somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকার-৪..

১৬ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অতীতের কুয়াশা ভেদ করে ভেসে উঠলো কতো আধভোলা মুখ.. কল্পনায় শুনতে পেলাম সেইসব কন্ঠস্বর যা অনেক দিন আগেই চিরকালের মতো নিরব হয়ে গেছে.. আর সেই সব পরিচিত গান যা এখন আর কেউ গায় না.. আমার জাগ্রত স্বপ্ন যখন ধীরে ধীরে করুণ থেকে করুণতর সূরে নেমে এলো.. তখন বাইরের ঝড়ের হাহাকার পরিনত হলো মূদু বিলাপে.. জানালার কাঁচের উপরে বৃষ্টির ক্রুদ্ধ আঘাত অস্ফুট মৃদু শব্দে পরিণত হলো.. রাস্তার সব শব্দ একে একে থেমে এলো এবং সর্বশেষ বিলম্বিত পথিকের পদশব্দও দূর হতে দূরে মিলিয়ে গেল.. কোথাও একটি শব্দও আর রইলোনা..

একটা ভয়ংকর নির্জনতাবোধ যেন আমাকে জড়িয়ে ধরেছে.. ঘরের মধ্যে চলাফেরা করছি পা টিপে টিপে.. যা কিছু করছি সব চুপি চুপি.. যেন আমার চারপাশে এমন সব শত্রুরা ঘুমিয়ে আছে যাদের ঘুম ভাঙ্গলে মারাত্নক বিপদ হবে..

রাত্রিটার যেন আর শেষ নেই.. আমি চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম.. নিস্তব্ধ, অন্ধকার রাত্রি ঝিম ঝিম করতে করতে আরো নিঝুম অন্ধকার চিলের ডানার মতো একখানা কালো কুৎসিত কম্বল আস্তে আস্তে টেনে মুড়ে দিচ্ছে.. পৃথিবীর গা থেকে একে একে সব আলোকিতো জিনিস যেন মুছে আসছে..

ঘুম ভেঙ্গে যায়.. জেগে দেখি শরীর আমার কাঁপছে প্রচন্ড.. অন্ধকারে সারা শরীর ঘামে ভেজা.. গলা শুকিয়ে কাঠ.. আর ঘুম আসে না.. সেই নিদ্রাহীন প্রহরগুলোতে জঘন্য অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে অতীতের সেই ঘটনা আবার মনে পড়ে যায়.. যা অনেকদিন আগেই ঘটেছিল.. কেন মনে পড়লো আবার?.. ভুলতে পারলাম না তাহলে..

অন্ধকারে বসে আছি.. এত অন্ধকার.. যে নাকের ডগায় মেলে ধরা হাতের অস্তিত্বও যেখানে দেখতে পাওয়া যায়না.. চারদিক ঘিরে থাকা পুরু দেয়ালের মাঝে এত শুণ্যতা যে আর্তচিৎকার, হাহাকার রোজ ব্যাঙ্গ করে প্রতিধ্বনি তুলে তুলে মিলিয়ে যায় একটা সময়.. এই আঁধারেই আমি হাতড়ে চলি রোজ একটুখানি আলোর আশায়.. বাতাসের আশায়.. চার দেয়ালের প্রতিটা ইঞ্চিতে হাত বুলাতে থাকি..এ ক চিলতে ফোঁকড়ের আশায়.. এভাবে এক সময় দম বন্ধ হতে থাকে আমার.. তবু পাগলের মতো উদ্দেশ্যহীনভাবে হাতড়ে চলি.. যদি পাই একটু খানি ফোকড়.. একটু খানি শ্বাস.. একটু খানি প্রাণ.. এক বিন্দু আলো..

তবু খুঁজে পাইনা আমি.. খুঁজে তো পাইনা.. পানি থেকে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো ছটফট করতে থাকি একটু খানি শ্বাসের জন্য.. আলোর জন্য.. পাগলের মতো চিৎকার করে উঠি আমি.. আর তো পারিনা..পারছি না আমি.. এ দেয়াল ও দেয়ালে কপাল ঠুকে ঠুকে রক্ত ঝরে যায়.. এক বিন্দু আলোর আশায়.. একটুখানি ছোঁয়ার আশায়..

এক সময় সমস্ত আশা ছেড়ে হতাশায় নেতিয়ে পরে দেহ আমার.. চোখ ফেটে পানি ঝরার শক্তিও থাকেনা আর.. দু'চোখের নদীতো শুকিয়ে গেছে সেই কবেই..

হঠাৎ এক স্পর্শ..পবিত্র এক মায়াবি স্পর্শ.. বৈদ্যুতিক শক খাবার মতো ছিটকে উঠি.. এতো অসম্ভব.. না এতো সম্ভব না.. আমি কি ভুল দেখছি.. মায়াবি এক আলো.. তার চারিদিকে দারুন এক মায়াবি আলোর ছটা.. পবিত্র.. সুন্দর সে যে দারুন এক লাল মায়াবি আলো.. আমার দিকে হাত দুটি বাড়ানো.. চোখে, মুখে মৃদু পবিত্র হাসি.. আমি হাত দুটো ধরলাম.. সেও ধরলো.. অন্ধকার কুৎসিত জায়গাটা আলোয় আলোয় ভরে উঠলো.. পবিত্র আলোয়.. এতো আলোতো আগে কখনো ছিলোনা.. আলোইতো ছিলোনা.. পঁচে মরতে ছিলাম এই জঘন্য অন্ধকারে.. অন্ধকারে পঁচে মরা সে যে বড় জঘন্য লজ্জার ব্যাপার.. সে আসলো.. হাত দুটি আমার ধরলো.. আলোয় আলোয় ভরে গেলো চারিদিক.. সারাটা জীবনের জন্য..

অনেক বছর পরের কথা.. দুজন যুবক-যুবতী বসে আছে চুপচাপ কোন এক জায়গাতে.. হঠাৎ তাদের ভিতর থেকে একজন আরেক জনকে বলছে মৃদু স্বরে, মুখে এক দারুন তৃপ্তির হাসি নিয়ে.. 'এই তুমি কি জানো? আমার আব্বু না এখনো আমার আম্মুকে সোনামনি বলে ডাকে!'..

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১২
১৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×