মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় সিএনজি চালিত থ্রী হুইলার অটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা কাটছে না। রেজিস্ট্রেশন দেয়া নিয়ে শাসকদলীয় নেতাদের বাণিজ্যের কারণে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আর এ রিজেস্ট্রেশন বাণিজ্য চলছে গত ২ মাস ধরে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেডের 'স্লিপ' বিক্রির মাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়ার অনুমোদনসূচক প্রতিটি স্লিপ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। জেলার এক প্রভাবশালী নেতার অনুগতদের মাধ্যমে অজ্ঞাত (সাঙ্কেতিক) এক স্বার করা ওই স্লিপ নেয়ার পরেই কেবল সংশ্লিষ্ট অটোরিক্সার মালিককে বিআরটিএ থেকে অটোরিক্সার নতুন রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হচ্ছে। এমনকি স্লিপ না নিয়ে গেলে বিআরটিএ থেকে নতুন রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিভিন্ন ফি বাবদ নির্ধারিত টাকা সরকারী খাতে জমা দেয়ার ফরমও (ফলিও) দেয়া হচ্ছে না । এই স্লিপ বাণিজ্য বগুড়ায় এখন 'ওপেন সিক্রেট' বিষয় হিসেবে বিভিন্ন স্থানে সরব আলোচনার উৎস হয়ে উঠেছে। ।গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর জেলার আরটিসি'র (আঞ্চলিক সড়ক কমিটি) সভায় নতুন করে ৩শ' রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এই রেজিস্ট্রেশন বাণিজ্য শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে রেজিস্ট্রেশন বাণিজ্যকে সামনে রেখে আরটিসি সভার নতুন রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল অস্বচ্ছ। কারণ কাদের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হবে সেটি গোপন রাখা হয়। এই রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত স্লিপ বাণিজ্য শুরু হওয়ার পর ৬ মাস থেকে ১ বছর আগে যারা রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারী খাতে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়েছেন তারা অসহায় ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। কারণ স্লিপ' নেয়ার সার্মথ্য না থাকায় তারা রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাচ্ছেন না। এতে ওই সব মালিক তাদের অটোরিক্সা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। অপরদিকে বগুড়া বিআরটিএ'র সহকারী পরিচালক বলছেন মামলা হওয়ার পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়া বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, স্লিপের বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। কিন্তু স্লিপ নিয়ে তিনি কোন রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেননি। তবে তিনি স্বীকার করেন ৬ মাস থেকে ১ বছর আগেও অনেকে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলেও তারা রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাননি। অনেক আগে রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারী খাতে টাকা জমা দিয়েছেন এ ধরনের লোকজনের সংখ্যা ৫ শতাধিক হতে পারে।
সূত্রের অভিযোগ, প্রভাবশালী ওই আওয়ামী লীগ নেতার আস্থাভাজন নেতাদের মাধ্যমে স্লিপ বিক্রি চলে। সাদা কাগজের স্বার করা এবং হাতে লেখা সিরিয়াল নম্বরসহ এক একটি স্লিপ বিক্রি হতে থাকে ৩০/৪০ হাজার টাকায়। একটি ব্যবসায় সংগঠনের অফিস থেকেও অনেকে স্লিপ সংগ্রহ করেছেন বলে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা রয়েছে। এ অবস্থায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার অভিযোগে বগুড়ার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম লিটন ও সদর উপজেলার পালশা এলাকার আবু সাইদ বাদী মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়েছে বাদীরা অনেক আগে রেজিস্ট্রেশনের নির্ধরিত ফি জমা দিয়েও রেজিস্ট্রেশন পাননি। আর অনেকে কিছু আগে টাকা (ট্যাক্স, টোকেন ও ফিটনেস বাবদ) জমা দিয়েও রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়েছেন। মামলায় জেলা প্রশাসক, বিআরটিএ'র সহকারী পরিচালকসহ ৮ জনকে বিবাদী করা হয়। এদিকে বগুড়া বিআরটিএ'র সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, নতুন করে প্রায় ১শ'৩০টি অটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়েছে। মামলার কারণে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যা ঘটছে তা সকলেরই জানা, তবুও কেন আপনারা আমদের কাছ থেকে আবার জানতে এসেছেন!