somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

★★উর্ধতন কর্মকর্তার পাইপজীবন: উপন্যাস- পর্ব এক★★

১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
মধ্য আষাঢ় । ঝুম বৃষ্টি। বাইরে আঁধার। যদিও শিহাব যেখানে এখন শুয়ে আছে, সেটার দুই প্রান্ত ছালার চট দিয়ে ঘেরা, তাই ভেতরে সবসময়েই অন্ধকার থাকে। তারপরও ভেতরের অন্ধকার ছাপিয়েও কিছুটা আলো থেকেই যায়। আজ বাইরে আকাশের মন খারাপ। তাই আঁধারের মাঝে আরো কিছুটা আঁধারে ঢেকে আছে এক অন্ধকারের মানুষ, যার ভেতরটা আলোয় ভরা।

এখন দিন-রাত্রির কোনো প্রভেদ নাই। সবকিছু-ই একইরকম। কালো। রেললাইন সংলগ্ন এই পাইপজীবন তেমন খারাপ লাগছে না ওর কাছে। এখানে কোনো কাজ নেই। অখন্ড অবসর। সময়টা কাটে তাই চিন্তায় চিন্তায়। তবে এই চিন্তা কিছুদিন আগের চিন্তার মত না। তখন চিন্তার সাথে সাথে থাকত কিছু দীর্ঘশ্বাস, হতাশা, একটু আনন্দ। এখন চিন্তার সাথে শ্রেফ প্রশান্তি বিরাজ করে। আসলে কাছের সম্পর্কগুলো থেকে সরে আসায়, কাউকে নিয়ে মোটেও চিন্তা করতে হয় না শিহাবকে। যখন একজন মানুষ ছিল, তখন সবাইকে নিয়ে চিন্তা ছিল।

'এখন কি তবে তুমি মানুষ নও?'
নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একটু ভাবে। ইদানিং নিজেকে নিয়েই চিন্তা-ভাবনায় মশগুল শিহাব। মানুষ কে? এর কি কোনো সর্বজন স্বীকৃত নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা আছে? না থাকারই কথা।
যখন মানুষ ছিল তখন সবাইকে নিয়ে চিন্তা করত। এই সবাই কি মানুষ ছিল?
প্রশ্নের উত্তর আরো প্রশ্ন নিয়ে আসে.. সেগুলো আরো। এভাবে মুহুর্তগুলি কেটে যায় দুপুরের খাবার নিয়ে যখন পাশের 'পাইপের' ঝর্ণা ছালার ওপারে গলাখাকারি দিয়ে বলে,
'মামু, জাইগা আছ? তোমার লাগি খানা লিয়ে আইছি।'

ঝর্ণা শিহাবের দখল করা পাইপটির পাশের পাইপ-পরিবারের সব চেয়ে ছোট সদস্য। পঙ্গু ভিক্ষুক আজমত আলীর দুই মেয়ে। লিলি আর ঝর্ণা। লিলি-ঝর্ণার মা বছর পাঁচেক আগে মারা গেছে। সেই থেকে ওরা এই পাইপে পাইপে জীবন কাটাচ্ছে। তবে ওদের জীবনের শুরুটা ঠিক এমন ছিল না। গ্রামের বাড়িতে সবাই মোটামুটি নিশ্চিন্ত ছিল। আজমত আলী তখন সুস্থ। নিজের জমিজমা চাষ করে দিনগুলি ভাল-ই কেটে যেত। নদী-ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এই পরিবারটি আরো কিছু পরিবারের মত পথে বসে গেল। উপায় না দেখে আজমত আলী ঢাকা এলো। শুরু হল রিক্সাওয়ালা আজমত আলীর বস্তিজীবন। ঝর্ণার মা ছালেহা ঠিকা ঝির কাজ নেয় মানুষের বাসায়। নতুন স্বপ্ন চোখে নিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে এই পরিবারটি।

একদিন এক সড়ক দুর্ঘটনায় আজমত আলীর রিক্সাটি দুমরে মুচরে গেল। শরীরের নিচের অঙ্গ থেতলে যায়। একটা পা কেটে বাদ দিলে উপহার স্বরূপ ক্রাচ পায় আজমত আলী। বিধাতার উপহার?
তখন পুরো পরিবারটির দায়িত্ব ছালেহা বেগমের ওপর পড়ে। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সে। শ্রেফ স্বামী ও দুই মেয়ের জন্য দু'বেলা খাবার জোগাড়ের জন্য। বড় মেয়ে লিলি মায়ের সাথে কাজে যায়। কিন্তু মানুষের অমানুষ সুলভ আচরণে সে বাসায় কাজ করতে পারে না। নারী লোভী বেশ কিছু জানোয়ার আমাদের সমাজে মানুষের বেশে ঘুরে বেড়ায়। এরাই লিলিদেরকে খেয়ে-পরে বাচার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।

একদিন সকালবেলা ছালেহা বেগম কাজে যায় না। আজমত আলী ডাকতে গিয়ে দেখে, আর কখনো সে কাজে যাবে না। বিধাতার থেকে দ্বিতীয় পুরষ্কার লাভ করে আজমত আলী। ভিক্ষুক জীবনের শুরুটা সেদিন থেকেই। এবার বাপের সাথে ভিক্ষুকের সহকারী হিসেবে লিলি কাজে নামে। ঝর্ণা বাসায় থাকে। কিছুদিন বস্তিতে থাকলেও পরে এই পরিবারটি পাইপে শিফট হয়ে আসে। বাপ আর বড় বোন সারাদিন ভিক্ষা করে যা নিয়ে আসে, ঝর্ণা সেগুলো রান্না করে। এ ছাড়াও সে টুকটাক কাজ করে। কাজের তো আর শেষ নেই কোনো পরিবারে। হোক না সেটা পাইপ-পরিবার।

এই হল এক নজরে ভিক্ষুক আজমত আলীর পরিবারের গল্প। এরকম অনেকগুলি পরিবার এই রেললাইন সংলগ্ন পাইপে বাস করছে। এদের সবার-ই যার যার মত করে আলাদা আলাদা গল্প রয়েছে। একজন উর্ধতন কর্মকর্তা শিহাব, এদের মত না হয়েও এদের সাথে থাকছে। পঙ্গু ভিক্ষুক আজমত আলীর একটা পাইপ ওর জন্য ছেড়ে দিয়েছে সে। কেন দিলো কিংবা শিহাব এখানে কেন, সে আরেক গল্প। ওটাও আমরা জানব, তবে যে শিহাবকে আশ্রয় দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করছে, তাঁর অনুভবেই একজন উর্ধতন কর্মকর্তার গল্পটি আমরা শুনব।

#উপন্যাসঃ_উর্ধতন_কর্মকর্তার_পাইপজীবন
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×