somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলতারা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাতানুকূল কফিশপ, তাও কুলকুল করে ঘামছে সাদিক। নার্ভাস লাগছে প্রচণ্ড। ধপধপে সাদা সি থ্রু শার্ট আর সমুদ্র নীল জিন্স পরে, এক তোড়া টকটকে লাল গোলাপ নিয়ে অপেক্ষা করছে, তারার জন্য। ক্ত বছর পর দেখা হচ্ছে? সতেরো? নাকি আঠারো? ক্লাশ ইলেভেনে ওদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছিল তারা, পুরো নাম নীলতারা। ওরা ঠাট্টা করে ডাকত, “হাঁড়িয়া কালী” বলে। ডাকবে নাই বা কেন? ঘোর কৃষ্ণ বর্ণা, স্থূলাঙ্গী, হাঁড়ির মত গোল মুখ, হাসলে চোখ গুলো ঢেকে যেত। তারা অবশ্য কোনদিন রাগ করেনি, বরং হাসি মুখেই মেনে নিত। এমনকি প্রায়ই নিজেকে নিয়ে ব্যঙ্গ করত। জনপ্রিয় হতে দেরি লাগেনি তারার। অচিরেই সাদিক আর তারা একে অপরের প্রিয়তম বন্ধু হয়ে ওঠে। টুয়েলভ পাশের পর, সাদিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে গেল সেই পুনে। বাকি বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে এল, তখন কোথায় মোবাইল, কোথায়ই বা ইন্টারনেট। যোগাযোগের মাধ্যম বলতে ল্যান্ড ফোন আর না হলে চিঠি। চিঠির জবাব দেবার মত অবসর সাদিকের থাকত না, তারা তাই মাঝে মাঝে ফোনই করত। তারাদের বাড়িতে ফোন ছিল না। পিসিও থেকে করত। প্রথম দিকে ভালই লাগত সাদিকের, ক্রমে বিরক্ত লাগতে লাগল। কলেজের অন্যান্য বন্ধুরাও “ভাবির ফোন” বলে খেপাত। ভাবি? ঐ হাঁড়িয়া কালি ওর মানসী? ভাবতেই বিবমিষা জাগত। ঠারেঠোরে বোঝাবার চেষ্টা করত, এত আদিখ্যেতা ওর ভাল লাগে না। একদিন বলেও বসল, বন্ধুরা ওকে নিয়ে বাজে ঠাট্টা করে, তারা পাত্তাই দিল না। বিরক্তি জমছিল, মনে আছে, ফোর্থ ইয়ারে সবে উঠেছে, রেসাল্ট মনোমত হয়নি বলে এমনি মুড খিঁচরে ছিল, উপরন্তু জ্বর আর গোটা গায়ে বেদনার জন্য সেদিন ক্লাশে যেতে পারেনি। ঠিক দুপুর বেলা চোখটা সবে জুড়ে এসেছ, অফিস থেকে খবর দিল, ফোন এসেছে। ভেবেছিল মা, ফোন তুলে দেখে তারা। তেতো স্বরে সাদিক বলল, “তুই, এই অসময়ে?” তারা হেসে জবাব দিল, “ একটা চান্স নিলাম। ভাবিনি তোকে এই অসময়ে পাব, তবু” একটু দম নিয়ে তারা রহস্য করে বলল, “একটা কথা তোকে না বলে থাকতে পারছিলাম না রে।” গা রিরি করে উঠল সাদিকের। গ্লার স্বর উঁচু করেই জিজ্ঞাসা করল,“কি? দেখ তারা একটা কথা আজ পরিষ্কার শুনে রাখ, আমার থেকে কিচ্ছু প্রত্যাশা রাখিস না।” “মানে?” হতভম্ভ হয়ে বলল তারা, “ তুই কি বলছিস? আমি তো কিছুই বুঝতে-।” “ন্যাকামি রাখ। সব বুঝিস। শোন সবাইকে দেখে সব কিছু হয় না তারা।” গর্জন করে উঠল সাদিক। কিয়ৎক্ষণ নীরব থেকে তারা গ্লা ঝেড়ে বলল, “সাদিক আজ আমাদের রেসাল্ট বেড়িয়েছে। আমি ফার্স্ট ক্লাশ পেয়েছি রে। এই খবরটা তোকে না জানিয়ে থাকতে পারছিলাম না। ভুল বুঝিস না। ভাল থাকিস। ছাড়লাম।” আর কখনও ফোন করেনি তারা।

অপরাধ বোধ কিছুদিন ছিল। ভাবত চিঠি লিখে ক্ষমা চাইবে। তারপর ধীরে ধীরে ভুলে গেল সাদিক। জীবন তেজিয়ান ঘোড়ার মত দৌড়তে লাগল। চাকরি, লাস্যময়ী প্রেমিকা, বিয়ে, ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট, বড় গাড়ি, পিতৃত্ব সুখময় জীবন। টিনটিন যখন সাত বছরের হঠাত সাদিক আবিষ্কার করল, সবটাই ভাঁওতা। মূর্খের স্বর্গ। রেহানা করজোড়ে অব্যাহতি চাইল। না করতে পারল না সাদিকও। ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক আঁকড়ে থাকা আর লাশের শয্যাসঙ্গী হওয়া আর টানা যাচ্ছিল না। কোন তিক্ততা ছাড়াই রেহানা চলে গেল, টিনটিনকে নিয়ে। মস্ত বড় ফ্ল্যাটে রয়ে গেল একা সাদিক। রেহানা না থাকায় যৌথ ই এম আই এর বোঝা টানা হয়ে উঠল দুষ্কর। বেচে দিল বিশাল ফ্ল্যাট, বড় গাড়ি, ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাটে সেই দুঃসহ রাত্রি গুলিতে সাদিক শুধু হিসাব নিকেশ করত। কেন এমন হল? সব অঙ্ক মিলে যাচ্ছিল নীলতারাতে এসে। তবে কি তারার মনস্তাপেই ঘর ভাঙল সাদিকের?
ফেসবুকের দৌলতে তারাকে খুজে বার করতে সময় লাগেনি। ভেবেছিল তারা ওর বন্ধুত্বের আহ্বান অগ্রাহ্য করবে, তারা কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই গ্রহণ করল ওকে। কলেজে পড়ায়, আজো অনুঢ়া। সাদিক ক্ষমা চাইল, তারা ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিল ওর অপরাধবোধ, বলল, “পাগল হলি নাকি? আমার কোন অভিমান নেই।তবে বিয়েতে বলিসনি বলে খুব রাগ হচ্ছে। ”পরের তিনটে মাস যেন চোখের পলকে কেটে গেল। সুপ্রভাত থেকে শুভরাত্রি পর্যন্ত ভায়া মোবাইল তারাই হয়ে উঠল সাদিকের সর্বক্ষণের সঙ্গী। তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা সব বলা যায় তারাকে। রেহানার সঙ্গে এই নৈকট্য কি ও সত্যি কোনদিন অনুভব করেছে?
এত বছর পরেও তারাকে দেখেই চিনতে পারল সাদিক। মনটা একটু দমে গেল, রেহানার থেকে বেশ বেঁটে, রঙটাও_---। একটু মেকআপ তো করতে পারত। নিদেনপক্ষে একটু লিপস্টিক। তারা এসেই ওকে জড়িয়ে ধরল। ফ্রেন্ডলি হাগ। কেমন যেন খুশি হতে পারল না সাদিক। রেহানার পর তারা? তারা বকবক করতে শুরু করল, অল্পকালের মধ্যেই ঢুকে পড়ল সাদিকও। বেশ খানিক পর মনে পড়ল, ফুল গুলোর কথা। পাএর কাছে রাখা কাগজের ব্যাগ থেকে বার করে দিল যখন, তারা যেন ঝিকমিকিয়ে উঠল। এত মূল্যবান রক্ত গোলাপ এর আগে পেয়েছে বলে মনে হল না সাদিকের। ভেবেছিল হাঁটু গেড়ে বসে প্রকাশ করবে নিজের মনের ভাব, কিন্তু—নাঃ থাক। বসে বসেই তারার হাতটা ধরল, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল নীলতারা, সাদিক চোখ বুজে একটু দম নিয়ে বলল, “ তারা, বহুদিন আগে করা একটা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। বিগত তিন মাসে আমি বুঝে গেছি, তোর থেকে ভাল আমায় কেউ বোঝে না। আমি তোর সঙ্গেই সবথেকে ভাল থাকি-”। ওকে মাঝ পথে থামিয়ে দিল তারা, “ কি করে বুঝলি? হোয়াটস্ অ্যাপে চ্যাট করে?” সাদিক ঘাবড়ে গেল। আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলতে গেল, কিন্তু ততক্ষণে ব্যাগ গুছিয়ে উঠে পরেছে তারা, “ তুই আজো আমায় ভুল বুঝলি সাদিক। সিম্প্যাথেটিক রিলেশনের জন্য আর কাউকে পেলি না রে?” সাদিক ওর হাতটা চেপে ধরে কাতর ভাবে বলল, “তারা আমি সত্যিই তোকে......”
“কি? ভালবাসিস না। আমি জানি। আর যদি বাসিসও আমি বাসি না।”
“কেন তারা?”
“কেন? ভুলে গেলি? সবাইকে দেখে সবকিছু হয় না! চলি। ভালো থাকিস। যোগাযোগ রাখিস না।”
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×