somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্ত ©

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুহু করে দৌড়চ্ছে গাড়ি, ড্রাইভার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই তাড়া লাগাচ্ছিল, জঙ্গলে ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে, আর সন্ধ্যার পর জঙ্গল বড়ই বিপদ সঙ্কুল। আরোহিণীরা অবশ্য অকুতোভয়। তবে জঙ্গলের গাম্ভীর্য আর রহস্যময়তার মোহেই বোধহয়, এই মুহূর্তে সবাই চুপ। পিছনের সিটে বসে সোমা ঝিমচ্ছিলো, আচমকা গাড়িটা এক ঝাঁকুনি মারাতে চমকে উঠল, গুটি কয়েক বাঁদর আড়াআড়ি রাস্তা পার হচ্ছে। গাড়ি আবার চলতে শুরু করল, সোমা তখনও পিছন ফিরে বাঁদর বাহিনীকেই দেখে যাচ্ছে, আচমকা মনে হল, আধো অন্ধকার জঙ্গল থেকে, মইন বেরিয়ে এল! মইন! হ্যাঁ মইনই তো। হাত নেড়ে কি যেন বলছে। সোমা গাড়ি থামাতে বলবে, ঘুমটা ভেঙে গেল।
গাড়ি ছুটছে, আনমনা হয়ে পড়ল সোমা। মইন কেন? এত বছর বাদে মইনের স্বপ্ন? মইন ওর সহপাঠী তথা প্রথম প্রেম। ক্লাস সেভেন থেকে মাধ্যমিক অবধি টিকেছিল। তারপর নিজ নিয়মেই ভেঙে গেল। না কোন তিক্ততার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়নি। গানের ভাষায়, দুজনের দুটি পথ দুই দিকে বেঁকে গিয়েছিল। সোমা তো কলকাতাও ছেড়ে দিল। বর্তমানে দিল্লীতে একটি কলেজে পড়ায়। সহকর্মীনীদের সাথেই বর্তমানে ডুয়ার্স ঘুরতে এসেছে।
ডুয়ার্স থেকে ফিরে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে, স্টাফ রুমে বসে সোমা কিছু কাজ করছিল, আচমকা দেখে সামনে মইন দাঁড়িয়ে। “মইন তুই?” বিস্মিত হল সোমা। মইন এভাবে ঢুকল, কি করে? জানলই বা কি করে? “বস।” মইন বসল না। দাঁড়িয়ে কাতর ভাবে বলল, “সোমা আমার খুব বিপদ। একমাত্র তুইই পারিস আমাকে বাঁচাতে।” সোমা ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “ কি হয়েছে?”
“এখানে না। তুই কখন বাড়ি ফিরবি?”
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ফ্ল্যাটে ফিরে সোমা দেখে মইন সিঁড়িতে বসে আছে। বাড়ির ঠিকানা জানল কি করে? সোমা কি বলেছিল? ঠিক মনে করতে পারল না। “আয়। কি খাবি? চা চলবে?”
“কিচ্ছু না।” ধপ করে সোফায় বসে পড়ল মইন। “বীয়ার চলবে?” হাত নেড়ে না বলে মইন, একটু দুঃখী মুখে বলল, “কদিন আগে হলে বীয়ার দৌড়ত।” বাজে সময় নষ্ট না করে সোমা বলল, “বল”।
“তোকে শুধু একটা ফোন করতে হবে-” মইনকে মাঝপথে থামিয়ে সোমা বলল, “মানে? কাকে?”
“রাবেয়া কে। ওকে বল ও যেন আমার জন্য অযথা কষ্ট না পায়। তৌফিক খুব ভাল ছেলে, ওকে বিয়ে করে।” “দাঁড়া দাঁড়া। বারেয়া কে? আর এ শালা তৌফিকই বা কে?”অসহিষ্ণু গলায় জানতে চাইল সোমা। মাথা নীচু করে মইন জানাল, “রাবেয়ার সাথে আগামী মাসে আমার বিয়ে। অনিবার্য কারণ বশত বিয়ে করতে আমি অপারগ।”
“বেড়ো। দূর হ। এক্ষণই বেড়িয়ে যা।” উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল সোমা। বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস আর তারপর প্রাক্তন প্রেমিকাকে শিখণ্ডী খাড়া করে কেটে পড়া, তোর দোজখে ও জায়গা হবে না হারামজাদা।” মইন দুর্বল ভাবে বলল, “ না, না তুই ভুল বুঝছিস।” সোমা একটাও কথা শুনতে রাজি হল না। চলে গেল মইন সেদিনের মত, কিন্তু ঘাড় থেকে নামল না। পরবর্তী পনেরো ষোল দিন সোমা বাড়ি ফেরার সময় রোজ দেখত মইন সিঁড়িতে বসে আছে, ক্লান্ত কাতর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথাই বলে, “প্লিজ। রাবেয়াকে একটু বল। বড্ড কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা। একটা ফোন। আর জ্বালাবো না তোকে।”
অবশেষে মনটা আদ্র হল সোমার। মইন খারাপ ছেলে ছিল না। কার কি অসহায়তা থাকে বলা যায় না। পাঁচন খাওয়া মুখে একদিন বলল, “নম্বরটা দে। একটা ফোন ব্যস। আর আমাকে যা খিস্তি মারবে, সে গুলো সুদ সমেত তোকে দেব।” মইন মৃদু হাসল। সোমা জিজ্ঞাসা করল, “ ও জানে? আমাদের ব্যাপারটা?” মইন ঘাড় নাড়ল, অর্থাৎ না। ফোন লাগল, কলকাতায়, একটি মিষ্টি গলা ধরল, সোমার মনটা খারাপ হয়ে গেল, গলা ঝেড়ে বলল, “রাবেয়া?”
“জী? আপনি?” “আমি সোমা। মইনের সাথে স্কুলে পড়তাম।”
“ও। বলুন।” দাঁতে দাঁত চেপে সোমা বলল, “রাবেয়া আমায় মাপ করো। মইন দিন পনেরো ধরে বিরক্ত করছে বলে ফোন করতে বাধ্য হলাম।”
“মানে? কি যাতা বলছেন?” রাবেয়ার গলা চড়ল। সোমা ক্ষমা প্রার্থনার সুরে বলল, “ জানি আগামী মাসে তোমাদের বিয়ে। ও বলছে, ও এই বিয়েতে অপারগ। ও চায় তুমি,” দম নিয়ে বলল, “তৌফিককে বিয়ে কর।” কথা শেষ করে সোমার ইচ্ছে হল, নিজের পশ্চাৎ দেশে একটি লাথি মারতে। ওদিকে যথারীতি রাবেয়া চিৎকার করতে লাগল, “ ছিঃ। লজ্জা করে না আপনার। একজন মৃত লোককে নিয়ে এই ধরণের বেহুদা--। ” “মৃত? কি বলছ? জানি ও যা করেছে, আমারই ইচ্ছা করছে ওর গলা টিপতে।” সোফায় মাথা নিচু করে বসা মইনের দিকে রক্ত চক্ষু দিয়ে বলল সোমা।
“জী না। মৃত মানে মৃত। হড়কা বানে গাড়ি ভেসে গিয়েছিল, তিন দিন বাদে বডি পাওয়া যায়। আর আপনি তার নামে ছিঃ।” শেষের দিকে কেঁদে ফেলে রাবেয়া। ফোন কেটে যায়, হতভম্বের মত মইনের দিকে তাকিয়ে থাকে সোমা। মইন মাথা নামিয়ে বলে, “ ও ঠিক বলছে।”
“মানে?” ভিতরে কেমন যেন কাঁপুনি লাগছে সোমার। এতদিন কেন খেয়াল করেনি, মইন রোজ একই জামা পড়ে আসে কেন? ওর শার্টের বুকের কাছে ঐ দাগটা কি শুকিয়ে যাওয়া রক্ত? আতঙ্কে জ্ঞান হারাবে নাকি, মইন সোফা থেকে উঠে এসে ওর সামনে হাঁটু মুড়ে বসল, “সোমা আমি কবরে গিয়েও শান্তি পাচ্ছি না। রাবেয়াটা মরে যাবে। খাওয়া-দাওয়া, অফিস যাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে। বড় ভালোবাসি ওকে। তুই ওকে বাঁচা।”
প্রচণ্ড কাঁপুনি লাগছে সোমার। গলা কাঠ। কোন ক্রমে বলল, “আমি কেন?” মইন মাথা নেড়ে বলল, “জানি না। বোধহয়, সেই যে হাত কেটে রক্ত বার করে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মৃত্যু ও আমাদের আলাদা করতে পারবে না-”। সোমা কাতর গলায় বলল, “সেতো ছেলেমানুষি ছিল। ঊর্মি কোথায় পড়েছিল, একে অপরের রক্ত মিশিয়ে প্রতিজ্ঞা করলে, সেই জুটি কেউ ভাঙতে পারে না।” মইন হেসে বলল, “ দূর কি গাম্বাট ছিলাম। কিন্তু হয়তো তাই শুধু তোর সাথেই আমি কমিউনিকেট করতে পারছি। রাবেয়ার সাথেও না। হেল্প কর সোনা। ”
মইনের অন্তিম ইচ্ছা রাখতে কলকাতা এসেছে সোমা। রাবেয়াদের বাড়ি পার্ক সার্কাসের ভিতরে। এককালে রাবেয়ারা যে উচ্চবিত্ত ছিল বোঝা যায়। রাবেয়া প্রথমে ওকে চিনতে পারেনি। সোমা পরিচয় দিতে রাবেয়ার মুখ লাল হয়ে গেল, হয়তো ওকে বাড়ি থেকে বার করেই দিত, যদি না মইনের বলা কিছু একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সোমা ওকে বলত। রাবেয়ার মুখ প্রথমে লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠল, পরক্ষণেই নিভে গেল সব আলো। আর্ত চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়ল রাবেয়া। শেষ মুহূর্ত অবধি সোমাকে জড়িয়ে রইল রাবেয়া। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব শুনল। শেষে শুধু বলল, “তোমাকে আমার ঈর্ষা হচ্ছে।”
পরবর্তী দুই দিন আর মইন এল না। হাঁপ ছাড়ল সোমা। তৃতীয় দিন ওর ট্রেন। বাই বাই কলকাতা। রাজধানীর এসি টু টায়ারে লোয়ার বার্থ। আরামে ঘুমিয়ে ছিল সোমা। হঠাত মইন ডাকল। সোমা বিরক্ত হয়ে বলল, “ এবার আমার পিছু ছাড় ভাই।” মইন মৃদু হেসে বলল, “ আর জ্বালাব না। তুই অনেক করেছিস। ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।” মনটা খুশি হয়ে উঠল সোমার। তবে কি রাবেয়া? মইন হেসে মাথা নাড়ল, “ না। তুই যা ভাবছিস তা নয়।”
“তবে? রাবেয়া?” সোমা অবাক স্বরে বলল। মইন হেসে বলল, “রাবেয়া? রাবেয়া বড় জেদি মেয়ে। রাবেয়া” ডাকল মইন। কামরার অন্ধকার কোনা থেকে হঠাৎ বেড়িয়ে এল রাবেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×