somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলিগের ভাবাদর্শ ও প্রাথমিক অন্যান্য প্রসংঙ্গ ১

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগে কিছু পোষ্ট পড়ে মনে হল তাবলিগের কার্যক্রম বা তাদের ভাবাদর্শ অনেকের কাছেই পরিস্কার না, আবার শিবির-জামাত বা তাবলিগ বিরোধী কেউ কেউ তার সদ্বব্যবহার করতে ছাড়ছে না,মনের মাধুরী মিশিয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখে প্রচার করছে।
দুটো পোষ্ট দেখলাম তাবলীগ নিয়ে অজনপ্রিয় কয়েকটি কথা এবং টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে ল্যাদাইয়া থুইয়া আপনিও হতে পারেন পাপমুক্ত!
পোষ্ট দুটোতে অনেক কথা হয়েছে, দেখে আসতে পারেন।

তাবলিগের ভাবাদর্শের ব্যাপারে ক'দিন আগে একটা লেখা পড়েছি একদম প্রাথমিক ধারনা বা ভাবাদর্শ নিয়ে,তাই শেয়ার করছি।

তাবলিগের ভাবাদর্শ
তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মেওয়াত নামক এলাকা থেকে। মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.) ১৯১০ সালে এ কাজের সূচনা করেছিলেন। পরে তাঁর পুত্র মাওলানা ইউসুফ (রহ.) এবং মাওলানা জাকারিয়ার নেতৃত্বে এ কাজ বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা আজকের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কারা কিভাবে এ কার্যক্রমের সূচনা ও বিস্তার ঘটিয়েছেন এবং তাঁদের অবদান ও কৃতিত্ব কতটুকু এ বিষয়ের বর্ণনায় যেতে চাই না। এখানে আমরা তাবলিগ জামাতের ভাবাদর্শের কিছু মৌলিক বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই।
তাবলিগ জামাতের মূল কার্যক্রমের ভাবাদর্শ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এ আন্দোলনের প্রাসঙ্গিক আরেকটি ভাবাদর্শের কথা উল্লেখ করে নেওয়া প্রয়োজন এবং সেটা হলো তাঁদের প্রচারবিমুখতা। তাবলিগ মূলত প্রচারের কাজ। দীনের দাওয়াত নিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে, বিশেষ করে মুসলিম সমাজের ঘরে ঘরে পৌঁছানোই আল্লাহর রাহে তাঁদের নিঃস্বার্থ কাজ। তবে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁরা ভাবাদর্শিকভাবে প্রচারবিমুখ। নীতিনির্ধারক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকদের তাঁরা মুরব্বি বলে। তাবলিগের মুরব্বিরা কে বা কারা সেটা কোনো গোপন বিষয় নয়। জোরালো অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় চলে তাঁদের সংগঠন, নীতিনির্ধারণ ও নেতৃত্বদানের কাজ। কিন্তু কে নেতা আর কে কর্মী, কার কী অবদান, কার গুরুত্ব কতখানি, কে আগে, কে পরে, কার নাম প্রকাশ পেয়েছে, কার নাম প্রকাশ পায়নি এসব বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে নির্মোহ ও নির্লিপ্ত। এমনকি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে মিডিয়ার ফোকাসের বিষয়টাতে তাঁরা অত্যন্ত জোরালো ভাবাদর্শিক অবস্থান থেকে বিরক্তি বোধ করেন। আধুনিককালের এই প্রচারসর্বস্বতার জোয়ারের ভেতর তাঁদের এই ভাবাদর্শিক অবস্থানটিও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এটা প্রতিষ্ঠালিপ্সা ও প্রচারসর্বস্বতার বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদও বটে। তাবলিগ জামাত যত দিন তাদের এই ভাবাদর্শিক অবস্থানটি আন্তরিকভাবে ধরে রাখতে পারবে, তত দিন মানুষের শ্রদ্ধার স্থল হয়ে থাকবে নিশ্চয়।

তাবলিগ শব্দটির অর্থ হচ্ছে পৌঁছে দেওয়া। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এটাকে বলা হচ্ছে নবীয়ানা কাজ। আসলে নবী-রাসুলগণ এই দাওয়াতের কাজ জগদ্বাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজই করে গেছেন যুগে যুগে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ কাজেরই সফল পরিণতি দিয়ে গেছেন। তাবলিগ জামাতের আবির্ভাব ইসলামসংক্রান্ত কোনো নতুন মতাদর্শ বা তাত্ত্বিক বিতর্ক দিয়ে নয়। এটা শুরু করা হয়েছিল অতিসাধারণ মানুষের নৈমিত্তিক জীবনধারায় ধর্মের অনুশীলনকে সুচারুভাবে প্রতিফলিত করার লক্ষ্য নিয়ে। ইসলামের আদেশ-নিষেধ ও ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু বইপুস্তক পড়া বা ওয়াজ-নসিহত শোনার মাধ্যমে নয়; বরং বাস্তব জীবনাচরণের ভেতর দিয়ে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার একটি পদ্ধতি। এর অন্যতম প্রধান সাংগঠনিক কাজ হচ্ছে 'চিল্লা'। অর্থাৎ চল্লিশ দিনের জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে তাবলিগের কাজে বের হয়ে যাওয়া। আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া এই দল ইসলামের শিক্ষার দাওয়াত নিয়ে চলে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে শহরান্তরে এবং দেশ থেকে দেশান্তরে। তারা মানুষকে শুধু দীনের নসিহত শোনায় না, তারা তাদের প্রতিমুহূর্তের জীবনাচরণে দীনের চর্চা করে। শুধু বাহ্যিক বা আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে। এই যে দীনের দাওয়াত নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া, এর একমাত্র লক্ষ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। অন্য কোনো লক্ষ্য এর মধ্যে সম্পৃক্ত হয় না।
এই যে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বের হওয়া এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটাই তাবলিগ জামাতের মূল ভাবাদর্শিক তাৎপর্য। তাঁরা তো ৪০ দিনের জন্য বা তিন চিল্লায় ১২০ দিনের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যান; কিন্তু তাঁরা বনে যান না বা আত্মগত তপস্যায় নিমগ্ন হন না। তাঁরা যান লোকালয়ে, সমাজের ভেতরে। সেখানে তাঁরা শুধু মানুষকে শেখাতে যান না, নিজেরা শিখতে যান।
তাবলিগের চিল্লায় যেতে হয় নিজের পয়সা নিয়ে, বিপদ-আপদে ধারদেনা পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু কোনো দান-খয়রাত গ্রহণ করার সুযোগ নেই। অপরদিকে যাঁদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে যাওয়া হবে তাঁদের কোনো দান-খয়রাত দেওয়ার অনুমতি নেই। তাবলিগের ভ্রমণে বের হয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য, খ্যাতি, পরিচয় বা যেকোনো ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ শুধু যে নিষিদ্ধ বলে করা হয় না, তা নয়। এখনো পর্যন্ত মনমানসিকতাটাই তৈরি করা হয় সেভাবে। এই যে আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদনের মাধ্যমে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য সমাজের ভেতরে বিচরণ, এটা তাবলিগের এক মহান শিক্ষা। এ শিক্ষাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে মানবসমাজের জন্য তাবলিগ নিঃসন্দেহে মহৎ ভূমিকা পালন করবে।

তাবলিগ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনাচরণের ক্ষেত্রে কতগুলো চমৎকার পদ্ধতি অনুশীলন করে থাকে। সেগুলো শুধু আত্মগত নয় বরং সামাজিক। আমরা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে এর বিশদ বিবরণ দিতে পারব না। তবে এটুকু বলা যায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কল্যাণে মনকে আত্মনিবেদিত করে তোলা, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে সত্যের দাওয়াত পৌঁছানো, পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে চলতে শেখা, নিজস্ব নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ইত্যাদি অনুসরণীয় শিক্ষা। আমরা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাকে বাইরে থেকে দেখি ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল সমাবেশ হিসেবে। এটা বাইরের দৃশ্য। ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সমবেত হয় টঙ্গীর তুরাগতীরের প্রান্তরে। এটা আনন্দের বিষয়, তাৎপর্যের বিষয়ও। তবে এর মূল তাৎপর্য তাবলিগের ভেতরের কার্যক্রমের মধ্যে। এর ভেতরের কার্যক্রম এবং ভাবাদর্শের অনুশীল যত জোরালো ও নিষ্কলুষ হবে বিশ্ব ইজতেমা হবে ততই সফল। অন্যথায় এর বাইরের চিত্রটা আমাদের জীবন ও সমাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে কি না তাতে সন্দেহ আছে। সংগত কারণেই তাবলিগের সংশ্লিষ্টরা প্রচার চান না। চান ভেতরের আত্মনিবেদিত কাজ।

ঈষৎ সংক্ষেপিত
লেখক: মাওলানা হোসেন আলী
প্রকাশিত: দৈনিক কালের কন্ঠ, ২২ জানুয়ারি
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৩২
১৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×