছে।ভয়ংকর কিছুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে হয়ত।শুধু প্রকৃতিতেই এ ব্যাপারটা দেখা যায়।ভয়ংকর কোন দুর্যোগের আগে প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে যায়।জড় বস্তুতেও ব্যাপারটা সংক্রমিত হয়েছে কিনা কে জানে।রুপুর হাতের কাছেই নাইলনের দড়ি রয়েছে।কেমেস্ট্রির সূত্র মেনে দড়িটা কিভাবে তৈরি হয়েছে সেটা রুপু জানে।নাইলন তৈরির কাঁচামাল মূলত দুটি -হেক্সামিথিলিন ডাই অ্যামিন ও এডিপিক এসিড।ডিউ পন্ট কোম্পানীর রসায়নবিদ ডঃ এইচ কারোথারস নাইলনের আবিষ্কারক ।১৯২৮ সাল থেকে গবেষণা শুরু করে দীর্ঘ ৮ বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৩৫ সালে নাইলন ৬.৬ পলিমার তৈরিতে সক্ষম হন। এ পলিমার মিশ্রিত রাসায়নিক পদার্থের প্রতিটি অনুতে ৬টি কার্বনের পরমানু থাকে বলে এর নাইলনকে ৬.৬ নামকরন করা হয়েছিল ।একসময় হোসীয়ারী ইয়ার্ন হিসাবে নাইলনের তৈরি পোশাকের কদর বেড়ে যায়।
হাতে সময় বেশিক্ষণ নেই।মনের একটা অংশ ভয়ংকর কাজের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।কিন্তু অন্য অংশটা তাকে জীবনের সুন্দর সব স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।চোখ বন্ধ করে জীবনের সারসংক্ষেপটা দেখতে চাইল।হঠাত্ চমকে উঠে বিছানায় বসে পড়ে।ঘুণে ধরা জানালার কপাট খুলে দিল।বাইরে তাকিয়ে দেখে দুজন ছেলে পরিত্যক্ত ডোবায় ভেসে থাকা কচুঁড়িপানায় কি যেন খুঁজে পেয়েছে।দুজনের মুখেই অফুরন্ত হাসি।