somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Amiya r Ekdin

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অমিয়ার একদিন

উদাস হয়ে বসেছিল অমিয়া। বিগত কয়েকমাসে জীবনটা যেন ওলটপালট হয়ে গেল। অমিয়া আজ দিশেহারা । সুনন্দ সামন্তের সঙ্গে সখ্যতা তো আজকের নয়, সেই যে যবে সুনন্দের প্রথমা স্ত্রী আত্মঘাতী হল, গোটা অফিস, আত্মীয় পরিজন সকলে বর্জন করেছিল ওকে। অপ্রয়োজনে কেউ বার্তালাপ ও করত না। শুধু অমিয়া ছিল, সেই গভীর ডিপ্রেসনের দিনগুলিতে ওরা ছিল নিছক বন্ধু। অফিস অন্তে নির্ভেজাল আড্ডা,কখনও সাথে ঠান্ডা বীয়র। আবার কখনও বা নিছক চা সিগারেট। সুনন্দ বলত ,“ অমিয়া, মাই বাডি। ” কবে যে এই বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নিল সে কি ছাই অমিয়াও বুঝেছিল? বাবা মারা যাবার পর অমিয়া তখন এ্যাকিউট ডিপ্রেসনে ভুগছিল, দিনের পর দিন অফিস কামাই। নিজের চতুর্পাশে দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তুলেছিল অমিয়া। সেই প্রাচীর উড়িয়ে টেনে হিঁচড়ে ডিপ্রেসন থেকে বার করেছিল সুনন্দ। সেই কৃতজ্ঞতাবোধই হয়ে উঠল যত নষ্টের গোড়া। বিবাহের প্রস্তাব অমিয়াই দেয়। সুনন্দ ও আপত্তি করেনি। বিয়ের পরও বছর কয়েক মন্দ কাটেনি। তারপর কি যে হল? সুনন্দ যেন ধীরে ধীরে ভুলে যেতে লাগল যে অমিয়া ওর জীবনে আছে। প্রথমে ছুঁতোনাতায় আলাদা হল বিছানা। স্টাডি রুমটাই হয়ে উঠল সুনন্দের শয়ন কক্ষ। কিন্তু কেন? সে প্রশ্নের কোন যুৎসই জবাব ওকে দেবার প্রয়োজন বোধ করেনি সুনন্দ। তীব্র অভিমানে দিন কয়েক মায়ের কাছে থেকে আসা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি অমিয়া। পরের ধাপে বন্ধ হল বার্তালাপ। কথা বলতও না। জবাবও দিত না। তৃতীয় ধাপে বন্ধ করল অমিয়ার মুখদর্শন। অমিয়া ডাইনিং হলে গিয়ে হাজির হলেই সটান উঠে চলে যেত সুনন্দ। অমিয়া কিছু কিনে আনলে বা রান্না করলে খেত না । অন্তিম ধাপে ছিল প্রকাশ্যে পরকীয়া। অমিয়ারই চোখের সামনে ওদেরই দপ্তরের মহিলা সহকর্মীর সাথে রগরগে অ্যাফেয়ার।সেই নিয়ে গোটা অফিসে সে কি কেচ্ছা। শেষে বীথি বলল,“ অমিয়াদি জানি তুমি সুনন্দ স্যারকে ভীষণ ভালবাস। কিন্তু সহ্যের ও তো একটা সীমা আছে? উনি চান না এই বৈবাহিক সম্পর্ককে দীর্ঘায়ত করতে। তুমি কি সত্যি সেটা বুঝতে পারছ না?”

মাস ছয়েক হল মায়ের কাছে আছে। সম্পর্ক ভাঙা নিয়ে সুনন্দ কোন উচ্চবাচ্য করেনি। অমিয়াও নয়। মা, বন্ধুরা বার কয়েক বলেছে উকিলের সাথে কথা বলতে। বীথি পরিচিত এক উকিলের নম্বরও যোগাড় করে দিয়েছে। তাও মাস তিনেক হবে। অমিয়া ফোন করেনি। করতে পারেনি।

“ এই মরেছে! পয়সার ব্যাগটা কোথায় ফেললাম?” জনৈক মহিলা কণ্ঠ বলে উঠল, চমকে বাসে ফিরে এল অমিয়া। উল্টো দিকের সিটে বসে এক মধ্যচল্লিশের মহিলা তার ব্যাগ হাঁটকে চলেছেন, বাতানুকূল ভলভো বাস। কন্ডাকটর পরম ভদ্র। বিনীতভাবে বলল, “ আছে নির্ঘাত দিদি। দেখুন না। আমি ততক্ষণ অন্য টিকিট গুলো কাটি। ” কন্ডাকটর চলে গেলেও মহিলা ব্যাগ হাঁটকানো থামালেন না। কিছুক্ষণ পরে আবার আর্ত স্বর শোনা গেল,“ পেলাম না তো। এবার কি হবে? হে ঠাকুর আমার আর কত পরীক্ষা নেবে?” শেষের দিকে মহিলার গলা ভেঙে গেল। কেউ একজন পাশ থেকে বলল,“ কোথায় যাবেন?”
মহিলা কান্না চেপে জানাল,“ হাইকোর্ট নামব। ” পাশ থেকে অন্য কেউ বলল,“পয়সা যখন নেই, এখানেই নেমে যান। ” ফিসফিসানি শোনা গেল,“ এসব এদের রোজের কেত্তণ। ” কথাটা মহিলার ও কানে গেল। চোখের জল চলকে উঠল। উনি আর্ত স্বরে বললেন, “ বিশ্বাস করুন, আমি ভদ্র- ” কথা শেষ করত পারলেন না। ক্ষণিক দম নিয়ে কাতর ভাবে বললেন,“ কেউ অনুগ্রহ করে টিকিটটা কাটিয়ে দেবেন? বিশ্বাস করুন আমার খুব বিপদ। আমার ভাই আদালতে অপেক্ষা করছে, আমি পৌছেই টাকাটা ফেরৎ দিয়ে দেব।” অমিয়ার অসহ্য লাগছিল ওণার অসহয়তা। দৃঢ় স্বরে জানাল, “ আমি কাটিয়ে দিচ্ছি। ” টিকিটটা মহিলার হাতে দিতে উনি কৃতজ্ঞ ভাবে জানালেন, “ আপনি একটু হাইকোর্ট চলুন, আমি টাকাটা ফেরৎ দেব। ”
অমিয়া মৃদু হেসে বলল,“ মাত্র পঁয়তাল্লিশ টাকার জন্য আপনাকে হাইকোর্ট অবধি ধাওয়া করব? ছাড়ুন। আপনি বিপদে পড়েছিলেন, এটুকু আর কি এমন?”
মহিলা নাছোড়বান্দা, “ আপনার নাম ঠিকানাটা দিন অন্তত। প্লিজ ভাই!” মহিলার কাতর দৃষ্টির সামনে অমিয়া আর না করতে পারল না, দায়সারা ভাবে ঠিকানা দিয়ে নির্দিষ্ট স্টপে নেমে পড়ল। ওর সঙ্গে রোজ নামেন, এক ভদ্রলোক শুধু বললেন, “ রোজকার ব্যাপার দিদি। কতজনকে দেবেন? ও টাকা আর পেয়েছেন?”

মহিলা সত্যিই এলেন না। মঙ্গল থেকে রবিবার হয়ে গেল, তাঁর টিকিও দেখা গেল না। ভুলেও গেল অমিয়া। রবিবার ভরপেট জলখাবার খেয়ে, ছাতে গিয়ে মনের সুখে একটা বিড়ি ধরিয়েছে, হঠাৎ নীচে থেকে মা হাঁক পাড়ল, কে যেন দেখা করতে এসেছে। দুড়দাড় করে নীচে নেমে দেখে সেই মহিলা একা বসে আছেন। অমিয়া বাকরহিত। মহিলা সলজ্জ ভাবে বললেন, “ তোমার কবে ছুটি তা তো জানি না ভাই। যদি দেখা না হয়, তাই -”
অমিয়া হাসবে না কাঁদবে? “ মাত্র কটা টাকা দিতে এত কষ্ট করলেন?”
“ মাত্র হতে পারে, তবে আমার দুঃসময়ে তোমার উপকারটুকু ভুলি কি করে?”
“ বসুন না। চা?” মহিলা মাথা নাড়লেন। চা হতে যেটুকু সময় লাগে, ততক্ষণ কি কথা বলা যায়? মহিলাও মাথা নীচু করে নিজের হাত দেখছেন। অমিয়া গলা ঝেড়ে বলল,“ তা আপনার সমস্যা মিটেছে?”
“ হুঁ চিরতরে। ”
“ বাঃ। তাহলে তো নিশ্চিন্ত। ”
মহিলা মাথা না তুলেই ঘাড় নাড়লেন। নেহাৎ কথা বলার জন্যই অমিয়া জিজ্ঞাসা করল,“ তা কি সমস্যা সেটা কি জানতে পারি? মানে যদি সমীচীন হয়। ”
“ঐ দিন আমার স্বামীকে মুক্তি দিলাম। ”
“ অ্যাঁ?”
“ ডিভোর্স। ” মাথা তুলে করুণ ভাবে বললেন উনি।
“ কিন্তু কেন?” উত্তেজিত ভাবে জিজ্ঞাসা করেই অমিয়া বুঝতে পারল শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে। ক্ষমা চাইতে যাবে, মহিলা বলে উঠলেন,“ সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। পচা গলা সম্পর্ক আঁকড়ে তাও বসেছিলাম। শয্যা আলাদা যে কবে হয়েছে আজ আর মনে পড়ে না। শেষের দিকে কথা বলা দূরের কথা, আমার উপস্থিতিও সহ্য করতে পারত না।”

“ ঘেন্না হত নিজেকে। তোমাদের মত লেখাপড়া শিখলে কবেই হয়তো বেড়িয়ে আসতাম। কোথায় যাব?নিরাপত্তাহীনতা নাকি প্রেম জানি না, হয়তো এই দ্বিধায় কেটে যেত জীবন। কিন্তু উনি করজোড়ে মুক্তি চাইলেন। জানালেন, উনি শীঘ্রই বাবা হতে চলেছেন। সেই মহিলা ওণার বন্ধু পত্নী। ”
“ ছিঃ। ”ধপ করে বসে পড়ল অমিয়া।
মহিলা মৃদু হাসলেন,“ওণার জীবন ভাই। যা ভাল বুঝেছেন। মাথা উঁচু করে বেড়িয়ে এলাম। খোরপোশ আদায় করার কথা বলেছিল আমার উকিল। নিইনি। ”
“কেন? ওটা আপনার অধিকার। খাবেন কি? আপনাদের জন্যই এরা এত বাড়ে। ”ক্ষোভে ফেটে পড়ল অমিয়া। অসহ্য ন্যাকা মেয়েছেলে। মহিলা ঘাড় উঁচু করে বললেন,“বাচ্ছা পড়াব, প্রয়োজনে লোকের বাড়ি বাসন মাজব। কিছু না হলে নিজেকে বেচব।
-----শেষের রেশ রাখব না। ”

মহিলা চলে গেছেন। মায়ের সঙ্গেও কিছুক্ষণ গল্প করে গেলেন। নিজের ব্যক্তিগত কথা অবশ্য কিছু বলেননি। উনি চলে যাবার পর থেকে অমিয়া গোটা বাড়ি মাথায় তুলেছে, সেই বীথির দেওয়া উকিলের কার্ডটা কোথায় গেল? মা বা কাজের দিদি নির্ঘাত কোথাও ফেলেছে। ওটা ওর এক্ষুণি চাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×