পাতলামির বিষদ বিবরণ:
হাকীম আল-মীযান।
১। দায় স্বীকার পর্ব:
সুপ্রিয় পাঠক, লেখক এবং ব্লগার ভাই-বোনদের মধ্যে যাহারা ‘পাতলামি’ শব্দের শানে-নযূল জানিতে অধীর আগ্রহে দিন অতিবাহিত করিতেছেন, তাহাদের জন্য আমি প্রথমে উক্ত শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ আমার মনের মতো করে আপনাদের জন্য সাজাইয়া দিলাম। যাহা নিম্নে প্রদত্ত হইলো: পাতল + আমি = পাতলামি। পাতল মানে হইলো অতিব হালকা, ইংরেজিতে যাহাকে আমরা Thin বলিয়া থাকি। আর আমিকে তো কাহারো চিনিতে বাকি আছে বলিয়া মনে হয় না। তবুও ইংরেজিতে Self. আপনারাও জানেন।
এই Self এর মাঝে যখন জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে মানসিক ভাবে Thin ভাবটি চলিয়া আসে একমাত্র তখনই আমরা তাহাকে পাতলামি বলিয়া অবিহিত করিতে পারি। তদুপরি; বিস্তারিত ভাবে জানিবার জন্য নিয়মিত “মটু-পাতলু” নামক কার্টুন সিরিয়ালটি দেখিতে থাকিলে পাতলামির শানে-নযূল বোধ হয়- অতি সহজে বুঝিয়া ফেলা সম্ভব হইবে। শুধু তাই নয় পাতলামির সাথে সাথে মোটামির কার্যকলাপগুলিও বুঝিতে আর বাকি থাকিবে না।
আমাদের সময়ে আমরা যে কার্টুনগুলি দেখিতাম; তাহাতে বাস্তবতার সাথে মিল থাকিতো। কিন্তু এখন দেখা যায়; একটু কিছুর সাথে সামান্য একটু ধাক্কা খাইয়া কোন রূপ বাহন ছাড়া আকাশে উড়িতে উড়িতে প্রায় চন্দ্র ধরিবার উপক্রম হইতে থাকে। এরপর হঠাৎ টের পাইয়া হাত-পা নাড়িতে নাড়িতে নিচের দিকে নামিয়া আসিতে থাকে এবং শেষাবধি মাটিতে বসিয়া পড়িতে না পড়িতেই আবার দৌড়াইতে থাকে। এই ধরণের কার্টুনকে আমরা কার্টুন না বলিয়া পাতুন বলিলেই হয়তো; নামকরণের স্বাথর্কতা আদায় হইবে। আগে দেখিতাম; বন্ধুর জন্য বন্ধু জীবন দিয়া দিতে প্রস্তুত থাকিতেন। ইহাকে বলা যাইতো আসল বন্ধুত্ব। এখন দেখি বিপরীত; কোন বন্ধু সহসা কোন বিপদে পড়িলে গভীর বন্ধুত্বও হালকামিতে চলিয়া যাওয়ার ফলে বন্ধুত্ব রূপ নেয় ফন্দুত্বতে।
এতোক্ষণ একটু রহস্য করিতেছিলাম বলিয়া কেহ মনে কষ্ট পাইলে আমিও কিন্তু অনেক কষ্ট পাইবো তাহা আগে থেকেই বলিয়া রাখিলাম। যদিও আমি কষ্ট পাইলে কাহারো কিছু করার নাই। কিন্তু অন্য কেহ কষ্ট পাইলে আমি তাহা সহ্য করিতে পারিবো বলিয়া মনে হয় না। এমনিতে আমি নিজেই একটু মন পাতলা লোক। তবে পাতলামিতে তেমন একটা অভ্যস্থ নই বলিয়া এই সম্পর্কে বিশেষ কিছু লিখিতে বারোটা বাজিয়া ইন্টারন্যাশনাল টাইম অনুযায়ী তেরোটার দিকে চলিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাই; পাতলামির কোন উদাহরণ দিয়া পাতলামিকে আর বিশেষ করে স্পষ্ট তথা নাড়াচাড়া দিতে চাহিতেছিনা। দু’চারজন বন্ধুর মাঝে কোনো পাগল বন্ধুকে সাঁকো নাড়াসনে-এমন বাক্যটি স্মরণ করাইয়া না দেওয়াই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ। কথায় আছে না-বুদ্ধিমানেরা অল্প কথায় বুঝে। কিন্তু বুদ্ধিমান আর হইতে পারিলাম কৈ?
এখন চলিয়া আসি আসল কথায়; আমরা যখন মূলত: ১৯৮৬ এর দিকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাহিত্য সংকলনে বিভিন্ন লেখা-লেখি শুরু করি; তখন থেকে আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো- সৃজনশীলতা। কপি-পেষ্ট তো দূরের কথা সম্পাদকের পছন্দ এবং সম্পাদনা ব্যতীত কোন লেখা সরাসরি প্রকাশিত হবার কোন সুযোগ ছিলো না। একটি লেখায় সৃজনশীলতা এবং সাহিত্যমান বজায় না থাকিলে তা আর সূর্য়ের মুখ দেখতে পেতো না।
এখন ডিজিটালাইষ্ট যুগ। ইন্টারনেটের বদৌলতে ফেইজবুক এবং বিভিন্ন ব্লগে যে কোন মানুষ সাইন আপের মাধ্যমে একটা একাউন্ট করলেই মনের যে কোন ভাব প্রকাশের জন্য লেখা/মন্তব্য থেকে শুরু করে ছবি এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লিপসমূহ মূহুর্তের মাঝে সংযোজন করে নিজ দায়িত্বে পোষ্ট(প্রকাশ)করতে পারে। এ জন্য আমরা কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ওয়েব পেইজ এবং বিভিন্ন ব্লগ সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সবার কাছে সত্যি সত্যি কৃতজ্ঞ না হয়ে পারছি না।
১৯৮৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ের পার্থক্য ৩০ বছর। উপরোক্ত দু’টি অনুচ্ছেদ পড়ে বোধ হয় এতোক্ষণে কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছেন। আমাদের সময়টা ছিলো কত কঠিন আর এখন কতো সহজ। আমরা বিপরীত শব্দ পড়েছি ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর এখন কিন্ডারগার্টেনগুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকেই তা রপ্ত করা শুরু করে। তদ্রুপ; বর্তমানে ইন্টারনেটে তথা ব্লগে যে কোন লেখা/মন্তব্য অতি সহজে স্বল্প সময়ে প্রকাশের সুযোগ প্রাপ্তির ফলে কেহ কেহ সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য দিক: সৃজনশীলতা এবং প্রয়োজনীয় ভদ্রতা পরিহার করে আমাদের ছোট বাবুর মতো ঘরের দেয়ালে রঙ পেন্সিল দিয়ে যখন যা ইচ্ছা তাই লিখে/মন্তব্য করে মূহুর্তেই মধ্যেই পোষ্ট করে দেয়- মজা করে এবং মজা পায়। বিপরীতে বলতে পারি; লিখতে লিখতে লেখক আর গাইতে গাইতে গায়ক। সে জন্য আমি কাহাকেও লেখার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে চাইছি না। বরং যা চাইছি তা হলো; লেখা লিখেন, লিখেন এবং লিখেন। ঠিক তেমনি মন্তব্য করেন, করেন এবং করেন। তবে তা গঠনমূলক হওয়া, সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা আবশ্যক। সৃজনশীলতা থাকা বাঞ্ছনীয়। যা দ্বারা মানুষ, সমাজ, দেশ ও জাতি এমনকি সমগ্র বিশ্ব উপকৃত হবে।
শেষাবধি, একটা কথা না বলে পারছিনা; সাহিত্য ক্ষেত্রে সমালোচনা থাকবেই। সাহিত্য সমালোচনাও সাহিত্যে অন্যতম একটি শাখা। আমার(স্বল্পতম) সাহিত্য জীবনে আমার অনেক লেখা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করেছেন। এমনকি আমাকে নিয়েও বিভিন্ন কবিতা রচনা করেছেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে। তাতে আমার অনেক উপকারই হয়েছে। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন বই-পুস্তক প্রকাশ করতে গেলে, অভিজ্ঞদের অভিমত নেই। বই প্রকাশ হলে; বই সম্পর্কে সমালোচনার জন্য সাহিত্য সমালোচকদের হাতে দু’চারটি কপি উপহারও দেই। যাতে করে তিনি আমার প্রকাশিত বই সম্পর্কে ভালো–মন্দ দিকগুলি সমালোচনা করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে তুলে ধরতে পারেন। এতে করে একদিকে প্রকাশিত বই এর একটা ভালো প্রচার হয় অন্যদিকে আমার লেখার মান উন্নয়নে করণীয় বিষয়গুলিও আমার কাছে ধরা পড়ে। বলা বাহুল্য, সাহিত্যে সমলোচনা দীর্ঘদিন যাবৎ সাহিত্য ক্ষেত্রে চলে আসছে।
যা বলছিলাম; সাহিত্য ক্ষেত্রে সমালোচনা/মন্তব্য তথা মানুষের মতামতকে প্রধান্য দেয়াও একজন লেখকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বিপরীতে একজন মন্তব্যকারী হিসাবে স্বীয় মতামতকেও সৃজনশীল ভাবেই উপস্থাপন করা প্রয়োজন। যখন তখন যা ইচ্ছা তাই অপ্রসংগিক ভাবে বিব্রতকর মন্তব্য/প্রশ্ন করে একজন লেখককে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করাও গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি পরিপন্থী। আসুন! আমরা প্রত্যেকেই আজ থেকে নিজেও সুন্দর ভাবে লিখি এবং অপরের লেখার বিষয়ে আমাদের মতামতকে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করি। কোন ভাবেই পাতলামি তথা হালকামির আশ্রয় না নিয়ে বরং সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাই। বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলি।
২।কৃতজ্ঞতা স্বীকার পর্ব:
যারা আমাকে বেঁচে থাকতেও মরোণোত্তর সাহিত্য পুরষ্কার দিতে চান, তাদের ধন্যবাদসহ একটি কবিতা উপহার না দিয়ে পারলাম না। কিন্তু কষ্ট লেগেছিলো তখন, যখন আমি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সুসাহিত্যিক জনাব মুজাফ্ফর আলী তালুকদার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার মাসেক খানেক আগে সামহোয়্যার ইন ব্লগে তাকে নিয়ে আমার একটি পোষ্টে কোনরূপ রেসপন্স না পাওয়ায়। যাক সে কথা। যা চলে গেছে তাতে ব্যদনার কথাই প্রকাশ পাবে। ফিরে আমি কবিতায়।
কবিতার শিরোনাম ছিলো: প্রকাশ-বিকাশ। ১৯৯০ ইং এর সেপ্টেম্বর মাসে “মানুষ” নামক একটি সংকলনে- সোহারাব উদ্দিন সরকার এর সম্পাদনায় ‘মানুষ’ নামক একটি সাহিত্য সংকলনে প্রকাশিত হয়। সোহরাব উদ্দিন সরকার ও কবি ওয়াহেদুজ্জমান মতি মিলে ঐ সময়ে যথাসম্ভব “সাপ্তাহিক খামোশ” নামক একটা পত্রিকা চালাতেন। ঐ পত্রিকার প্রিন্টিং প্রেস থেকেই সংকলনটি বের হয়েছিলো-টাংগাইল জেলা শহর থেকে। কবিতাটি ঐ সময়ে আমার নিজের কাছেই খুব ভালো লেগেছিলো। আপনাদের জন্য নিচে পুন:প্রকাশ করলাম। কেমন লাগলো জানাবেন। যদিও বর্তমানে আমার চিন্তা-চেতনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এটাই স্বাভাবিক। তবুও কবিতাটি হবুহু তুলে দিলাম- জীবনবাদী মরণোত্তর পুরষ্কারদাতাদের জ্ঞাতার্থে। হয়তো; পুরষ্কারটা পেয়েও যেতে পারি।
আসলে, এদেশের লেখক-কবিরা অনেক কষ্ট করে সাহিত্য চর্চা করে। বিষয়টা আমার মতে চির বাস্তব সত্য। এ বাস্তবতার সাথে আমিও জড়িত।শুধু তাই নয়, লেখকদের সাথে লেখকদের সংসারে অধীনস্থ সদস্যগণও যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েই লেখকদের লেখার সুযোগটি করে দিয়ে থাকেন। এজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রকৃত লেখক, কবি, সাহিত্যিক পরিবারের সদস্যদের কাছেও কৃতজ্ঞতার ডোরে আবদ্ধ। অন্যদিকে মরণোত্তর পুরষ্কারকেও খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই, এটাও একটা সম্মান বটে। কিন্তু একথা সত্য যে, একজন লেখক বেঁচে থাকা অবস্থায়- মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য একটু সম্মানও অনেক বড় প্রেরণা।
প্রকাশ-বিকাশ
হাকীম আল-মীযান
এই পৃথিবীতে মানুষ
খেলা ঘর বাঁধে আবার তা ভাংগে,
ভাংগা গড়ার মাঝেই এখানে
প্রতিটি মানুষেরই অতি স্বাভাবিক আত্মপ্রকাশ।
আমি গত কয়েক শতক অবধি
প্রায়শ:ই যে হিসেবটা করে আসছিলাম,
গড়পড়তায় তার যোগফল এসে দাঁড়ালো
একটি মাত্র শূণ্য।
এই পৃথিবীতে মানুষ শূণ্য হাতে আসে
আবার শূণ্যে ফিরে যায়,
অত:পর এক এক করে ক্রমান্বয়ে-
বিকশিত হতে থাকে তার-
ভূতপূর্ব জীবনের চিরন্তন ইতিহাস।
আজকের এই পোষ্টটি:
২২-০১-২০১৬ইং
লিখতে বসেছি: সকাল ১০টায় এবং শেষ করেছি বেলা: ১.০০টায়।
পুনরায় সম্পাদনা করেছি: ২৪-০১-২০১৬ইং রাত্রি ১১টা থেকে ১২.০০টা পর্যন্ত।
পোষ্ট করার জন্য অাজকে সামহোয়্যাের বসেছি: ভোর ৬টা ৪৫ থকে ৭ টা ৩৫ পর্যন্ত।
পোষ্টটি লেখার প্রেরণা:
আগের লেখা:
' আমার নতুন-পুরাতন লেখা-লেখিগুলো সামহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশ করা সম্পর্কে জ্ঞাতব্য: এর বিভিন্ন মন্তব্যসমূহ।
http://www.somewhereinblog.net/blog/almizanblog/30101739
অশেষ অশেষ ধন্যবাদ: মন্তব্যকারী লেখক, ব্লগারদের।
ধন্যবাদান্তে: হাকীম আল-মীযান। ২৬-০১-২০১৬ইং।