somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবিষ্কার জগতের কয়েকজন স্টান্টবাজ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনো একশন মুভিতে যখন নায়ককে মোটরবাইক কিংবা গাড়ি নিয়ে ২৪ তলা উঁচু দালান থেকে লাফ দেয়ার দৃশ্য থাকে, তখন স্বভাবতই সেখানে ভাড়া করা স্টান্টম্যান দিয়ে কাজ চালানো হয়। অথচ পুরো ক্রেডিট পায় নায়ক। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে স্টান্টম্যান ভাড়া করার তেমন কোন সুযোগ নেই। বিশেষ করে যদি তাদের এক্সপেরিমেন্টগুলো হয় অতি উদ্ভট এবং ভয়াবহ জিনিস নিয়ে। এই কারণেই ডঃ লিজার্ড নিজের তৈরি ড্রাগ নিজের গায়েই পুশ করেন, ডঃ অক্টোপাস (সংক্ষেপে ডক-অক) নিজেই ব্ল্যাক-হোল নিয়ে গবেষণার ভলান্টিয়ার হন, ডঃ ব্রুস ব্যানার হয়ে যান ‘ইনক্রেডিবল হাল্ক’।

নীচে বাস্তব জীবনের কিছু বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে আলোচনা করবো, যাদের পাগলামির মাত্রা হলিউডি মুভির ঐ বিজ্ঞানীদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তারা একশন মুভি-স্টারদের মত কালো রঙের লেদার জ্যাকেট, প্যান্ট, বুট আর সানগ্লাস পরে স্টান্টবাজি করেন না, কারণ ল্যাবরেটরিতে সাদা ল্যাব কোট পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এর বাইরে চোখ ধাঁধানো গতিতে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলা, কিংবা উত্তেজিত গলায় “না, এত পরীক্ষার সময় নেই- জলদি ইনজেকশন পুশ করো” বলতে বলতে নিজের শরীরে ভয়াবহ ড্রাগ প্রবেশ করানো- সবই তাদের বাথরুমে যাওয়া আসার মত দৈনন্দিন কাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

৫। HEAF এর বিস্ফোরক নিয়ে গবেষণা

The High Explosives Applications Facility (HEAF), পুরোই অস্থির নামবিশিষ্ট এই ফ্যাসিলিটির বিজ্ঞানীদের কাজ হচ্ছে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য নিয়ে গবেষণা করা। বছর কয়েক আগে তারা সিদ্ধান্ত নিলো তাদের নব্য-আবিষ্কৃত, শক্ত ধাতব-বস্তু গলাতে সক্ষম লেজার রশ্মি কতটা কার্যকরী সেটা পরীক্ষা করে দেখবে। এক্ষেত্রে আমরা হলে যেটা করতাম তা হলো, আমাদের ‘বিজ্ঞানযাত্রা ল্যাবরেটরি’-এর (এখনো হয়নি, ভবিষ্যতে কখনো হবে) সবচেয়ে কম পছন্দের ব্যক্তিকে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে তার মাথায় আপেল রেখে সেটার উপর লেজার নিক্ষেপ করা। কিন্তু এই বিজ্ঞানীরা তা করেনি। তারা বললো,”এটা হচ্ছে মেনি-বিড়াল টাইপ বিজ্ঞানীদের কাজ। কেউ একজন গিয়ে আমাদের গোডাউন থেকে স্টিঙ্গার মিসাইলগুলো বের করো”। অতঃপর তারা লেজার রশ্মি ছুঁড়ে মারলো সেই ‘স্টিঙ্গার ক্ষেপণাস্ত্র’ এর দিকে। এবং না, তারা পরীক্ষার পূর্বে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে নিষ্ক্রিয় করেনি। পুরো কার্যক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রেই পরীক্ষা চালিয়েছিলো তারা। এইরকম এক একটা ক্ষেপণাস্ত্রে মোটামুটি একটা পুরো মেগা-সিটির দফারফা হয়ে যাবার কথা।



উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন পরীক্ষার একটা ফলাফল। মিসাইলের গায়ের একটা ধাতব অংশ লেজার দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। ভেতরের সাদা পাউডারগুলো ভেতরেই রেখে দেয়া হয়েছে। বাইরে বের করে বোমাগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা হয়নি। কিছু পাউডার কেটে ফেলা অংশের সাথেও উঠে এসেছে। যারা সাদা পাউডারটার নাম জানতে চাইছেন তাদের বলি- ওটার নাম হচ্ছে এমোনিয়াম পার-ক্লোরেট। মজা পেতে চাইলে কোনো রসায়নবিদের সামনে নিরীহ গলায় এই নামটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করুন আর তার প্রতিক্রিয়া দেখুন।

সবচেয়ে মজার (নাকি আতংকের!) কথা হলো এই সফল পরীক্ষার ব্যাপারে মিডিয়ায় কোনো কিছু প্রচারে আগ্রহী নয় তারা। কিন্তু পরীক্ষাটা তেমন গোপনীয়ও নয় যে এটা মিডিয়া থেকে গোপন রাখতে হবে। তারা আগ্রহী নয়, কারণ এই ধরনের পরীক্ষা তারা প্রতিনিয়তই করছে। এটা তাদের অফিসের কর্মব্যস্ত দিনের একটা অংশ মাত্র!

৪। ডঃ ওয়ারেন এবং ডঃ ব্যারি মার্শাল এর পাকস্থলীর আলসার নিয়ে গবেষণা

ডঃ ওয়ারেন এবং মার্শাল যখন সফলভাবে পাকস্থলী হতে আলসার সৃষ্টির জন্যে দায়ী Helicobacter pylori ব্যাকটেরিয়াগুলোকে আলাদা করতে সক্ষম হলেন, তখন তারা বিশ্বকে জানালেন এই মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল ব্যাকটেরিয়ার কারণেই পেটের আলসার হয়। কিন্তু যথারীতি অধিকাংশ বিজ্ঞানী সমাজ এর প্রতিবাদ করলেন, আর বললেন- অসম্ভব। আলসার হয় দুশ্চিন্তা, মানসিক অশান্তি এবং অনিয়মিত জীবন যাপনের ফলে। তাই তখন ডঃ মার্শাল এই প্রতিবাদের জবাব দিলেন পুরো এক শিশি ভর্তি এই ব্যাকটেরিয়া গিলে ফেলে, যেগুলো তারা আলসারের রোগীদের পাকস্থলী হতে সংগ্রহ করেছিলেন।



সফলভাবে আলসার বাঁধিয়ে হাই-ফাইভরত অবস্থায় ওয়ারেন ও মার্শাল।

পুরো শিশি গলাধঃকরণের আগ পর্যন্ত তিনি তার বিশ্বাসে স্থির ছিলেন। তার স্থির বিশ্বাস আরো ইস্পাত কঠিন হলো, যখন কিছুদিনের ভেতরেই তিনি গ্যাস্ট্রাইটিস এর সাথে সাথে এক্লোরহাইড্রিয়া, ক্রমাগত বমিভাব ইত্যাদি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হলেন। পুরোপুরি সুপারহিরো মুভি স্টাইলে নিজের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করায় নোবেল প্রাইজ কমিটি তার বীরত্বে চমৎকৃত হয়ে ডঃ মার্শাল এবং ডঃ ওয়ারেনকে ২০০৫ সালে নগদে হাতে নোবেল প্রাইজ ধরিয়ে দেয়।



“হ্যাঁ জানু, এইমাত্র নোবেল প্রাইজটা পেলাম। তারা বিশাল পার্টি দিয়েছে আমার জন্যে। কিন্তু পেটের সমস্যার কারণে বেশি কিছু খেতে পারি নাই।”

৩। ওয়ার্নার ফর্সম্যান এর হৃদপিণ্ড নিয়ে গবেষণা

১৯২৯ সালে ওয়ার্নার ফর্সম্যান ছিলেন একজন শিক্ষানবীশ সার্জন, যিনি একইসাথে হৃদপিণ্ডের ব্যাপারে জানতেও ব্যাপক আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু অন্যান্য মেনি-বিড়াল টাইপ সার্জনদের মত বই-পত্তর না ঘেঁটে, কিংবা মৃত প্রাণীর শরীর না হাতড়িয়ে তিনি আরো ক্লাসিক মেথডে চলে গেলেন। একটা বাচ্চা যেমন নতুন কিছু দেখলে গুঁতো দিয়ে সেটা সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করে, তিনিও তাই করলেন………এবং সরাসরি নিজের উপর!

অন্য কোনো এক্সপার্টের তত্ত্বাবধান, উপদেশ কিংবা আত্ম-রক্ষা জাতীয় কোন ব্যাকআপ প্ল্যান ছাড়াই তিনি সরাসরি নিজের হাত কেটে ছিদ্র করে তাতে ক্যাথেটার টিউব ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর সেটা ঠেলতে ঠেলতে পুরো হাত পেরিয়ে হৃদপিণ্ড পর্যন্ত নিয়ে পৌঁছালেন।



একজন মহিলা নার্স তাকে একাজে সহায়তা করেছিলো, কারণ প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি তার হাতে তুলে দেবার জন্যে কাউকে তার দরকার ছিলো। আমরা ধারণা করছি- অপারেশনের শুরুতেই তিনি ভয়ে কাঁপতে থাকা নার্সকে অপারেশন টেবিলে শোয়ালেন। তারপর তাকে একটা পেইন-কিলার ট্যাবলেট খাওয়ালেন। অতঃপর যখন নার্স প্রস্তুত হলো, তখন তিনি অপারেশন টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে নিজের হাতে নিজেই অপারেশন করা শুরু করলেন। ফাঁকে ফাঁকে নার্স তাকে এটা সেটা এগিয়ে দিতে লাগলো যথাসম্ভব তার দিকে না তাকানোর চেষ্টা করে।

জ্বি হ্যাঁ! এই ব্যক্তি পুরো দুই ফুট লম্বা টিউব নিজের হাতের দক্ষতায় নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়েছিলেন ‘ডেভিড কপারফিল্ড’ নামক হাত সাফাইয়ের জাদুকরের জন্মের ২৭ বছর আগেই।

যাই হোক, তারপর তিনি তার হৃদপিণ্ড হতে বেয়ে হাতের বাহু পর্যন্ত বিস্তৃত সেই প্রাইস ট্যাগের মত ঝুলতে থাকা ক্যাথেটার টিউব নিয়ে হেঁটে বেড়াতে লাগলেন। সম্ভবত সবাইকে দেখাতে লাগলেন তার হাতের কারিশমা। যখন আরেকজন ডাক্তার তাকে জোর করে বসিয়ে তার শরীরের ভেতর থেকে ক্যাথেটার টেনে বের করার চেষ্টা করলো, তখন ওয়ার্নার হাঁটুতে কিক মেরে তাকে দূরে সরিয়ে দিলেন। হাত দিয়ে ঘুষি মারতে পারেননি কারণ সম্ভবত তার হাতগুলো ঐসময় ক্যাথেটার টিউবে জ্যাম হয়ে ছিলো।
"আরে! হৃদপিন্ডে এটা কী দেখা যায়? প্রাইসট্যাগ? প্রাইসট্যাগ বুকে ঝুলিয়ে ঘুরে নাকি কেউ?"

“আরে! হৃদপিণ্ডে এটা কী দেখা যায়? প্রাইসট্যাগ? প্রাইসট্যাগ বুকে ঝুলিয়ে ঘুরে নাকি কেউ?”

এই ঘটনার পর ওয়ার্নারকে ঐ হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত করা হয়, কারণ তার এই বীরত্ব অন্যেরা ঠিক হজম করতে পারছিলো না। যদিও এই ঘটনার ২৭ বছর পরে, ১৯৫৬ সালে তিনি ‘কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন’-এর প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের জন্যে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

২। এলবার্ট হফম্যানের এলএসডি ড্রাগ নিয়ে গবেষণা

ডঃ এলবার্ট হফম্যান ১৯৩৮ সালে ‘লাইসের্জিক এসিড ডাই-ইথালএমাইড-২৫’ আবিষ্কার করেন। এর ৫ বছর পরে দুর্ঘটনাবশত এই ড্রাগের কিছুটা চামড়ার মাধ্যমে তার শরীরে প্রবেশ করে। ড্রাগের বিষক্রিয়ায় তিনি আবোল-তাবোল জিনিস চোখের সামনে দেখতে শুরু করেন। দুই ঘণ্টা পরে হুঁশ হলে তার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিলো, “অসাম মামা! আমার এই জিনিস আরো চাই”।

তাই তিনি আর দেরি করলেন না। তিন দিন বাদে ২৫০ মাইক্রোগ্রাম (বর্তমানে যেটা সাধারণ ডোজের চেয়ে ১০ গুণ বেশি হিসাবে গণ্য) এলএসডি আবার শরীরে প্রবেশ করালেন। পরবর্তীতে তিনি স্বীকার করেছিলেন তার হিসাবে ভুল হয়েছিলো। আরো কম ডোজ নেয়া দরকার ছিলো। কারণ ঐ ডোজ নেয়ার পর বাকি পুরোদিন তিনি কী করেছিলেন পরিষ্কার মনে নেই। তার মুখ দিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বের হচ্ছিলো না। তিনি শুধু কানে ভৌতিক শব্দই শুনছিলেন না- সেই শব্দ চোখে পরিষ্কার দেখছিলেনও! প্রেতাত্মারা তাকে ঘরের এমাথা-ওমাথা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলো। ঘরের ফার্নিচারগুলো সব তাকে মেরে ফেলতে চাইছিলো। এবং সর্বোপরি তিনি চোখের সামনে জীবনের সেরা আতশবাজির খেলা দেখতে পাচ্ছিলেন।



পরদিন তিনি তাই সিদ্ধান্ত নিলেন এই জিনিসের কথা পুরো বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। বাকী জীবন তিনি তাই এলএসডির চমৎকার সব গুণের কথা প্রচার করে যান। পরবর্তীতে অবশ্য পাঁড় নেশাখোরদের কারণে পুরো জিনিসটাই নিষিদ্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাসী এই ড্রাগের চমৎকারিত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। (সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ- এলএসডি আসলেই মারাত্মক ক্ষতিকর ড্রাগ)!

ডঃ হফম্যানের এই উদ্ভাবিত বস্তু দর্শন, শিল্পকলার পাশাপাশি বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যাপক অবদান রেখেছিলো। বলা হয়ে থাকে- প্রফেসর ক্রিক, যিনি ডিএনএ এর গঠন আবিষ্কার করার কারণে ইতিহাসে বিখ্যাত, স্বীকার করেছিলেন নাকি যে এলএসডি না হলে তিনি কখনোই ডিএনএর গঠন আবিষ্কার করতে সক্ষম হতেন না। এটা কতটুকু সত্যি, আর কতটুকু মিথ- তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু সেই সময় “একটা সিঁড়ি প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে উপরে শূন্যে উঠে গেছে, আর তার প্রত্যেকটা ধাপে মানুষের জীবনের তথ্যসমূহ রাসায়নিক ভাবে কোডিং করা আছে”- এইরকম একটা বস্তু চোখের সামনে দেখতে হলে এলএসডির যে কোনো বিকল্প নেই, সেটা পাগলেও বোঝে!

১। জন পল স্ট্যাপ (মানব বুলেট)

যেখানে মুভির তথাকথিত হিরোরা গাছের ডালে আটকে পড়া বেড়াল, বিল্ডিং এর উপর আটকে পড়া মানুষজন বাঁচাতে ব্যস্ত; সেখানে জন পল স্ট্যাপ যুদ্ধ বিমানের পাইলটদের দিকে তাকালেন আর ভাবলেন, “আহারে বেচারারা, এদের জন্য আমার কিছু করা উচিত”।

তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধে ফ্লাইট সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ শেষ হলে পরে বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষায় ভলান্টিয়ার হিসেবে আত্ম-নিয়োগ করেন। পরীক্ষার বিষয়বস্তু ছিলো “মানবশরীরের উপর আকস্মিক মন্দনের প্রভাব”। অর্থাৎ প্রচণ্ড গতিতে ছুটতে থাকা একটা মানুষকে হঠাৎ থামিয়ে দেয়া হলে তার শরীরে কী কী প্রভাব পড়ে? তদুপরি মানুষের শরীর এই প্রচণ্ড গতি থেকে হঠাৎ স্থির হতে গেলে সর্বোচ্চ কত সীমার ধাক্কা সহ্য করতে পারে? বলাই বাহুল্য, এখানে এই মানব শরীরটা হলো জন পলের শরীর।



তার এই পরীক্ষায় একসাথে চারটা রকেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছিলো এবং সর্বমোট ৬০০০ পাউন্ডের (জ্বি হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন) ধাক্কা তার শরীরের উপর দিয়ে গিয়েছিলো। এর আগে ধারণা করা হতো মানব শরীর সর্বোচ্চ ১৮জি (এখানে G= মহাকর্ষীয় ত্বরণ। 18G হচ্ছে G এর মানের আঠারো গুণ) সমপরিমাণ মন্দনের ধাক্কা সহ্য করতে পারে। কিন্তু জন পল সেটা নিয়ে গেলেন ৩৫জি-তে!

তিনি হয়ে গেলেন ইতিহাসের দ্রুততম মানব। তার গতি ছিলো প্রতি ঘণ্টায় ৬৩২ মাইল। অর্থাৎ বুলেটের গতির থেকেও বেশী!

১৯৫৪ সালে ঘণ্টায় ১২০ মাইল গতিতে ছোটার পর তাকে পুরোপুরি স্থির করানো হয় মাত্র ১.৪ সেকেন্ডে শুধু এটা দেখার জন্যে যে তিনি টিকতে পারেন কিনা! হ্যাঁ তিনি টিকে গিয়েছিলেন। যদিও এরপর দুই দিন তিনি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে ছিলেন। কারণ তার চোখ দুটো নিজের অক্ষিকোটরের হাড়ে বাড়ি খেয়েছিলো। ও আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি। দুই দিন অন্ধ থাকার পাশাপাশি তার মেরুদণ্ড, বাহু, কবজি ইত্যাদি ভেঙ্গে গিয়েছিলো। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো তিনি স্থায়ীভাবে ‘হার্নিয়া’র রোগী হয়ে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর তার প্রতিক্রিয়া কী ছিলো? তিনি আরো বড় সাইজের রকেট বানিয়ে তাতে চড়েছিলেন।

জন পল ৮৯ বছর বেঁচে ছিলেন। তার এই পরীক্ষাগুলো আধুনিক বিমান এবং রকেট তৈরিতে ব্যাপক উপকারে এসেছিলো। তার এসব গবেষণার ফলাফল ব্যবহার করেই এখন মানুষেরা মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। যারা ভাবছেন- “কী করলাম গেবনে?”, তাদের কাটা ঘায়ে আরেকটু নুনের ছিটা দিতে বলি- এইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি তিনি অবসরে প্রাইভেট ক্লিনিক চালাতেন। সেখানে রোগী দেখার পাশাপাশি তিনি ‘ইমার্জেন্সিহাউজ কল’ রিসিভ করতেন এবং সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির (আক্ষরিক অর্থেই) পর সেই ভাঙ্গা-চোরা হাড়গোড় নিয়ে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীদের বাড়িতে উপস্থিত হতেন। প্রায় প্রত্যেক রাত্রেই!

এর দ্বারা আরো একবার প্রমাণিত হয়- বিজ্ঞান শুধু বদ্ধ রূমে বসে বসে সূত্র আবিষ্কার করা নয়। বরং সেসব সূত্র ঠিকমতো কাজ করে কিনা, সেটা বুঝতে অ্যাকশন মুভিস্টারদের মতো স্টান্টবাজিতেও নেমে পড়া!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×